Advertisement
০১ মে ২০২৪

EX ফ্যাক্টর

প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর প্রাক্তনদের কাণ্ডকারখানা। কেউ শোক ভুলতে গলায় মাছের কাঁটা পোষে। কেউ সারা ক্ষণ ওর ফেসবুক পেজ দেখে। কেউ কোলবালিশকে আদর করে। কেউ এক বছর পর, ও অন্য প্রেম করছে বলে চড় মারে। পাঠক-পাঠিকার চিঠির বাছাইগুলো।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর প্রাক্তনদের কাণ্ডকারখানা। কেউ শোক ভুলতে গলায় মাছের কাঁটা পোষে। কেউ সারা ক্ষণ ওর ফেসবুক পেজ দেখে। কেউ কোলবালিশকে আদর করে। কেউ এক বছর পর, ও অন্য প্রেম করছে বলে চড় মারে। পাঠক-পাঠিকার চিঠির বাছাইগুলো।

• ব্রেক-আপ’এর পর দেবদাসই হয়ে যেতাম হয়তো। কিন্তু আমার লিভারে মদ সহ্য হল না। বই, গান, ক্যামেরা— কিছুতেই কিছু হয় না। তখন ওকে ঘেন্না করার জন্য ওর নেগেটিভ দিকগুলো ভাবতাম। ওর বোয়াল মাছের মতো হাই তোলা, পিলে চমকানো ঢেকুর, ফুচকাওয়ালার সঙ্গে কাঁইকাঁই। তবু ঘেন্না এল না। এল ডিপ্রেশন। মেয়েটা মাছভাজা খেতে ভালবাসত। ওকে মনে করে এক দিন মাছভাজা খেতে বসলাম। গলায় বিঁধে গেল কাঁটা। আর এক যন্ত্রণা। পাখি পোষার মতো গলায় কাঁটা পুষতে লাগলাম। ওর কথা মনে পড়লেই জোরে একটা ঢোক গিলতাম। কাঁটাটা খচ করে উঠত। বাপ রে বাপ! কাজ হল। বিষে বিষক্ষয়। কিছু দিন পর দুটো কাঁটাই ভ্যানিশ।

অচিন্ত্য সরকার দেবীনগর, রায়গঞ্জ

• আবীরের মুখেই প্রথম শুনলাম, অহনার বিয়ে। শুনে একটু চুপ হয়ে গেলাম। হোস্টেলে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবরটা। দলে দলে বন্ধু এসে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়া শুরু করল। নিজেকে বেশ ট্র্যাজিক হিরো মনে হচ্ছিল। কলেজের অন্যতম সেরা সুন্দরী ঋতাভরী প্রায় জড়িয়ে ধরে বলল, ‘মনখারাপ সরিয়ে পড়াশোনায় মন দে, জীবনে অনেক মেয়ে আসবে-যাবে, ভেঙে পড়িস না, আমি তো আছি তোর সঙ্গে’— সত্যি বলছি আমার কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল না। রাতে যখন হোস্টেলের সবচেয়ে কিপটে রজত মদ খাওয়াল নিজে থেকে, শুধু মনে হচ্ছিল, আবার কবে প্রেম করব এবং আবার কবে প্রেমিকা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।

অপূর্ব সরকার মাস্টারপাড়া, বারুইপাড়া

• কিছু দিন একসঙ্গে মেশার পর বুঝলাম, সারা জীবনটা ঝগড়া করেই কেটে যাবে। কথায় কথায় সন্দেহ। অতএব চলো বাই বাই।

কিন্তু এত সহজে তো আর ছেলেরা প্রেমিকাদের ছেড়ে দেয় না। সেই ভয়ে, পঞ্জাবে, দিদির কাছে, প্রায় এক বছরের জন্য গিয়ে ঘাঁটি গাড়লাম। সদ্য স্নাতক হয়েছি, কিন্তু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হওয়া সে বছর আর হল না— প্রেমের ঠেলায় এক বছর নষ্ট হল। এক বছর পর ফিরে শুনি, আমার প্রাক্তন প্রেমিক তখন নতুন একটা প্রেম করছে। শুনেই ধাক্কা লাগল।

না না, এ হতেই পারে না। কিছুতেই না। যে আমাকে ছাড়া কাউকেই ভাবতে পারত না, সে এই ক’দিনে অন্য মেয়েকে ভালবেসে ফেলল? আচ্ছা, সরাসরি জিজ্ঞাসা করি তাকেই। প্রকাশ্য বাজারে ভরদুপুরে তাকে জেরা শুরু। ‘তোমার কী খবর?’— উত্তর নেই। চুপ। আবারও একই প্রশ্ন। নিরুত্তর। ফের একই প্রশ্ন। মাথা নিচু। বুঝতে ভুল হল না, যা শুনেছি তা ঠিকই। তার পর আচমকাই তার বন্ধুর সামনেই ঠাস ঠাস করে তার গালে চড় মারতে শুরু করলাম। তার পর অসহায়ের মতো হাউহাউ করে কেঁদে চললাম।

মনকে বোঝালাম, আমিই তো আমার বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলেছি নিজের ভালর জন্য। তবুও মন সান্ত্বনা পায় না। কোথায় যেন হিসাবে অমিল। সে আগে পেরে গেল? ভেবেছিলাম, আমি পারব, সে পারবে না!

ঝুমা ঘোষ

• এক্সট্রা-ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার চলছিল আমার। বিবাহোদ্ভূত প্রেম তখন মৃতপ্রায়। আমার তৎকালীন স্বামী আমার সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করে, তদন্ত শুরু করে। আমার বিবাহিত প্রেমিকটির স্ত্রীকে খুঁজে বার করে, তার সঙ্গে গভীর আলোচনায় বসে। কিন্তু প্রতিকার খুঁজতে গিয়ে কাহিনি অন্য দিকে ঘুরে যায়। আমার ওপর বিদ্বেষ, ঘৃণায় সে ওই মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তার পরের অংশ গল্প হলেও সত্যি। কোর্ট-কাছারি, বিবাহবিচ্ছেদ এবং পুনর্বিবাহ। চার জোড়া হাত আর চক্ষুর মিলন হল আবার। আমি, আমার প্রেমিক এবং আমার প্রাক্তন স্বামী ও প্রেমিকের স্ত্রী সফল দম্পতি। প্রেমিক বিয়ের পর আমার স্বামী হলেন আর তাঁর স্ত্রী হলেন আমার প্রাক্তন স্বামীর পত্নী। ‘এক্সচেঞ্জ অফার’ আর কী! আমার মেয়ের বয়স পৌনে তিন আর ওদের মেয়ের সাড়ে তিন। ফেসবুকে নিয়মিত সুখী পরিবারের ছবি দেখে আমরা চার এক্স নিশ্চয়ই ভাবি— সব ভাল যার শেষ ভাল।

তনুপ্রিয়া হাজরা হাওড়া

• প্রেমিকের নাম ছিল কৃষ্ণেন্দু। ভালবেসে ‘কৃষ্ণ’ নামে ডাকতাম। ব্রেক-আপের পর আমায় পেয়ে বসল অদ্ভুত একটা নেশা। আমি মানুষরূপী কৃষ্ণকে ছেড়ে এ বার পড়লাম ভগবান কৃষ্ণের প্রেমে। রাধাকৃষ্ণের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার টাঙালাম দেওয়ালে। মোবাইলের স্ক্রিনে, আমার হোয়াটস্‌অ্যাপ প্রোফাইলে লাগালাম শ্রীকৃষ্ণের ছবি। ঘরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি এনেছি।

অভিষিক্তা কাবাসী স্টেশন রোড, রহড়া

• এ প্রেম কলেজবেলার। তা প্রায় বছর পনেরো। এর মাঝে চুলে পাক ধরেছে। কাজের চাপ বেড়েছে। সংসার হয়েছে। তারই মাঝে যোগাযোগ আবার। তত দিনে ডিকশনারির সেই ঝাউপাতাও লালচে হয়েছে, সাদা পাতায় তার দাগ ধরেছে। তার আকর্ষণ যেন আরও বেড়েছে।

বলবার চেষ্টা হল, এই সম্পর্কের কোনও দিশা নেই। সমাজ বলে একটা ব্যাপার আছে। এখানে বুড়োবুড়ি পার্কে বসে প্রেম করে না, হরিনাম করে। ‘তা হলে এত দিন পরে যোগাযোগ করলে কেন?’ পালটা প্রশ্ন।

আরে, তোমাকে ফেসবুকে কত দিন পরে দেখলাম। দেশে ফিরেছ শুনলাম। বিয়ের পর সেই গেলে। কেমন আছ, কী করছ— এ সব জানতেই...

এমন বলছ, যেন কালকের কথা। আচ্ছা তুমি এখনও সে রকম সুর করে ‘আশ্চোর্যো’ বলো? শুনতে খুব মজা লাগত।

ধীরে ধীরে এ সব বন্ধ হল। কম বয়েসে মানুষ ঝগড়া করে। যে ফেসবুকে ওকে খুঁজে পেয়েছিলাম, সেখানেই নিভৃতে অনুসরণ করতাম তার পর। নানা কথা ভেসে আসত মেঘের মতো। দেখলাম, এক দিন লিখেছে— ‘অবান্তর স্মৃতির ভিতর/ তোমার মুখ অশ্রু ঝলোমলো/ লিখিও, উহা ফিরত চাহো কিনা।’

নির্জন বৈরাগী বরানগর

• চার বছর প্রেম চলার পর, হঠাৎ কাঁদো কাঁদো গলায় ফোন করে প্রেমিকা বলল, সে গত এক বছর ধরে এক বিবাহিত ডাক্তারের সঙ্গে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে। ফোনের এ-পারে আমি ক্যাবলার মতো সব চুপচাপ শুনে গেলাম। শুধু পরের দিন তার দেওয়া সমস্ত উপহার বাটা’র জুতোর বাক্সে ভরে তার ঠিকানায় ক্যুরিয়ার করে দিলাম।

O.V.

• বেশ কিছু দিন প্রেম চলার পর জানতে পারলাম তার দ্বিতীয় সম্পর্কের কথা। এক দিন গেলাম একটা এসপার-ওসপার করতে। আবিষ্কার করলাম তার গোপন সম্পর্ক হাতেনাতে। এক কথা দু’কথা থেকে হাতাহাতি, আমি একা আর প্রতিপক্ষ অসংখ্য। মার খেয়ে মুখ ফাটলো, আর অনন্ত জিজ্ঞাসা নিয়ে শেষ হল সম্পর্ক। তবুও পারিনি তাকে চিঠি লেখার অভ্যাস ছাড়তে। পরবর্তী সাত বছরে তাকে ১৮টা চিঠি লিখেছিলাম শুধু একটাই প্রশ্ন করে, ‘কেন করলে এ রকম? বলো?’ কোনও খোঁজ ছিল না তার, শুধু চিঠিগুলোই জমছিল।

কলেজ পাশ করে তিরুবনন্তপুরমে এলাম নতুন চাকরি নিয়ে। এক বার পুজোতে বাড়ি ফিরে তার সঙ্গে হঠাৎ রাস্তায় দেখা। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে সে-ই মুখ খুলল। দুজনেই অঝোরে কাঁদলাম। জানলাম সে ওই ছেলেটিকে পালিয়ে বিয়ে করেছে, ওদের একটা বাচ্চাও হয়েছে। তার পর দিন দেখা করে তাকে জমিয়ে রাখা ১৮টা চিঠি দিলাম। আর সে দিল ২৬ পাতার চিঠি, যা সে গত সাত বছর ধরে লিখেছে।

শুরু হল আর একটা গোপন সম্পর্ক, আমাদের। বুঝতে পারলাম, সে ফিরে আসতে চায় সব কিছু ছেড়ে। তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আর শেষ চিঠিতে লিখেছিলাম: ‘আমি ভালবাসি আমার মা-কে।’

অরুণাভ সাহা পুণে

• কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ব্যাচ জুনিয়রদের সঙ্গে এমএ-তে অ্যাডমিশন নিলাম। একটি ছেলে বেশ নজর কাড়ত। আপাত দৃষ্টিতে বেশ সপ্রতিভ, আকর্ষক। কিন্তু মুখ খুললেই বোঝা যেত বেশ একটু মেয়েলি। সে আবার কোনও দিন কোনও মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাত না। বয়সে একটু ছোট বলেই মজা করার ইচ্ছে হল। সবাইকে বললাম, ছেলেটাকে আমার দারুণ পছন্দ। কথাটা ছেলেটার কানেও পৌঁছল আর সে আস্তে আস্তে ‘অ্যাটাচ্‌ড’ হয়ে পড়ল। যে ছেলে কোনও দিন কোনও মেয়ের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলত না, সে নিজে থেকে এগিয়ে এসে কথা বলা-ই শুধু নয়, ট্রেনে ফেরার সময় এক সঙ্গে একই কামরায় আসার প্রস্তাবও দিয়ে ফেলল। ছেলেটির বন্ধু-গ্রুপটা ওকে পুরোপুরি ‘বয়কট’ করল, কেননা ওরা বুঝতে পেরেছিল যে শেষ পর্যন্ত ছেলেটা কষ্ট পাবে। আর আমারও তো অলরেডি বিয়ের সম্বন্ধও দেখা চলছে। আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীরাও বারণ করল এমন মজা না করতে, যেহেতু ছেলেটা সিরিয়াস। এক মাসের মধ্যে যখন সত্যিই এক জায়গায় আমার বিয়ে ফাইনাল হয়ে গেল, ছেলেটি প্রথমে বিশ্বাস করেনি। কার্ড বিলি হবার পর এক দিন ফেরার পথে স্টেশনে নেমে একদম ভর সন্ধ্যায় হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করল। প্ল্যাটফর্ম ভর্তি লোকজন, আমি তো লজ্জায় একশেষ। একটু দূরত্বে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম, আর ছেলেটি ওই ভাবে কাঁদতে কাঁদতে অনুযোগ জানাতে থাকল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

• গোঁফ সকলকে মানায় না। কথাটা আমি বুঝলেও বুঝত না আমার প্রাক্তনী। এক রকম জোর করেই সে জিনিসটা রাখিয়েছিল। বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই টিটকিরি দিত, তবুও রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু ‘কেউ কথা রাখেনি/ কেউ কথা রাখে না’-র তত্ত্ব অনুসারে সে এক বৃষ্টিমুখর দিনে আমাদের সম্পর্কে কাঁচি চালায়। আজ ভাবলে হাসি পায়, আমি ফোনটা রেখে সবার আগে বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেজর চালিয়েছিলাম গোঁফের ওপর।

রূপক মিশ্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

• ভাঙনের ঠিক পরের দিনই, আমার সদ্য-প্রাক্তন প্রেমিকা ফেসবুক স্টেটাসে দুম করে লিখে দিল— ‘ফিলিং সিংগল, ওয়ান্ট এ বয়ফ্রেন্ড।’ খটাখট ১০৯টা লাইক। কমেন্টের ঘরে ৭৬ জন প্রেমিক প্রেম নিবেদনের ইচ্ছে প্রকাশ করে ঝুলে আছে। দেখে আমার বুক ব্যথায় জ্বলে ওঠে। বিচ্ছেদের এক দিন পরেই এমন ঘটনা ঘটাতে হল? তাও আমাকে ব্লক বা আনফ্রেন্ড না করেই! তা হলে কি আমাকে দেখাতে চাইছে, ওর জন্য ক’জন লটকে থাকতে পারে?

রিয়াজুল ইসলাম ছোট জাগুলিয়া, বারাসত

• পড়লাম, ‘কঙ্গনা রানাউত ব্রেক-আপের পর নাকি ১৪৩৯টা ই-মেল করেছেন হৃত্বিক রোশনকে।’ এই একটি ব্যাপারে আমি নিজেকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীটির থেকে বেশি পরিশ্রমী বলে মনে করি। প্রেম ভাঙার পর যত বার ফেসবুক-সহ অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লুকিয়ে আমার ‘এক্স’-এর ফোটো, স্টেটাস দেখেছি, সংখ্যায় হিসেব করলে তা ১৪৩৯-এর কয়েক গুণ। ‘ফিলিং গুড’ স্টেটাস দেখলে মন শুকিয়ে যেত, আবার শেয়ার করা দুঃখের লাইন দেখে ভাবতাম, আহা! আমার মতো ও বুঝি বেদনাগ্রস্ত।

প্রেম ভাঙার পর ‘এক্স’ ভেবে কোলবালিশের সঙ্গে কথা বলতাম, কাঁদতাম, একটু-আধটু আদরও করতাম না বললে ভুল হবে। তবে, ‘বিচ্ছেদের পর মানুষের সামনে যে সময় পড়ে থাকে, তা অনন্ত’— ভেবে, ফেসবুকে কলেজের বন্ধুদের নিয়ে একটি পেজ বানালাম। প্রফেসরদের নিয়ে কার্টুন-কবিতা, বন্ধুদের নিয়ে কমিক্স, ছবিতে ভরা এই পেজ এখন আমার প্রেমিকাও বটে। অনেকে ভাবে পাগলামো, আসলে কষ্টকে চাপা দেওয়ার এ আমার নিজের তৈরি রাস্তা।

ডিম্ব

• এক্স ফ্যাক্টর নয়, এ হল ওয়াই ফ্যাক্টরের গল্প। তখন সত্তরের দশক। ক্লাস সেভেন-এইট। কিশোর প্রেম ভেঙেই তো যায় অধিকাংশ সময়। এরও তা-ই দশা হল। আমার সে সময়ের ভ্যাবাগঙ্গারাম প্রেমিক তখন বোধহয় টুয়েলভের ছাত্র। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কিছু আগে খুব কায়দা করে ক্লাস এইটের প্রেমিকাকে নিয়ে একখানা ছবি তুলেছিল। তখন তো আর মোবাইল ছিল না! স্টুডিয়োতে যেতে হয়েছিল, লুকিয়ে, ভয়ে ভয়ে।

সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার প্রায় বছর খানেক পর রাজনগরের রাসমেলার মহাভিড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ফিরছি। ফিল্মি কায়দায় হঠাৎ পথ আটকে দাঁড়াল ওই প্রেমিকপ্রবরের ডাকসাইটে বন্ধু। মহা ভিলেন টাইপ। নিকষ কালো। ভয়ে আমার প্রাণ কণ্ঠায়!

—‘কী ব্যাপার? পাত্তা দিচ্ছ না যে বড়? এটা কী?... দেব নাকি পাঠিয়ে বাড়িতে?’ জ্বলজ্বল করছে দুটো ক্যাবলাটে মুখ, ওর হাতে ধরা ফোটোতে। ক্লাস এইট পেরোনো প্রেমিকা ভয়ে ঠকঠক। সামলাল প্রিয় বান্ধবীরা। সেই ছেলেটিকে খুব এক চোট কথা শুনিয়ে, হাত থেকে ছবিটি নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দিল।

মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস নতুনপাড়া, জলপাইগুড়ি

• মঞ্চ থেকে নামামাত্র এক তরুণী এগিয়ে এল, ‘আপনার গান আমার দারুণ ভাল লাগে...’ মেয়েটি দারুণ মিষ্টি।

এর পর বিভিন্ন সংগীতানুষ্ঠানে দেখা, গল্পগুজব। এমএসসি-র ছাত্রী। বাবা নেই। মা অধ্যাপিকা। যত দিন যায় তত ভাল লাগতে থাকে ওকে। নিভৃতে ওকে নিয়ে ভাবতে থাকি। এই ভাবে দেড় বছর কাটল।

এক দিন লজ্জা কাটিয়ে, বুকে সাহস নিয়ে ওদের বাড়িতে হাজির হলাম। আমি যে ওর প্রেমে পাগল, তা আজ ওকে বলবই।

ওর মা এ কথা সে কথার পরে বললেন, ‘একটা সুখবর আছে। কাল রাতেই খুকির বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেল। জামাই এমবিএ পাশ করে রাজারহাটে চাকরি করে। এই বৈশাখেই বিয়ে।’

ঘরে ঢুকে ম্লান মুখে সে আমার দিকে তাকাল, আমিও তাকালাম গভীর ভাবে। কারও মুখে কোনও কথা নেই। দু’জোড়া চোখেই বিন্দু-বিন্দু জল। অব্যক্ত প্রেম ভাঙলেও এমন ভয়ংকর যন্ত্রণা! কিছু ক্ষণ পরে বললাম, ‘আর কোনও দিন দেখা হবে না। চলি।’ দ্রুত বেরিয়ে আসছিলাম ঘর থেকে। পথ আটকে কান্না-ভেজা গলায় ও বলল, ‘তোমাকে একটা চুমু খেতে চাই।’ তার পর কাঁপা-কাঁপা ঠোঁটটা এগিয়ে দিল আমার ঠোঁটের দিকে!

সমীপেন্দ্র লাহিড়ী কুলটি

• সে দিন খাবার অর্ডারের পর হঠাৎই মেহেক বলল, বাড়ি থেকে বিয়ের কথা উঠছে। তুই তো এখনও কিছু করিস না যে বাবাকে তোর কথা বলব। বললাম, একটু সময় পেলে আমিও কিছু করব। ও বলল, কত দিন, আর তার শিয়োরিটি কী? মজার ছলে বলে ফেলি ‘নো শিয়োরিটি’। ও বেরিয়ে যায়। আমি বেরোতে বেরোতে ও বাসস্ট্যান্ডে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম, ও নিশ্চুপ ভাবে ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে যায়।

