একসময় সলমন ও বালাসুব্রহ্মণ্যমের জুটিকে হিট ছবির ফর্মুলা হিসেবে মানা হতো বলিউডে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
সময়ের সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বলিউডের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা ঘটেনি। দীর্ঘ চড়াই-উতরাইয়ের পর এক দশকে যদি কেউ কামব্যাক করে থাকেন তিনি হলেন সলমন খান। ‘ওয়ান্টেড’, ‘দবং’, ‘সুলতান’, ‘এক থা টাইগার’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মতো ছবির দৌলতে বলিউডের ‘ভাইজান’ তথা ‘দবং খান’-এ পরিণত হয়েছেন তিনি।
০২১৫
যদিও বলিউডে সলমনের উত্থান ঘটেছিল রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবেই। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’, ‘সাজন’, ‘হম আপকে হ্যায় কউন’-এ মতো ছবি তাঁকে কেরিয়ারের শুরুতেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। তবে সলমনকে এই প্রতিষ্ঠা দেওয়া পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এক গায়কেরও, এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম।
০৩১৫
এক সময় বলিউডে অভিনেতার পাশাপাশি গায়কদেরও সমান গুরুত্ব ছিল। কোন নায়কের গলায় কার গান বসালে ভাল লাগবে, তা বাছাই করার জন্য আলাদা টিম পর্যন্ত নিয়োগ করতেন প্রযোজক-পরিচালকরা। তাতে কেরিয়ারের শুরুতেই সলমনের নামের সঙ্গে এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যমের নাম জুড়ে যায়। কিন্তু অন্যতম সফল এই নায়ক-গায়কের জুটি মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কেন ভেঙে গেল, তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।
০৪১৫
১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ সলমনের। একমাত্র ‘আয়া মৌসম দোস্তি কা’ ছাড়া ছবিতে সলমনের গলায় সবক’টি গানই বালাসুব্রহ্মণ্যমের গাওয়া, যার মধ্যে ‘আতে যাতে’, ‘দিল দিওয়ানা’ এবং ‘মেরে রঙ্গ মে’-র মতো সুপরাহিট হয়।
০৫১৫
সেখান থেকেই বলিউডে সলমন এবং এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটির যাত্রা শুরু। ১৯৯১ সালে ‘লভ’ ছবিতেও সলমনের গলায় গান গেয়েছিলেন বালাসুব্রহ্মণ্যম। ছবিটি বক্সঅফিসে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও, তাঁর গাওয়া ‘সাথিয়াঁ তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানটি সুপারহিট হয়।
০৬১৫
এর পর ১৯৯১ সালেই ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে সলমনের হয়ে সাতটি গানে গলা দেন বালাসুব্রহ্মণ্যম। এর মধ্যে ‘কভি তু ছালিয়া লগতা হ্যায়’ এবং ‘তুমসে জো দেখতে হি প্যায়ার হুয়া’ গান দু’টি সুপার হিট হয়।
০৭১৫
ওই বছরই ‘সাজন’ ছবিতে সলমনের গলায় বালাসুব্রহ্মণ্যমের গাওয়া ‘বহুত প্যায়ার করতে হ্যায়’, ‘তুমসে মিলনে কি তমন্না হ্যায়’, ‘পহেলি বার মিলে হ্যায়’ গানগুলি সুপারহিট হয়।
০৮১৫
এর কয়েক বছর পর সলমনকে নিয়ে ফের ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক সুরজ বরজাতিয়া। ১৯৯৪ সালে তাঁদের যুগলবন্দিতে তৈরি ‘হম আপকে হ্যায় কউন’ ছবিটি মুক্তি পায়। তাতেও সলমনের গলা হিসেবে বালাসুব্রহ্মণ্যমকে বেছে নেন সুরজ।
০৯১৫
ছবিতে ‘মৌসম কা জাদু’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘জুতে দো প্যায়সে লো’, ‘পেহলা পেহলা প্যায়ার হ্যায়’, ‘ধিক তানা’, ‘মুঝসে জুদা হো কর’, ‘হম আপকে হ্যায় কউন’, ‘ওয়াহ ওয়াহ রাম জি’-র মতো সুপারহিট গান গেয়ে বলিউডে পাকাপাকি জায়গা করে নেন বালাসুব্রহ্মণ্যম।
১০১৫
বছরের পর বছর বলিউডে এই ধরনের গায়ক-নায়ক জুটি উঠে এসেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন কিশোর কুমার-রাজেশ খন্না, আমির খান-উদিত নারায়ণ, শাহরুখ খান-অভিজিৎ। নব্বইয়ের দশকে সলমন-বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটিকেও কিশোর-রাজেশের জুটির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন সকলে।
১১১৫
কিন্তু এর পরেই বলিউডে কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন সঙ্গীত পরিচালক নাদিম-শ্রবণ জুটি। একের পর এক হিট গান উপহার দিতে শুরু করেন তাঁরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নায়ক-নায়িকার চেয়ে তাঁর বেশি পারিশ্রমিক নিতে শুরু করেন। কিন্তু কাউকে টাইপকাস্ট করে ফেলার ঘোর বিরোধী ছিল এই জুটি।
১২১৫
সলমনের গলা বলতে মানুষ শুধু বালাসুব্রহ্মণ্যমকে খুঁজবেন, আমিরের গলা হিসেবে উদিত নারায়ণকে, বিষয়টি একেবারেই না পসন্দ ছিল নাদিম-শ্রবণের। তাই তাঁরা এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দেন। ‘দিল তেরা আশিক’ ছবিতে সলমনের গলায় কুমার শানুকে যেমন সুযোগ দেন, তেমনই সোনু নিগমকে সুযোগ দেন ‘জিত’ ছবিতে।
১৩১৫
এককথায় বলতে গেলে, হাতে কলমে সেইসময় বলিউডে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন নাদিম-শ্রবণ। পরীক্ষা করতে গিয়ে লাগাতার সাফল্যও পাচ্ছিলেন তাঁরা। ডজন ডজন পুরস্কার ঘরে তুলছিলেন। তাই তাঁদের ছবিতে কার গলায় কাকে দিয়ে গাওয়ানো হবে, সে সব নির্ধারণের ক্ষেত্রে নাদিম-শ্রবণের কথাই শেষ হয়ে দাঁড়ায়।
১৪১৫
তাতেই সলমন ও বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটি ভেঙে যায়। সলমনকে নিয়ে যেখন ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবিটি তৈরি করেন সঞ্জয় লীলা ভনসালী, সেইসময় অনেকেই বালাসুব্রহ্মণ্যমের নাম সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল দরবার সলমনের গলায় উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, কেকে এমনকি হরিহরণকে দিয়ে গান গাওয়ান।
১৫১৫
তার জেরেই জীবনে ৪০ হাজারের বেশি গান গাওয়া বালাসুব্রহ্মণ্যম ও সলমন খানের জুটি ভেঙে যায়। ২০১৫ সালে সলমনকে নিয়ে সুরজ বরজাতিয়া যখন ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবিটি তৈরি করেন, তখনও বালাসুব্রহ্মণ্যমের প্রসঙ্গ ফিরে আসে। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে সলমন জানান, বয়স বেড়েছে তাঁর। এখন হয়ত আর আগের মতো বালাসুব্রহ্মণ্যমের গান তাঁর গলায় মানাবে না। তবে সলমনের সঙ্গে কাজ না করতে পারা নিয়ে আজও কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি বালাসুব্রহ্মণ্যমকে।