‘বাইবেল জনের’ নামে আরও অনেক জনশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। তিনি নাকি কখনও মদ ছুঁয়ে দেখেননি। নেশা করার বদলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করাটাই নাকি তাঁর পছন্দের। বাবার মতোই তিনিও নাকি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, যে সমস্ত বিবাহিতারা নাচের আসরে যান, তাঁরা আসলে ‘নষ্ট’ চরিত্রের। এমনকি, বিবাহিতাদের নাচ করাটাই নাকি অন্যায়!
গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, খুনের আগে প্যাট্রিসিয়ার মুখে এবং মাথায় লাথি-ঘুষি ছাড়াও ভোঁতা কিছু দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। এর পর তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। ধর্ষণের পর হয়তো বেল্টজাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করে প্যাট্রিসিয়াকে খুন করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে তাঁর পরনের জামাকাপড়, ঘড়ি এবং হাতব্যাগ পাওয়া যায়নি। পরে তল্লাশি অভিযানে একটি জলাশয় থেকে হাতব্যাগটি উদ্ধার হয়েছিল।
স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কহীন এক শিশুসন্তানের মা প্যাট্রিসিয়ার খুনি কে ছিলেন? কেনই বা তাঁকে খুন করা হয়েছিল? এ সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন গোয়েন্দারা। যদিও তদন্তে জানা গিয়েছিল, ঘটনার রাতে ‘বরোল্যান্ড বলরুম’-এ নাচতে গিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া। ময়নাতদন্তে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট না পাওয়া গেলেও গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সে সময় জেমাইমার সঙ্গে ছিলেন প্রায় ৬ ফুট লম্বা ২৫-৩৫ বছরের এক রোগাপাতলা যুবক। ছোট করে ছাঁটা বাদামি চুলের ওই যুবকটির পরনে কেতাদুরস্ত পোশাক ছিল। তাঁর কথাবার্তা এবং আচরণও নাকি মার্জিত। ওই রাতে ‘বরোল্যান্ড বলরুম’-এ কথাবার্তার সময়ও যুবকটি নাকি বাইবেলের বুলি আওড়াচ্ছিলেন।
পরের দিন জেমাইমার বাড়ির সামনে তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর জুতো এবং স্টকিংস পাশেই পড়েছিল। যদিও প্যাট্রিসিয়ার মতো তাঁর পরনের জামাকাপড় গায়েব ছিল না। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছিল, জেমাইমাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল। খুনের আগে জেমাইমার মুখে লাথিঘুষি চলেছিল। এর পর স্টকিংস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছিল।
খুনের রাতে জেমাইমার সঙ্গে যে যুবককে দেখা গিয়েছিল, তাঁর বর্ণনা পেলেও পুলিশের কাছে অধরাই থেকে যান তিনি। তবে তদন্তকারীরা এ বার দু’টি খুনের মধ্যে মিল খুঁজে পেতে শুরু করেছেন। খুনের সময় প্যাট্রিসিয়া এবং জেমাইমা, দু’জনেই কমবয়সি, কালো বা বাদামি চুলের তরুণী এবং তাঁদের ঋতুচক্র চলছিল। দু’জনকেই খুনের আগে মুখে লাথি-ঘুষি মারা হয়েছিল। তাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এবং ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের হাতব্যাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া, তাঁরা স্বামীবিচ্ছিন্না ছিলেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, খুনের আগে হেলেনকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এবং তাঁর মুখেও মারধরের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। হেলেনের স্টকিংস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁর হাতব্যাগটিও ঘটনাস্থলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর উরুতে কামড়ানোর দাগ পাওয়া গিয়েছিল। খুনির সঙ্গে তাঁর যে হাতাহাতি হয়েছিল, সে প্রমাণ মিলেছিল। প্যাট্রিসিয়া এবং জেমাইমার মতো খুনের সময় তাঁরও ঋতুচক্র চলছিল।
খুনের আগের দিনও গ্লাসগোর ওই বলরুমে গিয়েছিলেন হেলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন জাঁ লংফোর্ড। সেখানে তাঁদের সঙ্গে জন নামের দু’জন যুবকের আলাপ হয়েছিল। হেলেনের বোন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ওই যুবকদের মধ্যে এক জন অত্যন্ত বাক্পটু। যদিও তিনি কোথায় থাকেন, তা জানাননি। ট্যাক্সিতে করে তাঁকে বাড়িও পৌঁছে দেন ওই যুবক এবং তাঁর বোন।
হেলেনের বোনের দাবি, মৃদুভাষী ওই যুবক মদ বা সিগারেটের নেশা করতেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি মদ্যপান করি না। (ঈশ্বরের কাছে) প্রার্থনা করি।’’ তবে মদের নেশা না থাকলেও গ্লাসগোর বিভিন্ন পানশালা তাঁর নখদর্পণে ছিল। এ ছাড়া, বিবাহিতাদের যে নাচ করা উচিত নয়, বাবার শেখানো এই কথায় বিশ্বাস করেন ওই যুবক। এবং যে বিবাহিতারা নাচের ফ্লোরে যান, তাঁরা ব্যভিচারী হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy