Series of videos showing a meteorite transformed into sticky, smelly creature like Marvel's Venom in panama dgtl
Venom-Like Meteorite
রহস্যময় উল্কাপিণ্ড থেকে ছিটকে আসে ‘ভিন্গ্রহী’! ঘন ঘন রূপ বদলাচ্ছে রহস্যময় বস্তু, আমেরিকার প্রতিবেশী দেশে দেখা দিল ‘ভেনম’?
টিকটকে প্রথমে যে ভিডিয়োটি প্রকাশিত হয়েছিল তাতে বস্তুটিকে প্রথমে একটি শক্ত পাথরের মতো দেখাচ্ছিল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সেটির ভোলবদল হতে শুরু করে। সবুজাভ হলুদ রঙের জেলির মতো পদার্থ জমা হতে থাকে পাথরটির গায়ে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ১১:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
পর্দার ‘ভেনম’-এর দেখা মিলল বাস্তবে! ভিন্গ্রহ থেকে উড়ে এসে মানবগ্রহের বুকে জুড়ে বসা প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে কাহিনি ও সিনেমার উদাহরণ ভূরি ভূরি। ২০১৮ সালে পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল মার্ভেল সিরিজ়ের চলচ্চিত্র ‘ভেনম’। টম হার্ডি অভিনীত সেই ছবির মূল উপজীব্যই ছিল ভিন্গ্রহের এক অদ্ভুত প্রাণীর মানবশরীর দখলের কাহিনি।
০২১৯
সম্প্রতি পৃথিবীতে ভিন্গ্রহী প্রাণীর আগমনের ঘটনায় হইচই পড়েছে দুনিয়া জুড়ে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হল টিকটকের একটি ভিডিয়ো। পানামার এক বাসিন্দার একটি ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে বিশ্বব্যাপী উন্মাদনার জন্ম হয়েছে।
০৩১৯
২৯ অগস্ট প্রথম ভিডিয়োটি টিকটকে শেয়ার করা হয়েছিল ‘কিনপানামা’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টদাতা সেখানে দাবি করেছিলেন যে তাঁর বাড়ির উঠোনে একটি উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে মহাকাশ থেকে ছুটে আসা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে একটি ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানে আগুন জ্বলতেও দেখা গিয়েছিল। টিকটকার সেই অজানা বস্তুটিকে ভিন্গ্রহের অংশ বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন যে এই ধরনের ঘটনা পানামায় প্রথম।
০৪১৯
উত্তর আমেরিকার ছোট্ট দেশ থেকে যে ভিডিয়োগুলি এক টিকটকার আপলোড করেছিলেন সেখানে দেখা গিয়েছিল অদ্ভুত দৃশ্য। পাথরের মতো একটি বস্তু থেকে হরিদ্রাভ পদার্থ নির্গত হচ্ছে। পরে সেই রহস্যময় পদার্থটিকে ঘিরে কালো ঘন আঠালো আবরণ তৈরি হয়েছে। সেটি থেকে পোড়া গন্ধও বার হচ্ছে।
০৫১৯
টিকটকে প্রথমে যে ভিডিয়োটি প্রকাশিত হয়েছিল তাতে বস্তুটিকে প্রথমে একটি শক্ত পাথরের মতো দেখাচ্ছিল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সেটির ভোলবদল হতে শুরু করে। সবুজাভ হলুদ রঙের জেলির মতো পদার্থ জমা হতে থাকে পাথরটির গায়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি অঙ্গারবর্ণ ধারণ করে। তিন দিন পরই এটি একটি কালো, আঠালো পদার্থ দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে ঢাকা পড়ে যায়। পোড়া গন্ধটিও দিন দিন আরও তীব্র হতে থাকে বলে দাবি করেছেন পানামার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি।
