31-year-old businessman from Kanpur got married just two months was gunned down right in front of his wife in Kashmir dgtl
Pahalgam terror attack
মধুচন্দ্রিমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল এক লহমায়! বিয়ের দু’মাসের মাথায় স্ত্রীর চোখের সামনে জঙ্গিরা খুন করল স্বামীকে
মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে ভারতের ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ ঘুরতে এসেছিলেন শুভম ও তাঁর স্ত্রী ঐশ্বন্যা। ঐশ্বন্যা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁর সিঁথির লাল রং মুছে যাবে রক্তের দাগে। মঙ্গলবার দুপুরে অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় প্রাণ হারালেন ব্যবসায়ী শুভম।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
মাত্র দু’মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দম্পতি। ফেব্রুয়ারিতে চার হাত এক হয়েছিল কানপুরের ব্যবসায়ী শুভম দ্বিবেদীর। বিয়ের বয়সের হিসাবে সদ্যবিবাহিত বলাই যায়। গা থেকে এখনও মুছে যায়নি নতুন বিয়ের গন্ধটুকু। বিদেশ নয়, নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমার জন্য বেছে নিয়েছিলেন ভূস্বর্গকে। ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছিলেন ৩১ বছর বয়সি শুভম।
০২১৫
মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে ভারতের ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ বৈসরনে ঘুরতে গিয়েছিলেন শুভম ও তাঁর স্ত্রী ঐশ্বন্যা। ঐশ্বন্যা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁর সিঁথির লাল রং মুছে যাবে রক্তের দাগে। মঙ্গলবার দুপুরে অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ব্যবসায়ী শুভম। মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে বিধবা হলেন ঐশ্বন্যা।
০৩১৫
অতর্কিতে হামলার ফলে এলোপাথাড়ি গুলিতে রক্তে ভেসে যায় বৈসরন। এখনও পর্যন্ত সেই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই পর্যটক। হামলায় কেউ স্বামীকে হারিয়েছেন, কেউ পুত্রকে! মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবের নেপথ্যে ছিল চার থেকে ছ’জন জঙ্গি।
০৪১৫
স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গিদের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। কেউ কেউ আবার সেনার পোশাক পরেও এসেছিল। সকলের হাতে ছিল একে-৪৭। হঠাৎ করেই আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ভরে যায় উপত্যকা। সঙ্গে ভেসে আসতে থাকে আর্তচিৎকার। পর্যটকদের কাছে এসে একে একে তাঁদের গুলি করে হত্যা করতে শুরু করে জঙ্গিরা। সেই হামলায় প্রাণ হারান শুভম।
০৫১৫
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত ১৭ এপ্রিল স্ত্রী, শ্যালিকা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে যান শুভম। সেখানেই নাম জিজ্ঞাসা করার পর স্ত্রীর চোখের সামনে গুলি করে শুভমকে মেরে ফেলে জঙ্গিরা। সেই ঘটনা দেখে অজ্ঞান হয়ে যান ঐশ্বন্যা।
০৬১৫
শ্বশুরকে ফোন করে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানান শুভমের সদ্যবিধবা স্ত্রী। শুভমের তুতো ভাই সৌরভ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, অস্ত্রধারী জঙ্গিরা পর্যটকদের নাম জানার পর গুলি চালায়। তাঁর ভাইয়ের নাম জেনে কপালে গুলি করে জঙ্গিরা।
০৭১৫
সৌরভ বলেন, ‘‘শুভমের বিয়ে হয়েছে এই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। স্ত্রীর সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে বেড়াতে গিয়েছিল। বৌদিই কাকাকে ফোন করে জানান যে শুভমের মাথায় গুলি লেগেছে। বৌদি জানিয়েছে, সকলের নাম জিজ্ঞাসা করার পর গুলি চালানো শুরু হয়। আমরা জানতে পেরেছি যে, সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দু’-তিন দিন পর শুভমের মৃতদেহ আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’
০৮১৫
সিমেন্ট ব্যবসায়ী শুভম ১৬ এপ্রিল তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের আরও ন’জন সদস্যের সঙ্গে এক সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পরিবারের বাকি সদস্যেরা যখন হোটেলের কাছে আড্ডা দিচ্ছিলেন, তখন নবদম্পতি ঘোড়ায় চড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
০৯১৫
বুধবার শুভমদের কাশ্মীর ভ্রমণ শেষ করে দিল্লি ফেরার কথা ছিল। মর্মান্তিক খবর পাওয়ার পর কানপুর থেকে তাঁদের আত্মীয়েরা শুভমের মরদেহ শহরে ফিরিয়ে আনতে রওনা হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
১০১৫
পহেলগাঁও বেসক্যাম্প থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে, জাফরান, আখরোট, আপেলের বাগান আর জঙ্গলে ঢাকা, পাহাড়ে ঘেরা ওই ‘বুগিয়াল’ বসন্ত-গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে ভিড়ে ঠাসা থাকে। যেমনটা ছিল মঙ্গলবার দুপুরে। ঘোড়ায় চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে পর্যটকেরা পৌঁছেছিলেন পাহাড়ে ঘেরা প্রান্তরে।
১১১৫
স্থানীয় হোমস্টে লাগোয়া ছোট রেস্তরাঁগুলিতে ভিড় জমিয়েছিলেন ভেলপুরি, পাপড়ি চাটের জন্য। অনেকে আবার ঘোড়সওয়ারি করছিলেন বৈসরন ময়দান ও আশপাশের পাইন বনে। ঠিক সেই সময় হানা দেয় স্বয়ংক্রিয় রাইফেলধারী ঘাতকেরা।
১২১৫
শুভমদের মতো আরও এক নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমা সারতে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। শুভমের সঙ্গে মঙ্গলবারের জঙ্গিহানায় প্রাণ হারান সেই নৌসেনা লেফটেন্যান্ট। দিন সাতেক আগে ২৬ বছরের বিনয়ের সঙ্গে ২৪ বছরের হিমাংশী নরওয়ালের বিয়ে হয়। মধুচন্দ্রিমায় তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল ইউরোপ। কিন্তু ভিসার জটিলতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
১৩১৫
ভয়ঙ্কর ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বিনয়ের স্ত্রী হিমাংশী। হিমাংশী বলেন, ‘‘আমরা দু’জন ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক জন এসে ওকে গুলি করল।’’ নৌসেনার লেফটেন্যান্টকে গুলি করলেও ছেড়ে দেওয়া হয় হিমাংশীকে।
১৪১৫
অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে এখনও পর্যন্ত সেই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পর্যটক। আহতও হয়েছেন অনেকে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁদের।
১৫১৫
নিহত পর্যটকদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও রয়েছেন। রয়েছেন গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং ওড়িশার বাসিন্দারাও। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বাংলার তিন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে সমীর গুহ এবং বিতান অধিকারীর বাড়ি কলকাতায়। তৃতীয় জন মণীশরঞ্জন মিশ্র পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা।