ভারতে ওল্ড মঙ্কের রয়েছে এক নিজস্ব ঘরানা। ভারতের প্রায় প্রতিটি পানশালা থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রেস্তরাঁ— ওল্ড মঙ্কের বোতল খুঁজে পাওয়া যাবে না এমনটা প্রায় অসম্ভব। তেমনই খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে সেই সুরাপ্রেমীকে, যিনি এটির স্বাদ গ্রহণ করেননি অথবা উপভোগ করেননি। আর এক জন নিবেদিতপ্রাণ ওল্ড মঙ্ক ভক্তকে অন্য কোনও ব্র্যান্ডে আসক্ত করে তোলা সহজ কাজ নয়।
এডওয়ার্ড ডায়ার নামে স্কটল্যান্ডের এক বাসিন্দা ১৮৫৫-তে হিমাচল প্রদেশের কসৌলিতে শুরু করেন এক বিয়ার তৈরির কারখানা। এ দেশে বসবাসকারী ব্রিটিশদের মধ্যে সস্তার বিয়ার খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করে তিনি হিমাচলে পত্তন করে ফেলেন এক ব্রিউয়ারির। এই এডওয়ার্ড ডায়ার ছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কুখ্যাত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার রেজিনাল্ড ডায়ারের বাবা।
স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে এই ব্রিটিশ ব্রিউয়ারি কিনে ফেলেন নরেন্দ্রনাথ মোহন। মোহন ম্যাকিন নামে নতুন কারখানাটি উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদে সরিয়ে আনেন তিনি। মূল সংস্থার জন্মের শতবর্ষ পেরিয়ে জন্ম নেয় আর একটি কালজয়ী ব্র্যান্ড। নরেন্দ্রনাথের বড় ছেলে প্রাক্তন সেনা আধিকারিকের হাত ধরে বাজারে আসে ‘ওল্ড মঙ্ক’। তিনি কর্নেল বেদরতন মোহন, একাধারে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ এবং লখনউয়ের মেয়র।
শোনা যায় হিমাচলি একটি ঝর্নার জল এই রাম তৈরির অন্যতম উপাদান। এর অনন্য স্বাদের উৎসও নাকি সেটাই। ইউরোপের সেই বৃদ্ধ সন্ন্যাসীকে উৎসর্গ করেই নাকি বেদ দেশীয় পানীয়টির নাম রাখেন ‘ওল্ড মঙ্ক’। নাম নিয়ে আরও যে একটি গল্পকাহিনি জুড়ে রয়েছে। সেটি হল গুমনামি বাবার। শোনা যায় গাজ়িয়াবাদে গুমনামি বাবার সঙ্গে দেখা করে দারুণ প্রভাবিত হন বেদ। বুড়ো সাধু গুমনামি বাবার ইংরেজি তর্জমাই হল ওল্ড মঙ্ক।
নরেন্দ্রনাথ প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৬৯ সালে। তাঁর মৃত্যুর চার বছরের মধ্যেই ৪৫ বছর বয়সি বেদের মৃত্যু হয়। দাদার মৃত্যুর পর মোহন ম্যাকিনের হাল ধরেছিলেন ভাই ব্রিগেডিয়ার কপিল মোহন। মূলত তাঁর হাত ধরেই ওল্ড মঙ্কের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। কপিল পুরোটাই সম্ভব করেছিলেন কোনও বিজ্ঞাপন ছাড়াই। মজার কথা এই যে, দাদা বেদ সুরাপ্রেমী ও সুরার সমঝদার হলেও ভাই কপিল কোনও দিন সুরা ছুঁয়ে দেখেননি।
১৯৭৩ সাল থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন কপিল। ‘ওল্ড মঙ্ক’কে এক্সক্লুসিভ ব্র্যান্ড হিসাবে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। কপিল বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞাপন নয়, অনন্য স্বাদই সুরাপ্রেমীদের কাছে ‘ওল্ড মঙ্ক’কে প্রিয় করে তুলবে। মুখে মুখে প্রচারের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে সমস্ত ব্র্যান্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ‘বুড়ো সাধু’।
সুরাপ্রেমীরা এই মদে খুঁজে পাবেন কফি, ক্যারামেল, নানাবিধ ফল, ভ্যানিলা, দারুচিনির সুগন্ধযুক্ত এক অনবদ্য স্বাদ। তবু আজও কেউ সন্ধান করতে পারেননি এর ফর্মুলার গোপন রহস্য। তেমনই আজও পরিবর্তন হয়নি রামের প্যাকেজে। আজও পেটমোটা বোতলে করে বিক্রি হয় ‘ওল্ড মঙ্ক’। লেবেলও অপরিবর্তিত। পরবর্তী কালে অন্যান্য আকারের বোতল এলেও পুরনো কাচের বোতলটি অদ্যাবধি পাল্টানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy