NSA Ajit Doval meets Global Spy chiefs to counter terrorism, Khalistani and cyber security dgtl
Ajit Doval-Tulsi Gabbard Meet
সন্ত্রাসবাদ, খলিস্তান থেকে সাইবার নিরাপত্তা, দুনিয়ার দুঁদে গুপ্তচরদের নিয়ে বড় অপারেশনে ডোভাল?
আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড-সহ একাধিক দেশের গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সন্ত্রাসবাদ, খলিস্তান থেকে সাইবার নিরাপত্তা, কোন কোন বিষয়ে হল আলোচনা?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
দিল্লিতে জড়ো হয়েছেন দুনিয়ার তাবড় গুপ্তচর বাহিনীর প্রধানেরা। তাঁদের নিয়ে মেগা সম্মেলনের আয়োজন করলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার বা এনএসএ) অজিত ডোভাল। সন্ত্রাসবাদ, খলিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কড়া হাতে মোকাবিলা, বিভিন্ন বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে বলে খবর সূত্রের।
০২১৯
ডোভালের নেতৃত্বে হওয়া গুপ্তচর প্রধানদের সম্মেলনে হাজির ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান (ইউএস ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স) তুলসী গ্যাবার্ড। এ ছাড়া কানাডার গোয়েন্দাপ্রধান ড্যানিয়েল রজ়ার্স এবং ব্রিটেনের এনএসএ জ়োনাথন পাওয়েল ওই সম্মেলনে যোগ দেন। পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউ জ়িল্যান্ড এবং আরও কয়েকটি ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানদের সেখানে দেখা গিয়েছে।
০৩১৯
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ডের গোয়েন্দাকর্তাদের সঙ্গে ডোভালের সম্মেলনে যোগদান। কারণ, এই পাঁচটি দেশ মিলে তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গুপ্তচর সংস্থা ‘পঞ্চনেত্র’ (ফাইভ আইজ়)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে একসঙ্গে কাজ করে আসছে তারা।
০৪১৯
ডোভাল নেতৃত্বাধীন সম্মেলনে ছিলেন ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (আরএনএডব্লিউ) প্রধান রবি সিন্হা এবং ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) ডিরেক্টর তপনকুমার ডেকা। বৈঠকের শেষে অবশ্য সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। বিদেশি গোয়েন্দা বা গুপ্তচরবাহিনীর প্রধানেরাও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন।
০৫১৯
তবে সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল উদীয়মান প্রযুক্তিগত হুমকির ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদান। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে অর্থ পাচার বন্ধ করা, বন্দি প্রত্যর্পণ এবং অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে মূলত আলোচনা চলেছে বলে জানা গিয়েছে।
০৬১৯
লম্বা সময় ধরে বিদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারত-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চালাচ্ছেন খলিস্তানপন্থীরা। ডোভালের নেতৃত্বাধীন বৈঠকে এই নিয়ে সর্বাধিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ডের গোয়েন্দাকর্তাদের কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে।
০৭১৯
২০২৩ সালে খলিস্তানপন্থী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে কানাডায় গুলি করে খুন করে একদল অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী। ওই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ভারতীয় গুপ্তচরদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লি। কিন্তু এই ঘটনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ধরে চিড়।
০৮১৯
গত বছরের অক্টোবরে অটোয়ায় কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয় বর্মা-সহ বেশ কয়েক জন কূটনীতিক নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তোলে কানাডা প্রশাসন। এর কয়েক দিনের মাথায় বর্মা-সহ মোট পাঁচ কূটনীতিককে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, কানাডার ছ’জন কূটনীতিককে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়।
০৯১৯
বহিষ্কৃত কানাডিয়ান কূটনীতিকদের মধ্যে ছিলেন স্টুয়ার্ট হুইলার। ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই ঘটনাপরম্পরায় অটোয়া ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক একরকম তলানিতে গিয়ে পৌঁছোয়। কিন্তু এ বছর ট্রুডোর পদত্যাগের পর বরফ গলানোর চেষ্টা শুরু করছে দুই দেশ। আর তাই সেখানকার গোয়েন্দাকর্তা রজ়ার্সের এই বৈঠকে যোগদান তাৎপর্যপূর্ণ।
১০১৯
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর খলিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জ়িল্যান্ড প্রশাসন। কিছু দিন আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ব্রিটেন সফরকালে তাঁর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায় এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে কিয়ের স্টারমার সরকার।
১১১৯
এই সম্মেলনের আগে অবশ্য মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ডোভাল। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, সেখানে অবৈধ অভিবাসন, মাদক বিরোধিতা, সীমান্ত নিরাপত্তা, গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা, যৌনশোষণ রোধ, মানবপাচার, সাইবার নিরাপত্তার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে দু’জনের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
১২১৯
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ডোভাল এবং গ্যাবার্ডের মধ্যে বৈঠকে মূলত ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারির সঙ্গে সামঞ্জস্য বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন কোন ইস্যুতে দুই দেশ গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান করবে, তা নিয়ে আলোচনা সেরেছেন তাঁরা।
১৩১৯
ভারতে সফরে এসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তুলসী গ্যাবার্ড। সেখানে নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে) এবং তার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ১৭ মার্চ দিল্লিতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাজনাথ-গ্যাবার্ড পার্শ্ববৈঠকে খলিস্তান প্রসঙ্গ আসে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
১৪১৯
জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন খলিস্তান নিয়ে একাধিক বার নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন টানাপড়েন তৈরি হয়। পন্নুনকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর নিখিল গুপ্ত নামে এক ভারতীয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল মার্কিন প্রশাসন।
১৫১৯
ওই সময়ে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে নিখিলকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় আমেরিকায়। এমনকি, ওই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে তলব করেছিল মার্কিন আদালত। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে নয়াদিল্লি।
১৬১৯
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার দু’মাসের মাথাতেই ভারত সফরে এলেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান গ্যাবার্ড। দিল্লিতে পা দিয়েই ডোভাল এবং রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। দু’টি জায়গাতেই বার বার এসেছে খলিস্তান প্রসঙ্গ। ফলে এ ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন বড় পদক্ষেপ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭১৯
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান গ্যাবার্ড। তাঁকে মহাকুম্ভের জল এবং রুদ্রাক্ষের মালা উপহার দেন নমো। আড়াই দিনের ভারত সফরে ‘রাইসিনা ডায়লগ’ আলোচনাচক্রে ভাষণ দেন গ্যাবার্ড।
১৮১৯
পাশাপাশি, বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন’ আমেরিকার উদ্বেগের কথা বলেছেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলসী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইসলামিক সন্ত্রাস চলছে। এটা যথেষ্ট অস্বস্তির। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ভাবধারাকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর।’’
১৯১৯
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা সফরে গিয়ে পূর্বের প্রতিবেশী দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সে সময় তাঁর উপরই বিষয়টি ছেড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এক মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধানের গলায় শোনা গেল একই রকমের উদ্বেগের সুর, যাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।