Syria government has asked women to wear burkinis or more modest swimwear while visiting public beaches dgtl
Syria swimwear controversy
বিকিনি নয়, স্নানের সময় পরতে হবে দেহ ঢাকা বুরকিনি! না মানলে... নতুন পোশাক ফতোয়া সিরিয়ায়
সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের বিকিনি পরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডন্ট আহমেদ আল-শারা। সমুদ্র এবং সুইমিং পুলে নামার সময় পর্যটক হোক বা স্থানীয় বাসিন্দা, সবাইকে এই নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৭:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
দেড় দশকের গৃহযুদ্ধের পর গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষা দেশ সিরিয়ায়। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’ ক্ষমতা দখল করার পর এখনও সে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে নির্বাচন না হোক, ক্ষমতাদখলের ছ’মাসের মধ্যেই নারীদের পোশাক সংক্রান্ত নয়া ‘ফতোয়া’ জারি করল নতুন সরকার।
০২১৭
জনসমক্ষে ও সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের বিকিনি পরার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সে দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নয়া ফরমান, বিকিনি পরা চলবে না কোনও মতেই। তার বদলে সমুদ্রসৈকতে মহিলাদের শরীর ঢাকতে হবে বুরকিনি দিয়ে।
০৩১৭
উন্মুক্ত ও জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে সমুদ্রসৈকতে এমন সাঁতারের পোশাক পরতে হবে যা পুরো শরীর ঢেকে রাখে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত রাখতে পারবেন না তাঁরা। শুধু সমুদ্রসৈকতের পোশাকই নয়, সিরীয়দের সাধারণ ঢিলেঢালা পোশাক পরতে, কাঁধ এবং হাঁটু ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায়।
০৪১৭
সে দেশের পর্যটনমন্ত্রী মাজেন আল-সালহানি একটি ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘‘সমুদ্র এবং সুইমিং পুলে নামার সময় পর্যটক হোক বা স্থানীয় বাসিন্দা, এই নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। জনসাধারণের রুচি এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে উপযুক্ত সাঁতারের পোশাক পরতে হবে।’’
০৫১৭
এই বুরকিনি কী? বুরকিনি হল বোরখার কায়দায় তৈরি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা সাঁতারের পোশাক। সাধারণত লম্বা হাতা টিউনিক এবং সোজা প্যান্ট থাকে, যার সঙ্গে চুল এবং ঘাড় ঢেকে রাখার জন্য একটি হুড বা সুইম ক্যাপ থাকে। শুধুমাত্র মুখ খোলা থাকে।
০৬১৭
এই পোশাকটির উদ্ভাবন করেন আহেদা জানেত্তি নামের এক অস্ট্রেলীয় মুসলিম মহিলা। তাঁর লক্ষ্য ছিল হিজাব পরিধানকারী মুসলিম মহিলাদের জন্য উপযুক্ত সাঁতারের পোশাক নকশা করা। ২০০৪ সালে তিনি এটি তৈরি করেন নিজের বোনঝির জন্য। মুসলিম মহিলাদের শালীনতা বজায় রেখে আরামে সাঁতার কাটার জন্য পোশাকটির পরিকল্পনা করেন তিনি।
০৭১৭
বুরকিনি মূলত মুসলিম মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে সংরক্ষণশীল দেশগুলিতে সাঁতার কাটা বা সমুদ্রসৈকতে ঘোরাফেরার জন্য উপযুক্ত পোশাক বলে ধরা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলিতে বুরকিনির জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার মতো দেশগুলির মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে বুরকিনির জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান।
০৮১৭
সিরিয়ায় নতুন পোশাকবিধি কার্যকর করার জন্য লাইফগার্ড এবং সৈকত তত্ত্বাবধায়কদের উপর দায়িত্বভার ন্যস্ত করেছে সরকার। যদিও সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা প্রযোজ্য হবে তা স্পষ্ট করেনি পর্যটন মন্ত্রক।
০৯১৭
বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য ছাড়ের বন্দোবস্ত করেছে সরকার। বেসরকারি বিলাসবহুল হোটেল, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল, রিসর্ট ও ব্যক্তিগত বিচে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। সেখানে পশ্চিমা ধাঁচের সাঁতারের পোশাকের অনুমোদন মিলেছে। তবে সেই পোশাকও যেন সে দেশের নৈতিকতা ও শালীনতার মানদণ্ড অতিক্রম না করে।
১০১৭
সরকারের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হয়েছেন নাগরিক মহলের একাংশ। মহিলাদের পোশাকবিধির উপর ‘তালিবানি ফতোয়া’ জারি করা হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে যে ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকার সিরিয়ার জনগণের উপর তাদের নীতিশাস্ত্রের সংস্করণ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
১১১৭
বাশার আল আসাদকে গদিচ্যুত করার পর এমনিতেই সংঘাতের আঁচে পুড়ছে গোটা সিরিয়া। মহিলাদের উপর নৃশংস অত্যাচার এবং হত্যার অভিযোগ উঠছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। সিরিয়ায় মহিলাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন হয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হচ্ছে। তার পর সেই অবস্থাতেই তাঁদের গুলি করছে সশস্ত্র বাহিনী।
১২১৭
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসের ক্ষমতা দখল করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদ প্রাণভয়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। এর পরই তালিবানের সঙ্গে এইচটিএসের তুলনা টেনে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
১৩১৭
বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, সিরিয়ায় এইচটিএসের শাসন মজবুত হলে সেখানে আফগানিস্তানের ছবিই দেখা যাবে। কারণ আদর্শগত ভাবে তালিবানের মতোই জেহাদে বিশ্বাস করে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। তালিবান শাসনে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের নারী এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার। মহিলাদের স্কুল-কলেজে যাওয়া একরকম বন্ধই করে দিয়েছে তালিবানি শাসকেরা।
১৪১৭
তালিবানের আদর্শ অনুসরণ করা মৌলবাদ, কট্টরপন্থা এবং শরিয়া শাসনের মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এইচটিএসের সংগঠন। তবে এই ধারণাকে অমূলক প্রমাণ করতে তড়িঘড়ি সিরিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মতামত প্রকাশ করেছেন সিরিয়ার উপ-পর্যটনমন্ত্রী গাইথ আল-ফারাহও।
১৫১৭
তিনি জানিয়েছেন, শালীন পোশাক পরতে বলার অর্থ এই নয় যে, যে সব সৈকতে বুরকিনি পরতে বলা হয়েছে সেখানে পশ্চিমা পোশাক নিষিদ্ধ। বরং বর্তমান সরকার সিরিয়ার জনসাধারণের পছন্দ এবং সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক বৈচিত্রকে সম্মান করে চলতেই চায়। সরকারি তরফে এ-ও ঘোষণা করা হয়, এই নির্দেশিকাটি যাঁরা অনুসরণ করবেন না, তাঁদের কোনও আইনি শাস্তি হবে না।
১৬১৭
আসাদকে সরিয়ে সিরিয়া দখল করা ইস্তক উন্নয়ন এবং প্রগতির কথা বলছে পশ্চিম এশিয়ার এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। লাগাতার গৃহযুদ্ধের এবং অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সিরীয় নারীরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সিরিয়া ছেড়ে পালাতে সক্ষম হওয়া বা সে দেশ থেকে উদ্ধার হওয়া একের পর এক ইয়াজিদি মহিলার বয়ানে স্পষ্ট, অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁরা। হাজার হাজার মহিলাকে যৌনদাসী বানিয়ে রাখা হয়েছে আইএস শিবিরগুলিতে।
১৭১৭
দামাস্কাসের শহরতলি জারামানার ২৪ বছর বয়সি ইংরেজির শিক্ষিকা মায়া সালুম বিবিসিকে জানিয়েছেন, মহিলাদের পোশাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া, তাঁরা কী পরবেন এবং কোথায় পরবেন তা নির্ধারণ করা সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। তিনি জানান, আসাদ সরকার সিরিয়ার নাগরিকের বেশির ভাগ স্বাধীনতা খর্ব করেছিল ঠিকই, তবুও সেই সরকার নারীদের পোশাক নিয়ন্ত্রণ করেনি।