India may gain Baloch and Pashtun support, threatening Pakistan’s unity if War breaks out after Operation Sindoor dgtl
India Pakistan War
পুরোদস্তুর সংঘাতে ভারতীয় সেনার পাশে থাকতে চাইছে বালোচ-পাশতুন! ভিতর থেকে ভেঙে চৌচির হবে পাকিস্তান?
পহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জায়গায় জঙ্গিদের গুপ্তঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় ফৌজ। এর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু, বালোচ এবং পাশতুন ক্ষতয় ভিতর থেকে ক্ষয় ধরেছে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৮:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
১৪ দিনের মাথায় পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার বদলা নিয়েছে ভারত। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) মোট ন’টি জায়গায় হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্তঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় এ দেশের ফৌজ। নয়াদিল্লির এই প্রত্যাঘাতে চুপ করে বসে নেই ইসলামাবাদ। ফলে পুরোদস্তুর সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ।
০২১৯
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে চিন এবং তুরস্কের মতো দেশের সমর্থন পাচ্ছে পাকিস্তান। অন্য দিকে, ইজ়রায়েল বাদে নয়াদিল্লিকে নিঃশর্ত সাহায্যের কথা ঘোষণা করেনি কেউই। কিন্তু, তার পরও মুখোমুখি লড়াইয়ে নামলে পশ্চিমের দেশটির ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন তাঁরা।
০৩১৯
বিশ্লেষকদের বড় অংশই মনে করেন, অচিরেই পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে বালোচিস্তান এবং খাইবার-পাখতুনখোয়া। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রদেশটির নাম পাল্টে হতে পারে পাশতুনিস্তান। নয়াদিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদের ‘যুদ্ধে’ সেই প্রক্রিয়া তরান্বিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
০৪১৯
পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি দমন অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় ফৌজ। এর ঠিক দু’দিন আগে খাইবার-পাখতুনখোয়ার এক ইসলামীয় ধর্মগুরুর একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পবিত্র কোরান হাতে নিয়ে ইসলামাবাদের বাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে বিষ উগরে দেন তিনি। বলেন, ‘‘যুদ্ধ বাধলে সরাসরি ভারতীয় সেনার পাশে দাঁড়াব আমরা।’’
০৫১৯
খাইবার-পাখতুনখোয়ার ওই ইসলামীয় ধর্মগুরুর ভাইরাল ভিডিয়োটির সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। তবে পাক ফৌজ এবং সরকারকে দেওয়া তাঁর হুমকি মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের জন্য পাশতুনেরা ঘরছাড়া হয়েছে। আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আজ মাথার উপরে ছাদ নেই, পেটে খাবার নেই। আর আপনারা চাইছেন আমরা পাকিস্তান জ়িন্দাবাদ বলি? সেটা কখনওই হবে না।’’
০৬১৯
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকেই পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে খাইবার-পাখতুনখোয়ার ছিল প্রবল আপত্তি। আফগানিস্তান লাগোয়া এই প্রদেশটিতে বড় সংখ্যায় থাকেন পাশতুনভাষী জনজাতিভুক্তেরা। রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে তাঁদের উপর অত্যাচারের লম্বা ইতিহাস রয়েছে। গত ৭৭ বছরে বহু গণহত্যা এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন পাশতুন জাতিগোষ্ঠীভুক্তেরা।
০৭১৯
দ্বিতীয়ত, আর্থিক ভাবে এই প্রদেশটিকে কখনওই উন্নত করার চেষ্টা চালায়নি ইসলামাবাদ। ফলে যত সময় গড়িয়েছে ততই সেখানে বৃদ্ধি পেয়েছে দারিদ্র। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো শাহবাজ় শরিফ সরকার আবার শরণার্থী বলে দেগে দিয়ে পাশতুনভাষীদের বড় অংশকেই দেশছাড়া করার নির্দেশ দেন। ইসলামাবাদের এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
০৮১৯
শরিফ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পাকিস্তানকে এর পরিণাম ভুগতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তালিবান নেতারা। পরবর্তী সময়ে খাইবার-পাখতুনখোয়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা।
০৯১৯
বিশ্লেষকদের দাবি, বর্তমানে খাইবার-পাখতুনখোয়াকে পাকিস্তানের থেকে বিচ্ছিন্ন করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে টিটিপি। ইসলামাবাদের অভিযোগ, টিটিপির মূল মদতদাতা হল আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামের আন্তর্জাতিক সীমান্ত মানতে নারাজ কাবুল। ফলে রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি অফিসারেরা ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে তাঁরা যে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১০১৯
পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের দ্বিতীয় মাথাব্যথার জায়গা হল বালোচিস্তান। স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে লড়ছে সেখানকার আমজনতা থেকে শুরু করে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ঠিক আগের দিন ইসলামাবাদের বাহিনীকে নিশানা করে বালোচ লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ। তাঁদের হামলায় প্রাণ হারান সাত থেকে আট জন সৈনিক।
১১১৯
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক ভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বালোচিস্তান। সেখানকার যাবতীয় প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদ ইসলামাবাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা লুট করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রদেশটিতে একাধিক বার গণহত্যা চালিয়েছে পাক ফৌজ। পাশাপাশি, বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে গায়েব করার পিছনেও হাত রয়েছে সেখানকার গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের।
১২১৯
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জ়াফর এক্সপ্রেস নামের একটি আস্ত ট্রেনকে অপহরণ করে বালোচ লিবারেশন আর্মি। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর কালাদ জেলার বেশ কয়েকটি সরকারি দফতরও তাঁদের দখলে চলে যায় বলে খবর প্রকাশ্যে আসে। বিশ্লেষকদের দাবি, ভারত-পাকিস্তান পুরোদস্তুর ‘যুদ্ধ’ শুরু হওয়ায় এই আক্রমণের ঝাঁজ বৃদ্ধি করার সুবর্ণসুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিএলএ। পাশাপাশি, সেখানে গণবিক্ষোভ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১৩১৯
২০১৩ সাল থেকে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক বারান্দা’ (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর বা সিপিইসি) প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছে বেজিং। প্রথম থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে বালোচ আমজনতা। গত কয়েক বছরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে কর্মরত ড্রাগনবাসীদের বার বার নিশানা করে বিএলএ। ‘যুদ্ধে’র আবহে সেটা বৃদ্ধি পেলে বিপদ বাড়বে ইসলামাবাদের।
১৪১৯
সূত্রের খবর, পাক সেনার পরমাণু হাতিয়ারের বড় অংশই মোতায়েন রয়েছে বালোচিস্তানে। প্রদেশটির কৌশলগত গুরুত্বও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা যে এই এলাকাকে সহজে ছেড়ে দেবেন না তা স্পষ্ট। কিন্তু ভারতীয় সেনা ও বিএলএর আক্রমণ কত ক্ষণ তাঁরা ধরে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান দুনিয়ার তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
১৫১৯
খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালোচিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার আন্দোলন চলছে সিন্ধু প্রদেশেও। নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের সংঘাতে সেই আগুনে ঘি পড়েছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির ওই এলাকায় প্রবল জলসঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তীব্র হয়েছে।
১৬১৯
আর ঠিক এই কারণেই ভারতের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ জড়ানোর ব্যাপারে সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দাদের আপত্তি রয়েছে। উল্টে পাক পঞ্জাব প্রদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না তাঁরা। এই ফাটল ধীরে ধীরে চওড়া হচ্ছে বলে স্পষ্ট করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ।
১৭১৯
উল্লেখ্য, ৭ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের পর বিবৃতি দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের মোট চারটি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পাঁচটি জায়গায় জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালায় ফৌজ। সেগুলি হল, বহাওয়ালপুর, মুরিদ, সিয়ালকোট, মুজফ্ফরাবাদ, গুলপুর, ভীমবের, চাক আমরু, বাগ এবং কোটলি। নয়াদিল্লির প্রত্যাঘাতের একাধিক ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে।
১৮১৯
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রচুর সূত্র কাজে লাগিয়ে ন’টি জায়গা চিহ্নিত করেছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানো হয়েছে। এতে স্ক্যাল্প এবং হ্যামার বোমা ব্যবহার হয়েছে বলেও খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
১৯১৯
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তান প্রত্যাঘাত শানাতে থাকায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী। এই লড়াইতে বহিঃশক্তির সাহায্য পেলেও খাইবার-পাখতুনখোয়া বা বালোচিস্তানের বিদ্রোহের মূল্য একাধিক রণাঙ্গনে ইসলামাবাদকে দিতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।