‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানের চিনা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ড্রাগনের এই হাতিয়ার যে একেবারেই কাজের নয়, এর আগেও তার প্রমাণ মিলেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১৬:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ভারতীয় ফৌজের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ দিশেহারা পাকিস্তান। চোখের নিমেষে গুঁড়িয়ে গিয়েছে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি ধ্বংস করতে ছোড়া হয় স্ক্যাল্প ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং হ্যামার। সেগুলিকে চিহ্নিত করতে বা আটকাতে পারেনি ইসলামাবাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। ফলে পাক সেনার পাশাপাশি মুখ পুড়েছে চিনেরও।
০২২০
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পুরোপুরি বেজিঙের হাতিয়ারের উপর নির্ভরশীল ইসলামাবাদ। এর জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করতেও পিছপা হননি রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। কিন্তু, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেগুলি যে আদপে কোনও কাজের নয়, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর আবার তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও ড্রাগনের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা ধরা পড়েছিল।
০৩২০
ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা আটকানোর জন্য পাক সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে ছ’টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে চিনের তৈরি এইচকিউ-৯পি/এইচকিউ-৯বিই-র নাম। ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। বেজিঙের এই হাতিয়ারেও রয়েছে এইএসএ রাডার এবং ১৪ ম্যাক (পড়ুন শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি) গতির ক্ষেপণাস্ত্র।
০৪২০
সূত্রের খবর, মূলত লাহৌর এবং রাজধানী ইসলামাবাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এইচকিউ-৯পি/এইচকিউ-৯বিই মোতায়েন রেখেছে পাক ফৌজ। মাঝ-আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র বা লড়াকু জেট ধ্বংস করাই তাদের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে ড্রাগনের এলওয়াই-৮০/এলওয়াই-৮০ই নামের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর ভরসা রেখেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।
০৫২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ৪০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে পারে এলওয়াই-৮০/এলওয়াই-৮০ই। এর ভিতরে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবেগ ২.৫ ম্যাক। এ ছাড়া স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকাতে চিনের থেকে এফএম-৯০ নামের একটি বিশেষ ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনে ইসলামাবাদ। হাতিয়ারটি ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম বলে দাবি করে ড্রাগন।
০৬২০
ফ্রান্সের তৈরি ক্রোটালে নামের অনুরূপ একটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে পাক ফৌজের হাতে। তবে এটি বেশ পুরনো। ১৯৯০ সাল থেকে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি ব্যবহার করছে ইসলামাবাদ। এ ছাড়া সীমান্তে আমেরিকার তৈরি এমপিকিউ-৬৪ সেন্টিনাল রেডার রেখেছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা। এর স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে সেগুলিকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে পারে না এই রেডার।
০৭২০
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন এগুলির কোনওটাই কাজ করেনি। স্ক্যাল্প ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিতকরণ এবং ধ্বংসের জন্য রাখা এফএম-৯০ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিও পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ায় ড্রাগনের অত্যাধুনিক হাতিয়ারের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অস্ত্রের গুণগত মানের নিরিখে রাশিয়া, আমেরিকা এবং ইউরোপ যে ড্রাগনের চেয়ে শত যোজন এগিয়ে রয়েছে, তা আরও এক বার প্রমাণ হল, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৮২০
২০২২ সালের ৯ মার্চ ভুলবশত ভারত থেকে ছোড়া একটি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ভিতরে ১২০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে লাহৌর সংলগ্ন মিয়া চন্নু এলাকায় আছড়ে পড়ে। ওই সময়েও সেটিকে চিহ্নিত করতে পারেনি ইসলামাবাদের চিনা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবিরে ‘এয়ার স্ট্রাইক’ করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এতে ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ়-২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছিল।
০৯২০
২০১৯ সালে বালাকোটে বিমানহানার সময়েও কোনও ভারতীয় লড়াকু জেটকে আটকাতে পারেনি পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ফরাসি যুদ্ধবিমান রাফালকে ময়দানে নামায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকদের কথায়, যে ব্যবস্থা মিরাজ়কে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ, তার পক্ষে রাফালের গতিবিধি ধরা যে অসম্ভব, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
১০২০
২০১১ সালে খাইবার-পাখতুনখোয়ার অ্যাবোটাবাদে কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে তাঁর গুপ্ত ঘাঁটিতে ঢুকে নিকেশ করে আমেরিকার ‘নেভি সিল’ নামের কমান্ডো বাহিনী। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন নেপচুন স্ফিয়ার’। এতে বেশ কয়েকটি কপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন ফৌজ। এগুলির কোনওটাকেই যে চিহ্নিত করা যায়নি, তা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল পাক সেনার জনসংযোগ বিভাগ (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর)।
১১২০
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারতের উপর প্রত্যাঘাতের হুমকি দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। একই সুর শোনা গিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারদের গলায়। কিন্তু, বিশ্লেষকদের দাবি, সেটা মোটেই সহজ নয়। কারণ, দুর্ভেদ্য বর্মে দেশের আকাশকে একরকম ঢেকে রেখেছে নয়াদিল্লি।
১২২০
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল হাতিয়ার হল রাশিয়ার তৈরি এস ৪০০ ট্রায়াম্ফ। সীমান্তে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাকে অভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর এই অস্ত্রের। শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। শুধু তা-ই নয়, এর ‘অ্যাক্টিভ ইলেট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে’ বা এইএসএ রেডারের সাহায্যে একসঙ্গে ৩০০ টার্গেট চিহ্নিত করা যায়।
১৩২০
এস-৪০০ ট্রায়াম্ফে স্বল্প, মাঝারি এবং দূরপাল্লার মিলিয়ে মোট তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ গতিতে (পড়ুন ম্যাক ১৪) ছুটতে পারে সেগুলি। ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে মোট তিনটি এস-৪০০ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে মস্কো। চলতি বছরে এই হাতিয়ারের আরও একটি ব্যাচ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চলে এলে আকাশেই দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করতে সক্ষম হবে এ দেশের বিমানবাহিনী।
১৪২০
এস-৪০০-এর পর অবশ্যই বলতে হবে বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কথা। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই হাতিয়ার। বারাক-৮-এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ দুই ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে। মূলত পাকিস্তানের বাবর ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের কথা মাথায় রেখে এটিকে তৈরি করা হয়েছে।
১৫২০
পাক বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে চিনের তৈরি জেএফ-১৭ লড়াকু জেট। সাড়ে চার প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করতে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর তৈরি আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করছে ভারতীয় ফৌজ। ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত নিশানায় হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে এই হাতিয়ারের। ২.৫ ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে ডিআরডিওর আকাশ।
১৬২০
সীমান্তে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজ়রায়েলি স্পাইডার নামের হাতিয়ার ব্যবহার করছে ভারতীয় সেনা। এতে রয়েছে পাইথন-৫ এবং ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র। পাশাপাশি ডিআরডিওর তৈরি কুইক রিয়্যাকশান সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন রেখেছে নয়াদিল্লি।
১৭২০
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে ‘ইগলা-এস’ নামের স্বল্পপাল্লার বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ভেরি শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) সরবরাহ করে নয়াদিল্লির হাত শক্ত করেছে রাশিয়া। এর পাল্লা ছয় কিলোমিটার। সমুদ্রের উপরিতল থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার উচ্চতায় উড়তে থাকা যে কোনও কপ্টার বা ড্রোনকে এর সাহায্যে ধ্বংস করতে পারবে ভারতীয় সেনা।
১৮২০
চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল অত্যাধুনিক লেজ়ার হাতিয়ারের সফল পরীক্ষা চালায় ডিআরডিও। অস্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন সিস্টেম’ বা ডিইডব্লিউ। ‘ড্রোন কিলার’ হিসাবে এর আত্মপ্রকাশ করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কাছে আছে এই হাতিয়ার। পাকিস্তানের কাছে এই রকম কোনও অস্ত্র নেই।
১৯২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বদলা নিতে চিনের তৈরি জেএফ-১৭ লড়াকু জেট নিয়ে হামলার মরিয়া চেষ্টা করতে পারে পাক বিমানবাহিনী। কিন্তু ভারতের দুর্ভেদ্য বর্ম ভেদ করতে সেগুলি আদৌ কতটা সক্ষম হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত যুদ্ধের কোনও অভিজ্ঞতা নেই ড্রাগনের এই যুদ্ধবিমানের।
২০২০
গত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে (পাকিস্তান অকুপায়েড জম্মু-কাশ্মীর বা পিওজেকে) মোট ৯টি জায়গায় সন্ত্রাসবাদীদের গুপ্ত ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। এর পরই ভারতের দু’টি রাফাল-সহ মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামানো হয়েছে বলে দাবি করেন পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফ। এই সংক্রান্ত খবরও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, এ ব্যাপারে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ ওঠায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে ইসলামাবাদ।