অত্যন্ত দারিদ্রের মধ্যে গুচিয়োর ছোটবেলা কেটেছিল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে আসেন তিনি। সেখানে একটি বিলাসবহুল হোটেলে ‘লিফ্ট বয়’ হিসাবে চাকরি শুরু করেন। হোটেলে আসা অতিথিদের বিলাসবহুল ব্যাগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন গুচিয়ো। ধীরে ধীরে এ-ও বুঝতে পারেন, সস্তা ব্যাগ এবং দামী ব্যাগের গুণমানের পার্থক্য কোথায়।
আমদাবাদের গরিব পরিবারে জন্ম নেন ভাদিলাল গান্ধী। সংসার চালাতে ১৯০৭ সালে যুবক ভাদিলাল ছোট্ট একটি দোকানে সোডা বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে আইসক্রিম বিক্রিও শুরু করেন তিনি। শীঘ্রই সারা গুজরাতে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। ভাদিলালের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে রঞ্ছোড়লাল গান্ধী ব্যবসার দায়িত্ব নেন। ৭০-এর দশকে ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। ছোট সেই দোকান শীঘ্রই সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
কোচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই রবি ব্যবসার দিকে ঝোঁকেন। সেই সময়ে তিনি স্থানীয় এক মহাজনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়ে নিজের চিটফান্ড কোম্পানি শুরু করেন। ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জনের পর সবার প্রথমে মহাজনের ঋণ শোধ করেন রবি। এর পর লাভের টাকা জমিয়ে হোটেল তৈরির কাজে হাত লাগান। জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন রবি। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে তাঁকে এক সময় দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধও রাখতে হয়েছিল। কিন্তু রবি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না।
১৯৭৮ সালে রবি ভারত ছেড়ে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে পৌঁছে শীঘ্রই ১৫০ জন কর্মচারী নিয়ে নাসের এস আল হাজরি কর্পোরেশন (এনএসএইচ) নামে নিজস্ব নির্মাণ সংস্থা শুরু করেন। একটি ফরাসি বিমান সংস্থার কাছ থেকে বড় চুক্তি পাওয়ার পর রবির নির্মাণ ব্যবসা বহুগুণ বেড়ে যায়। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কঠিন সংগ্রাম এবং নিষ্ঠার জোরে রবি বর্তমানে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার মালিক। তাঁর কোম্পানিগুলিতে প্রায় ৭০,০০০ কর্মচারী কাজ করেন।
তুষার জৈন। বিলাসবহুল ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা ট্রাওয়ার্ল্ড-এর মালিক তুষার এখন কয়েকশো কোটি টাকার মালিক। কিন্তু তাঁর জীবনের শুরুটা ছিল কণ্টকময়। ১৯৯২ সালে হর্ষদ মেহতার শেয়ার কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ী মুলচাঁদ জৈন। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসেছিলেন তিনি। তাঁরই ছেলে তুষার।
সর্বস্ব খুইয়ে মুলচাঁদ ছেলের সঙ্গে মুম্বইয়ের রাস্তায় ব্যাগ বিক্রি করতে শুরু করেন। রাস্তায় রাস্তায় ব্যাগ বিক্রি করেই সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে ট্রাওয়ার্ল্ড সংস্থা গড়ে তোলেন তুষার। এর মাত্র দু’বছরের মধ্যে বছরে ১০ থেকে ২০ হাজার ব্যাগ তৈরি করতে শুরু করে সংস্থাটি। তখন বছরে মোট ব্যবসা ছিল ৯০ কোটি টাকার।
২০১৭ সাল নাগাদ সংস্থার মোট ব্যবসা গিয়ে পৌঁছয় ২৫০ কোটিতে। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ব্যাগ তৈরি করতে শুরু করে সংস্থাটি। এই মুহূর্তে ভারতের চতুর্থ বৃহৎ ব্যাকপ্যাক এবং ব্যাগ বিক্রির সংস্থা এটি। এর সদর দফতর মুম্বইয়ে। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় মোট ১০টি আলাদা অফিস রয়েছে। তুষারের সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বলি অভিনেত্রী সোনম কপূর।
ব্যর্থতা যেখানে বেশির ভাগ মানুষকে মানসিক ভাবে ভেঙে ফেলে, যাঁরা নতুন করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সাহস হারিয়ে ফেলেন, তুষার তাঁদের সামনে অনন্য নজির। সাফল্যের শিখর থেকে শূন্যে নেমে আসার পর কী ভাবে শূন্য থেকে শুরু করে ফের শিখরে পৌঁছনো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। জীবনে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। সমস্ত পেরিয়ে আজ তিনি আড়াইশো কোটি টাকার সংস্থার মালিক। কয়েক হাজার মানুষকে জীবনধারণের রসদ জুগিয়ে চলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy