Pakistan dug deep tunnels across LoC to send terrorists and soldiers, says Indian Army and BSF intelligence report dgtl
India Pakistan Tension
‘সুড়ঙ্গ-সন্ত্রাসবাদে’ রক্তাক্ত কাশ্মীর, বাহিনীর নাকের নীচে জঙ্গি ঢোকাতে ভূগর্ভস্থ রাস্তায় ভরসা রাখছে পাকিস্তান
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিতে সুড়ঙ্গের সাহায্য নিচ্ছে পাকিস্তানের সেনা। এর মাধ্যমে জঙ্গি ও সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে ভারতে ঢোকানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসলামাবাদের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১২:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ব্যাকফুটে পাকিস্তান। কূটনৈতিক দিক থেকে ইসলামাবাদকে প্রায় একঘরে করে ফেলেছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, বদলা নেওয়ার জন্য স্থল-জল-বায়ুসেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই আবহে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) নতুন বিপদের গন্ধ পেয়ে সরকারকে সতর্ক করল নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের থেকে আসা রিপোর্টে চোখ কপালে উঠেছে কেন্দ্রের।
০২২০
কাশ্মীরে পর্যটকদের গণহত্যার পর জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এলওসির নিরাপত্তা জোরদার করেছে সেনা ও বিএসএফ। ফলে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে উপত্যকায় ঢোকা কঠিন হয়েছে। আর তাই ভূস্বর্গকে অশান্ত করতে নতুন ফন্দি আঁটছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। সেনা ও বিএসএফের অনুমান, আগামী দিনে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য গভীর এবং দীর্ঘ সুড়ঙ্গের উপর ভরসা করবে পাক ফৌজ।
০৩২০
নিরাপত্তাবাহিনীর থেকে এ হেন রিপোর্ট হাতে পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। দ্রুত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। এলওসি সংলগ্ন উপত্যকার কোন কোন এলাকায় এই ধরনের সুড়ঙ্গ থাকতে পারে তা সেনা ও বিএসএফকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, সুড়ঙ্গপথে জঙ্গি অনুপ্রবেশের পাশাপাশি সৈনিকদের ছোট ছোট বাহিনীকে কাশ্মীরে ঢুকিয়ে পাক ফৌজ ভূস্বর্গে অশান্তির ছক কষতে পারে বলেও গোয়েন্দা রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে।
০৪২০
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনার এক পদস্থ কর্তা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এলওসিতে কোথাও সুড়ঙ্গ বা পরিখা খনন করা হয়েছে কি না, সেটা খুঁজে বার করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও কারণে যুদ্ধ বাধলে ওই রাস্তায় বড় অপারেশন চালাতে পারে পাক ফৌজ। সে ক্ষেত্রে বিপদের মুখে পড়বে আমাদের সেনা।’’
০৫২০
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এলওসি সংলগ্ন এলাকায় এই উদ্দেশ্যে সাবেক সৈনিকদের মোতায়েন করেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তাঁদের মূল কাজই হল, যখন-তখন সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার গুলিবর্ষণ করা। এতে জবাব দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ভারতীয় সেনা। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে তারা।
০৬২০
২০২০ সালে এলওসি সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের বেশ কিছু সুড়ঙ্গের হদিস পায় নিরাপত্তাবাহিনী। সেগুলির মধ্যে একটি ছিল প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার গভীর। লম্বা ঘাসের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সেটিকে কাটা হয়েছিল। ওই রাস্তায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের আনাগোনার বেশ কিছু প্রমাণ মেলে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) পর্যন্ত বিস্তৃত ওই সুড়ঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে অক্সিজেনের পাইপ লাগানো ছিল।
০৭২০
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে মানববোমায় হামলা চালায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ৪০ জন জওয়ান। এই হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী জইশ প্রধান মৌলামা মাসুদ আজহারের ভাগ্নে ওমর ফারুক ২০১৮ সালের এপ্রিলে উপত্যকার সাম্বা সেক্টরে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। একই ভাবে ২০১৬ সালে নাগরোটা ক্যাম্পে হামলার জন্য চার সন্ত্রাসবাদী সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেছিল।
০৮২০
২০০১ সাল থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় এই ধরনের অন্তত ২২টি সুড়ঙ্গের হদিস পায় নিরাপত্তাবাহিনী। তবে এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই ধরনের সুড়ঙ্গগুলিকে খুঁজে পেতে নিয়ন্ত্রণরেখায় এক মাস ব্যাপী অভিযান চালায় বিএসএফ। সেনার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পাক ফৌজ জঙ্গি অনুপ্রবেশের জন্য সুড়ঙ্গ কেটেছে কি না, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নেই। তাই বাহিনীকে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে।’’
০৯২০
সুড়ঙ্গের মাধ্যমে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ৩৩ কিলোমিটার লম্বা আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২৫ কিলোমিটার জুড়ে বিশেষ এক ধরনের পরিখা বা ট্রেঞ্চ খনন করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় অবশ্য এই ধরনের কোনও পরিখা নেই। সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেখানেও এই ধরনের পরিখা কাটতে পারে সেনা ও বিএসএফ। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে মেলেনি কোনও প্রতিক্রিয়া।
১০২০
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার সঙ্গে আবার ইরান মদতপুষ্ট প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার মিল খুঁজে পেয়েছে ইজ়রায়েলের। এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন ভারতে ইহুদিভূমির রাষ্ট্রদূত রুভেন আজ়ার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে ঢুকে হামলা চালায় হামাস। তাতে প্রাণ হারান ১,২১৮ জন। প্যালেস্টাইনের গাজ়ার সুড়ঙ্গ থেকে গোটা অপারেশন চালানো হয়েছিল বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে আসে।
১১২০
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার মাস দুয়েক আগে হামাসের কয়েক জন নেতা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ছিলেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালকোটে একটি পদযাত্রায় অংশ নেন হামাসের মুখপাত্র খালিদ আল-কাদুমি, নাজ়ি জ়াহির এবং মুফতি আজ়ম-সহ বেশ কয়েক জন নেতা। ভারতকে নিয়ে দেন ঘৃণাভাষণও। পিওকের ওই পদযাত্রায় অন্তত ১০০ জন জঙ্গি নেতা ছিলেন। এই সংক্রান্ত ভিডিয়ো ফুটেজও প্রকাশ্যে এসেছে।
১২২০
পাকিস্তানে হামাসের নেতাদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইজ়রায়েলে হামলার পর থেকে ঘন ঘন ইসলামাবাদে যাতায়াত করছেন এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির শীর্ষনেতারা। শুধু তা-ই নয়, হামাসের একটি দল জইশ জঙ্গিদের সদর দফতরেও গিয়েছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে পাক পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান হামাসের মুখপাত্র আল-কাদুমি।
১৩২০
তবে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এলওসিতে সুড়ঙ্গ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ হামাসের থেকে নিচ্ছে, এ কথা মানতে নারাজ গোয়েন্দাকর্তারা। তাঁদের দাবি, সুড়ঙ্গ-সন্ত্রাসবাদের জনকও ইসলামাবাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যে বেশ কঠিন, তা স্বীকার করে নিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। সীমান্তে এই ধরনের সুড়ঙ্গগুলিকে খুঁজে বার করতে সেনা ও বিএসএফ একযোগে অভিযানে নামবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।
১৪২০
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর টানা ছ’রাত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি চালায় পাক সেনা। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তেজনার আবহে ২৯ এপ্রিল রাতে পাক সেনার ডিজিএমও-র সঙ্গে হটলাইনে কথা বলেন ভারতীয় ফৌজের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই। সূত্রের খবর, ওই কথোপকথনে ইসলামাবাদকে সতর্ক করেন তিনি।
১৫২০
যদিও এই ফোনালাপের পরেও রাতে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে পাক সেনা। এমনকি, ৩০ এপ্রিল রাতে নিয়ন্ত্রণরেখার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরের পরগওয়াল সেক্টরে আন্তর্জাতিক সীমানাতেও গোলাবর্ষণ করে ইসলামাবাদের বাহিনী। প্রতিটা ক্ষেত্রেই পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা।
১৬২০
এলওসি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করতে ২০০৩ সালে একমত হয় নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেছিল। খাতায়কলমে এই নিয়ম এখনও বহাল রয়েছে। কিন্তু, অতীতেও দু’দেশের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।
১৭২০
সূত্রের খবর, সংঘর্ষবিরতি চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও-প্রতিনিধি স্তরে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হত। ওই ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এ ব্রিগেডিয়ার স্তরের অফিসারেরা যোগ দিতেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তা অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
১৮২০
শুধু এলওসিতে সংঘর্ষবিরতি ভঙ্গ নয়, পঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্তেও প্রথা ভেঙে রিষড়াবাসী বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে পাক রেঞ্জার্স আটক করায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই আবহে দুই ডিজিএমও-র হটলাইন-বার্তালাপ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
১৯২০
অন্য দিকে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে যাবতীয় ফাঁকফোকর ঢেকে ফেলতে সাত বছর পরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ পুনর্গঠন করল মোদী সরকার। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর অলোক জোশীকে উপদেষ্টা পর্ষদের প্রধান করা হচ্ছে।
২০২০
প্রধানমন্ত্রী মোদীর জমানায় সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে এত দিন পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালই কার্যত একচ্ছত্র দায়িত্ব পালন করেছেন। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁর ভূমিকা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।