১৯৫৯ সালের ২৬ জুলাই র্যানকিনের জীবনে সেই অভূতপূর্ব সন্ধ্যা নেমেছিল। সে দিন এফ-৮ ক্রুসেডার নামে একটি যুদ্ধবিমান নিয়ে ম্যাসাচুসেট্সের দক্ষিণ ওয়েমাউথের বিউফোর্ট এলাকার নৌসেনা ঘাঁটি থেকে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। অন্য একটি ক্রুসেডার যুদ্ধবিমানে ছিলেন তাঁর সঙ্গী তথা উইংম্যান লেফ্টেন্যান্ট হার্বার্ট নোলান।
বজ্রগর্ভ মেঘের কবল এড়াতে ৪৫ হাজার ফুট উঁচুতে ওড়া বিমানটিকে আরও উঁচুতে নিয়ে যান র্যানকিন। তত ক্ষণে চালকের আসনে থাকা র্যানকিনের সামনের ইন্সুমেন্টস প্যানেলে তখন নানা সতর্কীকরণ আলো জ্বলতে শুরু করেছে। তারই মধ্যে একটিতে লেখা ফুটে উঠল, ‘ফায়ার’। র্যানকিনের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে বিমানের ইঞ্জিন অত্যন্ত গরম হয়ে উঠেছে। যে কোনও সময় তাতে আগুন ধরে যেতে পারে। হয়তো বা ইতিমধ্যেই আগুন লেগে গিয়েছে বিমানটিতে।
রে়ডিয়োতে যুদ্ধবিমানটির অবস্থা জানানোর সময় সেটি ৪৭ হাজার ফুট উঁচুতে উড়ছিল। সেখান থেকে বাইরে ঝাঁপ দেওয়ার অর্থ তো মৃত্যুর মুখে নিজেকে ঠেলে দেওয়া। তবে র্যানকিনের কাছে আর কোনও উপায় ছিল না। বাইরে তখন বরফঠান্ডা তাপমাত্রা। উড়ানের সময় গ্রীষ্মকালের ফ্লাইং স্যুট পরেই বিমানে উঠেছিলেন র্যানকিন।
নিজের বইয়ে র্যানকিন লিখেছেন, ‘‘ইজেকশন সিটে যে আগুন লেগে গিয়েছে, বুঝতে পেরেছিলাম। একই সঙ্গে আগুন ধরার আওয়াজও শুনতে পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন, একটি বিশালাকার হাতি আমায় লাথি মেরেছে। একই সঙ্গে বিকট শব্দে নাক ডাকছে সেটি। তবে এই ভেবে স্বস্তি পেয়েছিলাম যে ইজেকশন সিটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না।’’
বিমানের বাইরে বার হওয়ামাত্র ঠান্ডার কনকনানি হাজারো তিরের মতো বিঁধতে শুরু করেছিল র্যানকিনকে। সে সময় তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের থেকে ৭০ ডিগ্রি নীচে। র্যানকিন জানিয়েছেন, বরফজমাট ঠান্ডার ছোঁয়া লাগতেই শরীরের সমস্ত অংশ ফুলতে শুরু করে। কাঁধ, মুখ, কব্জি থেকে গোটা হাত বেয়ে গোড়ালি— ঠান্ডার কামড়ে ফুলছিল সবই। প্রবল ঠান্ডার সংস্পর্শে আসামাত্রই যেন আগুনে গরমে জ্বলতে শুরু করেছে তাঁর গোটা শরীর।
তবে আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন র্যানকিন। বিমানের বাইরে বেরিয়ে বজ্রগর্ভ মেঘের মধ্যে পড়েছিলেন। ঘুরপাক খেতে খেতে নীচে পড়তে শুরুও করেন। তার মধ্যেই কোনও ভাবে অক্সিজেনের নলটি নিজের মুখে গুঁজে দিয়েছিলেন। এ ভাবে যেন মৃত্যুর কাছ থেকে কিছুটা সময় কিনে নিয়েছিলেন র্যানকিন। শূন্যে থাকার সময় প্রায় ১০ হাজার ফুট উপরে থাকার সময় স্বয়ংক্রিয় ভাবে প্যারাশুট খুলে যায়।
শেষমেশ র্যানকিনকে উদ্ধার করে একটি দোকানে নিয়ে যান এক গাড়িমালিক। সেখান থেকেই ফোন করে ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। নর্থ ক্যারোলাইনার একটি হাসপাতালে দীর্ঘ দিন তাঁর চিকিৎসা চলেছিল। বরফের ক্ষতের মতো হাতে, মুখে, গোটা শরীরে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বেশ কয়েক সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দেন র্যানকিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy