Paradip is becoming India's port capital through large-scale infrastructure development dgtl
Growth Story of Odisha
পণ্য পরিবহণে ‘টপার’, পূর্বাঞ্চলের কুলীন বন্দর সাজাতে ৪৬ হাজার কোটি! সমুদ্রবাণিজ্যে খেলা ঘোরাচ্ছে পড়শি রাজ্য
সমুদ্রবাণিজ্যে পূর্বের প্রবেশদ্বার হিসাবে পারাদীপকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরতে খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য হাতে হাত দিয়ে কাজ করতে উৎসাহী কেন্দ্র ও মাঝি সরকার। তার জন্য ব্যয় করা হবে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
প্রস্তাব দীর্ঘ দিনের। সংকল্পে দৃঢ় রাজ্যও। ভারতের সমুদ্রবাণিজ্যের হাল ফেরাতে পূর্বের রাজ্যের এক বন্দরের দিকে নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ভারতের সেরা পাঁচটি প্রধান বন্দরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের পারাদীপ বন্দরটি। ভারতের অর্থনীতির জন্য নতুন মাইলফলক হতে চলেছে এই বন্দরটি, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
০২১৭
কেন্দ্র পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির উন্নয়নের উপর জোর দিতে শুরু করেছে। সমু্দ্রবাণিজ্যের পালে হাওয়া দিতে তাই পারাদীপ বন্দরকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক বন্দরে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র ও ওড়িশা সরকার। এতে ৪৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
০৩১৭
৬ নভেম্বর বৈতা বন্দনা উৎসবে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি ঘোষণা করেছিলেন যে, পারাদীপ নতুন ভাবে সাজাতে তাঁরা প্রস্তুত। পূর্বের প্রধান সমুদ্রবন্দরটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ১২টি প্রধান বন্দরের মধ্যে একটি। দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যে এর পরিচালনাগত দক্ষতা এবং কৌশলগত গুরুত্ব বিচার করে পারাদীপের ‘মেকওভারে’ বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে চায় দিল্লি।
০৪১৭
এক বছর আগে কেন্দ্রীয় বন্দর, নৌপরিবহণ এবং জলপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোণোয়াল ভারত-রাশিয়া বৈদেশিক বাণিজ্যে বিকল্প পথের ঘোষণা করেছিলেন। সেটি হল চেন্নাই-ভ্লাদিভস্তক সামুদ্রিক করিডর। দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের সঙ্গে নতুন এই জলপথে যুক্ত করা হয়েছে পারাদীপকেও।
০৫১৭
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সস্তা দরে মস্কো থেকে খনিজ তেল আমদানি করে চলেছে নয়াদিল্লি। নতুন সামুদ্রিক রুটে সেই ‘তরল সোনা’-সহ অন্যান্য সামগ্রী এ দেশে আনা শুরু হয়েছে। বস্ত্র, ওষুধ, চা, মেশিনের যন্ত্রপাতি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীর মতো রফতানি পণ্য নতুন রাস্তায় পাড়ি দিচ্ছে রাশিয়ায়।
০৬১৭
সমুদ্রবাণিজ্যে পূর্বের প্রবেশদ্বার হিসাবে পারাদীপকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরতে খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য হাতে হাত দিয়ে কাজ করতে উৎসাহী কেন্দ্র ও মাঝি সরকার। দীর্ঘ কয়েকশো বছর ধরে ওড়িশার নাবিকেরা বালি, সুমাত্রা, জাভা ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পণ্য আমদানি-রফতানি করে এসেছেন। সমুদ্রবাণিজ্যে পারাদীপ-সহ ওড়িশার বিভিন্ন বন্দরগুলির গুরুত্ব অস্বীকার করা উপায় নেই।
০৭১৭
নৌবাণিজ্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে পারাদীপকে মেগা বন্দরে পরিণত করার দিকে এগিয়ে চলেছে ওড়িশা। যে কোনও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হল মূলধন। পারাদীপে আধুনিক নৌবন্দরের পরিকাঠামো গড়তে ওড়িশা সরকার ৪৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
০৮১৭
জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ মেরামত, বন্দর আধুনিকীকরণ, স্মার্ট বন্দর হিসাবে তুলে ধরা, ব্যবসায়িক উন্নয়ন, প্রযুক্তি, পর্যটনকে এক ছাতার নীচে আনাই এই প্রকল্পের পাখির চোখ। অদূর ভবিষ্যতে পারাদ্বীপকে ওড়িশার অগ্রগতি ও শিল্প সম্প্রসারণের মেরুদণ্ড হিসাবে গড়ে তোলার জন্য উৎসুক সে রাজ্যের সরকার।
