Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Runaway Bride of Maharashtra

বিয়ের দু’-তিন দিনের মধ্যেই এই গ্রাম থেকে পালান বেশির ভাগ নববধূ!

নাসিক থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে সুরগানা তালুকের ছোট গ্রাম দান্ডিচি বারি। গোটা গ্রামে মেরেকেটে ৩০০ জনের বাস। কিন্তু এই গ্রামে কোনও পুরুষের বিয়ে হলে আনন্দ করার বদলে প্রমাদ গোনেন সেই পরিবার এবং গ্রামের বাকিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ ১০:০২
Share: Save:
০১ ২০
নাসিক থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে সুরগানা তালুকের ছোট গ্রাম দান্ডিচি বারি। গোটা গ্রামে মেরেকেটে ৩০০ জনের বাস। কিন্তু এই গ্রামে কোনও পুরুষের বিয়ে হলে আনন্দ করার বদলে প্রমাদ গোনেন সেই পরিবার এবং গ্রামের বাকিরা। বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও সুখী সাংসারিক জীবন কেমন হয় তা এই গ্রামের অনেক পুরুষই জানেন না। কারণ এই গ্রামে বেশির ভাগ মহিলাই বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।

নাসিক থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে সুরগানা তালুকের ছোট গ্রাম দান্ডিচি বারি। গোটা গ্রামে মেরেকেটে ৩০০ জনের বাস। কিন্তু এই গ্রামে কোনও পুরুষের বিয়ে হলে আনন্দ করার বদলে প্রমাদ গোনেন সেই পরিবার এবং গ্রামের বাকিরা। বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও সুখী সাংসারিক জীবন কেমন হয় তা এই গ্রামের অনেক পুরুষই জানেন না। কারণ এই গ্রামে বেশির ভাগ মহিলাই বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।

০২ ২০
কিন্তু এমনি এমনি না। বিশেষ এক কারণে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন এই গ্রামের নববধূরা।

কিন্তু এমনি এমনি না। বিশেষ এক কারণে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন এই গ্রামের নববধূরা।

০৩ ২০
দান্ডিচি বারি গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছরই পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। তীব্র জলকষ্টের মধ্যে থাকলেও যাঁরা এই গ্রামে বড় হয়েছেন, তাঁরা এই জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত।

দান্ডিচি বারি গ্রামের বাসিন্দারা সারা বছরই পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। তীব্র জলকষ্টের মধ্যে থাকলেও যাঁরা এই গ্রামে বড় হয়েছেন, তাঁরা এই জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত।

০৪ ২০
কিন্তু সমস্যায় পড়েন তাঁরা, যাঁরা বাইরে থেকে এই গ্রামে আসেন। আর তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই নববিবাহিতা।

কিন্তু সমস্যায় পড়েন তাঁরা, যাঁরা বাইরে থেকে এই গ্রামে আসেন। আর তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই নববিবাহিতা।

০৫ ২০
শ্বশুরবা়ড়িতে কিছু দিন কাটানোর পর তাঁরা পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, এই গ্রামে থাকতে চান না। বিয়ে-স্বামী-শ্বশুরবাড়ি সব ফেলে ফিরে যেতে চান বাপের বাড়ি।

শ্বশুরবা়ড়িতে কিছু দিন কাটানোর পর তাঁরা পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, এই গ্রামে থাকতে চান না। বিয়ে-স্বামী-শ্বশুরবাড়ি সব ফেলে ফিরে যেতে চান বাপের বাড়ি।

০৬ ২০
এই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ওয়াঘমারে এ রকমই একটি বিয়ের কথা শুনিয়েছেন, যা মাত্র দু’দিন টিকেছিল।

এই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ওয়াঘমারে এ রকমই একটি বিয়ের কথা শুনিয়েছেন, যা মাত্র দু’দিন টিকেছিল।

০৭ ২০
গোবিন্দ বলেন, “২০১৪ সালে গ্রামের এক জনের বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে মাত্র দু’দিনের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। বিয়ের দু’দিনের মাথায় স্বামীর ঘর ছা়ড়েন ওই বধূ। এই ঘটনা লোকমুখে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।’’

গোবিন্দ বলেন, “২০১৪ সালে গ্রামের এক জনের বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে মাত্র দু’দিনের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। বিয়ের দু’দিনের মাথায় স্বামীর ঘর ছা়ড়েন ওই বধূ। এই ঘটনা লোকমুখে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।’’

০৮ ২০
গোবিন্দ আরও জানান, জল আনার জন্য ওই নববধূ গ্রামের বাকি গৃহবধূদের সঙ্গে পাহাড়ের নীচে গিয়েছিলেন। এক দিন জল আনতে গিয়েই বুঝে গিয়েছিলেন যে, এই গ্রামে বসবাস করা কতটা কঠিন।

গোবিন্দ আরও জানান, জল আনার জন্য ওই নববধূ গ্রামের বাকি গৃহবধূদের সঙ্গে পাহাড়ের নীচে গিয়েছিলেন। এক দিন জল আনতে গিয়েই বুঝে গিয়েছিলেন যে, এই গ্রামে বসবাস করা কতটা কঠিন।

০৯ ২০
অনেকটা পথ পেরিয়ে পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত গিয়ে পানীয় জল আনতে হয় গ্রামের মহিলাদের। ওই নববধূ বুঝে গিয়েছিলেন, ওই গ্রামে থাকলে তাঁর জীবন কঠিন হয়ে যাবে। পালানো ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। তাই জল আনতে গিয়ে সেখানেই জলের কলসি রেখে ওই বধূ বাপের বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলেন।

অনেকটা পথ পেরিয়ে পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত গিয়ে পানীয় জল আনতে হয় গ্রামের মহিলাদের। ওই নববধূ বুঝে গিয়েছিলেন, ওই গ্রামে থাকলে তাঁর জীবন কঠিন হয়ে যাবে। পালানো ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। তাই জল আনতে গিয়ে সেখানেই জলের কলসি রেখে ওই বধূ বাপের বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলেন।

১০ ২০
গোবিন্দ আরও জানিয়েছেন, এই গ্রামের মহিলাদের প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন মাস, দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাহাড়ের নীচে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া একটি নদী থেকে জল আনতে হয়।

গোবিন্দ আরও জানিয়েছেন, এই গ্রামের মহিলাদের প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন মাস, দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাহাড়ের নীচে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া একটি নদী থেকে জল আনতে হয়।

১১ ২০
শুকনো নদীর সামনে থাকা পাথরের ফাটল থেকে গ্রামের গৃহবধূদের জল ভরতে হয়। নদীর ধারে থাকা পাথরের ফাটলে হাত ঢুকিয়ে একটি বাটি দিয়ে সেই জল তুলে পাত্রে ভরতে হয় তাঁদের।

শুকনো নদীর সামনে থাকা পাথরের ফাটল থেকে গ্রামের গৃহবধূদের জল ভরতে হয়। নদীর ধারে থাকা পাথরের ফাটলে হাত ঢুকিয়ে একটি বাটি দিয়ে সেই জল তুলে পাত্রে ভরতে হয় তাঁদের।

১২ ২০
ফাটলের ভিতরের জল ফুরোলে সেই জল আবার ভর্তি হওয়ার জন্য মহিলাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এর পর দু’টি করে পাত্র মাথায় চাপিয়ে তাঁদের আবার পাহাড় ডিঙিয়ে গ্রামে ফিরতে হয়।

ফাটলের ভিতরের জল ফুরোলে সেই জল আবার ভর্তি হওয়ার জন্য মহিলাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এর পর দু’টি করে পাত্র মাথায় চাপিয়ে তাঁদের আবার পাহাড় ডিঙিয়ে গ্রামে ফিরতে হয়।

১৩ ২০
গ্রামের মহিলারা দিনে দু’বার পাহাড়ের নীচে জল আনতে যান। ভোর ৪টে থেকে জল আনার তোড়জোড় শুরু হয়। এক বার জল আনার পর বেলায় আবার জল আনতে যেতে হয়। গ্রীষ্মকালে বেশির ভাগ দিনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। সেই গরমেই পাথুরে রাস্তা হেঁটে পেরোতে হয় গ্রামের মহিলাদের।

গ্রামের মহিলারা দিনে দু’বার পাহাড়ের নীচে জল আনতে যান। ভোর ৪টে থেকে জল আনার তোড়জোড় শুরু হয়। এক বার জল আনার পর বেলায় আবার জল আনতে যেতে হয়। গ্রীষ্মকালে বেশির ভাগ দিনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। সেই গরমেই পাথুরে রাস্তা হেঁটে পেরোতে হয় গ্রামের মহিলাদের।

১৪ ২০
গ্রামের এক বাসিন্দা লক্ষ্মীবাই ওয়াসলে বলেন, ‘‘একটি কলসি পূর্ণ হতে তিন ঘণ্টাও লাগতে পারে। জল ভরে ফিরতে অনেক সময়েই রাত হয়ে যায়।’’

গ্রামের এক বাসিন্দা লক্ষ্মীবাই ওয়াসলে বলেন, ‘‘একটি কলসি পূর্ণ হতে তিন ঘণ্টাও লাগতে পারে। জল ভরে ফিরতে অনেক সময়েই রাত হয়ে যায়।’’

১৫ ২০
লক্ষ্মীবাই জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে বন্য প্রাণীদের হামলার ভয়ও থাকে। আর সেই কারণে রাতে ফেরার সময় মশাল জ্বালিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সঙ্গে থাকে টর্চও।

লক্ষ্মীবাই জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে বন্য প্রাণীদের হামলার ভয়ও থাকে। আর সেই কারণে রাতে ফেরার সময় মশাল জ্বালিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সঙ্গে থাকে টর্চও।

১৬ ২০
খাড়াই রাস্তা ধরে মাথায় দু’টি কলসি এবং হাতে টর্চ জ্বেলে বাড়ি ফেরেন গ্রামের মহিলারা। শুধু জল ভরতে যাওয়া নয়, বাড়ির অন্যান্য কাজও করতে হয় মহিলাদেরই।

খাড়াই রাস্তা ধরে মাথায় দু’টি কলসি এবং হাতে টর্চ জ্বেলে বাড়ি ফেরেন গ্রামের মহিলারা। শুধু জল ভরতে যাওয়া নয়, বাড়ির অন্যান্য কাজও করতে হয় মহিলাদেরই।

১৭ ২০
এই কষ্টকর জীবন কাটাতে রাজি থাকেন না অনেক মহিলাই। আর এই কারণে বিয়ে করে আসার পর অনেক নববধূ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।

এই কষ্টকর জীবন কাটাতে রাজি থাকেন না অনেক মহিলাই। আর এই কারণে বিয়ে করে আসার পর অনেক নববধূ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান।

১৮ ২০
দান্ডিচি বারি গ্রামের প্রধান জয়রাম ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, তিনি অনেক দিন ধরেই গ্রামের মানুষদের জন্য জলের ট্যাঙ্ক বসানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “অনেকে এসে আমাদের কষ্টের ছবি তোলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করেন না। আমাদের গ্রাম প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে খরায় ভুগছে।”

দান্ডিচি বারি গ্রামের প্রধান জয়রাম ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, তিনি অনেক দিন ধরেই গ্রামের মানুষদের জন্য জলের ট্যাঙ্ক বসানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “অনেকে এসে আমাদের কষ্টের ছবি তোলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করেন না। আমাদের গ্রাম প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে খরায় ভুগছে।”

১৯ ২০
জয়রাম স্বীকার করেছেন যে, বিয়ে না টেকার ব্যাপারে এই গ্রামের বদনাম রয়েছে। ২০০৮-’০৯ সালে তিন জন বিবাহিত মহিলা জলের অভাবে বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রাম ছেড়েছিলেন।

জয়রাম স্বীকার করেছেন যে, বিয়ে না টেকার ব্যাপারে এই গ্রামের বদনাম রয়েছে। ২০০৮-’০৯ সালে তিন জন বিবাহিত মহিলা জলের অভাবে বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রাম ছেড়েছিলেন।

২০ ২০
এখন অনেকেই তাঁদের মেয়েদের এই গ্রামের পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন না। জয়রাম বলেন, “এক বার যখন কেউ জানতে পারেন যে বরের বাড়ি দান্ডিচি বারিতে, তখনই তাঁরা বিয়ের আলোচনা বন্ধ করে দেন।”

এখন অনেকেই তাঁদের মেয়েদের এই গ্রামের পুরুষদের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন না। জয়রাম বলেন, “এক বার যখন কেউ জানতে পারেন যে বরের বাড়ি দান্ডিচি বারিতে, তখনই তাঁরা বিয়ের আলোচনা বন্ধ করে দেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE