US announces aggressively revoke visas of Chinese students, know its reason and impact dgtl
Chinese Student Visa Revoke
উচ্চশিক্ষার নামে ড্রাগনভূমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পাচার, গুপ্তচরবৃত্তি? কমিউনিস্ট অনুগত চিনা পড়ুয়াদের ‘ঘাড়ধাক্কা’ দিচ্ছেন ট্রাম্প!
আমেরিকার উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া চিনা পড়ুয়াদের এ বার বিপুল সংখ্যায় ভিসা বাতিলের কথা ঘোষণা করল ওয়াশিংটন। কেন তাঁদের উপর খড়গহস্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? এই সিদ্ধান্তে পড়বে কী কী প্রভাব?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৫:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! চিনা পড়ুয়াদের দেশ থেকে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত একরকম নিয়েই ফেললেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই লক্ষ্যে ভিসা নীতিতে বড় বদল করল তাঁর সরকার। ফলে আমেরিকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা মান্দারিনভাষীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ওয়াশিংটনের এ হেন পদক্ষেপে বেজিঙের সঙ্গে সংঘাত তীব্র হল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ।
০২১৮
চলতি বছরের ২৮ মে ভিসা নীতিতে বদলের কথা ঘোষণা করেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে চিনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বিপুল সংখ্যায় বাতিল করা হবে।’’ ফলে বর্তমানে মান্দারিনভাষী যে ছাত্র-ছাত্রীরা যুক্তরাষ্ট্র পড়াশোনা করছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যদিও ওই পড়ুয়াদের ভিসা এখনই বাতিল করা হবে কি না, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু বলেনি ওয়াশিংটন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বেজিং।
০৩১৮
বিদেশসচিব রুবিয়ো জানিয়েছেন, ড্রাগনভূমির যে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না’ বা সিপিসির সামান্যতম যোগাযোগও রয়েছে, তাঁরা কোনও ভাবেই মার্কিন ভিসা পাবেন না। তাঁর ওই ঘোষণার পর মান্দারিনভাষী পড়ুয়াদের একাংশ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) ‘সুদিন গিয়েছে’ বলে পোস্ট করতে থাকেন। বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির ফলে কোনও চিনা ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষেই ভিসা পাওয়া বেশ দুষ্কর। কারণ, ড্রাগনভূমিতে একটিই রাজনৈতিক দল রয়েছে।
০৪১৮
কমিউনিস্ট চিনের সিপিসির সদস্যসংখ্যা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, বর্তমানে ড্রাগনভূমির শাসন ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলটিতে সক্রিয় কর্মী আছে ১০ কোটি। ফলে সেখানকার মান্দারিনভাষী পড়ুয়াদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সিপিসির সদস্যপদ থাকাটাই স্বাভাবিক। এই যুক্তি দেখিয়ে এখন তাঁদের সকলের ভিসা বাতিল করতে পারে আমেরিকা। রুবিয়োর ঘোষণার পর এই আতঙ্ক তীব্র হয়েছে।
০৫১৮
অন্য দিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের জেরে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারণ বিদেশি পড়ুয়াদের টিউশন ফি থেকে কোটি কোটি অর্থ উপার্জন করে থাকে তারা। শুধু তা-ই নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যেতে এই টাকার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। চিনা পড়ুয়াদের ভিসা বিপুল সংখ্যায় বাতিল হলে সেই প্রকল্পগুলি থমকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬১৮
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সেখানকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হওয়া বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ২.৭০ লক্ষ। এদের একটা বড় অংশ চিনা নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। নতুন ভিসা নীতি সংক্রান্ত বিবৃতিতে রুবিয়ো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তা হল, কোনও অবস্থাতেই ড্রাগনভূমির পড়ুয়ারা জটিল প্রযুক্তির গবেষণায় যুক্ত থাকতে পারবেন না। ফলে গত বছর যাঁরা সেখানকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ওই ধরনের গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই যে আমেরিকা ছাড়তে হবে, তা স্পষ্ট।
০৭১৮
রুবিয়ো জানিয়েছেন, চিনা পড়ুয়াদের ভিসা বাতিল করতে ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ বিভাগের (পড়ুন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা স্বরাষ্ট্র) সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবে মার্কিন বিদেশ দফতর। এতে মোট কত জন শিক্ষার্থীর উপর কোপ পড়বে এবং কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ওয়াশিংটনের তরফে যে সব বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল তার ২৫.২ শতাংশই ছিলেন ড্রাগনভূমির বাসিন্দা। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ৩০.১ শতাংশ। বাকি ৪৪.৬ শতাংশ অন্যান্য দেশের পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করেছিল মার্কিন প্রশাসন।
০৮১৮
বিশ্লেষকদের অনুমান, ট্রাম্পের নতুন ভিসা নীতির জেরে ভিসাপ্রাপ্তদের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চিনের পাশাপাশি, ভারতীয় পড়ুয়াদের একাংশও আমেরিকার থেকে মুখ ফেরাতে পারেন। তাঁদের নতুন গন্তব্য ইউরোপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দরজা খুলে দিয়েছে জাপান। এ ব্যাপারে টোকিয়োর থেকে ঢালাও ভিসা বিলির আশ্বাস পেয়েছে নয়াদিল্লি। ফলে শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।
০৯১৮
চিনা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খড়্গহস্ত হওয়ার নেপথ্যে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। তাঁর প্রশাসনের নিরাপত্তা আধিকারিকদের বড় অংশই মনে করেন, উচ্চশিক্ষার নামে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি চুরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন ড্রাগনভূমির পড়ুয়ারা। তাঁদের মূল আনুগত্য রয়েছে সিপিসির প্রতি। ভিসা নীতিতে বদল আনার নেপথ্যে একে অন্যতম বড় যুক্তি হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
১০১৮
দ্বিতীয়ত, মান্দারিনভাষী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বিদেশে পড়তে যাওয়া চিনা পড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক ভাবে বেজিঙের বিশেষ একটি আইন মানতে হয়। তাতে বলা হয়েছে, যখনই সংশ্লিষ্ট দেশটির ব্যাপারে সিপিসি কোনও তথ্য জানাতে চাইবে, ওই ছাত্র বা ছাত্রী, তা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন। এর ফলে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ প্রশাসন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বলে মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
১১১৮
আমেরিকার আরও অভিযোগ, চিনা পড়ুয়াদের সঙ্গে ড্রাগন ফৌজ ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ এবং গুপ্তচর সংস্থা ‘মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি’র (এমএসএস) ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে। বেজিং অবশ্য কখনওই এই ধরনের তত্ত্ব মানতে রাজি নয়। ড্রাগনভূমির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সরকারের পাল্টা যুক্তি, সংঘাত তৈরি করতেই ‘মনগড়া কাহিনি’ তৈরি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আমেরিকা।
১২১৮
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন ডিউক কুনশান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসক ডেনিস সাইমন। তাঁর কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে চিনা ছাত্র-ছাত্রীদের আচরণে সরকারের উদ্বিগ্নতা বেড়েছে। এদের মাধ্যমে আমেরিকার মুক্ত গবেষণার পরিবেশ ব্যবহার করে নিজের উন্নতি ঘটাচ্ছে বেজিং। আজ যে মহাকাশ গবেষণা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মান্দারিনভাষীরা চ্যালে়ঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, তার নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উদার ভিসা নীতি। এতে দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।’’
১৩১৮
অন্য দিকে ট্রাম্পের নতুন ভিসা নীতির প্রবল সমালোচনা করেছেন অভিবাসী আইনজীবী ডেভিড লিওপোল্ড। তিনি বলেন, ‘‘২০২৩ সালে শুধুমাত্র চৈনিক শিক্ষার্থীদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির রোজগারের অঙ্ক ছিল পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি। ভিসা বাতিলের ফলে সেই টাকা আসা বন্ধ হলে প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে গবেষণার কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। এই সমস্যার সমাধান না করে একতরফা ভাবে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া অবশ্য অনুচিত।’’
১৪১৮
চলতি মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জনপ্রিয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্র ভর্তি নিয়ে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে ট্রাম্প সরকার। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ছ’দফা দাবি মানার নির্দেশ দেয় মার্কিন প্রশাসন। অন্যথায় আগামী শিক্ষাবর্ষে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের আর ভর্তি করা যাবে না বলেও ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল। পাশাপাশি, বর্তমানে যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেখানে রয়েছেন, তাঁদের এক মাসের মধ্যে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার নির্দেশ ওই বিজ্ঞপ্তিতে ছিল। নির্দেশ অমান্য করলে স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলের হুমকি দেয় ট্রাম্প সরকার।
১৫১৮
এই নির্দেশিকার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে ফেডারেল আদালতের দ্বারস্থ হয় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ মে ওই আবেদন মঞ্জুর করে সংশ্লিষ্ট আদালত। পরে ট্রাম্পের সরকারকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্র ভর্তি এবং স্টুডেন্টস ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ জারি না-করার নির্দেশ দেন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বিচারক অ্যালিসন বুরোস। ফলে সেখানকার চিনা পড়ুয়াদের আপাতত আশঙ্কার কিছু নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬১৮
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ মেনে আগামী ৩০ দিনের জন্য বিদেশি ছাত্র ভর্তি এবং স্টুডেন্টস ভিসা নীতিতে কোনও পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওভাল অফিস। আমেরিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা ২৫ শতাংশে বেঁধে রাখতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে চিনা কমিউনিস্ট মতাদর্শ ঠেকানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি।
১৭১৮
কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে বিদেশসচিব রুবিয়োর ঘোষণায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চিনা পড়ুয়াদের তাড়াতে আদালতে জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিতে পারে ট্রাম্প সরকার। সে ক্ষেত্রে মান্দারিনভাষীদের ক্যাম্পাসে রেখে দেওয়ার দাবি আদৌ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
১৮১৮
গত এপ্রিল থেকে চিনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তাতে দু’পক্ষই দাঁড়ি টানায় বেজিঙের বাণিজ্যিক মহলে এসেছিল খুশির হাওয়া। ওই লড়াই থামতে না থামতেই যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট ড্রাগনভূমির শিক্ষার্থীদের দেশছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জিনপিং প্রশাসনের উপর চাপ বাড়ল বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।