All need to know about Chris McCandless, American youth who left family for adventure and died in 24 dgtl
Chris McCandless
কয়েকশো কোটির সম্পত্তি ছেড়ে দুর্গম পাহাড়, নদীতে ভ্রমণ! ২৪ বছর বয়সে না খেতে পেয়ে ‘ম্যাজিকে’ মৃত্যু হয় তরুণের
১৯৬৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফর্নিয়ার ইঙ্গলউডে এক ধনী পরিবারে ক্রিস্টোফারের জন্ম। ছেলেবেলা কাটে ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে এক বিত্তবান পাড়ায় বাস করত তাঁর পরিবার।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ০৯:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
তাঁর জীবন এখনও অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়। অনেকের কাছে এখনও তিনি স্বাধীন চেতনার প্রতীক। কারণ কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি উপেক্ষা করে প্রকৃতি এবং ভ্রমণকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ২৪ বছর বয়সে, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় সেই প্রকৃতির কোলেই।
০২১৯
কথা হচ্ছে ক্রিস্টোফার জনসন ম্যাকক্যান্ডলেসের। বিত্তশালী পরিবার এবং বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে প্রকৃতির টানে পাহাড়-জঙ্গলে পাড়ি দেওয়া এক যাযাবর। মাত্র ২৪ বছর বয়সে না খেতে পেয়ে প্রকৃতির কোলে মারা গিয়েছিলেন তরুণ। ক্রিস্টোফারের জীবন এতটাই রোমাঞ্চকর ছিল যে, আজও বহু প্রকৃতিপ্রেমীকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁর কাহিনি।
০৩১৯
১৯৬৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফর্নিয়ার ইঙ্গলউডে এক ধনী পরিবারে ক্রিস্টোফারের জন্ম। ছেলেবেলা কাটে ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে এক বিত্তবান পাড়ায় বাস করত তাঁর পরিবার।
০৪১৯
ক্রিস্টোফার ছিলেন ওয়াল্টার ম্যাকক্যান্ডলেস এবং উইলহেলমিনা মারি ম্যাকক্যান্ডলেসের প্রথম সন্তান। ক্যারিন নামে ছোট বোনও ছিল তাঁর। উইলহেলমিনা ছিলেন ওয়াল্টারের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম পক্ষের তরফে ছয় সন্তান ছিল ওয়াল্টারের।
০৫১৯
ওয়াল্টার ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) এক জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। মা উইলহেলমিনা ছিলেন ‘হিউজেস এয়ারক্রাফ্ট’ নামক আমেরিকার একটি মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার উচ্চ পদাধিকারী। সঙ্গে ছিল পারিবারিক ব্যবসাও।
০৬১৯
১৯৯০ সালের মে মাসে ‘ইমোরি ইউনিভার্সিটি’ থেকে ইতিহাস এবং নৃবিজ্ঞানে স্নাতক হন ক্রিস্টোফার। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক লেখালেখির জন্য একাধিক পুরস্কারও পান। বর্ণবৈষম্য, আফ্রিকার সমসাময়িক রাজনীতি এবং খাদ্যসঙ্কট নিয়ে গবেষণার জন্য বিশেষ সম্মানও পেয়েছিলেন তিনি।
০৭১৯
পড়াশোনা করতে করতেই বর্তমান ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলেন ক্রিস্টোফার। বিভিন্ন বৃত্তি পেয়ে এবং ছোটখাটো কাজ করে সেই অর্থ আয় করেছিলেন।
০৮১৯
পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরই প্রকৃতি ডাকতে থাকে ক্রিস্টোফারকে। প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা প্রবল হয় তাঁর। ভ্রমণের নেশা চেপে বসে। পার্থিব সম্পদের মায়াও ধীরে ধীরে কাটতে থাকে। ঠিক করেন, সব ছেড়ে ভবঘুরের জীবন বেছে নেবেন।
০৯১৯
এর পর নিজের যাবতীয় সঞ্চয় এক অসরকারি সংস্থাকে দান করে দেন ক্রিস্টোফার। একটি রেস্তরাঁয় রাঁধুনি হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৯০ সালে ইতিহাস এবং নৃবিজ্ঞানে স্নাতকের ডিগ্রি, পরিবার, অর্থ এবং এমনকি পরিবার সূত্রে পাওয়া নাম— সব কিছু পিছনে ফেলে অনির্দিষ্টের পথে যাত্রা শুরু করেন ক্রিস্টোফার।
