EPF calculator Rs 20 thousand monthly basic salary know your corpus generated after 25 30 and 35 years dgtl
EPF Calculator
২০ হাজারি মূল বেতনে কোটি টাকা সঞ্চয়! ২৫, ৩০ বা ৩৫ বছরে পিএফের হিসাবে চমকে যাবেন
বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। এতে মাসিক ২০ হাজার টাকা মূল বেতন (বেসিক পে) প্রাপ্ত কোনও ব্যক্তির সঞ্চয় কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিশেষ একটি তহবিল তৈরি করেছে সরকার। কর্মরত অবস্থায় সেখানে টাকা জমা রাখেন তাঁরা। অবসরের পর তহবিলের সঞ্চিত অর্থ তুলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেখান থেকে পেনশন পর্যন্ত পেতে পারেন বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজ়েশন’ বা ইপিএফও-র উপরে রয়েছে তহবিলটি চালানোর গুরুদায়িত্ব।
০২১৯
ইপিএফও-র তহবিলের দু’টি অংশ রয়েছে। একটির নাম, এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)। অপরটিকে বলা হয়, এমপ্লয়িজ় পেনশন স্কিম (ইপিএস)। বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতনের একটা অংশ কেটে নিয়ে ইপিএফ তহবিলে জমা রাখা হয়। অন্য দিকে ইপিএসে টাকা জমা করে সংশ্লিষ্ট কর্মীর নিয়োগকারী সংস্থা।
০৩১৯
ইপিএফও-র নিয়ম অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থার একজন চাকরিজীবী ন্যূনতম ১,৮০০ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করতে পারেন। আবার মূল বেতনের (বেসিক পে) ১২ শতাংশ ওই তহবিলে দিতে পারেন তিনি। তাঁর দেওয়া সমস্ত টাকা জমা পড়বে ইপিএফও তহবিলে। সমপরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট তহবিলে জমা করবে ওই ব্যক্তির নিয়োগকারী সংস্থা।
০৪১৯
ইপিএফে সঞ্চিত অর্থের উপর বর্তমানে বার্ষিক ৮.২৫ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে কেন্দ্র। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে এই সুদ। প্রত্যেক আর্থিক বছরের ৩১ মার্চ সংশ্লিষ্ট তহবিলে সুদের টাকা জমা করে কেন্দ্র। প্রসঙ্গত, ইপিএফের সুদের হার পরিবর্তনশীল। কিছু দিন পর পরই এটি পর্যালোচনা করে বৃদ্ধি বা হ্রাস করে সরকার।
০৫১৯
২০২১-’২২ আর্থিক বছরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে (পিএফ) সুদের হার ছিল ৮.৫ শতাংশ। ঠিক তার পরের বছর (পড়ুন ২০২২-’২৩) এই হার কমে ৮.১ শতাংশে নেমে এসেছিল। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে এর পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে ৮.২৫ শতাংশ করে সরকার। বর্তমানে এই হার অব্যাহত রয়েছে।
০৬১৯
অন্য দিকে, ইপিএফওতে নিয়োগকারী সংস্থার জমা করা টাকাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। ৮.৩৩ শতাংশ পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা হয়। বাকি ৩.৬৭ শতাংশ চলে যায় প্রভিডেন্ট ফান্ড তহবিলে। পেনশন তহবিলে আবার ইচ্ছামতো টাকা জমা করার নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে একটি ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্র।
০৭১৯
ইপিএফও-র নিয়মে বলা হয়েছে, এক জন কর্মী ইপিএস অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ১,২৫০ টাকা জমা করতে পারবেন। ইপিএসের টাকা অবসরের আগে কোনও ভাবেই তোলা যাবে না। প্রসঙ্গত, প্রভিডেন্ট ফান্ডে গচ্ছিত অর্থের উপর সুদ দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু, ইপিএস আমানতের উপর কোনও সুদ দেয় না কেন্দ্র।
০৮১৯
এখন প্রশ্ন হল, কোনও বেসরকারি চাকরিজীবী ২৫, ৩০ বা ৩৫ বছর পর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে কত টাকা পাবেন। একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটি বুঝে নেওয়া যাক। ধরা যাক, ২৫ বছর বয়সি কোনও ব্যক্তির মূল বেতন (বেসিক পে) ২০ হাজার টাকা। বছরে পাঁচ শতাংশ করে তাঁর বেতন বৃদ্ধি হলে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয়ের পরিমাণ কত দাঁড়াবে, তা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল।
০৯১৯
এ ক্ষেত্রে ইপিএফ তহবিলে প্রতি মাসে বেতনের ১২ শতাংশ, অর্থাৎ ২,৪০০ টাকা করে জমা করবেন ওই ব্যক্তি। তাঁর নিয়োগকারী সংস্থাও তহবিলটিকে দেবে ২,৪০০ টাকা। এই অর্থের ৮.৩৩ শতাংশ জমা পড়বে পেনশন ফান্ড বা ইপিএসে।
১০১৯
এ বার বছরে যদি পাঁচ শতাংশ করে ওই ব্যক্তির বেতন বৃদ্ধি হয় এবং ইপিএফের সুদের হার ৮.২৫ শতাংশে আটকে থাকে, তা হলে ২৫ বছরে তাঁর সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯ লক্ষ ২২ হাজার ৩৩৫ টাকা। এ ছাড়া সুদ বাবদ অতিরিক্ত ৩৪ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৪৪ টাকা পাবেন তিনি। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ১৭৯ টাকা। সুদের হার কমলে পিএফের টাকার অঙ্ক হ্রাস পাবে।
১১১৯
একই ভাবে ৩০ বছরে সংশ্লিষ্ট কর্মীর সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৬ লক্ষ ৬১ হাজার ২৫২ টাকা। ইপিএফও থেকে সুদ বাবদ ৬২ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৯২ টাকা পাবেন তিনি। প্রভিডেন্ট ফান্ডে সুদেমূলে মোট টাকার অঙ্ক দাঁড়াবে ৮৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৪৪।
১২১৯
৩৫ বছর পর্যন্ত ইপিএফও তহবিলে সঞ্চয় করলে বেসরকারি সংস্থার কর্মীটির মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ হবে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৬১ টাকা। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি ইপিএফে জমা করবেন ৩৬ লক্ষ ৪ হাজার ৩১২ টাকা। আর সুদ বাবদ ১ কোটি ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৪৯ টাকা পাবেন তিনি।
১৩১৯
বেসরকারি সংস্থায় কর্মী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ইপিএফে টাকা রাখতে পারেন। আবার ৫৮ বছরে পৌঁছে টাকা তুলে নিতে পারেন তিনি। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে গ্রাহকের টাকা তোলার অধিকার রয়েছে। চাকরি জীবনের ১০ বছর পূর্তিতে, টানা দু’মাস কর্মহীন থাকলে, বিয়ে এবং বাড়ি কেনা বা সংস্কারের জন্য এই সুযোগ পেয়ে থাকেন তাঁরা।
১৪১৯
ইপিএফে জমা করা টাকার উপর আয়করে মেলে ছাড়। ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী, একটি আর্থিক বছরে প্রভিডেন্ট ফান্ডে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড় পান সংশ্লিষ্ট কর্মী। ইপিএফের সুদ এবং মেয়াদ শেষে প্রাপ্ত অর্থও পুরোপুরি করমুক্ত।
১৫১৯
বর্তমান নিয়মে বেসরকারি সংস্থার কোনও কর্মীর মূল বেতন (বেসিক পে) ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে তাঁকে বাধ্যতামূলক ভাবে পেনশন প্রকল্পের আওতায় আনতে বলেছে ইপিএফও। সূত্রের খবর, আগামী দিনে এই নিয়মের বদল ঘটাতে চাইছে কেন্দ্র। পিএফের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার টাকা করার পরিকল্পনা রয়েছে মোদী সরকারের। তবে এই নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
১৬১৯
কেন্দ্রের দাবি, মজুরি সীমা ২১ হাজার টাকা করলে বেসরকারি সংস্থার অধিকাংশ কর্মীকে পেনশন তহবিলের আওতায় আনা যাবে। এখনকার আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির মূল বেতন (বেসিক পে) ১৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেলে তিনি পেনশন তহবিলে অর্থ জমা করতে পারবেন না। তাঁর বেতন থেকে যে টাকা কাটা হবে, তার পুরোটাই যাবে প্রভিডেন্ট ফান্ড তহবিলে।
১৭১৯
কিন্তু, মজুরিসীমা বাড়িয়ে ২১ হাজার করলে ১৫ হাজার টাকা বা তার বেশি বেসিক পে হলেও বেসরকারি সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মী পেনশন ফান্ডে টাকা জমা করতে পারবেন। মূল বেতন ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত এই সুবিধা পাবেন তিনি।
১৮১৯
সূত্রের খবর, মজুরিসীমা বাড়িয়ে ২১ হাজার টাকা করা হলে পেনশন তহবিলে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে ১,২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ওই অঙ্ক দাঁড়াবে ১,৭৪৯ টাকা। অন্য দিকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে কমবে বিনিয়োগের পরিমাণ।
১৯১৯
নতুন নিয়মে পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে যুক্তি দিয়েছে মোদী সরকার। ইপিএস যে নিয়মে পেনশন দিয়ে থাকে তা হল (গ্রাহকের কর্ম বছর x পেনশন যোগ্য বেতন)/৭০। এই নিয়মে ৩৫ বছর বয়সি কোনও কর্মী ৫৮ বছর বয়সে অবসর নিলে প্রতি মাসে ৬,৯০০ টাকা করে পেনশন পাবেন। তবে অবশ্যই তাঁর বেতন ২৩ হাজার টাকা হতে হবে।