Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
IPS

Ilma Afroz: ক্ষেতমজুরের কাজ করে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, শেষে দেশে ফিরে চাষির মেয়ে আইপিএস!

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলমা। কিন্তু বিমান ভাড়ার টাকা ছিল না। যাবেন কী করে!

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ১২:৫১
Share: Save:
০১ ১৫
এক কৃষক কন্যা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। বড় হওয়া বলতে তাঁর সমাজ যা বোঝে, ঠিক সে রকম নয়। মেয়েটি চেয়েছিল মায়ের দুঃখ লাঘব করতে। পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে। সম্ভব হলে, সুযোগ পেলে দেশের কাজে, দশের কাজে লাগতে। তবে স্বপ্ন তো দেখাই যায়। স্বপ্নকে সত্যি করতে পরিশ্রম করেন বা করতে পারেন ক’জন! মেয়েটি ওই ক’জনের অন্যতম।

এক কৃষক কন্যা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। বড় হওয়া বলতে তাঁর সমাজ যা বোঝে, ঠিক সে রকম নয়। মেয়েটি চেয়েছিল মায়ের দুঃখ লাঘব করতে। পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে। সম্ভব হলে, সুযোগ পেলে দেশের কাজে, দশের কাজে লাগতে। তবে স্বপ্ন তো দেখাই যায়। স্বপ্নকে সত্যি করতে পরিশ্রম করেন বা করতে পারেন ক’জন! মেয়েটি ওই ক’জনের অন্যতম।

০২ ১৫
নাম ইলমা আফরোজ। ছোট বেলায় ক্ষেতমজুরের কাজ করতেন। এখন তিনি আইপিএস।

নাম ইলমা আফরোজ। ছোট বেলায় ক্ষেতমজুরের কাজ করতেন। এখন তিনি আইপিএস।

০৩ ১৫
নিউ ইয়র্কে বড় চাকরি পেয়েছিলেন ইলমা। বিলাসবহুল আর আরামদায়ক জীবনের চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সমাজের যে স্তর থেকে ওই জায়গায় পৌঁছেছিলেন ইলমা, তাতে চাইলে ওখানেই থেমে যেতে পারতেন। তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার লক্ষ্যও পূরণ হত। কিন্তু ইলমা থামেননি।

নিউ ইয়র্কে বড় চাকরি পেয়েছিলেন ইলমা। বিলাসবহুল আর আরামদায়ক জীবনের চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সমাজের যে স্তর থেকে ওই জায়গায় পৌঁছেছিলেন ইলমা, তাতে চাইলে ওখানেই থেমে যেতে পারতেন। তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার লক্ষ্যও পূরণ হত। কিন্তু ইলমা থামেননি।

০৪ ১৫
২৩ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন। যুক্তি ছিল, যা করবেন দেশে থেকে দেশের জন্য করবেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর পড়াশোনা এবং তাঁর কাজের উপর যদি কারও অধিকার থেকে থাকে, তবে তা তাঁর দেশের মাটির। ইলমার কথায়, ‘দেশ কি মিট্টি’।

২৩ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন। যুক্তি ছিল, যা করবেন দেশে থেকে দেশের জন্য করবেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর পড়াশোনা এবং তাঁর কাজের উপর যদি কারও অধিকার থেকে থাকে, তবে তা তাঁর দেশের মাটির। ইলমার কথায়, ‘দেশ কি মিট্টি’।

০৫ ১৫
বাবা ক্ষেত মজুরির কাজ করতেন। কিন্তু ইলমার বয়স যখন ১৪, তখন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিশোরী মেয়ে এবং আরও ছোট ছেলের ভার এসে পড়ে একা মায়ের কাঁধে। বাধ্য হয়ে তিনিও ক্ষেত মজুরির কাজ শুরু করেন। মাকে কাজে সাহায্য করতেন ইলমা। ক্ষেতে তিনিও কাজ করতেন। পড়াশোনা চলত তার ফাঁকে। বড় হয়েও সেই মাটির ঋণ ভোলেননি ইলমা।

বাবা ক্ষেত মজুরির কাজ করতেন। কিন্তু ইলমার বয়স যখন ১৪, তখন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিশোরী মেয়ে এবং আরও ছোট ছেলের ভার এসে পড়ে একা মায়ের কাঁধে। বাধ্য হয়ে তিনিও ক্ষেত মজুরির কাজ শুরু করেন। মাকে কাজে সাহায্য করতেন ইলমা। ক্ষেতে তিনিও কাজ করতেন। পড়াশোনা চলত তার ফাঁকে। বড় হয়েও সেই মাটির ঋণ ভোলেননি ইলমা।

০৬ ১৫
ঠিক যেমন ছোট বেলায় এক মুহূর্তের জন্যও ভোলেননি বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছে, স্বপ্নের কথা। সেই লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে গিয়েছেন নিরন্তর। ঠিক করে নিয়েছিলেন ভাল ভাবে লেখা পড়া করতেই হবে। এগোতেও হবে।

ঠিক যেমন ছোট বেলায় এক মুহূর্তের জন্যও ভোলেননি বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছে, স্বপ্নের কথা। সেই লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে গিয়েছেন নিরন্তর। ঠিক করে নিয়েছিলেন ভাল ভাবে লেখা পড়া করতেই হবে। এগোতেও হবে।

০৭ ১৫
 উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের বাসিন্দা ইলমা। এখনও সেখানেই থাকেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাড়ার লোক মাকে বুঝিয়েছিল, মেয়েকে তো শেষ পর্যন্ত সংসারই করতে হবে। এত পড়াশোনা করানোর দরকার কী! এখন তাঁরাই নিজের পরিবারের মেয়েদের ইলমা-র উদাহরণ দেন। ইলমা-র মতো হতে বলেন।

উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের বাসিন্দা ইলমা। এখনও সেখানেই থাকেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাড়ার লোক মাকে বুঝিয়েছিল, মেয়েকে তো শেষ পর্যন্ত সংসারই করতে হবে। এত পড়াশোনা করানোর দরকার কী! এখন তাঁরাই নিজের পরিবারের মেয়েদের ইলমা-র উদাহরণ দেন। ইলমা-র মতো হতে বলেন।

০৮ ১৫
স্কুলের পাঠ কুন্দারকিতেই শেষ করেছিলেন ইলমা। তবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ভর্তির আবেদন করেছিলেন ইলমা। পরে বলেছেন, কুন্দারকির ঘেরাটোপ ছেড়ে দিল্লির কলেজে ভর্তি তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। ওই একটি সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনকে সঠিক পথে এনে ফেলে।

স্কুলের পাঠ কুন্দারকিতেই শেষ করেছিলেন ইলমা। তবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ভর্তির আবেদন করেছিলেন ইলমা। পরে বলেছেন, কুন্দারকির ঘেরাটোপ ছেড়ে দিল্লির কলেজে ভর্তি তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। ওই একটি সিদ্ধান্তই তাঁর জীবনকে সঠিক পথে এনে ফেলে।

০৯ ১৫
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন ইলমা। সঙ্গে ছিল পরিশ্রমও। তার ফল পেয়েছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলমা। কিন্তু তারপরও তাঁর অক্সফোর্ডে যাওয়া আটকে যেতে পারত। বিমান ভাড়ার টাকা ছিল না। যাবেন কী করে!

পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন ইলমা। সঙ্গে ছিল পরিশ্রমও। তার ফল পেয়েছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলমা। কিন্তু তারপরও তাঁর অক্সফোর্ডে যাওয়া আটকে যেতে পারত। বিমান ভাড়ার টাকা ছিল না। যাবেন কী করে!

১০ ১৫
সাহায্য চাইতে শেষে গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হন। ইলমা জানিয়েছেন, গ্রামেরই এক কাকা তাঁর বিদেশ পড়তে যাওয়ার কথা জেনে তাঁকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।

সাহায্য চাইতে শেষে গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হন। ইলমা জানিয়েছেন, গ্রামেরই এক কাকা তাঁর বিদেশ পড়তে যাওয়ার কথা জেনে তাঁকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।

১১ ১৫
পরে অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশি প্যারিসে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। নিউ ইয়র্কেও গিয়েছেন। আমেরিকায় চাকরি পেয়েছিলেন ইলমা।

পরে অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশি প্যারিসে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। নিউ ইয়র্কেও গিয়েছেন। আমেরিকায় চাকরি পেয়েছিলেন ইলমা।

১২ ১৫
এক সাক্ষাৎকারে একবার সেই চাকরির অভিজ্ঞতাও বলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন সকালে কফির কাপ নিয়ে অফিস যাওয়ার সময় আমার শুধুই বাড়ির কথা মনে পড়ত। বাড়ির কথা মনে পড়ত। আমার মনে হত, মা কি আমাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করেছেন একা বাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন বলে? আর যাঁরা আমার পড়ার খরচ জুগিয়ে সাহায্য করেছিলেন, তাদের জন্যই বা কী করতে পারলাম!’’

এক সাক্ষাৎকারে একবার সেই চাকরির অভিজ্ঞতাও বলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন সকালে কফির কাপ নিয়ে অফিস যাওয়ার সময় আমার শুধুই বাড়ির কথা মনে পড়ত। বাড়ির কথা মনে পড়ত। আমার মনে হত, মা কি আমাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করেছেন একা বাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন বলে? আর যাঁরা আমার পড়ার খরচ জুগিয়ে সাহায্য করেছিলেন, তাদের জন্যই বা কী করতে পারলাম!’’

১৩ ১৫
সেখান থেকেই দেশে ফেরার ভাবনা। ইলমা ঠিক করেন ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নেবেন। ২০১৭ সালে ইউপিএসসি-তে উত্তীর্ণ হন। গোটা দেশে ২১৭তম হয়েছিলেন ইলমা। পরে তাঁকে যখন পছন্দের বিভাগ বেছে নিতে বলা হয়, তখন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসকেই বেছে নেন তিনি। ২০১৮ সালে আইপিএস অফিসার হিসাবে যোগ দেন।

সেখান থেকেই দেশে ফেরার ভাবনা। ইলমা ঠিক করেন ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নেবেন। ২০১৭ সালে ইউপিএসসি-তে উত্তীর্ণ হন। গোটা দেশে ২১৭তম হয়েছিলেন ইলমা। পরে তাঁকে যখন পছন্দের বিভাগ বেছে নিতে বলা হয়, তখন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসকেই বেছে নেন তিনি। ২০১৮ সালে আইপিএস অফিসার হিসাবে যোগ দেন।

১৪ ১৫
কৃষক কন্যার আইপিএস হওয়ার গল্প এখানেই থেমে যেতে পারত। কিন্তু, তা হয়নি। আইপিএস অফিসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোটদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালান ইলমা। ‘হোপ’ নামে সেই সংস্থার কাজ ছোটদের স্বপ্নে উড়ান দেওয়া। যাতে স্বপ্নপূরণে বাধা না থাকে।

কৃষক কন্যার আইপিএস হওয়ার গল্প এখানেই থেমে যেতে পারত। কিন্তু, তা হয়নি। আইপিএস অফিসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোটদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালান ইলমা। ‘হোপ’ নামে সেই সংস্থার কাজ ছোটদের স্বপ্নে উড়ান দেওয়া। যাতে স্বপ্নপূরণে বাধা না থাকে।

১৫ ১৫
দেশের আগামী প্রজন্মের প্রতি ইলমার বার্তা, ‘‘দেশের জন্য কাজ করে দেশের সাফল্যের কারণ হওয়ার চেষ্টা করো। দেশের জন্য পরিশ্রম করো। দেশকে ভালবেসে কাজ করো।’’ ইলমা বুঝিয়েছেন, বড় হওয়ার স্বপ্ন বৃহত্তর ভাবনা থেকেই পূরণ হওয়া সম্ভব।

দেশের আগামী প্রজন্মের প্রতি ইলমার বার্তা, ‘‘দেশের জন্য কাজ করে দেশের সাফল্যের কারণ হওয়ার চেষ্টা করো। দেশের জন্য পরিশ্রম করো। দেশকে ভালবেসে কাজ করো।’’ ইলমা বুঝিয়েছেন, বড় হওয়ার স্বপ্ন বৃহত্তর ভাবনা থেকেই পূরণ হওয়া সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE