All You Need to Know about Homebound Actor who went to cann film festival with his mother dgtl
Who Is Vishal Jethwa
বাবা ছিলেন ডাববিক্রেতা, মা পরিচারিকা! বলিউডে প্রথম কাজ বাঙালি নায়িকার সঙ্গে, মাকে নিয়ে কানের লাল গালিচায় হাঁটেন ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’
রানি মুখোপাধ্যায়ের দাপুটে অভিনয়ে পাশে কটা চোখে রক্ত জল করা চাউনি দিয়েই নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তরুণ অভিনেতা। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় উত্তরণের এই পথটি সহজ ছিল না তাঁর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
পর্দায় তাঁর দৃষ্টির নিষ্ঠুর শীতলতায় চমকে উঠেছিল সিনেপ্রেমীরা। রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমানতালে সাবলীল ভাবে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন ছোটপর্দা থেকে উঠে আসা এই অভিনেতা। ‘মর্দানী ২’-এর খলচরিত্র কিশোর অপরাধী ‘সানি’র ভূমিকায় তাঁর হাড়হিম করা উপস্থিতি কাঁপিয়ে দিয়েছিল দর্শকের বুক।
০২১৫
রানি মুখোপাধ্যায়ের দাপুটে অভিনয়ে পাশে কটা চোখে রক্ত জল করা চাউনি দিয়েই ২৫ বছরের বিশাল নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। তাঁর সহজাত অভিনয়ে বুকের রক্ত চলকে উঠেছিল দর্শকের। তিনি বিশাল জেঠওয়া। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় উত্তরণের এই পথটি সহজ ছিল না বিশালের কাছে। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে বলিউডে জায়গা পাকা করে নিচ্ছেন বিশাল।
০৩১৫
অস্কার ২০২৫-এর দৌড়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগের জন্য ভারত থেকে মোট ২৪টি ছবি মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে থেকে একটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে। সেটি হল ঈশান খট্টর-জাহ্নবী কপূর অভিনীত ‘হোমবাউন্ড’। সারা পৃথিবীর সিনেপ্রেমী মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিল এটি। ঈশান-জাহ্নবীর পাশাপাশি এই ছবিতে দেখা গিয়েছে বিশালকে। ২০২৫ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয় ‘হোমবাউন্ড’-এর। কানের রেড কার্পেটে সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন বিশালও।
০৪১৫
নিজে যে ছবিতে অভিনয় করেছেন সেই ছবি কানের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এই প্রাপ্তি তো ছিলই। তার চেয়েও বিশালের কাছে বড় পাওনা হল প্রথম বার মাকে নিয়ে বিমানের বিজ়নেস ক্লাসের টিকিটে বিদেশ ভ্রমণ। কারণ তাঁদের পরিবারের কাছে একসময় বিদেশ ভ্রমণ ছিল ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার সমার্থক। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন বিশাল।
০৫১৫
১৯৯৪ সালের ৬ জুলাই এক গুজরাতি পরিবারে বিশালের জন্ম হয়। বাবা নরেশ জেঠওয়া ও মা প্রীতি জেঠওয়া। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা বিশাল ছোট থেকে অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন। জীবিকার খোঁজে বিশালের বাবা একসময় মুম্বই পাড়ি দেন। বাণিজ্যনগরীতে এসে অকূলপাথারে পড়েছিল জেঠওয়া পরিবার।
০৬১৫
ছোটখাটো কাজকর্ম করে যা আয় হত তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরিবারের অন্ন সংস্থান করার জন্য মুম্বইয়ের সড়কে ডাব বিক্রি করা শুরু করেন নরেশ। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল ঘিঞ্জি ‘চালে’। ছোট থেকে অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও লেখাপড়ার জন্য ছেলেকে উৎসাহ দিতে নরেশ ও প্রীতি।
০৭১৫
মুম্বইয়ে থিতু হতে না হতেই মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে বিশাল ও তাঁর মায়ের। বেশি দিন বাবার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়নি বিশালের। হঠাৎ করেই মারা যান বিশালের বাবা নরেশ। অকূলপাথারে ভেসে যাওয়ার জোগাড় হয় বিশাল ও তাঁর মায়ের। ছেলের পড়াশোনা বজায় রাখতে ও সংসারের হাল ধরতে রোজগার করতে বেরোতে হয় প্রীতিকে।
০৮১৫
শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন না থাকায় প্রীতির পক্ষে চাকরি জোটানো সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি পরিচারিকার কাজ নেন। দিনের পর দিন অন্যের বাড়িতে রান্না করে, বাসন মেজে, ঘর পরিষ্কার করে বিশাল এবং আরও দুই সন্তানকে বড় করে তোলেন প্রীতি। পরিচারিকার কাজ করার সময় বহু অপমান মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই অপমান মুখ বুজে সহ্য করে চলেন দিনের পর দিন।
০৯১৫
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মুম্বইয়ের ঠাকুর কলেজ অফ কমার্স থেকে স্নাতক হন বিশাল। কলেজে পড়ার সময় থেকে থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। ছোটপর্দায় অভিনয়ের সুযোগের জন্য প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থার দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়েই কেটে যায় বিশালের। যখন যে চরিত্রে প্রস্তাব পেয়েছেন তা করতে দ্বিধাবোধ করেননি।
১০১৫
এমনকি বলিউডে মাথা গলানোর জন্য স্পট বয় বা আলোও ধরার কাজও করেছেন ‘মর্দানী টু’-খ্যাত এই অভিনেতা। শেষমেশ ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে ২০১৩ সালে। হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ আসে বিশালের। অভিনয় দক্ষতার জন্য নজরে পড়েন নির্মাতাদের।
১১১৫
পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, চালে বসবাসকারী অন্য সব শিশুর মতো তিনিও আকাশে বিমান দেখে অবাক হয়ে যেতেন। আর বিদেশ যাওয়া তো কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মায়ের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণের আনন্দ বিশালের কাছে খুবই মূল্যবান। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্তটি তাঁর জীবনে অনেক কিছু পাওয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
১২১৫
২০১৩ সালে ‘মহারানা প্রতাপ’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ করেন বিশাল। ঐতিহাসিক এই ধারাবাহিকে আকবর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। চলচ্চিত্র দুনিয়ায় পা রাখার আগে বিশাল ‘দিয়া অউর বাতি হাম’, ‘পেশওয়া বাজিরাও’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান।
১৩১৫
বিশালের বলিউ়ড অভিষেক ‘মর্দানী টু’-এর হাত ধরে। জীবনের প্রথম ছবিতেই রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ। এর পর তিনি কাজলের সঙ্গে ‘সালাম ভেঙ্কি’ এবং সলমন খান ও ক্যাটরিনা কাইফের ‘টাইগার ৩’ ছবিতে অভিনয় করেন। ‘মর্দানী টু’র পরে তাঁর কাছ থেকে দর্শকের অনেক প্রত্যাশা তৈরি হলেও খুব বেশি ছবিতে তাঁকে দেখা যায়নি।
১৪১৫
২০২২ সালে ওয়েব সিরিজ় ‘হিউম্যান’-এর মাধ্যমে আবার বলিউডে ‘কামব্যাক’ হয় বিশালের। নিজেকে আরও তৈরি করে স্ক্রিনে ফেরত আসতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করার ব্যাপারে প্রথমে বিশালের অনীহা থাকলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ‘হিউম্যান’-এর আগেও বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ়ের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিশাল।
১৫১৫
৩১ বছর বয়সি বিশালের পছন্দের অভিনেতারা হলেন ইরফান খান, সঞ্জয় মিশ্র, নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি। এঁদের অনুসরণ করার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন। অভিনয়ের জন্য আশপাশের মানুষদের খুব লক্ষ করেন। তাঁদের আচরণ অভিনয়ের সময় নানা ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। যোগ্য মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ‘হোমবাউন্ড’-এর এই অভিনেতা।