Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Labour Code Reforms

কমতে পারে হাতে পাওয়া বেতনের পরিমাণ, সংস্থার হাতে ‘দেদার ছাঁটাইয়ের চাবি’! ঠিক কী কী বলছে নতুন শ্রম আইন?

অতীতের ২৯টা শ্রম আইন বাতিল করে নতুন ভাবে চারটি বিধি তৈরি করেছে কেন্দ্র। এতে কতটা সুবিধা পাবে বেসরকারি সংস্থার কর্মী ও শ্রমিকেরা?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৩
Share: Save:
০১ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

ভারতের শ্রম আইনে বড় বদল। ২৯টির বদলে মাত্র চারটি বিধান থাকছে সেখানে। নতুন নিয়মে এই প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির গিগ কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষার দিকে নজর দিয়েছে কেন্দ্র। বেসরকারি সংস্থাগুলির কর্মীদের কমতে পারে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বেতনের অঙ্ক। পাশাপাশি বাড়বে অবসরকালীন সঞ্চয়ের অবদান। অন্য দিকে এতে বেলাগাম ছাঁটাইয়ের সুবিধা থাকছে বলে সুর চড়িয়েছে একাধিক শ্রমিক সংগঠন।

০২ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

চলতি বছরের ২১ নভেম্বর নতুন শ্রম আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। সেখানে যে চারটি কোডের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল ন্যূনতম বেতন, শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক সুরক্ষা এবং শিল্প নিরাপত্তা ও উন্নয়ন। উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর ১৯৩০ থেকে ১৯৫০-এর দশকের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে একাধিক শ্রম বিল পাশ করে এ দেশের সরকার। ফলে বাড়তে বাড়তে এর সংখ্যা ২৯-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর জেরে নানা আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছিল শিল্প সংস্থা ও প্রশাসনকে।

০৩ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

এই পরিস্থিতিতে শ্রম আইনের সংখ্যা কমিয়ে চারে নামিয়ে আনাকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসাবে দেখছেন শিল্পপতিদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এর জেরে দেশে বাড়বে লগ্নি, দ্রুত উৎপাদন করা যাবে পণ্য। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) সূচক। কিন্তু কতটা সুবিধা পাবেন কলকারখানা বা বেসরকারি সংস্থার শ্রমিক ও কর্মীরা? এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে তরজা।

০৪ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

চার নতুন শ্রম আইনের প্রথমেই রয়েছে ন্যূনতম মজুরির কথা। ২০১৯ সালে এই সংক্রান্ত আইন পাশ করে কেন্দ্র। সেখানে ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি বোনাস এবং অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, শ্রমিক বা বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি ঠিক করবে কেন্দ্র। প্রতিটা রাজ্য সরকারকে তা মানতে হবে। কোনও অবস্থাতেই সংশ্লিষ্ট সূচকের চেয়ে কম বেতন দিতে পারবে না কোনও সংস্থা। সংগঠিত এবং অসংগঠিত দু’টি ক্ষেত্রেই যা চালু হবে বলে জানিয়েছে মোদী প্রশাসন।

০৫ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

অতীতে মজুরির বিষয়ে মোট চারটি আইন ছিল। সেগুলি হল, ১৯৩৬ সালের মজুরি প্রদান আইন, ১৯৪৮ সালের ন্যূনতম মজুরি আইন, ১৯৬৫ সালের বোনাস প্রদান আইন এবং ১৯৭৬ সালের সমান পারিশ্রমিক আইন। এগুলিকে সংযুক্ত করে নতুন মজুরি আইনটি তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানে ‘কস্ট টু কোম্পানি’ বা সিটিসির ৫০ শতাংশকে মূল বেতন (বেসিক পে) রাখতে বলা হয়েছে।

০৬ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

যে কোনও বেসরকারি সংস্থা কর্মীদের জন্য যে টাকা খরচ করে তারই পোশাকি নাম সিটিসি। এতে বেতন, বোনাস ও প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ)-সহ একাধিক আর্থিক সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ থাকে। মোট সিটিসির ৫০ শতাংশ মূল বেতন (বেসিক পে) হলে বাড়বে পিএফ এবং গ্র্যাচুইটির অঙ্ক। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবসরের পর বা চাকরি ছেড়ে দিলে হাতে পাবেন বেশি টাকা। তবে বাড়িতে আনা টাকার পরিমাণ কমবে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

০৭ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

নতুন শ্রম আইনে গ্র্যাচুইটির নিয়মে বড় বদল করেছে কেন্দ্র। আগে কোনও সংস্থায় টানা পাঁচ বছর কাজ না করলে পাওয়া যেত না এই আর্থিক সুবিধা। নতুন নিয়মে সেটা কমিয়ে এক বছর করেছে মোদী সরকার। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় কাজ করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দ্বিগুণ বেতন প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

০৮ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

২০২০ সালে শিল্প সম্পর্ক আইন পাশ করে কেন্দ্র। এর মধ্যে ১৯২৬ সালের শ্রমিক সংগঠন আইন, ১৯৪৬ সালের শিল্প কর্মসংস্থান (স্থায়ী নির্দেশ) আইন এবং ১৯৪৭ সালের শিল্প ক্ষেত্রে বিরোধ আইনকে মিশিয়েছে সরকার। নতুন নিয়মে হরতাল, লকআউট, সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক বা ছাঁটাইয়ের মতো সমস্যা কমবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক।

০৯ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

এত দিন পর্যন্ত ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে ১০০ কর্মী থাকলেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরকারের অনুমতি নিতে হত। নতুন শ্রম আইনে সেটা বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়িজ়দের স্বীকৃতি দিতে বলেছে সরকার। এতে স্পষ্ট হয়েছে শ্রমিক, কর্মী এবং নিয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞা।

১০ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

চার শ্রম বিধানের বিজ্ঞপ্তিতে ২০২০ সালে পাশ হওয়া সামাজিক সুরক্ষা বিধিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্র। এতে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে পাশ হওয়া চার থেকে পাঁচটি আইনে মিশিয়ে দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট বিধানে গিগ কর্মীদের স্বীকৃতি এবং আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইপিএফও, ইপিএস, মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা, গ্র্যাচুইটি এবং অসংগঠিত শ্রম ক্ষেত্রগুলির উন্নয়ন। পাশাপাশি, কর্মরত অবস্থায় অঙ্গহানি বা মৃত্যু হলে ওই শ্রমিকের পরিবারের সদস্যেরা কী কী সুবিধা পাবেন, তা-ও স্পষ্ট করা হয়েছে।

১১ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

বিজ্ঞপ্তির একেবারে শেষে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার কথা বলেছে মোদী সরকার। ২০২০ সালে এই সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করে কেন্দ্র। এতে ১৯৪৮ সালের কারখানা আইন, ১৯৫২ সালের খনি আইন, ১৯৭০ সালের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক (নিয়ন্ত্রণ ও বাতিল) আইন, ১৯৭৯ সালের আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন এবং ১৯৫১ সালের কৃষি ক্ষেত্রের শ্রম আইনকে মেশানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

১২ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই নিয়মে সুরক্ষার একটা সুনির্দিষ্ট বিধি তৈরি করবে সরকার। সেটা দেশের সমস্ত সংস্থাকে মানতে হবে। পাশাপাশি মহিলাকর্মীদের সমবেতন ও সমসম্মান, ৪০ বছরের বেশি বয়সি কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং খনির মতো বিপজ্জনক ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

১৩ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

নতুন শ্রম বিধি নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়। তাঁর কথায়, ‘‘এর মাধ্যমে শ্রমিক ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের একাধিক প্রতিশ্রুতি (পড়ুন গ্যারান্টি) দিচ্ছে মোদী সরকার। আমরা ৪০ কোটি শ্রমিককে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে চলেছি।’’ যদিও এ ব্যাপারে উল্টো সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল এবং শ্রমিক সংগঠনগুলির মুখে।

১৪ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

গত ২২ নভেম্বর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এই নিয়ে একটি পোস্ট করেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রায় রমেশ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘চারটি বিধি চালু করে মোদী সরকার এমন প্রচার করছে, যেন দেশের শ্রমক্ষেত্রে তারা একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। আসলে পুরনো ২৯টি শ্রম আইনকে মিশিয়ে নতুন মোড়কে চারটি বিধি চালু করা হয়েছে। বাস্তবে এই বিধির নিয়মগুলি সম্পর্কেও এখনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।’’

১৫ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

শতাব্দীপ্রাচীন দল কংগ্রেসের অভিযোগ, শহরাঞ্চলে কাজের অধিকার নিশ্চিত নয়। সেখানে ‘শ্রমিক ন্যায়’ প্রতিষ্ঠা করুক সরকার। প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়া বন্ধ করার দাবি তুলেছে তারা। পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি নিশ্চিত করতে চাইছে কংগ্রেস। কেন্দ্র অবশ্য এই নিয়ে এখনও কোনও বিবৃতি দেয়নি।

১৬ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

নতুন চার বিধি নিয়ে সুর চড়িয়েছে একাধিক শ্রমিক সংগঠনও। তাদের দাবি, শুধুমাত্র কারখানার মালিক বা বেসরকারি সংস্থার সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই আইন তৈরি করেছে কেন্দ্র। এতে অনেকটাই কমবে কাজের নিশ্চয়তা। যখন-তখন ছাঁটাই করতে পারবে ছোট-বড় যে কোনও সংস্থা।

১৭ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

গিগ কর্মীদের সংগঠনগুলির আবার দাবি, বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। এতে কতটা আর্থিক লাভ হবে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে তারা। নতুন নিয়মে মহিলাকর্মীদের রাতের শিফটে কাজ করাতে পারবে কোনও সংস্থা। তবে সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে তাদের।

১৮ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, নতুন শ্রম বিধিতে বিপদের মুখে পড়বে ছোট সংস্থা। কারণ সামাজিক সুরক্ষার একাধিক নিয়ম মানতে হবে তাদের। তবে সংশ্লিষ্ট বিধিগুলিকে বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করা বেশ কঠিন। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। অ-বিজেপি বা এনডিএ-বিরোধী কোনও রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কতটা আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

১৯ ১৯
New Labour Law may decrease take home salary, know its benefits and disadvantages

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চারটির মধ্যে কোনও না কোনও বিধিকে নিয়ে নিয়ম তৈরি করেছে দেশের প্রতিটা রাজ্য। বিরোধী রাজ্যগুলিও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। বাংলায় নতুন বিধির একটিও নিয়ম তৈরি হয়নি। ফলে এখানে অবস্থার বদল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy