Microsoft CEO announces Rs 1.5 lakh crore for developing Artificial Intelligence-capabilities of India dgtl
Microsoft's Mega Investment
ভারতে দেড় লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি! এ দেশে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ করল মাইক্রোসফ্ট, কত চাকরির সুযোগ ভারতীয়দের?
এ দেশে বিরাট তথ্যভান্ডার ও এআই-কেন্দ্রিক ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, দক্ষতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা উন্নয়নে ১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার লগ্নি করছে মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থাটি। চার বছরের মধ্যেই এই বিনিয়োগ সম্পূর্ণ করবে মাইক্রোসফ্ট, আশ্বাস দিয়েছেন সংস্থার প্রধান।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মাইক্রোসফ্টের বিনিয়োগের নতুন লক্ষ্য হতে চলেছে ভারত। এশিয়ার সর্বকালের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ পেতে চলেছে দেশ। ভারতে দেড় লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশ্বাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট সংস্থার সিইও সত্য নাদেল্লার।
০২২০
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন মাইক্রোসফ্টের কর্তা নাদেল্লা। ভারতের এআই পরিকাঠামো, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়ে তুলতে এই বিনিয়োগ করবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি। ডিজিটাল দুনিয়ায় আসন পাকা করতে বিশাল এক তথ্যভান্ডার বা ডেটা সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মাইক্রোসফ্টের হাত ধরতে চায় নয়াদিল্লি।
০৩২০
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে তথ্যের নিরিখে ‘খেলা ঘোরানো’র ভূমিকা নেবে ওই ডেটা সেন্টার। পাশাপাশি, তথ্যসুরক্ষার বিষয়টিও মাথায় রাখছে ভারত। তাই সাইবার সুরক্ষা মজবুত করার জন্য মাইক্রোসফ্টের মতো সংস্থার উপরই ভরসা রাখতে চায় ভারত।
০৪২০
এ দেশে বিরাট তথ্যভান্ডার ও এআই-কেন্দ্রিক ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, দক্ষতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা উন্নয়নে ১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার লগ্নি করছে মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থাটি। চার বছরের মধ্যেই এই বিনিয়োগ সম্পূর্ণ করবে মাইক্রোসফ্ট, আশ্বাস দিয়েছেন সংস্থার প্রধান।
০৫২০
দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশে তৈরি হবে প্রস্তাবিত ওই ডেটা সেন্টার। ২০২৬ সালের মধ্যেই কেন্দ্রটি তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত।
০৬২০
মাইক্রোসফ্টের কর্তা এআইয়ের দুনিয়ায় ভারতের দ্রুত অগ্রগতি সম্পর্কে যথেষ্ট আশাবাদী। ভারত যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনে শীর্ষস্থানীয় দেশ হয়ে উঠছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন নাদেল্লা। দেশ জুড়ে নতুন সুযোগের নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। সে কারণেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে তাঁর সংস্থা।
০৭২০
তিনি বলেন, ‘‘মাইক্রোসফ্ট যে পরিকাঠামো ও দক্ষতা বৃদ্ধির ঘোষণা করছে তা ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় ভারতকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা পুনর্বার দিচ্ছি।” সারা দেশের মানুষ এবং স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে ব্যাপক ভাবে উপকৃত করতে সহায়তা করবে এই উদ্যোগ, আশাবাদী মাইক্রোসফ্টের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও।
০৮২০
এর আগে ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এআই ও ক্লাউড প্রযুক্তিতে ৩০০ কোটি ডলার লগ্নি করার প্রস্তাবের পর আবার এশিয়ার বৃহত্তম বিনিয়োগের কথা জানাল মাইক্রোসফ্ট। সংস্থাটি মনে করছে আগামী দিনে এআইয়ের ক্ষেত্রে বড়স়ড় বাজার তৈরি হবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে।
০৯২০
মাইক্রোসফ্টকে বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসাবে বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ চারটি। আমজনতার জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে সরকার। আধার, ইউপিআই, ডিজি লকার প্রভৃতি প্রযুক্তির জন্য ভবিষ্যতে এআইয়ের বাজার উন্মুক্ত হতে চলেছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে বৃহত্তর বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ হাতের মুঠোয় আসবে সংস্থার।
১০২০
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এত দিন শুধুমাত্র পরিষেবা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ভারত। এ বার পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও উন্নতি করার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। মার্কিন মুলুকের সিলিকন ভ্যালির মতো প্রযুক্তিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র।
১১২০
