Union Petroleum Minister announces discovery of natural gas in Andaman Sea, what are the possible outcome dgtl
Natural Gas Discovery in Andaman
প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভান্ডারের হদিস আন্দামান সাগরে? জ্বালানিতে ‘জ্যাকপট’ জিতে সকলকে দেখে নেবে নয়াদিল্লি?
কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব উপকূলে উপকূলরেখা থেকে ৯.২ নটিক্যাল মাইল (১৭ কিমি) দূরে একটি কূপ খনন করা হয়েছিল। সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আন্দামান সাগরের গভীরে লুকিয়ে ‘যকের ধন’। সেখানে খোঁজ মিলল প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভান্ডারের! তেমনটাই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী।
০২২০
অনেক দিন ধরেই আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজ চালাচ্ছে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড (ওআইএল) এবং অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ওএনজিসি)। এক বিবৃতিতে ওআইএল-ও জানিয়েছে, আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজে খনন করা ভারতের দ্বিতীয় অনুসন্ধান কূপ বিজয়পুরম-২-এ প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।
০৩২০
কেন্দ্রের এই ঘোষণায় হইচই পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পুরো বিষয়টিকে উৎসবের মরসুমে ভারতের জন্য জ্যাকপট বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কেন্দ্রের ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
০৪২০
ওআইএল হল কেন্দ্রীয় উদ্যোগ যারা ভারতের মাটির নীচে অপরিশোধিত তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজ চালায়। আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার লুকিয়ে থাকতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু অঞ্চলে খোঁজ চালানো হচ্ছিল। তার মধ্যেই বিজয়পুরম-২ নামে কূপে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
০৫২০
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘প্রাথমিক পরীক্ষায় সংগৃহীত নমুনার বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্যাসের উৎপত্তি বোঝার জন্য আরও গবেষণা চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, এটি হাইড্রোকার্বনের উৎস, যা ভবিষ্যতে অনুসন্ধান এবং খনন কাজ চালাতে সাহায্য করবে। গ্যাসের উপস্থিতির আরও মূল্যায়ন করার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষাও চালাচ্ছে ওআইএল।’’
০৬২০
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, আন্দামান অববাহিকায় অনুসন্ধান অভিযানের সময় এর আগে কোনও হাইড্রোকার্বনের উৎসের খোঁজ মেলেনি। এটিই প্রথম বার। এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি সংস্থাটি।
০৭২০
এর পরেই বিষয়টি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রী। হরদীপ জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই মনে করা হচ্ছিল যে আন্দামান সাগর প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ। ওই এলাকায় শক্তির এক বিশাল ভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে।
০৮২০
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব উপকূলে উপকূলরেখা থেকে ৯.২ নটিক্যাল মাইল (১৭ কিমি) দূরে ওই কূপটি খনন করা হয়েছিল। সেখানেই প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।
০৯২০
জলের প্রায় ২৫০০ মিটার গভীরে ওই সম্ভাব্য ভান্ডারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হরদীপ। তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দামানকে তৈলক্ষেত্র হিসাবে দাবি করে আসছেন।
১০২০
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর কথায়, ‘‘২,২১২-২,২৫০ মিটার পরিসরে কূপের প্রাথমিক উৎপাদন পরীক্ষায় মাঝেমধ্যে জ্বলন্ত গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। কাকিনাড়ায় জাহাজে এনে গ্যাসের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে ৮৭ শতাংশ মিথেনের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে।’’
১১২০
হরদীপ আরও বলেন, ‘‘গ্যাসের ভান্ডারের আকার এবং আবিষ্কারের বাণিজ্যিক কার্যকারিতা আগামী মাসগুলিতে যাচাই করা হবে। তবে আন্দামান অববাহিকায় হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দীর্ঘ দিনের বিশ্বাসকে সত্যি প্রমাণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।’’
১২২০
আন্দামান সাগরের নীচে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার যদি সত্যিই আবিষ্কৃত হয় তা হলে মনে করা হচ্ছে, ভারতে জ্বালানি তেলের চাহিদার জন্য আমদানির উপর নির্ভরতা ৮৮ শতাংশ কমে যাবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য অন্য দেশগুলির উপর নির্ভরতা কমবে ৫০ শতাংশ।
১৩২০
অর্থাৎ, প্রাকৃতিক গ্যাসের ওই সাম্ভাব্য ভান্ডার এক ধাক্কায় ভারতের শক্তি নিরাপত্তাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে। শক্তির দিক থেকে অনেকটাই স্বনির্ভর হতে ভারত।
১৪২০
আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওই ভান্ডার আবিষ্কৃত হলে তা ভারতের জ্বালানির চাহিদা কিছুটা তো পূরণ করবেই, পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবেও সমৃদ্ধ করবে নয়াদিল্লিকে। জ্বালানি কিনতে আর বেশি গাঁটের কড়ি খরচ করতে হবে না ভারতকে।
১৫২০
উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস ধরেই জ্বালানি সমস্যা নিয়ে জর্জরিত নয়াদিল্লি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নয়া শুল্কনীতিতে ভারতীয় পণ্যের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন।
১৬২০
পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান নয়াদিল্লির উপর। তার জেরে ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
১৭২০
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার আবিষ্কৃত হলে অদূর ভবিষ্যতে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে ভারত। মুখের উপর জবাব পেতে পারেন ট্রাম্পও।
১৮২০
যদিও আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার লুকিয়ে থাকার বিষয়টি আপাতত পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে। আদতেও আন্দামান সাগরের ওই এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার রয়েছে কি না, বা থাকলেও সেই ভান্ডার কতটা বিশাল এবং সেখান থেকে গ্যাস বার করে আনা কতটা সম্ভবপর হবে, তা জানতে আরও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন।
১৯২০
অন্য দিকে, ভারতের জন্য আশার আলো জাগিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে আবার এ-ও মনে করছেন, আন্দামান সাগরের প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার যেমন পাওয়া যেতে পারে, তেমনই বঙ্গোপসাগরীয় আশেপাশেও অশোধিত জ্বালানির ভান্ডারও লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই নয়াদিল্লির উচিত, এ রকম আরও গবেষণা চালানো।
২০২০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে, গভীর জলে তেল এবং গ্যাসের অনুসন্ধান করার জন্য ‘সমুদ্র মন্থন’ অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, জ্বালানি খাতে ভারতকে স্বনির্ভর করতেই অভিযান চালানো হবে। ঘটনাচক্রে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাস দেড়েকের মধ্যেই আন্দামান সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার থাকার সম্ভাবনার কথা জানা গিয়েছে।