Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Presents

শান্তির অবসর

আপনি জানেন টাকা জমছে ন্যাশনাল পেনশন প্রকল্পে। কিন্তু কতটা ভাল ভাবে জমছে তা জানতে গেলে আরও একটু গভীরে নেমে দেখতে হবে। যেখানে দাঁড়িয়ে শুরু হয় ফান্ড ম্যানেজারের কাজ। জানালেন নীলাঞ্জন দে।আপনি জানেন টাকা জমছে ন্যাশনাল পেনশন প্রকল্পে। কিন্তু কতটা ভাল ভাবে জমছে তা জানতে গেলে আরও একটু গভীরে নেমে দেখতে হবে। যেখানে দাঁড়িয়ে শুরু হয় ফান্ড ম্যানেজারের কাজ। জানালেন নীলাঞ্জন দে।

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

কষ্টের রোজগার থেকে তিল তিল করে জমা করছেন পেনশন প্রকল্পে। যাতে তা যতটা সম্ভব বেড়ে উঠে পরবর্তী কালে অবসর জীবনের যাবতীয় আর্থিক অনিশ্চয়তাকে ঢেকে দিতে পারে। কিন্তু এই আগাম পরিকল্পনাও আপনাকে ভয়ানক অস্বস্তিতে ফেলে দেবে, যদি প্রকল্পটি সম্পর্কে আপনার একেবারেই স্পষ্ট ও স্বচ্ছ ধারণা না-থাকে।

ভেবে দেখুন, লম্বা সময় ধরে টাকা জমা করে যাচ্ছেন। অথচ সেটা নিয়ে আদপে কী করা হচ্ছে জানেন না। বুঝতেই পারছেন না কোথায়, কোন কৌশলে ওই পুঁজি বড় হওয়ার পথে হাঁটছে। কীসের ভিত্তিতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তহবিল? কতটাই বা বেড়ে ওঠার ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে তার? আর পর্দার পেছনের এতগুলো অজানা বিষয়ই আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। অথচ অবসর জীবনকে স্বস্তি আর সচ্ছলতায় ভরে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়েই ২০০৪ সালে বাজারে এসেছে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)। প্রথমে আনা হয়েছিল শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য। ২০০৯-এ এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ খুলে দেওয়া হয় ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সমস্ত ভারতীয় নাগরিকের সামনে।

এনপিএস-এর নানা বিষয় নিয়ে আগেও বহু বার বহু কথা হয়েছে। তবে আপনার বিনিয়োগ সম্পর্কে আর একটু গভীরে গিয়ে জানতে আজকের আলোচনার মূল বিষয় পর্দার পেছনের ওই সব না-জানা অংশগুলোই।

তহবিল নিয়ে

যে কোনও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেই আমাদের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা, দোলাচল, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব টাকা-পয়সা কতটা বাড়ছে, অর্থাৎ রিটার্ন কেমন পাব, সেটা ঘিরেই। তার উপর সেই সঞ্চয় যদি অবসর জীবনের আর্থিক সংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে করা হয়, তা হলে তো ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। কারণ বয়স কম থাকতে একটু একটু করে জমানো অর্থ যাতে কর্মহীন বুড়ো বয়সের অবলম্বন হয়, সে জন্যই তো এত কিছু। জাতীয় পেনশন প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাই প্রথম থেকেই পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পি এফ আর ডি এ) গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ করেছে। যেমন—

প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন: এই দায়িত্বে রয়েছে পিএফআরডিএ নিজে। আপনার এনপিএস-এ জমা করা তহবিল নিয়ে ফান্ড পরিচালক সংস্থাগুলি কী করছে না-করছে, তহবিলের মূল্য বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া শর্তগুলি ঠিকমতো মানছে কি না, সে সব বিষয়ে নিয়মিত কড়া নজরদারি চালায় পিএফআরডিএ। যাতে কোটি কোটি মানুষের তহবিল নয়ছয় না-হয়। এবং যাতে গোটা প্রক্রিয়াটায় একটা শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

আবার লগ্নিকারীর আর্থিক খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখার অধিকারও আছে পিএফআরডিএ-র। তারা নজর রাখে এনপিএস-এ অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের আয়ের উৎসের উপর। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক লগ্নিকারীকে আগেই জানিয়ে দিতে হয়, তিনি যে-টাকাটা ফান্ডে জমা করছেন, সেটা বিধিসম্মত ভাবে রোজগার করা অর্থ থেকেই দেওয়া হয়েছে। মনে রাখবেন, আপনার যদি এনপিএস অ্যাকাউন্ট থাকে, তা হলে টাকা-পয়সার বেআইনি লেনদেন প্রতিরোধ আইনের আওতায় পড়বেন আপনিও। এই আইন ভাঙলে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।

সামলাবে কারা: পেনশন ফান্ডটি পরিচালনা করতে ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে একাধিক সংস্থাকে নিয়োগ করেছে পিএফআরডিএ। যে কোনও ধরনের লগ্নির ক্ষেত্রেই মাঝখানে সরকার থাকলে বা সরকারি কোনও সংস্থার মাধ্যমে লগ্নি করা হলে এখনও বহু মানুষ অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করেন। পিএফআরডিএ নিয়োজিত ওই সব ফান্ড ম্যানেজারদের মধ্যে তাই রয়েছে সরকারি-বেসরকারি, দু’ধরনের সংস্থাই। এক দিকে যেমন রয়েছে ইউটিআই, এলআইসি, এসবিআইয়ের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান, অন্য দিকে তেমনই আবার এইচডিএফসি, আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল, কোটাক মহীন্দ্রা, রিলায়্যান্স ক্যাপিটাল, ডিএসপি ব্ল্যাকরকের মতো অতি পরিচিত বেসরকারি সংস্থা।

প্রকল্পে ঢোকার সময়ে লগ্নিকারী হিসেবে আপনি নিজেই বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দসই ফান্ড ম্যানেজারের নাম। জানিয়ে দিতে পারেন ফর্ম ভরার সময়েই।

বিধির বাঁধন: নথিভুক্ত ওই সব পেনশন ফান্ড পরিচালকদের মূল কাজই হল সাধারণ মানুষের জমা করা তহবিল যতটা পারা যায় আরও বাড়িয়ে তোলা, যাতে অবসর জীবনে তাঁদের জন্য মোটামুটি ভাল আয়ের বন্দোবস্ত হয়। এ জন্য তাঁদের সামনে মোট তিনটি লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে—

• পেনশন তহবিলের লগ্নি সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে।

• পিএফআরডিএ-র বেঁধে দেওয়া মান সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে এবং লগ্নি সম্পর্কে তাদের নির্দেশিকা অনুসরণ করে এগোতে হবে।

• ফান্ডের ন্যাভ (যার ভিত্তিতে ফান্ডমূল্য নির্ধারিত হয় এবং বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি কত রিটার্ন পাবেন সেটা স্থির হয়) হিসাব করতে হবে।

জমা ও পেনশন: পেনশন প্রকল্পটির দু’টি পর্যায়—

• প্রথমে পছন্দের ফান্ড ম্যানেজারের ঘরে টাকা জমা দিতে হবে তাদের কোনও পেনশন প্রকল্পে। সাধারণত তা দেওয়া যায় ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত।

• তার পর সেই টাকা খাটিয়ে যে- তহবিল তৈরি হল, সেটা দিয়ে বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ অনুমোদিত কোনও সংস্থার কাছ থেকে কিনতে হবে অ্যানুইটি প্রকল্প। বিমা সংস্থাও তা অ্যানুইটির টাকা বাজারে খাটাবে (শেয়ার ও বন্ডে)। এবং এর থেকেই মাসে মাসে পাওয়া যাবে পেনশন।

আপনার অবর্তমানে: এনপিএসে লগ্নি করলে আপনার উপর নির্ভরশীল সর্বোচ্চ তিন জনকে নমিনি করে রাখতে পারবেন। আপনার অবর্তমানে তহবিলের ভাগ কে কতটা পাবে, তা ফর্মেই জানিয়ে দিতে হবে।

রিটার্ন সম্পর্কে ধারণা। সবিস্তার...

লগ্নির আটঘাট

এ বার জানুন, কোথায়, কী ভাবে লগ্নি করা হয় এই পেনশন প্রকল্পের টাকা। এই প্রকল্পে আপনার টাকা ঢালা হবে মূলত তিন জায়গায়। (ক) শেয়ার বাজার, (খ) কর্পোরেট বন্ড ও (গ) সরকারি ঋণপত্রের মিশ্রণে। এর মধ্যে কোথায়, কত পরিমাণে টাকা খাটানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত চাইলে আপনি নিজেই নিতে পারেন (অ্যাকটিভ চয়েস)। তবে এ সব নিয়ে আপনার কোনও স্বচ্ছ ধারণা না-থাকলে, তা কোনও দক্ষ পেশাদারের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল (অটো চয়েস)। সে ক্ষেত্রে আপনার বয়স এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই।

আপনার সুরক্ষায়

(ক) শেয়ার বাজার: এই পর্যন্ত পড়ে আপনি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। কারণ শেয়ার বাজার নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের মনেই একটা আতঙ্ক কাজ করে। যেহেতু লগ্নির ওই জায়গাটা খুব অস্থির। বিভিন্ন কারণে কখনও বাজার বাড়ে তো কখনও আবার হুড়মুড় করে নেমে যায়। আর অবসর জীবনের জন্য সঞ্চিত টাকা যদি এমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় খাটানো হয়, তবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জানবেন, এই ঝুঁকি খানিকটা এড়াতেই শেয়ার বাজারে তহবিল খাটানোর ক্ষেত্রে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তহবিল পরিচালনার সময়ে ফান্ড ম্যানেজারদের যেগুলো মেনে চলতেই হয়। যেমন—

• কোনও ক্ষেত্রেই প্রতি বছর আপনার জমা দেওয়া মোট টাকার অর্ধেকের (৫০%) বেশি লগ্নি করা যাবে না শেয়ার বাজারে। যাতে কষ্ট করে রোজগার করা টাকা বাজারের ওঠা-পড়ায় উবে না-যায়।

• ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ও বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের নথিবদ্ধ শেয়ারই কিনতে হবে। কিংবা সেই সব শেয়ার কেনা যাবে, যেগুলি সেনসেক্স বা নিফটির মতো বাজারের প্রধান সূচকগুলির আওতায় লেনদেন হয়। নথিবদ্ধ নয় এমন শেয়ার কেনাই যাবে না। এমনকী বাজারে কোনও সংস্থা প্রথম বার শেয়ার ছাড়লে (আইপিও), তা-ও কেনা যাবে না পেনশন ফান্ডের তহবিল দিয়ে।

• কোনও একটি সংস্থার ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কেনা যাবে না।

(খ) কর্পোরেট বন্ড: কর্পোরেট বন্ডের সুদও যেহেতু বাজারের উপর নির্ভরশীল, তাই এখানেও একই ভাবে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা আছে, যাতে লগ্নিকারীর তহবিলের ঝুঁকি কমানো যায়। শর্তগুলি হল—

• ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলি উঁচু রেটিং করেছে, এই রকম ঋণপত্রেই তহবিলের টাকা লাগানো যাবে।

• অন্তত ৫০০ কোটি টাকার নিট সম্পদ আছে, এমন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখা যেতে পারে। তবে ব্যাঙ্কগুলিকে তার আগের তিন বছর টানা মুনাফা করতে হবে। এবং তার মূলধন ধারের (ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও) অন্তত ৯% (এ ক্ষেত্রে অবশ্য সেই ধার কতটা ঝুঁকির তা ধরেই হিসাব করা হয়েছে) হতে হবে।

• রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ইস্যু করা সেই সব বন্ড কেনা যাবে, যার মান তুলে ধরতে রেটিং করা হয়েছে।

• তহবিলের টাকা লগ্নি করা যাবে মিউনিসিপ্যাল বন্ড, পরিকাঠামো বন্ড ও পরিকাঠামো উন্নয়ন বন্ডেও।

(গ) সরকারি ঋণপত্র: লগ্নির ক্ষেত্র হিসেবে সরকারি ঋণপত্র অবশ্য সব সময়েই বাকি দু’টি ক্ষেত্রের তুলনায় অনেকটা সুরক্ষিত। যে কারণে (ক) ও (খ)-এর মতো এখানে লগ্নির জন্য তেমন কোনও শর্তও আরোপ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রীয়, এই দু’ধরনের সরকারি বন্ডে বা ঋণপত্রেই টাকা খাটানো যায়।

লক্ষ্য ছুঁতে

অবসর জীবনে পেনশন হিসেবে আয়ের লক্ষ্যে করা এই লগ্নির আদর্শ কৌশল কী হতে পারে? জবাব একটাই কতটা লাভ করার জন্য আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন, প্রথমে সেই হিসাব কষা এবং সেই অনুযায়ী লগ্নির বিভিন্ন খাতে তহবিল নির্দিষ্ট হারে ছড়িয়ে।

তবে বয়স অনুপাতে কৌশল আলাদা হতে পারে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আপনি নিজেই লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে, আপনাকেও ভাবতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে আমি বলব খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে। যেমন—

• লগ্নির কোন খাতে কতটা তহবিল খাটানো হচ্ছে, তার উপরেই কিন্তু নির্ভর করে অবসরের পুঁজি শেষমেষ কতটা বেড়ে উঠতে পারবে, সেই সম্ভাবনা।

• প্রকল্পে ঢোকার আগেই বিচার করুন, আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন। শেয়ারে লগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শেয়ার আপনার টাকাকে কর্পোরেট বন্ড, ব্যাঙ্ক আমানত ও সরকারি ঋণপত্রের তুলনায় অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে। ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা থাকলে তহবিলের বেশির ভাগটা শেয়ারে লাগান।

• লগ্নির ব্যাপারে যদি নিতান্তই রক্ষণশীল হন, তা হলে বলব আপনার পক্ষে বন্ড ও সরকারি ঋণপত্রই ভাল।

• তবে যদি মনে হয় যে, এ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো আপনার পক্ষে মুশকিল হচ্ছে, তবে এনপিএসের আওতায় থাকা ‘লাইফসাইকেল ফান্ড’ কিনতে পারেন। এখানে আছে ‘অটো চয়েস’-এর সুবিধা।

• অটো চয়েস-এও ঝুঁকি ও রিটার্নের ক্ষেত্রে আপনার স্বার্থ মাথায় রেখেই তহবিল খাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার পেনশন প্রকল্পের টাকা লগ্নির তিনটি জায়গাতেই (ক, খ, গ) ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে কোথায়, কী অনুপাতে তহবিল বণ্টন করা হবে, সেটা সংস্থা ঠিক করে নেবে আগেই, আপনার বয়সের ভিত্তিতে ঝুঁকির অঙ্ক কষে।

সে ক্ষেত্রে আপনার বয়স যদি ১৮ বছর হয়, অটো চয়েস অনুযায়ী—

৫০% খাটবে শেয়ারে

৩০% খাটবে কর্পোরেট বন্ডে

২০% খাটবে সরকারি ঋণপত্রে

যতদিন না আপনি ৩৬ বছর বয়সে পৌঁছচ্ছেন, ততদিন তহবিলের এই ভাগাভাগিটা একই থাকবে।

• ৩৬ বছর থেকে যত বয়স বাড়বে শেয়ার ও বন্ডে লগ্নি তত কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে টাকা খাটানোর অনুপাত বাড়তে থাকবে সরকারি ঋণপত্রে। এটা চলবে যতক্ষণ না তহবিলের ১০% লগ্নি শেয়ারে, ১০% বন্ডে এবং বাকি ৮০% সরকারি ঋণপত্রে গিয়ে দাঁড়ায়।

• মনে রাখবেন, সব সময়ই লগ্নিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ভাল। মাঝে মাঝে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে, তা এ দিক-ও দিক করাও উচিত। ফান্ড পরিচালকেরা সময় সময় সেটা করে। কারণ একটি নির্দিষ্ট লগ্নির খাতে দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশি টাকা লাগিয়ে রাখা রাখলে ঝুঁকি বাড়ে।

• রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক পরিবেশের দিকেও খেয়াল রাখুন। খবর রাখুন কর্পোরেট সংস্থাগুলি সম্পর্কে। তারা কেমন আর্থিক ফল করছে? জালিয়াতি বা বকেয়ার সমস্যা আছে কিনা। চেষ্টা করুন বুঝতে যে এ সবের প্রভাব তহবিলে পড়তে পারে কিনা। পরিস্থিতি বিচার করে তহবিল প্রয়োজন অনুযায়ী এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় সরিয়ে দেখতে পারেন। এতে ভবিষ্যতের বহু ঝুঁকিই এড়ানো সম্ভব।

• ফান্ড ম্যানেজমেন্ট-সহ সব খরচই এনপিএসে কম। পি এফ আর ডি এ-র দাবি, সারা বিশ্বে এনপিএস-এর মতো কম খরচের পেনশন প্রকল্প নেই।

নজরে রাখুন

এ বার আপনার মনে হতে পারে যে, তা হলে কি এনপিএস তহবিলের লগ্নি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কোনও ভূমিকা না-থাকলে, তহবিল নিয়ে কী হচ্ছে না হচ্ছে, ভাল-মন্দ কোনও কিছুই জানতে পারব না? না, একেবারেই সেটা নয়। এ ব্যাপারে এনপিএসের ফান্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলি কী ভাবে আপনার তহবিল নিয়ে কাজ করছে, সেটা আপনি ইচ্ছে করলেই জানতে পারবেন। ইন্টারনেটের সুবিধা থাকলে, অনলাইনেই সেই খোঁজখবর নিতে পারবেন। আর সেই সুবিধা না-থাকলে, আপনার আবেদন অনুযায়ী ছাপার অক্ষরে লেনদেনের স্টেটমেন্ট সংস্থা আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে আপনি জানতে পারেন—

• আমার তহবিলের টাকা কোথায় কী ভাবে খাটানো হচ্ছে?

• লেনদেন কী ভাবে চলছে?

• আমার তহবিলের মূল্য এই মুহূর্তে কোথায় পৌঁছেছে?

• ফান্ডের কতটা ইউনিট আমার হাতে আছে?

এমনকী শুধু পেনশন ফান্ডের বিশদ জানার অধিকার নয়, চাইলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও থাকবে। যেমন—

• আপনি চাইলে পেনশন ফান্ড ম্যানজার বদল করতে পারবেন।

• পরিবর্তন করতে পারবেন লগ্নি করার জন্য পছন্দের পথ (অ্যাক্টিভ বা অটো চয়েস)।

সবিস্তার...

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bisoy asoy nilanjan dey shantir abasor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE