Dubai’s artificial island, a new, high-security luxury zone made for the world’s rich dgtl
Naia Island
লক্ষ্মী মিত্তলদের মতো অতি বিলাসী ধনকুবেরদের নতুন ঠিকানা, কৃত্রিম দ্বীপে বসত করবেন ‘বাণিজ্যলক্ষ্মী’! কত দাম জমির?
শহুরে কোলাহল থেকে দূরে একেবারে সমুদ্রের কিনারায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। সেই দ্বীপেরই এক খণ্ড জমির মালিকানা পাওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে। সেখানকার একটি ভিলার মালিকানা পাওয়ার জন্য গুনতে হবে কয়েকশো কোটি টাকা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
একটা সময় ছিল যখন বিশ্বের ধনকুবেররা জমি ও প্রাসাদ কেনার জন্য ভিড় জমাতেন দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ দ্বীপে। দুবাইয়ের উত্তরঘেঁষা কৃত্রিম দ্বীপে বাড়ির মালিকদের তালিকায় রয়েছেন বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান, ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম এবং তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া, রিলায়্যান্সের কর্ণধার মুকেশ অম্বানী।
০২১৮
দুবাইয়ের পাম দ্বীপের মতো ঠিক আরও একটি কৃত্রিম দ্বীপ সম্প্রতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সেটি হল নাইয়া দ্বীপ। দুবাইয়ের জুমেইরাহ উপকূলরেখার কাছে নির্মীয়মাণ এই দ্বীপটি ধনকুবেরদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। লন্ডনের ধনকুবের ও ইস্পাতশিল্পের ‘বেতাজ বাদশা’ নিজের সাম্রাজ্য ছেড়ে দুবাইয়ে এই দ্বীপে নতুন আস্তানা তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন।
০৩১৮
দ্বীপটিতে বিশাল পরিমাণ জমি কিনে নিয়েছেন আর্সেলর-মিত্তলের কর্ণধার। বিলাসবহুল এই দ্বীপটি তৈরি হয়েছে বিত্তশালী ধনকুবেরদের জন্য। সমুদ্রের কিনারে অবস্থিত দ্বীপটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হতে হতে ২০২৯ সাল। বিলাসবহুল আবাসন থেকে শুরু করে উন্নত মানের প্রযুক্তি, কী নেই সেই দ্বীপে! তাই বিশ্বের ধনাঢ্য অভিজাতকুলের নজর কেড়েছে নয়া দ্বীপটি।
০৪১৮
শহুরে কোলাহল থেকে দূরে একেবারে সমুদ্রের কিনারায় অবস্থিত দ্বীপটি। তারই এক খণ্ড জমির মালিকানা পাওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে। এই দ্বীপটিতে একটি ভিলার মালিকানা পাওয়ার জন্য গুনতে হবে ১০৯ কোটি টাকা। জমির দাম এর কয়েক গুণ।
০৫১৮
গত কয়েক দশকের প্রচেষ্টায় দুবাই প্রযুক্তিগত ভাবে বিশ্বের অন্যতম উন্নত শহরে পরিণত হয়েছে। রবার্ট ডি নিরো, কিম কার্দাশিয়ানের মতো আন্তর্জাতিক মানের তারকাদের অবসরযাপনের প্রিয় জায়গা এই শহর। যাঁরা দুবাইয়ে থাকেন, তাঁদের জীবনযাপনের বহর ও বাহার দেখলে যে কোনও সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে যাবেন।
০৬১৮
আগে দুবাইয়ে বাড়ি কেনা সহজ ছিল না। সম্পত্তির মালিকানা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিদের উপর ছিল সরকারের কিছু নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়েছে কারও কারও ক্ষেত্রে। যে সকল ভারতীয়ের ‘গোল্ডেন ভিসা’ আছে, এ বার তাঁদের মধ্যে দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ি কেনার প্রবণতাও বাড়ছে।
০৭১৮
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, নাইয়া দ্বীপে মিত্তল যে সম্পত্তিটি কিনেছেন সেটি ২১ হাজার থেকে ৪৮,০০০ বর্গফুটেরও বিস্তৃত প্লটের হতে পারে। এই দ্বীপটিতে আবাসন বা বাড়ির সংখ্যা সীমিতই রাখা হবে। থাকবে ব্যক্তিগত ভিলা। ঝাঁ-চকচকে রাস্তা, রেস্তরাঁ, শপিং মল ছাড়াও প্রতি ভিলায় থাকবে নৌকাবিহারের আলাদা জায়গা। প্রতিটি ভিলার বাসিন্দাদের সমুদ্রসৈকতে নামার জন্য রাখা হবে ব্যক্তিগত পথ।
০৮১৮
দুবাই শহরের আদলে গড়ে তোলা হবে না কৃত্রিম এই দ্বীপটিকে। আকাশচুম্বী নির্মাণের বদলে খোলামেলা পরিবেশ বজায় রেখে আবাসন তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে নির্মাতা সংস্থাটি। বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রেখে ভিলাগুলি নির্মাণ করাই এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্যে। দুবাইয়ের বেশ কয়েকটি অভিজাত ও বিলাসবহুল রিয়্যাল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগকারী গোষ্ঠী শামাল হোল্ডিং এই দ্বীপটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে। শেভাল ব্ল্যাঙ্কের স্বতন্ত্র নকশার বাড়ি ও ভিলা দিয়ে সাজানো নাইয়া।
০৯১৮
দ্বীপের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত স্তরে বিলাসবহুল হোটেলের মতো পরিষেবা পাবেন। শহুরে জীবন থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও বিত্তশালীদের আধুনিক নগরজীবন যাপনে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য আদ্যোপান্ত বিলাসিতায় মোড়া দ্বীপটিকে বিশেষ ভাবে নকশা করা হয়েছে। এখানে যাঁরা জমি বা বাড়ি কিনবেন তাঁদের কাছে বাড়তি পাওনা হল ১০ বছরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ‘গোল্ডেন ভিসা’।
১০১৮
দুবাইকে কোটিপতিদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা বলে মনে করা হয়। কেন ধনকুবেরদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে দুবাই? মনোরম পরিবেশের জন্য অনেক দিন ধরেই বিশ্বের সমস্ত অভিজাত ও ধনবানদের আকর্ষণের জায়গা এটি। পশ্চিম এশিয়ার এই ঝাঁ-চকচকে শহরে অনেকেই পাকাপাকি ভাবে সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন।
১১১৮
সমস্ত ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে হাতের মুঠোয়। কারণ দুবাইকে স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে বেছে নেওয়ার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। দুবাইয়ে উত্তরাধিকার করের পরিমাণ শূন্য। অর্থাৎ, সেখানে বসবাসকারীদের বিদেশে থাকা সম্পত্তির জন্য এক টাকাও কর দিতে হয় না। এ ছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।
১২১৮
স্বদেশত্যাগী সম্পদশালীদের নিজেদের ঘরে জায়গা দিতে সোনালি ভিসা (গোল্ডেন ভিসা) চালু করেছে আমিরশাহি সরকার। এতে বিদেশি কোটিপতিদের জন্য রয়েছে একগুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা। তাই আরব দুনিয়ার এই দুই দেশে যাওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে স্পষ্ট করেছেন সমীক্ষকেরা।
১৩১৮
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোগপতিরা নন, বিত্তবান ব্রিটিশ নাগরিকদের দেশত্যাগের হিড়িক বাড়ছে ব্রিটেনে। মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশকেই আপন করে নিচ্ছেন ধনকুবেররা! ধনকুবের শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তলের মতো আরও অনেক শিল্পোদ্যোগী বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে দুবাইবাসী হয়েছেন। ‘ইমপ্রোবেবল’-এর প্রতিষ্ঠাতা হরমন নারুলা এবং ‘রেভোলুট’-এর নিক স্টোরনস্কির মতো ধনী উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যেই দুবাই চলে গিয়েছেন। ব্রিটেনে কর নিয়ে যে ভাবে অনিশ্চয়তা বাড়ছে তাতে সে দেশে ভবিষ্যতে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মত দেশত্যাগী ধনকুবেরদের।
১৪১৮
১৯৯৫ সালে মিত্তল লন্ডনে চলে আসেন এবং দ্রুত ব্রিটেনের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। কেনসিংটন প্যালেস গার্ডেনে রয়েছে তাঁর প্রাসাদোপম সম্পত্তি। টেমসের পারের শহরটির বিলাসবহুল বাড়িগুলির একটি হল মিত্তলের এই সম্পত্তি। লন্ডন ছাড়াও ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ায় একাধিক সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে তাঁর হাতে।
১৫১৮
বামপন্থী মনোভাবাপন্ন লেবার পার্টির সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির উপর কর বসিয়েছে। এতে একেবারেই খুশি নয় পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া বিপুল সম্পত্তির মালিক বিত্তবান ইংরেজ পরিবারগুলির একাংশ। সেই কারণে বিকল্প দেশ খুঁজে নিতে চাইছেন তাঁরা। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোযুক্ত ভিন্রাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
১৬১৮
এখানেই আপত্তি তুলেছেন লক্ষ্মী মিত্তল-সহ বহু অনাবাসী ভারতীয়। লক্ষ্মীর প্রশ্ন, কেন ব্রিটিশ নাগরিকদের বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সম্পত্তি ব্রিটেনের উত্তরাধিকার করের আওতায় আসবে? বিশ্বব্যাপী সম্পদের উপর উত্তরাধিকার করটিকে অনেকেই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন।
১৭১৮
পশ্চিম এশিয়ার দেশেই থিতু হতে চাইছেন ধনকুবের। মরুশহর দুবাইয়ে একটি প্রাসাদ কেনা রয়েছে তাঁর। ব্রিটেনের সম্পত্তি কর নিয়ে দোলাচলের ফলে বিশ্বের অন্যতম ধনী ইস্পাত ব্যবসায়ী এবং দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী লক্ষ্মী মিত্তল তাঁর বাসস্থান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাইয়া দ্বীপকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন বলে সূত্রের খবর।
১৮১৮
অফুরান ও চোখজুড়োনো প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও, নাইয়া দ্বীপটিকে কোনও দিনই দুবাইয়ের মতো পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে না। মরুশহরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল বলে গণ্য করা হবে কৃত্রিম দ্বীপটিকে, যেটি বাসিন্দা ও তাঁদের আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যই সংরক্ষিত থাকবে।