Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৫
Balochistan Crisis

পাক বধে বালোচ ‘মাতৃশক্তি’! আইনের ছাত্রী, মেডিক্যাল পড়ুয়াদের বাহিনীর ভয়ে কাঁটা ইসলামাবাদ

অপহৃত জাফর এক্সপ্রেস থেকে পণবন্দিদের মুক্ত করেছে পাক ফৌজ। কিন্তু, বিএলএ-র হামলা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, বালোচ মহিলাদেরও খোলা সমর্থন পাচ্ছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:২৮
Share: Save:
০১ ১৮
Balochistan Crisis

জাফর এক্সপ্রেস অপহরণকাণ্ডে রক্তাক্ত পাকিস্তান। যত সময় গড়াচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমের বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবি। এই আবহে বার বার খবরের শিরোনামে আসছে একটি নাম। তা হল, ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ)। সশস্ত্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণে ইসলামাবাদের ফৌজি জেনারেলদের ‘ত্রাহি মাম’ দশা। গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে পাক সেনাকে একরকম নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে তারা।

০২ ১৮
Balochistan Crisis

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে বিএলএ। পাক ফৌজিদের পাশাপাশি পঞ্জাব প্রদেশের শ্রমিকদেরও নিশানা করছে তারা। বালোচিস্তানে কাজের খোঁজে গিয়ে বিএলএ-র ‘মজিদ ব্রিগেড’-এর আত্মঘাতী হামলার মুখে পড়ে প্রাণ গিয়েছে অসংখ্য পঞ্জাববাসীর। বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, খনিসমৃদ্ধ এলাকাটির উপর থেকে ধীরে ধীরে রাশ আলগা হচ্ছে ইসলামাবাদের।

০৩ ১৮
Balochistan Crisis

স্বাধীন বালোচিস্তান তৈরির স্বপ্ন নিয়ে সেখানকার তরুণ-তরুণীদের হাতিয়ার হাতে তুলে নেওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। পাকিস্তানের এই দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশটি খনিসমৃদ্ধ। কিন্তু, তার পরও সেখানকার দেড় কোটি বাসিন্দা রয়েছেন দারিদ্রসীমার নীচে। বিএলএ-র অভিযোগ, পাক পঞ্জাব প্রদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ফৌজি কর্তা থেকে শুরু করে অভিজাতেরা তাঁদের শোষণ করছেন। নিজেদের পকেট ভরাতে অবাধে লুট করা হচ্ছে বালোচিস্তানের সম্পদ।

০৪ ১৮
Balochistan Crisis

বিষয়টি নিয়ে কিছু দিন আগেই একটি বিবৃতি দেয় স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সেখানে বিএলএ স্পষ্ট করে জানায়, ‘‘বালোচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ বালোচ জাতির। পাক সেনার জেনারেল এবং পঞ্জাব প্রদেশের অভিজাতেরা নিজেদের বিলাসিতার স্বার্থে সেটা লুট করছে। ফলে অধিকাংশ বালোচ আজ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গিয়েছেন। হাতের কাছে এত কিছু থাকা সত্ত্বেও তাঁরা প্রান্তিক। এটা আমরা কখনওই সহ্য করব না।’’

০৫ ১৮
Balochistan Crisis

বালোচিস্তান নিয়ে লম্বা সময় ধরে গবেষণা চালাচ্ছে ইসলামাবাদের ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ়’। তাদের দাবি, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশটিতে হিংসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। এর জন্য পাক ফৌজকে দায়ী করেছে তারা। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে বালোচিস্তানবাসীকে বুটের তলায় রাখতে চেয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেননি তাঁরা।

০৬ ১৮
Balochistan Crisis

বালোচিস্তানের মধ্যে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার দ্বিতীয় কারণ হল পাক সেনার অত্যাচার। সেখানকার বহু নিরীহ বালোচ যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে গুমখুনের অভিযোগ রয়েছে পাক ফৌজের বিরুদ্ধে। বিএলএ ও বালোচ মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যাওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাপিয়ে গিয়েছে। তাঁদের মৃতদেহ পর্যন্ত পরিজনদের হাতে দেওয়া হচ্ছে না। এই নিয়ে প্রশ্ন তুললেই জুটছে মার। পাশাপাশি, গোটা বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে বকলমে অস্বীকার করছে পাক সেনা।

০৭ ১৮
Balochistan Crisis

পাক মানবাধিকার কমিশন অবশ্য বালোচ জনগণের দুর্দশার প্রতি সরকারি উদাসীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে তারা। সব মিলিয়ে বালোচিস্তানে দিন দিন বাড়ছে বিক্ষোভ। গত কয়েক বছরে হু-হু করে বেড়েছে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠনগুলির সদস্যসংখ্যা। বর্তমানে সেটা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৮ ১৮
Balochistan Crisis

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বালোচিস্তানের মানবাধিকার সংগঠনগুলিতে বাড়ছে মহিলাদের যোগদান। বহুল পরিমাণে আইনের ছাত্রী সামনের সারিতে থেকে নিখোঁজদের নিয়ে তথ্য প্রকাশের পক্ষে আওয়াজ তুলছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে চিকিৎসাবিদ্যার স্নাতকদের। এক কথায়, শাহবাজ় সরকারের উপর দ্বিমুখী চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বালোচিস্তানের বাসিন্দারা।

০৯ ১৮
Balochistan Crisis

সিঙ্গাপুরের ‘এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ়’-এর গবেষক আব্দুল বাসিতের কথায়, ‘‘বিএলএ স্থানীয় জনতার হতাশা এবং ক্ষোভকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, মানবাধিকারের প্রশ্নে বালোচবাসীর অধিকাংশ অভিযোগই সত্য। যে ভাবে জোর করে পাক ফৌজ তাঁদের কণ্ঠরোধ করছে, তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলেও বলার কিছুই নেই।’’

১০ ১৮
Balochistan Crisis

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথম দিকে শুধুমাত্র পুরুষ যোদ্ধাদেরই ব্যবহার করত বিএলএ। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গা থেকেও সরে এসেছেন তাঁরা। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু আত্মঘাতী হামলায় মহিলাদের কাজে লাগিয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতেই স্পষ্ট যে ধীরে ধীরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সমস্ত বালোচ নাগরিকের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে এই বিদ্রোহী দল।

১১ ১৮
Balochistan Crisis

বাসিত বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ফাটলটা দেখা যাচ্ছে বালোচিস্তানে। সরকারের ফাটল বোজানোর কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। অন্য দিকে প্রশাসনকে পাত্তা না দিয়ে শুধু বলপ্রয়োগই করে যাচ্ছে সেনা। এতে ফল হচ্ছে হিতে বিপরীত।’’

১২ ১৮
Balochistan Crisis

২০১৩ সালে বেজিংয়ের সঙ্গে মিলে ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’-এর (সিপিইসি) কাজ শুরু করে ইসলামাবাদ। বালোচিস্তানের গ্বদর বন্দর থেকে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার লম্বা রাস্তা তৈরির কথা বলা হয়েছে এই প্রকল্পে।

১৩ ১৮
Balochistan Crisis

প্রাথমিক ভাবে সিপিইসিতে স্থানীয় বালোচ যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ বেজিং বা ইসলামাবাদ, কেউই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। উল্টে গ্বদরে নতুন বন্দর তৈরি করায় সেখানে মৎস্য শিকারের অধিকার হারিয়েছেন বালোচরা। ফলে নতুন করে গোটা প্রদেশটির স্বাধীনতার দাবি জোরদার হয়েছে।

১৪ ১৮
Balochistan Crisis

কিছু দিন আগেই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে চিনের শি জিনপিং সরকারকে খোলাখুলি হুমকি দেয় বিএলএ। বালোচিস্তানের সিপিইসি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল তাদের এক কমান্ডারের মুখে। পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু চিনা ইঞ্জিনিয়ার এবং শ্রমিকের উপর হামলাও চালায় এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

১৫ ১৮
Balochistan Crisis

তবে চলতি বছরের ১১ মার্চ এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলাটি চালায় বিএলএ। বালোচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস অপহরণ করে তারা। এর পর যাত্রীদের পণবন্দি করে শাহবাজ় সরকারের কাছে রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির দাবি তোলে বালোচিস্তানের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

১৬ ১৮
Balochistan Crisis

এই পরিস্থিতিতে জাফর এক্সপ্রেস থেকে পণবন্দিদের উদ্ধার করতে ফৌজি অভিযানের নির্দেশ দেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। এর পরই ট্রেনটিকে ঘিরে ফেলে পাক কমান্ডোরা। বিএলএ-র সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে তাদের গুলির লড়াই। তাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির ৩০ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, উদ্ধার করা গিয়েছে ৩০০-র বেশি পণবন্দিকে।

১৭ ১৮
Balochistan Crisis

পাক সেনার তরফে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেওয়া বিবৃতিতে এই অভিযানে ২৮ জন ফৌজির মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে ২৭ জন জাফর এক্সপ্রেসে সাধারণ যাত্রী হিসাবে ছিলেন। গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও এক সেনা সদস্য।

১৮ ১৮
Balochistan Crisis

বিশ্লেষকদের দাবি, যে ভাবে স্বাধীনতার দাবি জোরদার হচ্ছে, তাতে বালোচিস্তান শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদের হাতছাড়া হলে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়বে ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী। কারণ, পাকিস্তানের মোট জমির ৪৪ শতাংশই রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের খনিসমৃদ্ধ প্রদেশটিতে। দ্বিতীয়ত, পাক ফৌজের পরমাণু হাতিয়ারের সবচেয়ে বড় অংশটি রাখা আছে বালোচিস্তানের গুপ্ত ঘাঁটিতে। আর তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই মুঠো শক্ত করতে মরিয়া রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy