যৌন হেনস্থা, বালিতে পুঁতে দেওয়া হয় দেহ! অস্ট্রেলীয় তরুণীর ভারতীয় ‘ঘাতক’ ধৃত দিল্লিতে

নিজের মেয়ের দেহ দেখে শিউরে উঠেছিলেন তোয়ার বাবা। তাঁর ক্ষতবিক্ষত শরীর পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বালিতে। তবে পুরো শরীরটা বালিতে চাপা দেওয়া ছিল না। তোয়ার রক্তাক্ত দেহ অর্ধেক বালির বাইরে বেরিয়ে ছিল। অর্ধেক দেহ ছিল বালির গভীরে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তোয়ার সঙ্গে যে পোষা কুকুরটি ছিল, তার গায়ে একটি আঁচড়ও লাগেনি। কুকুরটিকে বেঁধে রাখা হয়েছিল তোয়ার দেহের ঠিক পাশে। সে ভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল সে। হয়তো হত্যাকাণ্ডের সাক্ষীও হয়েছিল অবোলা পশু।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কুইন্সল্যান্ডে নার্সের চাকরি করতেন রাজবিন্দর। তিনি আসলে পঞ্জাবের বুট্টর কলান গ্রামের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়াতেই থাকতেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান রয়েছে। তাঁদের ছেড়ে হঠাৎ পালিয়ে যান রাজবিন্দর।

তোয়ার মৃত্যুর পর পরই রাজবিন্দরের পলায়ন প্রাথমিক ভাবে পুলিশকে সন্দিহান করে তোলে। তদন্তের অগ্রগতিতে তিনিই হয়ে ওঠেন এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। তোয়ার মৃত্যুর দিন রাজবিন্দরের আচরণ সন্দেহজনক বলে দাবি করে পুলিশের কাছে বয়ান দিয়েছিলেন অনেকে। তাঁর শরীরে কাটাছেঁড়ার দাগও দেখা গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

গোয়েন্দাদের অনুমান, এই হত্যাকাণ্ড যৌন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজবিন্দর যৌন চাহিদা মেটাতে তোয়াকে আক্রমণ করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। নানা বিষয় খতিয়ে দেখার পর এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের পরেই এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তোয়ার পশুপ্রেম এলাকায় কারও অজানা ছিল না। কুকুর-বিড়ালদের প্রতি তাঁর ভালবাসাই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। জলজ্যান্ত তরুণীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি কেউই। স্থানীয় একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তোয়া। সেখান থেকেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

রাজবিন্দরকে ধরতে ভারতের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কুইন্সল্যান্ডের পুলিশ। চুক্তি হয়, রাজবিন্দরের খোঁজ পেলে কুইন্সল্যান্ড পুলিশের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হবে। রাজবিন্দরকে ধরে দিতে পারলে মোটা টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।

রাজবিন্দরের জন্য ১০ লক্ষ ডলার পুরস্কারমূল্য ধার্য করা হয়। ভারতীয় মুদ্রায় যার অর্থমূল্য প্রায় ৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা।

রাজবিন্দরের খোঁজে পঞ্জাবের গ্রামে কার্যত আদাজল খেয়ে পড়েছিল পুলিশ। সেখানে তাঁর বাবা-মা এখনও জীবিত। তাঁরা চাষবাস করেন। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তাঁদের সঙ্গে ছেলের আর দেখা হয়নি।

রাজবিন্দরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তাঁর ভাই কুইন্সল্যান্ড পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁর দাদা এই কাজ করতেই পারেন না। কারণ তিনি খুবই চুপচাপ এবং ভীতু প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করে, ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই উঠে আসে রাজবিন্দরের নাম।

তোয়ার মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। প্রতিবাদে পথে নামা বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছিলেন, যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাবেই কুইন্সল্যান্ডের মতো শান্ত পরিবেশে এমন একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড সম্ভব হয়েছে।

৪ বছর ধরে বিচারের আশায় রয়েছে তোয়ার পরিবার। শুক্রবার রাজবিন্দরের গ্রেফতারে তাঁরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার আদালতেই রাজবিন্দরের বিচারপ্রক্রিয়া চলবে।