দক্ষ সফট্অয়্যার প্রযুক্তিবিদ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমেরিকার পরই ভারতের স্থান। প্রতি বছরই এআই প্রযুক্তিবিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতে। নতুন নতুন স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি আত্মপ্রকাশ করছে তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে। সেই ছোট ছোট সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তিগত ভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী হয়েছে মাইক্রোসফ্ট।
১২২০
দক্ষ সফট্অয়্যার প্রযুক্তিবিদ তৈরি করার ক্ষেত্রে আমেরিকার পরই ভারতের স্থান। প্রতি বছরই এআই প্রযুক্তিবিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতে। নতুন নতুন স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি আত্মপ্রকাশ করছে তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে। সেই ছোট ছোট সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তিগত ভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী হয়েছে মাইক্রোসফ্ট।
১৩২০
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন ভূ-রাজনৈতিক কারণে চিনকে টপকে ভারত বর্তমানে বৈশ্বিক বাজার দখলে বেশ কিছুটা অনুকূল অবস্থানে রয়েছে। মাইক্রোসফ্ট, গুগ্ল, এনভিডিয়ার মতো বৃহৎ সংস্থাগুলি ভারতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
১৪২০
মাইক্রোসফ্টের এই বিনিয়োগ তহবিল প্রধানত ব্যবহার করা হবে ক্লাউড এবং এআই পরিকাঠামো বৃদ্ধি করার জন্য। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। যদিও ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ‘সভরেন পাবলিক ক্লাউড’ এবং ‘সভরেন প্রাইভেট ক্লাউড’ পরিষেবা প্রদান করে থাকে মাইক্রোসফ্ট। আগামী দিনে ভারতীয় এআই বাজার দখলের রাশ নিজের হাতে নিতে চায় সংস্থাটি।
১৫২০
মাইক্রোসফ্ট জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি ভারতীয়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তারা। এ দেশে তাদের ২২ হাজারেরও বেশি কর্মচারী বৃদ্ধির আশা করছে সংস্থা। বিনিয়োগ সম্পূর্ণ হলে ভারতে দেড় লক্ষ থেকে দু’লক্ষ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে এআই, ক্লাউড কম্পিউটিং-এ। এ ছাড়াও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে।
১৬২০
মাইক্রোসফ্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ই-শ্রম এবং ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস (এনসিএস)-এ এআইয়ের দ্বারা এক ছাতার নীচে আনার পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্যোগের ফলে ৩১ কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে বলে আশা। বহুভাষিক এআই সহায়তায় কর্মসংস্থান তৈরি, দক্ষতা যাচাই, স্বয়ংক্রিয় ‘রেজ়িউম’ বা বায়ো ডেটা তৈরি করতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা।
১৭২০
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিকাঠামো তৈরি করতে প্রয়োজন দক্ষ কর্মীর। সেই কর্মীর অভাব পূরণ করতে মাইক্রোসফ্ট লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী, ইঞ্জিনিয়ার, পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দেবে বলে সূত্রের খবর। লার্জ মডেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থান। সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ মিলবে এআই নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, ক্লাউ়ড পরিকাঠামো, কৃত্রিম মেধার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে।
১৮২০
মাইক্রোসফ্টের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল তাদের পণ্যগুলির মাধ্যমে ছোট ছোট ভারতীয় স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে সহায়তা দেওয়া। দেশীয় এআই প্রযুক্তি তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন তা দিতে প্রস্তুত মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাটি। এর ফলে চিপ ও প্রযুক্তি সস্তা হবে ভারতীয় স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে। ইউরোপ ও আমেরিকা নির্ভরতা কমবে ভারতের।
১৯২০
তবে মাইক্রোসফ্ট যে তথ্যভান্ডার তৈরি করতে আগ্রহী, সেটি ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কিছু বাধা আসতে পারে বলে আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। এক গিগাওয়াট পর্যন্ত তথ্যধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন ওই তথ্যভান্ডারের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো তৈরি করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ডেটা সেন্টারটি তৈরি হলে নিত্য দিন ভারতে উৎপন্ন হওয়া বিপুল পরিমাণে তথ্য বা ডেটা সংরক্ষণের কাজে সুবিধা হবে কেন্দ্রের।
২০২০
তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এত দিন শুধুমাত্র পরিষেবা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ভারত। এ বার পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও উন্নতি করার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। মার্কিন মুলুকের সিলিকন ভ্যালির মতো প্রযুক্তিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র। আর সেই কর্মযজ্ঞের মূল হোতা হয়ে উঠতে পারে মাইক্রোসফ্ট।