০৯১৭
তবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে ওড়িশাকে। প্রথম পর্যায়ে বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজ়িং, ব্রেকওয়াটার তৈরি, পণ্য রাখার এলাকা, একাধিক ভবন এবং যন্ত্রপাতি বসানোর মতো কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। পরবর্তী ধাপে তৈরি হবে বাহুদা বন্দর উন্নয়ন এবং কেন্দ্রপড়া জেলায় একটি জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র। পারাদীপ বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই নিয়ে চুক্তি সাক্ষর করেছে ওড়িশা।
১০১৭
১৯৬২ সালে পারাদীপ সমুদ্রবন্দরের শিলান্যাস করা হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য এটিকে প্রধান সামুদ্রিক বন্দর হিসাবে গড়ে তুলতে ১৯৬৫ সালে ওড়িশা সরকারের হাত থেকে এর পরিচালনভার গ্রহণ করে কেন্দ্র। ধীরে ধীরে ক্ষমতা, পরিকাঠামো, সরঞ্জাম, পরিষেবা ইত্যাদির দিক থেকে দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে পারাদীপ বন্দরের।
১১১৭
পোর্ট ট্রাস্ট আইনের আওতায় বন্দর, জাহাজ চলাচল ও জলপথ মন্ত্রকের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসাবে কাজ করে পারাদীপ। ১৯৬৬ সালে ভারত সরকার প্রধান বন্দর ঘোষণা করে এটিকে। ভারতের অষ্টম প্রধান বন্দরে পরিণত হয় পারাদীপ। সমস্ত ভারতীয় বন্দরের মধ্যে সর্বনিম্ন শুল্ক নেওয়া হয় এই বন্দরটিতে।
১২১৭
ভারতের অন্যতম সফল এবং লাভজনক বন্দর হয়ে উঠেছে এটি। পারাদীপ বন্দর কয়লা, লৌহ আকরিক, অপরিশোধিত তেল, সার, কন্টেনার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহণ করে। বন্দরটি দেশের সবচেয়ে বড় ‘কার্গো হ্যান্ডলার’। ২০১৫ সালে যেখানে পণ্য পরিবহণের পরিমাণ ছিল ৭১ এমটিপিএ (মিলিয়ন টন পার অ্যানাম) ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ এমটিপিএ।
১৩১৭
২০৩০ সালে পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ এমটিপিএ ধার্য করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত বার্ষিক পণ্য পরিবহণের পরিমাণ ৪০০ এমপিটিএ ধরা হয়েছে। ১.৫ টনের মতো পণ্য পরিবহণের ক্ষমতাসম্পন্ন বড় বড় জাহাজ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গঠন করা হবে এই প্রকল্পে।
১৪১৭
প্রকল্পগুলি শেষ হওয়ার পর বন্দরটি সহজেই খুব বড় জাহাজ পরিচালনা করতে পারবে। তার জন্য ১৮ মিটার ড্রাফ্ট প্রয়োজন। বড় বড় জাহাজ এখানে নোঙর করতে পারবে। সরবরাহ ব্যয় হ্রাস পাবে। বর্তমান বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নৌবাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য এটি সময়োপযোগী উন্নয়ন। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
১৫১৭
ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে পারাদীপ বন্দর জগৎসিংহপুর জেলায় অবস্থিত। পারাদীপ বন্দরের চমৎকার একটি কৌশলগত অবস্থান রয়েছে। এ ছাড়াও সড়ক, রেল এবং বিমানপথে সংযোগ রয়েছে বন্দরের।
১৬১৭
পারাদীপ বন্দরে ২০টি বার্থ এবং টার্মিনাল রয়েছে যা বিভিন্ন ধরনের কার্গো যেমন ড্রাই বাল্ক, লিকুইড বাল্ক, ব্রেক বাল্ক, কন্টেনার ইত্যাদি পরিচালনা করতে পারে। পারাদীপ বন্দরে ক্রেন, কনভেয়র, স্ট্যাকার, রিক্লেমার ইত্যাদির মতো আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে। দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে কার্গো পরিচালনা করতে সহায়তা করে এই সব সরঞ্জাম।
১৭১৭
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রভাব বিস্তার, সেই সঙ্গে সমুদ্রবাণিজ্যে চিনকে টক্কর দেওয়া। এই দুই লক্ষ্যপূরণে একের পর এক পদক্ষেপ করছে ভারত। এর মধ্যে অন্যতম হল বঙ্গোপসাগরে উপসাগরীয় বন্দর নির্মাণ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সেই বন্দর নির্মাণ হলে গুরুত্ব বাড়বে পারাদীপেরও। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সমুদ্রবাণিজ্যের অনেক হিসাব বদলে দেবে পড়শি রাজ্যের বন্দর।