সে রাতে আমার প্রিয় শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে পারি, মেহেক নার্সিংহোমে অ্যাডমিটেড। সেখানে ও শারীরিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠল, মানসিক ভাবে নয়। মনোচিকিৎসক দেখানো হয়, আর আমাকে বলা হয়— ও সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওর সর্ব ক্ষণের সঙ্গী হয়ে থাকতে হবে। প্রত্যেক দিন দশটার মধ্যে হাজির হতাম ওর বাড়ি। প্রায় চার মাস নিজের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে মেহেকের সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম, যদিও জানতাম মেহেক কখনও আমার হবে না। ও সুস্থ হলে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।

বনফুল আহমেদ কাইজার স্ট্রিট, কলকাতা

• আমার প্রেমিকা যখন জানাল, সম্পর্কটা আর চায় না, আমি বললাম, এ ভাবে ফট করে সব শেষ করে দিলে তো চলবে না গুরু, আমায় শেষ বারের মতো আদর করতে দিতে হবে। ভাল করে। একটা দিন ঠিক করো, যে দিন তোমার বাড়ি ফাঁকা থাকবে, আমি সারা দুপুর ধরে আদর করব। সে প্রায় আঁতকে উঠে বলল, এ আবার হয় নাকি? আমি তো আর তোমায় চাই না। আমি বললাম, কিন্তু আমি যে তোমায় না পাওয়ার কষ্টে সারা জীবন পুড়ব? এটুকু ক্ষতিপূরণ তো দিতেই হবে। আর, আগের বার চুমু খাওয়ার সময় তো জানতাম না, এ-ই শেষ। এ বার আদর করার সময় সারা ক্ষণ মনে করব, এই শেষ দেখলাম, এই শেষ হাত রাখলাম। তাতে জিনিসটা ঠিক করে শেষ হবে। কাঁদো কাঁদো মুখে রাজি হল। সে দিন আদর করার সময় কষ্টও পেয়েছিলাম, আবার একটা প্রতিশোধের আনন্দও হয়েছিল।

দেবাশিস চক্রবর্তী লেকটাউন

• দীর্ঘ ঊনত্রিশ বছর পর তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ হল ফেসবুকের মাধ্যমে। মেসেজ, তার উত্তর, তার পর মেসেঞ্জারে কথা বলা, তার পর ও ফোন নম্বর চাইল। দিলাম। ও ফোন করল। কত দিন পর গলার আওয়াজ শুনলাম! তার পর দু’পক্ষই ভেসে গেলাম। এক বিকেলে ওর সঙ্গে আমার দেখা হল। কী যে ভাললাগায় মন ছেয়ে গেল, বোঝাতে পারব না। তার পর আরও কয়েকবার কাফে কফি ডে-তে দেখা হওয়া, কথা বলা— এ ভাবেই কাটল কয়েকটা মাস। কিন্তু ছবিটা বদলে গেল কিছু দিন পর থেকে। আমি ফোন করলেই বিরক্ত, অপমানজনক কথাও বাদ যায় না। আমি তখন এতই জড়িয়ে পড়েছি যে ওকে হারাবার ভয়ে সে-সব সহ্য করেও ফোন করতাম। অকারণে তিক্ততার শেষ সীমায় নিয়ে গেল ও। ফোনে অসম্ভব খারাপ কথা বলতে লাগল। তার পর এক দিন আমার নম্বরটা ব্লক করে দিল।

শর্মিষ্ঠা হালদার ব্যারাকপুর

• তখন কলেজে। ক্লাসেরই একটি ছেলের সঙ্গে মাত্র তিন মাসের প্রেম। হঠাৎ সে এক দিন জানাল, আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা খুব চাপের হয়ে যাচ্ছে, ঠিকমত পড়ায় মন বসছে না, টিউটোরিয়ালগুলোতেও যাচ্ছেতাই নম্বর পাচ্ছে। বাড়িতে সেই নিয়ে মায়ের বকুনি। সব মিলিয়ে সে নাজেহাল। তাই প্রেমের ইতি। দু’দিন পর সে বলল, ‘আজ ছুটির পর আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাবি, বুঝলি?’ আমার জিজ্ঞাসু চোখের দিকে তাকিয়ে সে বলতে থাকে— ‘ইংলিশের পার্থদাকে চিনিস তো? আরে, যাকে সবাই রবি শাস্ত্রী বলে। তোকে খুব পছন্দ। আলাপ করিয়ে দেব আজ। হেব্বি মানাবে তোদের দুজনকে।’ আমি উত্তর দেওয়ার আগেই আমার অন্য বন্ধুরা তাড়া করেছিল ওকে।

সোমা সাহা বাগুইআটি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE