Co-founder of Apple, Steve jobs denied being a father to his newborn daughter Lisa dgtl
Lisa Brennan-Jobs
মানতে চাননি পিতৃত্ব, নেননি ভরণপোষণের দায়িত্ব! সেই মেয়ের নামেই কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের নাম রাখেন অ্যাপ্লকর্তা
মেয়ের জন্মের পর বদলে যান জোবস। নামকরণ করলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লিজ়া ব্রেনানকে নিজের সন্তান বলে স্বীকৃতি দিতে চাননি স্টিভ। ডিএনএ পরীক্ষার পরে লিজ়ার পিতৃত্ব মানতে চাননি স্টিভ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
১৯৭২ সাল। দু’জনেই হাই স্কুলের পড়ুয়া। একে অপরকে মন দিয়ে বসেছিলেন স্টিভ জোবস ও ক্রিস্যান ব্রেনান। কলেজে ভর্তি হয়েও তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক অটুট ছিল। ১৯৭২ সাল থেকে প্রায় ছ’বছর টিকে ছিল এ সম্পর্ক। ক্রিস্যানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকার সময়ই অ্যাপ্লের গোড়াপত্তন করেছিলেন স্টিভ। সঙ্গী আর এক স্টিভ, পদবি ওজ়নিয়াক।
০২১৮
১৯৭৬ সালের এপ্রিলে জোবসের বাবা-মায়ের বাড়ির গ্যারাজে আত্মপ্রকাশ করে অ্যাপ্ল। তখনও অ্যাপ্ল টেক জায়ান্ট তকমা পাওয়ার থেকে বহু যোজন দূরে। সেই সময়ে চুটিয়ে প্রেম করতেন হাই স্কুলের বান্ধবীর সঙ্গে। তাঁরা দু’জনে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। স্টিভ তখনও ‘স্টিভ জোবস’ হয়ে ওঠেননি।
০৩১৮
কৈশোরের প্রেমের রেশটুকু ছিল কলেজ পর্যন্ত। ২৩ বছর বয়সে প্রথম বার বাবা হন স্টিভ। ক্রিস্যানও তখন ২৩-এর কোঠায়। অ্যাপ্লের প্রাণপুরুষ সেই স্টিভকে কাছের মানুষেরা বরাবরই উগ্র মেজাজের বলে চিনতেন। বান্ধবীর সঙ্গে একত্রবাস করলেও ধীরে ধীরে সম্পর্কের সুতো আলগা করছিলেন স্টিভ।
০৪১৮
আমেরিকার ওরেগনের একটি খামারবাড়িতে প্রসববেদনায় ভুগতে থাকা তরুণীকে নির্দ্বিধায় ফেলে চলে এসেছিলেন স্টিভ। ১৯৭৮ সালের ১৭ মে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ক্রিস্যান। সে দিনও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন স্টিভ। কয়েক দিন পরে তিনি উড়ে এসেছিলেন সেখানে। একটি বই থেকে সদ্যোজাত কন্যার নামটি বেছে দিয়ে আবারও ফিরে গিয়েছিলেন নিজের দুনিয়ায়।
০৫১৮
মেয়ের জন্মের পর বদলে যান জোবস। নামকরণ করলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত লিজ়া ব্রেনানকে নিজের সন্তান বলে স্বীকৃতি দিতে চাননি স্টিভ। এই নিয়ে ক্রিস্যানের সঙ্গে স্টিভের প্রবল মনোমালিন্য শুরু হয়। মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান তিনি। ডিএনএ পরীক্ষার পরে যখন জানা যায় তিনিই লিজ়ার বাবা, তখনও সে কথা মানতে চাননি স্টিভ। বলেছিলেন, ‘‘এই পরীক্ষার উপর কোনও ভরসাই করা যায় না।’’
০৬১৮
মেয়ের পিতৃত্ব অস্বীকার করলেও লিজ়ার জন্মের পর পরই অ্যাপ্লে জোবসের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ারেরা একটি নতুন প্রকল্পে হাত দিয়েছিলেন। একটি গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ, আইকন, একটি মাউস এবং সফ্টঅয়্যার-সহ একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার। আকারে ছোট কিন্তু ব্যবহার করা সহজ এমন একটি কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করেন জোবস ও সহযোগীরা। সেই সময়ে প্রকল্পটিতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ডলার।
০৭১৮
এই প্রকল্পটি ম্যাকিনটশের পূর্বসূরি বলে চিহ্নিত হয়েছিল। আর আশ্চর্যের বিষয়, এই প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘লিজ়া’। মেয়ের নামে কোটি কোটি ডলারের প্রকল্প চালু করলেও মেয়ে লিজ়ার জন্য এক ডলারও বরাদ্দ করেননি অ্যাপ্লের প্রতিষ্ঠাতা, যাঁর হাত ধরেই প্রযুক্তি কড়া নেড়েছিল সাধারণ আমেরিকাবাসীর দরজায়। যদিও ৯৯৯৫ ডলার মূল্যের লিজ়া নামের কম্পিউটারটি জনগণের মনে ছাপ ফেলতে পারেনি।
০৮১৮
কাগজে-কলমে যিনি অন্তত কয়েক কোটি টাকার মালিক ছিলেন তাঁরই বান্ধবী এবং মেয়েকে সাহায্যের হাত পাততে হত সামাজিক দাতব্য সংস্থাগুলিরকাছে। তাঁদের লড়াইয়ের দিনগুলিতে প্রতিবেশীদের যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছেন মা-মেয়ে। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপ্লের আইপিও হঠাৎ করে জোবসকে প্রভূত সম্পত্তির মালিক করে তোলে।
০৯১৮
২০১৮ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘স্মল ফ্রাই’-য়ে এই দাবি করেছেন স্টিভের বড় মেয়ে লিজ়া ব্রেনান-জোবস। জন্মের পর কয়েক বছর প্রথম সন্তানের দিকে ফিরেও তাকাননি জোবস। মেয়ের জন্য কোনও খোরপোশ দিতেন না। পরে খোরপোশের মামলায় হেরে গিয়ে মেয়ের দেখভাল শুরু করেন। প্রাথমিক ভাবে ৩৮৫ ডলার করে মেয়ের জন্য পাঠাতেন জোবস।
১০১৮
লিজ়া যখন সদ্য কিশোরী, তখন তিনি বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর একসঙ্গে ছিলেনও তাঁরা। লিজ়া ভেবেছিলেন বাবা-মেয়ের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সেই ইচ্ছাপূরণ হয়নি লিজ়ার। তত দিনে স্টিভঘরনি হয়েছেন লরেন পাওয়েল। আত্মজীবনীতে লিজ়া উল্লেখ করেছেন, ‘‘বাবাকে খুব ভয় পেতাম। মাঝেমধ্যেই খুব অদ্ভুত আচরণ করতেন উনি।’’ সৎমাও তাঁকে পছন্দ করতেন না বলে জানিয়েছেন লিজ়া।
১১১৮
সৎমা লরেনের সঙ্গে লিজ়ার সম্পর্কের টানাপড়েনের কথাও উঠে এসেছে আত্মজীবনীতে। এক বার মনোবিদের কাছে কিশোরী লিজ়া কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছিল, বাবা ও সৎমা তাকে নিজের বলে মনে করে না। লিজ়ার দাবি, টাকাপয়সার ব্যাপারেও খুব কড়া ধাতের ছিলেন স্টিভ। এমনকি মেয়ের গা থেকে শৌচাগারের গন্ধ বেরোয় বলে কটূক্তি করতেও ছাড়েননি তিনি।
১২১৮
সামান্যতম সুখ বা স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাও করা হয়নি লিজ়ার জন্য। শীতকালে ঠান্ডায় কাঁপতেন লিজ়া। লিজ়ার ঘরে ‘হিটিং মেশিন’ বসানোয় পর্যন্ত বাধা দিয়েছিলেন স্টিভ। মেয়েকে বলেছিলেন, ‘‘সব রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে তৈরি রেখো।’’ অনেক সময়েই শেষ দিন পর্যন্ত লিজ়ার স্কুলের টাকা জমা দিতেন না স্টিভ। রেস্তরাঁয় খেতে নিয়ে গিয়ে দুর্ব্যবহার ও কটু কথা শোনাতেন মেয়েকে, লিখেছেন লিজ়া।
১৩১৮
১৯৮৩ সালে পিতৃত্ব পরীক্ষার পর ‘টাইম ম্যাগাজ়িন’ যখন তাঁকে চাপ দেয়, তখন তাঁর প্রতিক্রিয়া শুনে হকচকিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ তাঁর মেয়ের পিতা হতে পারে।’’ জোবসের সেই ‘বাণী’ শুনে বিরক্ত হয়ে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত প্রচ্ছদ থেকে তাঁর নাম সরিয়ে দেন।
১৪১৮
পরে পারিবারিক জমায়েতে খাবার টেবলে এক বার লিজ়া তাঁর বাবার কাছে ‘লিজ়া’ নামের প্রকল্প সম্পর্কে কৌতূহলী হয়েছিলেন। আত্মজীবনীতে সে কথাও উল্লেখ করেছেন জোবসের মেয়ে লিজ়া। উত্তরে বাবার থেকে যে উত্তরটি এসেছিল তাতে কিশোরী লিজ়ার হৃদয় এক প্রকার ভেঙেই গিয়েছিল।
১৫১৮
জোবস মেয়েকে জানিয়েছিলেন প্রকল্পের সঙ্গে ব্যক্তি লিজ়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি তাঁর বান্ধবীর নামে এই প্রকল্পের নামকরণ করেছিলেন। পরবর্তী বছরগুলিতে যখন চাপ দেওয়া হয়েছিল, তখন জোবস তাঁর জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসনকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর মেয়ের নামেই যন্ত্রটির নামকরণ করেছিলেন।
১৬১৮
লিজ়া জানিয়েছেন, তাঁর বাবার মতো খামখেয়ালি মানুষ খুবই কম দেখেছেন। নিজের সংসারে প্রথম সন্তানকে ঠাঁই দিলেও হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়ার সময় সেখানকার ফি দিতে অস্বীকার করেছিলেন জোবস। সেই ঘটনাতেও ভেঙে পড়েননি লিজ়া। খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন স্টিভকন্যা।
১৭১৮
লন্ডনে কিংস কলেজেও পড়েছেন লিজ়া। হার্ভার্ড থেকে স্নাতক হয়ে ম্যানহাটনে চলে আসেন তিনি। ‘ভোগ’, ‘ম্যাসাচুসেটস রিভিউ’, ‘দ্য অপরাহ ম্যাগাজিন’-সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। তাঁর স্বামী বিল মোরিন মাইক্রোসফ্টের প্রাক্তন ডিজ়াইনার। তাঁদের একটি ছেলে রয়েছে।
১৮১৮
২০০৩ সালে জোবসের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং আট বছর পর ৫৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মারণরোগ ধরা পড়ার পর বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কিছু ভাল ভাল মুহূর্তও তুলে ধরেছিলেন লিজ়া। বিশেষ করে স্টিভের শেষ কয়েক বছরে। লিজ়া লিখেছেন, ‘‘ক্যানসার তখন বাবাকে গ্রাস করেছে। আমার কাছে বার বার ক্ষমা চাইতেন উনি, বছরের পর বছর আমার জন্মদিন ভুলে যাওয়ার জন্য, আমার খোঁজখবর না নেওয়ার জন্য।’’