A Bizarre Species of Bacteria Eat Toxic Metal and Produce Tiny Gold Nuggets dgtl
Metal-gobbling Bacteria
গরল গিলে বেমালুম হজম, বিষাক্ত ধাতু খেয়ে হলুদ ধাতু উগরে দেয় ‘জাদু জীবাণু’! এ বার কি সোনা ফলবে পরীক্ষাগারেই?
‘কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স’, অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার অনন্য ক্ষমতা রাখে নলাকৃতির এই জীবাণু। কয়েক বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকশো কিলোমিটার ব্যবধানের দু’টি স্থানে ‘সোনার টুকরো’র মধ্যে বেড়ে ওঠা ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছিলেন গবেষকেরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ১২:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসের গল্প তো আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ছোটবেলায় পড়েছি বা শুনেছি। প্রতি দিনই সকালে একটি করে সোনার ডিম পাড়ত সেটি। আদ্যোপান্ত কল্পকাহিনি বলে মনে হলেও বিজ্ঞানীরা সত্যিই এমন একটি ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছেন যার মধ্যে রয়েছে সোনা ‘ফলানোর’ আশ্চর্য ক্ষমতা।
০২১৬
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা এমন এক ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছেন যার মধ্যে রয়েছে অসাধারণ এক ক্ষমতা। বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগগুলিকে ২৪ ক্যারেট সোনায় রূপান্তরিত করতে সক্ষম সেই বিশেষ অণুজীবটি। ‘দ্য গ্রেট ওয়ার্ক অফ দ্য মেটাল লাভার’ শীর্ষক একটি শিল্প ও জৈবপ্রযুক্তির প্রদর্শনীতে এই সাফল্যের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন গবেষক অ্যাডাম ব্রাউন।
০৩১৬
ব্যাক্টেরিয়াটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স’। নলাকৃতির এই জীবাণুটি অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার অনন্য ক্ষমতা রাখে। কয়েক বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকশো কিলোমিটার ব্যবধানের দূরে দু’টি স্থানে ‘সোনার টুকরো’র মধ্যে বেড়ে ওঠা ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছিলেন গবেষকেরা।
০৪১৬
এটি বিজ্ঞানীদের ভাবতে বাধ্য করেছিল এই ব্যাক্টেরিয়া কি কেবল সোনার কাছাকাছি বাস করে, না কি তারা নিজেরাই সোনা তৈরি করতে সক্ষম? একই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছিল আরও একটি বিষয়। মাটিতে থাকা যে বিষাক্ত যৌগ থেকে তারা সোনার আয়ন তৈরি করে, সেটি কী ভাবে তাদের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
০৫১৬
২০০৯ সালে প্রথম ব্যাক্টেরিয়াটির সোনা উগরোনোর বিষয়টি লক্ষ করেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা লক্ষ করেন যে, এটি কোনও ভাবে বিষাক্ত সোনার যৌগ গ্রহণ করে এবং আপাত বিপদ ছাড়াই বিষাক্ত উপাদানটিকে মূল্যবান ধাতুর আকারে রূপান্তরিত করতে পারে।
০৬১৬
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গবেষণাগারে ব্যাক্টেরিয়াটিকে তুলে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। মাটির মধ্যে জন্ম নেওয়া বিষাক্ত পদার্থের সঙ্গে রাখার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই বিষ থেকে সোনা তৈরি করে ফেলে কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স। গোল্ড ক্লোরাইড নামক বিষাক্ত তরলের মধ্যে রাখা হলে অবিশ্বাস্য ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে জীবাণুটি।
০৭১৬
ব্যাক্টেরিয়াগুলি কেবল গোল্ড ক্লোরাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল এমন নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা বিষাক্ত রাসায়নিকটিকে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত করেছিল।
০৮১৬
গোল্ড ক্লোরাইড যখন মাটিতে মিশে থাকে, তখন এটি মূল্যহীন। তাতে সোনার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যও বজায় থাকে না। কিন্তু যখন এটি মেটালিডুরান্সের সংস্পর্শে আসে তখনই তা মূল্যবান ধাতু হয়ে ওঠে। গবেষকদলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি কিছুটা জটিল। তবে মূলত কুপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স বিষাক্ত পদার্থ গিলে ফেলতে এবং তা দিয়ে শরীর থেকে সোনার টুকরো বার করে দিতে সক্ষম।
০৯১৬
কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স গোল্ড ক্লোরাইডের দ্রবণকে গ্রহণ করে শরীর থেকে বর্জ্য নিঃসৃত করে। আর গবেষকেরা সেই বর্জ্য থেকেই খাঁটি সোনা সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন। গোটা প্রক্রিয়াটিকে ‘মাইক্রোবিয়াল অ্যালকেমি’ বলে অভিহিত করেছেন গবেষকেরা।
১০১৬
মধ্য যুগ থেকেই ধাতু ব্যবহার করে সোনা তৈরি করা সম্ভব কি না তা নিয়ে অ্যালকেমিস্টদের গবেষণার অন্ত ছিল না। রসায়নবিদ্যার জন্ম নাকি এই অ্যালকেমি থেকেই। অ্যালকেমি বা রসায়নের প্রাথমিক এই ধারায় দাবি করা হয়, বিভিন্ন ধাতু, বিশেষ করে সিসাকে সোনায় রূপান্তরিত করা সম্ভব। অন্য ধাতু না হলেও জীবাণুর সাহায্যে কৃত্রিম ভাবে সোনা ফলানো সম্ভব তা প্রমাণ করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
১১১৬
এই ব্যাক্টেরিয়াটি দু’টি পর্দা দ্বারা বেষ্টিত, যার মাঝখানে পেরিপ্লাজ়ম বা ঝিল্লি রয়েছে। বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য তাদের অল্প পরিমাণে তামার প্রয়োজন। কিন্তু তামা অতিমাত্রায় বিষাক্ত। এই ব্যাক্টেরিয়ায় ‘সিইউপিএ’ নামক একটি বিশেষ উৎসেচক রয়েছে, যা কোষের ভিতর থেকে অতিরিক্ত তামা পেরিপ্লাজ়মে বহন করতে পারে। সমস্যাটি তখন দেখা দেয় যখন ব্যাক্টেরিয়া সোনার আয়নের সংস্পর্শে আসে।
১২১৬
আয়নগুলি সহজেই ঝিল্লি বা পেরিপ্লাজ়ম পেরিয়ে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তখন এই যৌগগুলি ব্যাক্টেরিয়ার জন্য বিষাক্ত হিসাবে কাজ করে। তখনই ‘সিইউপিএ’ উৎসেচক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। পরিবর্তে ‘সিইউপিও’ নামের একটি উৎসেচক সক্রিয় হয়।
১৩১৬
এই উৎসেচক তামা এবং সোনার যৌগগুলিকে এমন ভাবে রূপান্তরিত করে, যা ব্যাক্টেরিয়ার কোষে প্রবেশ করতে পারে না। যৌগগুলি ব্যাক্টেরিয়ার কোষে প্রবেশ করতে না পারায়, সেগুলি ব্যাক্টেরিয়ার বাইরের স্তরেই জমা হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সোনার আস্তরণ গড়ে তোলে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা আকারে এই সোনা জমা হয় ব্যাক্টেরিয়ার আশপাশে।
১৪১৬
মেটালিডুরান্স ব্যাক্টেরিয়াই নয়, আরও অনেক ব্যাক্টেরিয়া আছে যারা আয়ন বা কোনও বিষকে হলুদ ধাতুতে রূপান্তরিত করতে পারে। কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘ডেল্ফশিয়া এসিডোভোরানস’ নামের এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে, যারা বিষাক্ত আয়নকে সোনায় বদলে ফেলতে পারে।
১৫১৬
সোনা কেবল বিরল বলেই মূল্যবান নয়। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি সৌন্দর্য, শক্তি এবং স্থায়িত্বের প্রতীক। বিয়ের গয়না থেকে শুরু করে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবেও সোনা প্রায় সমস্ত মানুষের কাছে ভরসার জায়গা। তবে কি ভবিষ্যতে ইচ্ছামতো সোনা উৎপাদন করা সম্ভব? তা-ও আবার জীবাণুর সহায়তায়।
১৬১৬
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের পরীক্ষাটি সফলতার মুখ দেখলেও বাস্তবে এর থেকে কৃত্রিম ভাবে সোনা উৎপাদন করা ব্যয়বহুল। তা ছাড়াও এই পরীক্ষাগুলি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সে কারণে পরীক্ষাগারে সোনার উৎপাদন বিষয়ে বিজ্ঞানীরা দ্বিধান্বিত। তাই যথেচ্ছ ভাবে সোনা ফলানোর আশা করা আপাতত অধরা স্বপ্নই।