১০১৯
ঘর ছাড়ার পরবর্তী কয়েক মাস ক্রিস্টোফার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণ করেন। একাধিক পাহাড়ও চড়েন। ১৯৯১ সালের গোড়ার দিকে নেভাদা ছেড়ে ক্যালিফর্নিয়া হয়ে দক্ষিণে অ্যারিজ়োনা এবং তার পর ডাকোটার পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন ক্রিস্টোফার। ইতিমধ্যেই হাতে থাকা পুঁজি শেষ হওয়ার কারণে কিছু দিন ডাকোটার একটি কারখানায় লিফ্টম্যান হিসাবে কাজ করতে হয় তাঁকে।
১১১৯
খানিক টাকা জমতেই আবার অনির্দিষ্টের পথে পাড়ি দেন ক্রিস্টোফার। জমানো টাকা নিয়ে কলোরাডোর দিকে যাত্রা শুরু করেন। বৈধ অনুমতি ছাড়া কলোরাডো নদীর আশপাশে ঘোরাফেরা করার জন্য বনকর্মীরা তাঁকে আটকও করেছিলেন। তবে বেশ কিছু দিন আটক রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
১২১৯
১৯৯২ সালে আলাস্কা পর্বতমালার উদ্দেশে পাড়ি দেন ক্রিস্টোফার। তার আগের কিছু দিন কলোরাডো নদীর তীরে বাস করেন। আলাস্কা যাওয়ার পথে টেকলানিকা নদী পার হতে হয় ক্রিস্টোফারকে। নদী পার হওয়ার সময় বিভিন্ন বাধাবিপত্তির সম্মুখীনও হন তিনি।
১৩১৯
ক্রিস্টোফার ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল আলাস্কার তাইগারের ডেনালি জাতীয় উদ্যানের কাছে পৌঁছোন। সেখানের মরুভূমিতে সম্পূর্ণ একা তিন মাসেরও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। থাকার জন্য বেছে নেন পরিত্যক্ত একটি বাস। বাসটির নাম দিয়েছিলেন ‘ম্যাজিক’। সেখানে গাছপালা এবং বেরি খেয়ে দিন কাটাতে থাকেন ক্রিস্টোফার।
১৪১৯
তিন মাস মরুভূমিতে কাটানোর পর ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার। ফেরার পথে দেখেন টেকলানিকা নদী পার হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কারণ না খেতে পেয়ে তাঁর শরীর তত দিনে ভেঙে পড়়েছে। ওজন কমে হয়েছে ৩০ কিলো। চেহারা কঙ্কালসার হয়ে যাওয়ার কারণে জামাকামড়ও ঢলঢলে হয়ে গিয়েছিল।
১৫১৯
অপুষ্টিতে ভুগে ক্রিস্টোফার ঠিকমতো চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। নদী পেরোতে না পেরে বাধ্য হয়ে আবার ওই পরিত্যক্ত বাসেই ফিরে আসেন তিনি। মৃত্যুর আগে শেষ কয়েক দিন সেখানেই কাটিয়েছিলেন।
১৬১৯
১৯৯২ সালের ১৮ অগস্ট ‘ম্যাজিক’-এই মৃত্যু হয় ক্রিস্টোফারের। ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। মৃত্যুর ১৯ দিন পর উদ্ধার হয়েছিল দেহ। মৃত্যুর সময় ক্রিস্টোফারের বয়স ছিল ২৪।
১৭১৯
ক্রিস্টোফারের জিনিসপত্র থেকে তাঁর লেখা বেশ কিছু চিঠি এবং চিরকুট পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলিতে নিজের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির কথা লিখেছিলেন তিনি। ক্রিস্টোফার নির্বোধ ছিলেন না। তিনি জানতেন আলাস্কার যাত্রাপথ কণ্টকময়। বিপদ পদে পদে। তবুও প্রকৃতির টানে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। বেছে নিয়েছিলেন কঠিন জীবন। তাঁর লেখাগুলি থেকেই এই সব কথা জানতে পারা যায়।
১৮১৯
ক্রিস্টোফারের মৃত্যুর পর তাঁর কাহিনি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগালেও কেউ কেউ তাঁকে বড়লোক বাবা-মায়ের বখাটে ছেলের তকমা দেন, যিনি নিজের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য বাড়ি ছাড়েন এবং মারা যান।
১৯১৯
ক্রিস্টোফারের জীবনকাহিনি নিয়ে পরবর্তী কালে বই লেখা হয়। হলিউডে সিনেমাও তৈরি হয় তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে। শঁ প্যাঁ পরিচালিত বিখ্যাত সেই সিনেমার নাম ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’।