০৬১৯
ঘটনার কূলকিনারা করতে না পেরে তিনি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও সাড়া পাননি তিনি। ফলে নিজেই ঘটনাটি নথিভুক্ত করতে বাধ্য হন। অস্বাভাবিক দৃশ্যগুলি দ্রুত টিকটক এবং ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায়। দর্শক ঘটনাটি মার্ভেল চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে বস্তুটিকে ‘ভেনম’ নামে ডাকতে শুরু করেন।
০৭১৯
ঘটনাটির সঙ্গে ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের গ্রহাণু সম্পর্কযুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন ভিন্গ্রহ সম্পর্কে আগ্রহীদের একাংশ। গত জুলাই মাসে অ্যাটলাস দূরবিনে ধরা পড়ে অতিথি গ্রহাণুটি। নজরদারিও চলছিল। সেই নজরদারিতেই উঠে এসেছে তার রহস্যময় গতিবিধির কথা। এই গতিবিধি নেহাতই কাকতালীয় না কি এর পিছনে রয়েছে কোনও ভিন্গ্রহের প্রযুক্তি, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে।
০৮১৯
চেহারা, আয়তন দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটি সৌরজগতের কোনও গ্রহাণু নয়। বরং সৌরজগতের বাইরে থেকে হাজির হওয়া গ্রহাণু। এর আগে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে অ্যাটলাসে এমন গ্রহাণু নজরে এসেছিল। এটি তৃতীয় হওয়ায় নাম দেওয়া হয় ৩আই অ্যাটলাস।
০৯১৯
এই গ্রহাণুর লেজের একটি বিরল বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সেই লেজ সূর্য যে দিকে থাকে তার বিপরীত দিকে হয়। সেই লেজযুক্ত গ্রহাণুকে ধূমকেতু বলা হয়। কিন্তু এখানে এই আগন্তুকের লেজ তৈরি হয়েছে সূর্যের দিকে এবং তা কার্যত গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে।
১০১৯
আর এই বিষয়টিই ভাবাতে শুরু করেছে মহাকাশ গবেষকদের। এই গ্রহাণুর সঙ্গে ভিন্গ্রহীদের প্রযুক্তি জুড়ে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজ়িসিস্ট আভি লোয়েব। তাঁর মতে, বহু গ্রহেই প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা যায় না পুরোপুরি। তাই ভিন্গ্রহী বিষয়টিকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যে ভাবে এই গ্রহাণু নিজের গতিপথ বদল করছে তা-ও যথেষ্ট বিস্ময়কর বলে মনে করছেন তিনি।
১১১৯
অক্টোবরের শেষের দিকে গ্রহাণুটির ঔজ্জ্বল্য আচমকাই বেড়ে যায়। এর গায়ের বর্ণ নীলচে ধরনের হয়ে ওঠে। এর গতি বাড়তে বাড়তে ঘণ্টায় প্রায় ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬০০ কিলোমিটারে পৌঁছে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের টান নয়, বাইরে থেকে যেন কোনও রহস্যময় শক্তি এটির গতি দ্রুত করে দিতে চাইছে। কারণ এখনও অস্পষ্ট । অন্যান্য গ্রহের গা ঘেঁষলেও পৃথিবী থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে গ্রহাণুটি।
১২১৯
এক ধাপ এগিয়ে লোয়েব ‘৩আই/অ্যাটলাস’কে কোনও আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু নয়, বরং ভিন্গ্রহীদের মহাকাশযান বলে সরাসরি উল্লেখ করেছেন। পানামায় রাতের অন্ধকারে ছিটকে পড়া উল্কাপিণ্ডটি বা মহাজাগতিক বস্তুটি এই গ্রহাণুর অংশ। পৃথিবীর বুকে সঙ্কেত পাঠানোর জন্য নিজের গা থেকে অংশ ভেঙে তা পাঠিয়ে দিয়েছে ভিন্গ্রহীরা।
১৩১৯
কিন নামের যে ব্যক্তি টিকটকে ভিডিয়োগুলি পোস্ট করেছেন তাঁর দাবি ছিল এই পাথরটির সামনে সবুজ পাতা রাখলে সেটি নিমেষে কুঁকড়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হয়েছিল যখন কিন এই অদ্ভুত বস্তুটিকে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এনেছিলেন। আলো পড়তেই পাথরটির ‘শরীরে’ এমন পরিবর্তন ঘটেছিল যা দেখে চমকে উঠেছিলেন কিন।
১৪১৯
উল্কাপিণ্ডটিকে আলোর সামনে আনতেই তা নাকি ‘জীবন্ত’ হয়ে উঠেছিল। ক্যামেরায় জ়ুম করিয়ে সেই দৃশ্য সারা বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন কিন। ১০ দিনের মাথায় রুপোলি বস্তুটি ঘিরতে থাকে কালো আঠালো পদার্থ। ১১ দিনের মাথায় সেই কালো পদার্থ থেকে মাথাচাড়া দেয় ছোট ছোট শুঁড়ের মতো আকৃতির ‘দেহাংশ’। সাপের মতো নড়াচড়া করতে শুরু করে সেগুলি। শুঁড়গুলিকে স্পর্শ করতে চাইলেই সেগুলি নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করে।
১৫১৯
১৪ দিনের মাথায় সেই রহস্যময় বস্তুতে প্রাণের গতিবিধি বেড়ে যেতে দেখেছিলেন টিকটকার। কালো শুঁড়ওয়ালা মহাজাগতিক বস্তুটি মাকড়সার মতো নড়াচড়া করে বেড়াতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বস্তুটি আড়ে-বহরে এতটাই বেড়ে যায় যে আতঙ্কে কিন তাকে লোহার সিন্দুকে বন্ধ করে দেন। সেখানে একটি নাইট ভিশন ক্যামেরা বসান।
১৬১৯
তাতে ধরা পড়ে বস্তুটি থেকে অসংখ্য শুঁড়ের জন্ম হয়েছে। সেগুলি নড়াচড়া করতে শুরু করেছে। ভাবগতিক এমন যে সিন্দুকের মধ্যে থাকতে চায় না সেগুলি। ঝুঁকি নিয়ে কিন সেটিকে লোহার সিন্দুক থেকে বার করে জলের মধ্যে ছেড়ে দেন। কালো রঙের অদ্ভুত আকৃতির বস্তুটি জলের মধ্যে নড়াচড়া করতে থাকে। সেই দৃশ্য দেখে নেটাগরিকেরা এটিকে ‘ভেনম’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১৭১৯
বিষয়টি নিয়ে সংশয়বাদীরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। পুরো বিষয়টিকে ধাপ্পা বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। হাইস্ট্রেঞ্জনেস নামে এক জন রেডিট ব্যবহারকারী সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কালো রঙের পদার্থটি মোটেও অপরিচিত নয়। পলিডাইমিথাইলসিলোক্সেন নামে পরিচিত একটি সিলিকনের পলিমার, যা হেক্সেন নামে একটি সাধারণ দ্রাবকের সঙ্গে মিশ্রিত ছিল।
১৮১৯
পলিডাইমিথাইলসিলোক্সেন যখন হেক্সেন শোষণ করে, তখন এটি ফুলে ওঠে এবং দ্রাবকটি অসম ভাবে পলিমারের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন হারে সঙ্কুচিত হয়। হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিয়ে চলতে শুরু করে। পেশির মতো নড়াচড়া করতেও থাকে এই সিলিকন পলিমারটি।
১৯১৯
কিছু জীববিজ্ঞানী ক্ল্যাথ্রাস আর্চারি বা ডেভিলস ফিঙ্গারস ছত্রাকের সঙ্গে কিনের ভিডিয়োয় থাকা বস্তুটির মিল খুঁজে পেয়েছেন। এেগুলি ডিমের মতো থলি থেকে বেরিয়ে আসে, ফেটে যায় এবং গাঢ় কাদা দিয়ে আবৃত তাঁবুর মতো কাঠামো বার করে। এই ছত্রাক পোকামাকড়কে আকর্ষণ করার জন্য নিজের গা থেকে একটি দুর্গন্ধ বার করে।