Advertisement
E-Paper

সঞ্চয়ে সফল হতেও কৌশলী হওয়া জরুরি

কে বলেছে শুধু ভাল প্রকল্পে লগ্নি করলেই পাহাড়ের মতো বেড়ে উঠবে সঞ্চয়? কৌশলে খামতি থাকলে অনেক প্রকল্পই ডোবাতে পারে আপনাকে। লিখছেন অমিতাভ গুহ সরকারযে দল ভাল তারাই জিতবে, এমন কোনও কথা নেই। অনেক সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলও শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে উল্টে দেয় শুধুমাত্র কৌশল প্রয়োগ করে। আর ঠিক একই কথা খাটে লগ্নির দুনিয়াতে। কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি যদি ঠিকঠাক প্রয়োগ করা যায়, তা হলে এখানেও বাজিমাত করতে পারে যে কেউই।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩০

যে দল ভাল তারাই জিতবে, এমন কোনও কথা নেই। অনেক সময় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলও শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে উল্টে দেয় শুধুমাত্র কৌশল প্রয়োগ করে। আর ঠিক একই কথা খাটে লগ্নির দুনিয়াতে। কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি যদি ঠিকঠাক প্রয়োগ করা যায়, তা হলে এখানেও বাজিমাত করতে পারে যে কেউই।

অনেক সময় দেখা যায় যে, একই তহবিল নিয়ে একই সময়ে লগ্নির দুনিয়ায় পা রাখলেন দু’জন। অথচ একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এক জন সাফল্যের চূড়ায়, আর অন্য জনের ঘাড়ে লোকসানের পাহাড়। তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এই ফারাকের প্রধান কারণ এটাই যে, এক জনের যথা সময়ে কৌশল প্রয়োগ করা এবং অন্য জনের কৌশল ঠিক না-করেই লগ্নি করা।

বিভিন্ন ধরনের লগ্নির মধ্যে আবার শেয়ার সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কৌশল প্রয়োগের প্রয়োজন বেশি পড়ে। তবে অন্যান্য লগ্নিতেও এর কম-বেশি প্রয়োগ জরুরি। আজ আমরা এক নজরে দেখে নেব লগ্নির বিভিন্ন ক্ষেত্রে কখন, কী ধরনের কৌশল প্রয়োগ করলে সাফল্য আসতে পারে।

১) আপনার প্রথম সারির অত্যন্ত ভাল কিছু শেয়ার কেনা আছে। আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই এই সব শেয়ার হাতছাড়া করবেন না। ডাহা ভুল সিদ্ধান্ত। খোঁজ নিয়ে দেখুন, গত ৫২ সপ্তাহে এই সব শেয়ার কতটা উঠেছে এবং পড়েছে। এই ধরনের ওঠাপড়া প্রতি বছরই কম-বেশি চলতে থাকে। সুতরাং অপেক্ষা করুন পরের বড় উত্থানের জন্য। শেয়ারের উত্থান যখন তুঙ্গে, তখন সবটা না-হলেও কিছুটা বিক্রি করুন। এ বার অপেক্ষা করুন পতনের জন্য। অভীষ্ট জায়গায় নামলে আবার ওই ভাল শেয়ার কিনে ঝুলি পূর্ণ করুন। শেয়ারও রইল, সঙ্গে থাকল বাজার থেকে তুলে আনা লাভ।

২) একটি ভাল শেয়ার কিনেছেন। কিন্তু কেনার পর থেকেই দাম নেমে গিয়েছে, যদিও সংস্থা খারাপ ব্যবসা করছে না। দাম বেশি নামলে ওই শেয়ার আরও কিছু পরিমাণে কিনে কেনার গড় দামকে নামিয়ে আনুন। বাজার দর গড় দামকে ছাড়ালে বিক্রির কথা ভাবুন।

৩) শুধু রুই-কাতলাই নয়, নজর রাখুন অতি সামান্য মূল্যের শেয়ার (পেনি স্টক) দিকেও। বন্ধ হয়ে যায়নি এমন অনেক সংস্থার শেয়ার কোনও কোনও সময়ে নামমাত্র দামে কিনতে পাওয়া যায়। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এমন অনেক শেয়ার ৫২ সপ্তাহে ২০০/৩০০ শতাংশ ওঠানামা করে। অর্থাৎ ২ টাকায় কিনে ৬ টাকায় বিক্রির সুযোগ আসতে পারে। সংস্থার লক্ষণ যদি ভাল হয়, তবে বড় সংখ্যায় ধরা যায় এই সব শেয়ার। এর পর সুযোগের অপেক্ষা। ঝুঁকি? অবশ্যই আছে। ২০০ শতাংশ লাভে ঝুঁকি তো থাকবেই।

৪) শেয়ারে সাফল্যের বড় মন্ত্র হল, বাজারের চরম দুর্দিনে যখন কোনও ক্রেতার দেখা নেই, তখন ভাল শেয়ার সওদা করা এবং তেজি বাজারে যখন অনেকে শেয়ার কিনতে ব্যস্ত তখন এই সব শেয়ার বিক্রি করে লাভকে নিজের ঝুলিতে ভরা। পড়া বাজারে ক্রয় এবং চড়া বাজারে বিক্রয়— জানবেন, এটাই লাভের বীজমন্ত্র।

৫) শেয়ার বাজারে যখন মন্দা, তখন উঁচু ডিভিডেন্ড প্রদানকারী সংস্থার শেয়ার কম দামে কেনার সুযোগ নিতে পারেন। দাম যত দিন না-বাড়ছে তত দিন ডিভিডেন্ড বাবদ প্রকৃত আয় বা ইল্ড ভাল হবে। অন্তত সেভিংস ব্যাঙ্কের সুদও যদি এই সময়ে অর্জন করা যায় তাতেই বা মন্দ কী? যাঁরা সরাসরি শেয়ারে লগ্নি করতে চান না, তাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডের ইল্ড ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন মন্দা বাজারে। খোঁজ নিয়ে দেখুন।

৬) তেজি বাজারে শেয়ার বিক্রি করে টাকা লিকুইড ফান্ডে রাখুন। বাজার নামলে ওই টাকায় ফের শেয়ার কিনুন। টাকা যেন অলস পড়ে না-থাকে।

৭) বাজার খোলার আগে এশিয়ার অন্যান্য বাজারের অবস্থা এবং আগের দিন সন্ধ্যায় মার্কিন বাজারের গতিবিধি দেখে বুঝতে পারবেন ভারতীয় বাজার কী অবস্থায় খুলতে পারে। ইঙ্গিত অনুযায়ী প্রস্তুত হন। ঠিক করুন, বাজার উপরে খুললে কী করবেন এবং উল্টোটা হলে কী করা উচিত।

৮) ব্যাঙ্ক সুদ যখন বাড়ার সম্ভাবনা, তখন ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ড থেকে বেরিয়ে আসুন। সুদ কমার মুখে বন্ড ফান্ড বা অন্য ডেট ফান্ডে লগ্নি করুন।

৯) সেভিংস অ্যাকাউন্টে পড়ে-থাকা অলস টাকা অন্য কোনও জায়গায় লগ্নি করা না-গেলে লিকুইড ফান্ড অথবা শর্ট টার্ম ফান্ডে রাখুন।

১০) উঁচু সুদের থেকে প্রকৃত আয়কে বেশি গুরুত্ব দিন। ১১.৫% করযুক্ত বন্ড থেকে ৮.৮৮% সুদযুক্ত করমুক্ত বন্ড অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, যদি আপনি ৩০% করের আওতায় পড়েন।

১১) ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতের থেকে ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান বা এফএমপি প্রকল্পে টাকা রাখা বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে করদাতাদের কাছে। এখানে মূল্যবৃদ্ধি সূচকের প্রয়োগ করে মূলধনী লাভ করের অনেকটাই সাশ্রয় করা সম্ভব।

১২) লম্বা মেয়াদে নিয়মিত টাকা জমাতে চান? কোনও ভাল ইক্যুইটি বা ব্যালান্সড প্রকল্পে খাতা খুলুন। ৮০-সি ধারায় কর সাশ্রয়ের প্রয়োজন থাকলে ই এল এস এস প্রকল্পের অধীনে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডে খাতা খুলুন।

১৩) ডিসকাউন্টে বাজার থেকে ভাল কোম্পানির বন্ড কিনতে পাওয়া গেলে, তা থেকে প্রকৃত আয় বা ইল্ড কী হতে পারে কষে দেখুন। বন্ড ফেস ভ্যালু থেকে কমে কেনা হলেও সুদ কিন্তু পাওয়া যায় ফেস ভ্যালুর উপরই এবং মেয়াদ শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যায় ফেস ভ্যালু অনুযায়ী।

১৪) সেভিংস অ্যাকাউন্টে যদি বড় অঙ্ক ফেলে রাখতেই হয়, তবে এমন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলুন যেখানে ৬ থেকে ৭ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়।

১৫) সোনায় লগ্নি করার প্রয়োজন থাকলে গোল্ড ইটিএফ কিনুন। প্রতি বার সোনার দাম পতনে টপ আপ করুন। চড়া বাজারে বিক্রির কথা ভাবতে পারেন।

১৬) কোনও চেক পাওয়া মাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিন। এখন সুদ কষা হয় দৈনিক ব্যালান্সের ভিত্তিতে। আরও ভাল হয় যদি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক ভাবে পাওনা টাকা সংগ্রহ করা যায়।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

bisfoy ashoy amitabha guha sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy