Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Presents
প্ল্যাটিনামে লগ্নি

সাদা ধাতুর চমক

সাদা হলেও, রুপো নয়। দাম সোনার চেয়েও বেশি। লগ্নি-বাজারে তুলনায় নতুন। চলুন চোখ রাখি প্ল্যাটিনামের উপর। লিখছেন অরিন্দম সাহালগ্নির গন্তব্য হিসেবে সোনা বা রুপো নিয়ে যত কথা হয়, প্ল্যাটিনাম নিয়ে তার সিকিভাগও হয় না। কিন্তু ঠিক মতো লগ্নি করতে পারলে ভাল মুনাফা দিতে পারে প্ল্যাটিনামও। তাই আজ আমরা এই সাদা ধাতুর খুঁটিনাটি নিয়েই আলোচনা করব। দেখে নেব, ধাতুটি কেন সোনার চেয়েও বেশি দামি। এক বার কেনার পর ফের বিক্রির দিক থেকে কতটাই বা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারী।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:১৮
Share: Save:

লগ্নির গন্তব্য হিসেবে সোনা বা রুপো নিয়ে যত কথা হয়, প্ল্যাটিনাম নিয়ে তার সিকিভাগও হয় না। কিন্তু ঠিক মতো লগ্নি করতে পারলে ভাল মুনাফা দিতে পারে প্ল্যাটিনামও। তাই আজ আমরা এই সাদা ধাতুর খুঁটিনাটি নিয়েই আলোচনা করব। দেখে নেব, ধাতুটি কেন সোনার চেয়েও বেশি দামি। এক বার কেনার পর ফের বিক্রির দিক থেকে কতটাই বা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারী।

দাম এত বেশি কেন?

• প্ল্যাটিনাম দুষ্প্রাপ্য ধাতু। প্রতি বছর সারা বিশ্বে মাত্র দু’টি দেশেই ৯০% প্ল্যাটিনাম উত্তোলন হয়। ফলে গয়নায় ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও আকাশ ছুঁয়েছে। গত এক দশকে যা এক ট্রয় আউন্সে ৫০০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৩০০ ডলারে।

• ১ ট্রয় আউন্স নিখাদ প্ল্যাটিনাম পেতে প্রায় ১০ টন (৩,২১,৫০৭ ট্রয় আউন্স) আকরিক উত্তোলন করতে হয়। তাই উৎপাদনের খরচ অন্যান্য ধাতুর চেয়ে বেশি। ফলে দামও বেশি।

• গাড়ি তৈরি-সহ নানা শিল্পেও এই ধাতু ব্যবহৃত হয়।

• শিল্প ছাড়াও, গয়না তৈরির জন্য প্ল্যাটিনামের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে।

• প্ল্যাটিনামের গয়না তৈরি করার জন্য কারিগরদের যে-দক্ষতা প্রয়োজন, তার অভাবও এই দর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

• ভারতে সোনার দাম যদি ১০% বাড়ে, সেখানে আমদানি কম হওয়ায় প্ল্যাটিনাম বাড়ে প্রায় ২০%।

• টাকার ওঠা-পড়ার উপরেও ধাতুটির দর নির্ভর করে। যেমন, বিদেশের বাজারে যদি কখনও প্ল্যাটিনামের দাম পড়ে যায়, তবু ভারতে ডলারে টাকার দাম পড়লে কিন্তু এর দাম ততটা কমবে না। সাধারণত দেখা যায় এ দেশে সোনার তুলনায় এর দর প্রায় ৩০% বেশি। এখন যেখানে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দর ৩১ হাজারের কাছাকাছি, সেখানে একই পরিমাণ প্ল্যাটিনাম প্রায় ৪১ হাজার টাকা।

ভারতে চাহিদা কেমন?

এখনও পর্যন্ত দেশে প্ল্যাটিনামের চাহিদা খুবই সামান্য। বছরে মাত্র ১০ টন। যেখানে প্রতি বছর ভারতে শুধুমাত্র সোনা আমদানিই হয় ১৫০-২০০ টন। কিন্তু ধীরে ধীরে এই হিসাব পাল্টাচ্ছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ প্ল্যাটিনামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

প্ল্যাটিনাম বনাম সাদা সোনা

রুপো, সাদা সোনা বা হোয়াইট গোল্ড (রোডিয়াম মেশানো সোনা) ও প্ল্যাটিনাম প্রতিটিই সাদা ধাতু হওয়ার কারণে হঠাৎ করে দেখলে চেহারায় কোনও তফাত ধরা পড়ে না। অন্য দুই ধাতুর দামও প্ল্যাটিনামের তুলনায় কম। কিন্তু, তা সত্ত্বেও লগ্নির মাধ্যম হিসেবে প্ল্যাটিনামের কদর বেশি। তার কারণ—

১) দীর্ঘ দিনের ব্যবহারেও প্ল্যাটিনামের ক্ষয় প্রায় হয় না বললেই চলে। ফলে গয়না তৈরি করলে, বহু দিন চেহারা একই রকম থাকে।

২) অন্যান্য ধাতুর তুলনায় গয়নার মধ্যে হিরেকে বেশি ভালভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে বলে এ ক্ষেত্রে প্ল্যাটিনামের ব্যবহার বেশি। ফলে দাম বেশি হলেও, গয়না হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদি লগ্নির ক্ষেত্রে তা বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে।

কী ভাবে লগ্নি

• ভারতীয়দের ক্ষেত্রে আপাতত গয়না কেনার মাধ্যমেই প্ল্যাটিনামে লগ্নির সুযোগ রয়েছে। তবে সম্প্রতি গয়না ছাড়াও, সোনা-রুপোর মতো প্ল্যাটিনামের বার ও কয়েন বিক্রি হচ্ছে।

• অন্যান্য দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কয়েন বা বারের মাধ্যমে প্ল্যাটিনামে লগ্নি করা যায়। এ দেশের এমসিএক্স কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও তা চালু ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি বন্ধ।

• বিদেশের বাজারগুলির মধ্যে কোমেক্স, টোকোম-এর মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্ল্যাটিনামের লেনদেন চলে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে আপাতত কোনও ভারতীয় লগ্নিকারী সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন না।

কেন লাভজনক?

• ধাতুটি কেনার পর বিক্রির সময়ে ভাল রিটার্ন মিলতে পারে। সাধারণত হাতফেরতা বাজারে এর ৯০% পর্যন্ত দাম ফেরত পাওয়া যায়।

• তবে ব্যবহারের ধরন, গয়নার মজুরি-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই দর নির্ভর করে। এর মধ্যে তার দাম বেড়ে গেলে, লগ্নিকারীর লাভের অঙ্কও বাড়ে।

• বার বা কয়েনে লগ্নি করলে অবশ্য আরও বেশি রিটার্ন আশা করা যায়।

দামের ওঠা-পড়া

গত কয়েক বছর ধরেই টানা বেড়ে চলেছে প্ল্যাটিনামের দাম। দেশে আগামী দিনেও তা দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে প্ল্যাটিনামের চাহিদা বছরে ৮০ টনে দাঁড়াবে। পাশাপাশি, নানা শিল্পে ব্যবহার হয় বলে, আগামী দিনে দেশের আর্থিক হাল ফিরলে চাহিদা আকাশ ছুঁতে পারে। সে ক্ষেত্রে এখন লগ্নি করলে ভবিষ্যতে ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শুদ্ধতার মাপকাঠি

পাকা (২৪ ক্যারাট) ও গয়নার সোনা (২২ ক্যারাট)-র মতোই শুদ্ধতা অনুসারে প্ল্যাটিনামকে আলাদা করতে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া হয়। সাধারণত বিশুদ্ধ প্ল্যাটিনাম বার ও কয়েনের ক্ষেত্রে ‘পি৯৫০’ লেখা থাকে। সঙ্গে রোডিয়াম, প্যালাডিয়াম ইত্যাদি ধাতু মেশালে সেটা হয় ‘পি৯০০’। শুদ্ধতা অনুসারে তা কমও হতে পারে।

সোনার গয়নার হলমার্কের মতোই প্ল্যাটিনামের গয়না কেনার সময়ে বিভিন্ন বিপণিতে আন্ডাররাইটার্স ল্যাবরেটরিজ (ইউএল) কার্ড দেওয়া হয়। গবেষণাগারে গয়নায় ব্যবহৃত প্ল্যাটিনামের শুদ্ধতা যাচাইয়ের পরে এই ইউএল কার্ড ইস্যু করা হয়। এ ক্ষেত্রে কার্ড ও গয়নায় নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া থাকে। যা দেখে ওই কার্ড যে সেই নির্দিষ্ট গয়নাতেই প্রযোজ্য, তা বোঝা যায়।

প্ল্যাটিনামে কর

প্ল্যাটিনামের গয়না বিক্রি করে আয় হলে, তা সম্পত্তি কর (ওয়েল্থ ট্যাক্স) ও মূলধনী লাভ করের (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) আওতায় পড়বে।

লেখক পণ্য বাজার বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

paltinum arindam saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE