Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Vikash Khanna

আশ্রয়হীন হয়ে কাটাতে হয়েছিল একটা সময়, আজ তাঁর হাতের জাদুতে মুগ্ধ মোদী থেকে ওবামা

জন্মের পরে ডাক্তার বলেছিল, বিকাশ কোনওদিন হাঁটতে পারবেন না। শুনে, তাঁর মা বলেছিলেন, ‘সেটা আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে একদিন আকাশে উড়বে।’ মায়ের কথা সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন বিকাশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৪৫
Share: Save:
০১ ১৫
জন্ম থেকেই পায়ে ত্রুটি। ১৩ বছর বয়স অবধি ভাল করে দৌড়তেই পারত না। অবসর কাটত ঠাকুমার সঙ্গে। তাঁর রান্নার গন্ধ গায়ে মেখে। ঠাকুমা রান্না করতেন। পাশে দুই পা ছড়িয়ে বসে থাকত কিশোর। দু’টি পায়েই ত্রুটি ঠিক করার জন্য থাকত ধাতব আবরণ। তাই পা ভাঁজ করতে পারত না সে।

জন্ম থেকেই পায়ে ত্রুটি। ১৩ বছর বয়স অবধি ভাল করে দৌড়তেই পারত না। অবসর কাটত ঠাকুমার সঙ্গে। তাঁর রান্নার গন্ধ গায়ে মেখে। ঠাকুমা রান্না করতেন। পাশে দুই পা ছড়িয়ে বসে থাকত কিশোর। দু’টি পায়েই ত্রুটি ঠিক করার জন্য থাকত ধাতব আবরণ। তাই পা ভাঁজ করতে পারত না সে।

০২ ১৫
সে দিনের বালক আজ বিশ্বজয়ী রন্ধনশিল্পী। তাঁর রান্নায় মুগ্ধ মোদী, ওবামা থেকে দলাই লামা। বিশ্ব দরবারে ভারতীয় রন্ধনকে তুলে ধরেছেন সেলেব্রিটি শেফ বিকাশ খন্না। পঞ্জাবের অমৃতসরে বিকাশের জন্ম ১৯৭১-এর ১৪ নভেম্বর। তাঁর বাবা, দবীন্দ্র খন্না এবং মা বিন্দু খন্না। দাদা নিশান্ত এবং বোন রাধিকার সঙ্গে বড় হওয়া। রন্ধনপটিয়সী ঠাকুমার কাছেই রান্নায় হাতেখড়ি বিকাশের।

সে দিনের বালক আজ বিশ্বজয়ী রন্ধনশিল্পী। তাঁর রান্নায় মুগ্ধ মোদী, ওবামা থেকে দলাই লামা। বিশ্ব দরবারে ভারতীয় রন্ধনকে তুলে ধরেছেন সেলেব্রিটি শেফ বিকাশ খন্না। পঞ্জাবের অমৃতসরে বিকাশের জন্ম ১৯৭১-এর ১৪ নভেম্বর। তাঁর বাবা, দবীন্দ্র খন্না এবং মা বিন্দু খন্না। দাদা নিশান্ত এবং বোন রাধিকার সঙ্গে বড় হওয়া। রন্ধনপটিয়সী ঠাকুমার কাছেই রান্নায় হাতেখড়ি বিকাশের।

০৩ ১৫
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নানারকমের রেসিপি তাঁর হাতের মুঠোয়। রীতিমতো ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করে শুরু করলেন ব্যবসা। বিয়ে এবং অনুষ্ঠানের জন্য। কেটারিংয়ের দায়িত্ব তাঁর।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নানারকমের রেসিপি তাঁর হাতের মুঠোয়। রীতিমতো ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া করে শুরু করলেন ব্যবসা। বিয়ে এবং অনুষ্ঠানের জন্য। কেটারিংয়ের দায়িত্ব তাঁর।

০৪ ১৫
কিছু টাকা জমতেই রাস্তার পাশে দোকান দিলেন বিকাশ। প্রথমে ছোলে বাটুরে, তারপর তন্দুরি। রান্না নিয়েই উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিক ভাবে মণিপালে, তারপর ২০০০ সালে চলে গেলেন আমেরিকা। নেহাতই ভাগ্যপরীক্ষার জন্য।

কিছু টাকা জমতেই রাস্তার পাশে দোকান দিলেন বিকাশ। প্রথমে ছোলে বাটুরে, তারপর তন্দুরি। রান্না নিয়েই উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিক ভাবে মণিপালে, তারপর ২০০০ সালে চলে গেলেন আমেরিকা। নেহাতই ভাগ্যপরীক্ষার জন্য।

০৫ ১৫
বিদেশ পাড়ির আগেই দেশের নামী হোটেলে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল বিকাশের। তবু তিনি আমেরিকায় শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। নিউইয়র্কে প্রথম কয়েকদিন আশ্রয়হীন ছিলেন বিকাশ। মাথার উপর ছাদ এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পেতেন নিউইয়র্ক সিটি রেসকিউ মিশনে।

বিদেশ পাড়ির আগেই দেশের নামী হোটেলে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল বিকাশের। তবু তিনি আমেরিকায় শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। নিউইয়র্কে প্রথম কয়েকদিন আশ্রয়হীন ছিলেন বিকাশ। মাথার উপর ছাদ এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পেতেন নিউইয়র্ক সিটি রেসকিউ মিশনে।

০৬ ১৫
তিন সপ্তাহ বিকাশ ছিলেন আশ্রয়হীনদের জন্য তৈরি ওই সংস্থায়। সেখানেও হাতের রান্নায় সবার মন জয় করলেন তিনি। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে বিকাশ কাজ পেলেন ওখানকার ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘সালাম বম্বে’-তে।

তিন সপ্তাহ বিকাশ ছিলেন আশ্রয়হীনদের জন্য তৈরি ওই সংস্থায়। সেখানেও হাতের রান্নায় সবার মন জয় করলেন তিনি। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে বিকাশ কাজ পেলেন ওখানকার ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘সালাম বম্বে’-তে।

০৭ ১৫
এরপর নিউইয়র্কে বিকাশের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ‘জুনুন’ পথ চলা শুরু করে। ততদিনে রন্ধনশিল্পের অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক খেতাব ‘মিশেলিন স্টার শেফ’ বিকাশের শিরোপায়। আজ ম্যানহ্যাটনের প্রথম সারির রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে অন্যতম বিকাশের ‘জুনুন’।

এরপর নিউইয়র্কে বিকাশের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ‘জুনুন’ পথ চলা শুরু করে। ততদিনে রন্ধনশিল্পের অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক খেতাব ‘মিশেলিন স্টার শেফ’ বিকাশের শিরোপায়। আজ ম্যানহ্যাটনের প্রথম সারির রেস্তোরাঁগুলির মধ্যে অন্যতম বিকাশের ‘জুনুন’।

০৮ ১৫
দেশে ফিরে বিকাশ রান্নার পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন টেলিভিশন শো ‘মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া’ সঞ্চালনা করে। ‘হোলি কিচেনস’ নামে তথ্যচিত্র সিরিজও প্রযোজনা করেছেন বিকাশ। তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসিত হয়। ছবির বিষয়বস্তু ছিল কাশীতে বসবসকারী বাঙালি বিধবাদের জীবন। তাঁর লেখা রান্নার বইও বেশ জনপ্রিয়।

দেশে ফিরে বিকাশ রান্নার পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন টেলিভিশন শো ‘মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া’ সঞ্চালনা করে। ‘হোলি কিচেনস’ নামে তথ্যচিত্র সিরিজও প্রযোজনা করেছেন বিকাশ। তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসিত হয়। ছবির বিষয়বস্তু ছিল কাশীতে বসবসকারী বাঙালি বিধবাদের জীবন। তাঁর লেখা রান্নার বইও বেশ জনপ্রিয়।

০৯ ১৫
ভারত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজসেবায় জড়িত বিকাশ। নিউইয়র্কে নিজের ফেলে আসা দিন তিনি ভোলেননি। সেখানেও কাজ করেছেন দুঃস্থদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে।

ভারত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজসেবায় জড়িত বিকাশ। নিউইয়র্কে নিজের ফেলে আসা দিন তিনি ভোলেননি। সেখানেও কাজ করেছেন দুঃস্থদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে।

১০ ১৫
বিকাশের প্রিয় রং হলুদ। এটা তাঁর কাছে সূর্যের রং, আবার রান্নায় অপরিহার্য, গুণসমৃদ্ধ একটি মশলার রং। রন্ধন শিল্পীর সাদা পোশাকে হলুদের দাগ বিকাশ খুব ভালবাসেন।

বিকাশের প্রিয় রং হলুদ। এটা তাঁর কাছে সূর্যের রং, আবার রান্নায় অপরিহার্য, গুণসমৃদ্ধ একটি মশলার রং। রন্ধন শিল্পীর সাদা পোশাকে হলুদের দাগ বিকাশ খুব ভালবাসেন।

১১ ১৫
শৈশবের স্মৃতি এখনও ঘিরে আছে বিকাশকে। মনে পড়ে, তিনি যখন রান্নায় নারকেল দিয়েছিলেন, ঠাকুমা এসে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি নতুন বাইক কিনেছেন? বাড়িতে নারকেল এসেছে কেন! পঞ্জাবি রান্নায় নারকেলের ব্যবহার নেই বলে বৃদ্ধা জানতেনই না, নারকেলে রান্নার স্বাদবৃদ্ধি হয়!

শৈশবের স্মৃতি এখনও ঘিরে আছে বিকাশকে। মনে পড়ে, তিনি যখন রান্নায় নারকেল দিয়েছিলেন, ঠাকুমা এসে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি নতুন বাইক কিনেছেন? বাড়িতে নারকেল এসেছে কেন! পঞ্জাবি রান্নায় নারকেলের ব্যবহার নেই বলে বৃদ্ধা জানতেনই না, নারকেলে রান্নার স্বাদবৃদ্ধি হয়!

১২ ১৫
এ রকমই আর একটি মজার স্মৃতি আছে দই নিয়ে। সে বার প্রথম বাড়িতে মিষ্টি দই বানিয়েছিলেন বিকাশ। পরিবারের পাশাপাশি অবাক হয়েছিল বন্ধুবান্ধবরাও। দই, আবার মিষ্টি! সবাই আকাশ থেকে পড়েছিলেন। এ ভাবেই রান্না নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে বরাবর বাজিমাত করে এসেছেন বিকাশ।

এ রকমই আর একটি মজার স্মৃতি আছে দই নিয়ে। সে বার প্রথম বাড়িতে মিষ্টি দই বানিয়েছিলেন বিকাশ। পরিবারের পাশাপাশি অবাক হয়েছিল বন্ধুবান্ধবরাও। দই, আবার মিষ্টি! সবাই আকাশ থেকে পড়েছিলেন। এ ভাবেই রান্না নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে বরাবর বাজিমাত করে এসেছেন বিকাশ।

১৩ ১৫
নিজের রেস্তোরাঁ, অন্য পাঁচতারা রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে বাজিমাত করা বিকাশ খন্নার পছন্দের জায়গা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। ভালবাসেন স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় সবার সঙ্গে বসে চাপাটি বানাতে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদো সপরিবারে যখন এসেছিলেন ভারত সফরে, তাঁদের সবাইকে স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় হাতে ধরে চাপাটি বেলতে শিখিয়েছিলেন বিকাশ।

নিজের রেস্তোরাঁ, অন্য পাঁচতারা রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে বাজিমাত করা বিকাশ খন্নার পছন্দের জায়গা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। ভালবাসেন স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় সবার সঙ্গে বসে চাপাটি বানাতে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদো সপরিবারে যখন এসেছিলেন ভারত সফরে, তাঁদের সবাইকে স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায় হাতে ধরে চাপাটি বেলতে শিখিয়েছিলেন বিকাশ।

১৪ ১৫
৪৮ বছর বয়সি বিকাশ এখন সপরিবারে বছরের বেশিরভাগ সময়েই আমেরিকার বাসিন্দা। তবে এখনও বিয়ে করেননি তিনি। শোনা গিয়েছিল, আর এক রন্ধনশিল্পী শিপ্রা খন্নার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে। রটেছিল তাঁদের বিয়ের গুঞ্জনও। কিন্তু তারপর তা রয়ে গিয়েছে গুজবের স্তরেই।

৪৮ বছর বয়সি বিকাশ এখন সপরিবারে বছরের বেশিরভাগ সময়েই আমেরিকার বাসিন্দা। তবে এখনও বিয়ে করেননি তিনি। শোনা গিয়েছিল, আর এক রন্ধনশিল্পী শিপ্রা খন্নার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে। রটেছিল তাঁদের বিয়ের গুঞ্জনও। কিন্তু তারপর তা রয়ে গিয়েছে গুজবের স্তরেই।

১৫ ১৫
জন্মের পরে ডাক্তার বলেছিলেন, বিকাশ কোনওদিন হাঁটতে পারবেন না। শুনে, তাঁর মা বলেছিলেন, ‘সেটা আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে একদিন আকাশে উড়বে।’ মায়ের কথা সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন বিকাশ।

জন্মের পরে ডাক্তার বলেছিলেন, বিকাশ কোনওদিন হাঁটতে পারবেন না। শুনে, তাঁর মা বলেছিলেন, ‘সেটা আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে একদিন আকাশে উড়বে।’ মায়ের কথা সত্যি বলে প্রমাণ করেছেন বিকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE