All you need to know about Zizians, whose name is linked with gruesome crimes dgtl
Zizians
কৃত্রিম মেধার সমালোচক, খুন ছ’জনকে, নেতা নাসার প্রাক্তন রূপান্তরকামী প্রযুক্তিবিদ, ভয় ধরাবে ‘জিজিয়ান’দের কাহিনি
বিভিন্ন বিশ্বাসমতে চলা এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে, যেখানে গোষ্ঠীর সদস্যরা গোষ্ঠীনেতার সব কথা অন্ধের মতো অনুসরণ করেন। এমনকি, নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে স্বাধীনতাও খোয়াতে হয় তাঁদের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
বিভিন্ন বিশ্বাসে চলা এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে, যেখানে গোষ্ঠীর সদস্যরা গোষ্ঠীনেতার সব কথা অন্ধের মতো অনুসরণ করেন। এমনকি, নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে স্বাধীনতাও খোয়ান। অনেকে আবার ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।
০২২৩
এই সব বিশেষ কিছু বিশ্বাস মেনে চলা গোষ্ঠীর নেতারা অনেক সময়ই বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের বিপথে চালিত করেন। সে রকমই একটি গোষ্ঠী ‘জিজিয়ান’। ওই গোষ্ঠীর এ বার নাম জড়িয়েছে আমেরিকার বুকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছ’টি খুনের সঙ্গে।
০৩২৩
জিজিয়ান নামে পরিচিত ওই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ৩৪ বছর বয়সি যুবক জ্যাক লাসোটা। অনুপ্রবেশ এবং ধস্তাধস্তির অভিযোগে কয়েক দিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। জ্যাকের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী মিশেল জাজকো এবং ড্যানিয়েল ব্ল্যাঙ্কও গ্রেফতার হয়েছেন।
০৪২৩
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ছ’টি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে যে খুনগুলি জিজিয়ান গোষ্ঠীর সদস্যেরা করেছেন বলে সন্দেহ।
০৫২৩
এই খুনগুলির মধ্যে রয়েছে পেনসিলভ্যানিয়ায় জোড়া হত্যাকাণ্ড, ক্যালিফোর্নিয়ায় ছুরির হামলা এবং জানুয়ারিতে এক জন মার্কিন সীমান্তরক্ষীকে গুলি।
০৬২৩
জিজিয়ান গোষ্ঠীর তিন জন অভিযুক্ত সদস্যের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
০৭২৩
কিন্তু জিজিয়ানদের উৎপত্তি কী ভাবে? ওই গোষ্ঠীর মাথা লাসোটা, এক জন রূপান্তরকামী মহিলা। ২০১৩ সালে আলাস্কা-ফেয়ারব্যাঙ্কস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন লাসোটা। তিন বছর পর তিনি সান ফ্রান্সিসকো চলে যান।
০৮২৩
লাসোটার ব্লগ অনুযায়ী, সান ফ্রান্সিসকোয় বেশ কয়েকটি নামী এবং স্টার্টআপ প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতেও শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেছিলেন। এর পর তাঁর সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় যুক্তিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের।
০৯২৩
লাসোটার দাবি ছিল, জলের মতো পরিষ্কার সত্য দেখার, খারাপ চিন্তাভাবনা দূর করার এবং ব্যক্তি ও সমাজকে উন্নত করাই তাঁর লক্ষ্য। এর পর ‘জিজ’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে ব্লগ লেখা শুরু করেন লাসোটা। কিন্তু শীঘ্রই মূলধারার যুক্তিবাদীদের থেকে তিনি সরে আসেন। তাঁর লেখাতেও বদল আসতে শুরু করে।
১০২৩
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি, দর্শন, পপ সংস্কৃতি, কম্পিউটার কোডিংয়ের পাশাপাশি সাঙ্কেতিক এবং অদ্ভুত জিনিসও ব্লগে লিখতে শুরু করেন লাসোটা। এক পর্যায়ে টিভি সিরিজ় ‘দ্য অফিস’, কৃত্রিম মেধা-সহ অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সমালোচনা করতেও শুরু করেন তিনি।
১১২৩
একটি ব্লগে লাসোটা লিখেছিলেন, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি আর মানুষকে সহ্য করতে পারছি না। এমনকি যুক্তিবাদীদেরও না। এবং আমি আমার বাকি জীবন সম্পূর্ণ একা কাটাব। অন্যের প্রতি আমার মনোভাব লুকিয়ে রাখব। আমি সুন্দর জিনিস দেখা বন্ধ করে দিয়েছি যাতে আমি খারাপ জিনিস দেখতে পারি।’’
১২২৩
একই সঙ্গে ‘ভেগান’ খাবার এবং নৈরাজ্যবাদের সমর্থনেও ব্লগ লিখতে শুরু করেন লাসোটা। ২০১৯ সালে যুক্তিবাদী সংগঠন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের বাইরে প্রতিবাদ করার সময় লাসোটা এবং তাঁর তিন সঙ্গী গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। ইতিমধ্যে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৩২৩
২০১৯ সালের পর দীর্ঘ সময় ভবঘুরের মতো জীবন কাটিয়েছেন লাসোটা এবং তাঁর সঙ্গীরা। এক সময় নৌকাতেও বাস করতেন তাঁরা। ক্যালিফোর্নিয়া এবং উত্তর ক্যারোলিনায় অনুরাগীদের বাড়িতে আশ্রয় নিতেন মাঝেমধ্যে।
১৪২৩
২০২২ সালে, যুক্তিবাদী সংগঠনের সভার বাইরে বিক্ষোভের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন লাসোটা। কিন্তু সেই সময়ে তাঁর আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি নৌকা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
১৫২৩
লাসোটার মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। আলাস্কার একটি সংবাদপত্রও সেই খবর ছাপায়। লাসোটাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায় সব জায়গায়। কিন্তু আসলে মোটেও মারা যাননি লাসোটা। বহাল তবিয়তেই বেঁচেছিলেন গোপন আস্তানায়। এ দিকে লাসোটার ভক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে দিনে দিনে।
১৬২৩
বিভিন্ন জায়গায় দিনের পর দিন বিভিন্ন আস্তানায় থেকে ভাড়া দেওয়া নিয়ে অশান্তি করতে শুরু করেন লাসোটা এবং তাঁর সঙ্গীরা। ‘জিজ’ ছদ্মনাম নিয়েছিলেন লাসোটা। তাই তাঁর অনুরাগীরা নিজেদের জিজপন্থী বা ‘জিজিয়ান’ বলতে শুরু করেন।
১৭২৩
এ দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেজোতে গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে ‘আবির্ভূত’ হন লাসোটা। তাঁর দলের বেশ কয়েক জন সদস্য কার্টিস লিন্ড নামে এক ব্যক্তির জমি দখল করে বাস করছিলেন। তাঁদের নামে মামলা করেন লিন্ড।
১৮২৩
২০২২ সালের নভেম্বরে লিন্ডের উপর আক্রমণের অভিযোগ ওঠে জিজিয়ানদের বিরুদ্ধে। ৫০ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল তাঁকে। তাঁর এক চোখ অন্ধও হয়ে যায়। তবে লিন্ডের ছোড়়া গুলিতে এমা বোরহানিয়ান নামে এক জিজিয়ান তথা প্রাক্তন গুগ্ল কর্মীর মৃত্যু হয়।
১৯২৩
লিন্ডকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে সুরি দাও এবং সোমনি লোগেনসিয়া নামে জিজিয়ান গোষ্ঠীর দুই সদস্যকে সেই সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। লাসোটাও নাকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি।
২০২৩
২০২২ সালে পেনসিলভ্যানিয়ার একটি ছোট শহরে গোষ্ঠীরই এক সদস্য মিশেল জাজকোর বাবা-মাকে খুনের অভিযোগ ওঠে জিজিয়ানদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় মিশেল গ্রেফতার হন। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান। লাসোটাকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।
২১২৩
এর পর আবার ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার সেই জমির মালিক লিন্ড খুন হন। আঙুল ওঠে সেই জিজিয়ানদের বিরুদ্ধেই। ভ্যালেজো পুলিশ বিভাগ জানিয়েছিল, মুখোশ পরা এক আততায়ী লিন্ডকে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়।
২২২৩
এর মাত্র কয়েক দিন পরেই মার্কিন সীমান্ত টহলরত ডেভিড মালান্ড নামে এক নিরাপত্তারক্ষী খুন হন। অভিযোগ ওঠে, টেরেসা ইয়ংব্লুট এবং ফেলিক্স বাউকহোল্টের নামে দু’জনের বিরুদ্ধে। তাঁরা দু’জনেই জিজিয়ান গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। যদিও নিরাপত্তারক্ষীর ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ফেলিক্সের। টেরেসা গ্রেফতার হন।
২৩২৩
অন্য দিকে, পুলিশ হত্যাকাণ্ডগুলির তদন্ত চালাতে থাকে। তদন্তকারীদের হাতে ধরা পড়েন বেশ কয়েক জন পলাতক। লাসোটারও খোঁজ শুরু হয়। গত রবিবার আমেরিকার মেরিল্যান্ডে দুই সঙ্গীর সঙ্গে তিনিও গ্রেফতার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডগুলিতে লাসোটার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।