Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তালিবানের কবিতা

চতুর্দিকে সন্ত্রাস। ব্রাসেল্স। লাহৌর। তারই মধ্যে রইল একটা অন্য ছবির খোঁজ। ৯/১১-র আগে-পরে আফগানিস্তানে বসে লেখা।চতুর্দিকে সন্ত্রাস। ব্রাসেল্স। লাহৌর। তারই মধ্যে রইল একটা অন্য ছবির খোঁজ। ৯/১১-র আগে-পরে আফগানিস্তানে বসে লেখা।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

• এখনও কথা বলছি

একটা মোমবাতির মতো, আমি প্রকাশ্যে হাসি আর গোপনে কাঁদি

একটা আর্তনাদের মতো কলকাকলি ছাড়ি আর অদৃশ্য হয়ে যাই

যদি শত্রু আমার ভয়ে কাঁপে আর পালায়,

আমায় কবর দেওয়ার সময়ও সে তা-ই করবে

কিন্তু আমার এই কথাগুলো শোনো এবং বোঝো যে

আমি মরে যাওয়ার পরেও খাড়া দাঁড়িয়ে আছি

যদি মনে হয় আমি উবে গেছি,

তোমার মনে কিন্তু দেখা দেবই

ঘাসের মতো শুকনো হয়ে যাব না,

এখনও কথা বলে চলেছি কলমের জিভ দিয়ে

তোমাকে শিক্ষা দেব একটা, উদাহরণ হিসেবে,

ইনশাল্লাহ, তুমি তা ভুলবে না।

আবদুল বশির এবরাত নব্বইয়ের দশকে লেখা

• আহত

হালকা কান্নার পাথর ছুড়ে আমি তাকে খুন করেছিলাম

তার পর নিজের দুঃখটাকে মনসুরের মতো

ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম।

অবিশ্বাসীদের হাতে নিহতদের মতো,

আমিও নিজের হৃদয়কে শহিদ ধরেছি।

হয়তো এটা তোমারই স্মৃতির মদ

যা আমার হৃদয়কে মাতাল করে তুলেছিল পাঁচ-পাঁচ বার।

নিজের ভালবাসাকে যত গোপন রাখতে চেয়েছিলাম,

এই গজল তত সেই না-বলা কথা বলে দিয়েছিল।

যে তোমাকে তার বিশ্বাস দিয়েছিল,

সে-ই তোমাকে অবহেলা করেছে।

আমি আহত হয়েছিলাম, আর আমার ভাই শহিদ,

সৎমা আমার ওপর নজর রেখেছিল।

ও খাঈরখা-এর কবিতা! মেনে নেব, তুমি অতুলনীয়,

যদি তুমি বিপথগামীদের এক জনকেও ফিরিয়ে আনতে পারো।

• ইদ

ইদ এসেছিল, কিন্তু আমি অপেক্ষা করছি

আর একটা ইদের জন্য।

প্রেমিকা এসেছিল, কিন্তু আমি অপেক্ষা করছি

অন্য প্রেমিকার জন্য।

হে আমার দুর্ভাগা দেশ! সব দুর্দশাই তুমি দেখেছ।

প্রলয় এসেছিল, কিন্তু আমি অপেক্ষা করছি

আর একটা প্রলয়ের জন্য।

শরাফুদ্দিন আজিমি ১ অক্টোবর, ২০০৮

• পাথরেরা

পা ঢাকতে গেলে মাথা বেআব্রু হয়ে যায়

আমি কাপড় সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম।

তোমার হাত চিরে যাবে, ফোসকা পড়বে,

এসো আঙুলগুলো আমার বুকে রাখো।

আর উড়ন্ত বুলবুলিগুলো দেখতে পাই না

যেই আমার ডানা ভেঙে দেওয়া হল আকাশে।

আমি একটা বিশাল পালঙ্কের স্বপ্ন দেখেছিলাম,

কিন্তু আমার শয্যা হল মরুভূমির কাঁটাগুলো।

আমার তো মনে হয় সব ভেঙে পড়ছে,

হে মানুষেরা! আমি স্তম্ভিত,

আমি মালিকের কাজ দেখে অবাক,

যখন পাথর ছোড়া হয়, আমার মাথায় এসে লাগে।

• আমার গ্রাম

যেখানেই পা ফেলো, প্রিয়, একটা করে মৃতদেহ পাবে।

আমাদের জাতের লোকগুলোকে ওরা মেরে ফেলেছে, প্রিয়,

ওদের সুন্দর মাথাগুলো আর শরীরের সঙ্গে লেগে নেই,

ফাঁসিকাঠে দড়িগুলো ঝুলছে, প্রিয়।

আমার কান্দাহারের বোনটা আজ আবার কাঁদছে,

কেউ ওর ছোট ভাইটাকে খুন করেছে।

যেখানেই পা ফেলো, রক্ত, লাল

প্রিয়, এক তরুণ শুধু ওরই ওপর শুয়ে আছে।

এই যে জায়গাটা, যেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় দুটো কি তিনটে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,

এই আমাদের গ্রাম, প্রিয়।

ও আমাদের গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে, সেও হল বেশ কিছু কাল

তুমি কি দেখেছ সেই প্রিয়কে, নু’মান?

মহম্মদ নু’মান দোস্ত ৩ অগস্ট ২০০৮

• আমার ঈশ্বর

এটা কি পৃথিবী না নরক, হে আমার মহৎ ঈশ্বর?

এটা কি আনুগত্য না নিষ্ঠুরতা, আমার মহৎ ঈশ্বর?

এই যে আমার হৃদয় থেকে রক্ত চোঁয়াচ্ছে,

এটা কি একটা কলেরার বন্যা, আমার মহৎ ঈশ্বর?

এই যে আমি সারা ক্ষণ নালিশের আগুনে পুড়ছি,

এটা কি প্রতিদ্বন্দ্বী না বন্ধু, আমার মহৎ ঈশ্বর?

তীব্র কষ্টের চোটে কান্না ঝরছে,

এটা কি ধরনের পরীক্ষা, আমার মহৎ ঈশ্বর?

এই যে হাসি আমার মুখ থেকে ছিটকে বেরচ্ছে দ্রুত,

কোন শত্রুর অশুভ প্রার্থনা এটা, আমার মহৎ ঈশ্বর?

এই যে আমি, এবরাত, হয়ে পড়ছি আমার বন্ধুদের শত্রু,

কার দুর্ভাগা ভোর এটা, আমার মহৎ ঈশ্বর?

আবদুল বশির এবরাত ১৯৯২

• হারানো বন্ধু

তোমার কিছু আসে-যায়নি আমার নির্বাসনে,

হে প্রিয়, আমি তোমাকে খুঁজিনি যথেষ্ট।

তুমি জীবনের আলো খুন করেছ,

কারণ, প্রজাপতিগুলো তোমাকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি।

তোমার ছেঁড়াফাটা ছবি আমি দেখতাম স্বপ্নে,

আমাকে তুমি ছেড়ে যেতে না জেগে উঠলেও।

তোমার বিরহ আমার চোখগুলো শুখা করে দিয়েছে,

তুমি দোয়া পাওনি পবিত্র বুকের মাঝে।

তোমাকে খোঁজার এই দুখভরা চলার পথে,

আমার তোমাকে সর্বত্র মনে পড়েনি।

একগুঁয়ে মানুষেরা জ্বালায়নি

তোমার বিরহের জন্য কোনও প্রদীপ।

কেউ পেয়ালার ঠুং শব্দ তোলেনি

জলহীন, ফাঁকা কাপগুলো দেওয়ার সময়।

দিন মাস বছর কেটে গেছে তোমার বিচ্ছেদের পরে,

কিন্তু তোমার শূন্যতা ততটা অনুভব করিনি গতকাল।

হে আমার উত্তরের কারাগারে তড়পানো বন্ধু,

শত্রুকে আমি তোমার কথা জিজ্ঞাসা করিনি।

এই বেচারা মাতমাইন এখনও,

মাটিতে চুমু খায়নি এখনও।

আবদুল হাই মাতমাইন ১৯৯৮

• কবিতা

আমি কে? আমি কী করছি?

কী করে এখানে এলাম?

আমার কোনও বাড়ি নেই, কোনও প্রেম নেই

আমি ঘরছাড়া, আমার দেশ নেই।

সারা পৃথিবীতে আমার কোনও জায়গা নেই।

ওরা আমাকে বিশ্রাম নিতেও দেয় না।

গুলি চলছে, বারুদের গুঁড়ো,

ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চলছে।

কোথায় যাই তা হলে?

বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে

একটা ছোট বাড়ি পেয়েছিলাম,

যেখানে আমি আর আমার প্রিয়তমা থাকতাম।

সে সব কী সুন্দর দিন ছিল,

আমরা পরস্পরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতাম

কিন্তু হঠাৎ এক জন অতিথি এল,

তাকে দু’দিন থাকতে দিলাম,

কিন্তু সেই দু’দিন চলে যাওয়ার পরেই

সে-ই হয়ে গেল মালিক।

আমাকে বলল, ‘আজ এসেছ।

কিন্তু কাল যেন আর এখানে ফিরো না।’

নাজিবুল্লা আকরামি ২৮ নভেম্বর, ২০০৮

• নায়ক হইনি

অন্য কারও সঙ্গে ভ্রমণ করছি না,

তাতে কিছু এসে যায় না,

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমি নিজেকে

ঋতুর মতো বদলাইনি।

এত বড় একটা যুদ্ধজয় হল,

হে পৃথিবীর লোকেরা,

আমি আফগান,

তাই নায়ক হইনি।

আমার নিয়তির

এ কী সর্বনাশ হয়েছে?

নিজের আত্মীয়দের কাছে

হলাম অচেনা,

তা বলে অচেনাদের

আত্মীয় হইনি

নিজের কাছেই নিজেকে

বিশ্বাসঘাতক মনে হচ্ছিল,

আমি বিচ্ছেদে পাগল হইনি।

শা’দুল্লাহ, ৮ অগস্ট, ২০০৮

• কারজাই ও বুশ

কারজাই

হ্যালো, মাই লর্ড বুশ;

আপনি তো গেলেন, আমায় রেখে গেলেন কার কাছে?

বুশ

হে আমার দাস, প্রিয় কারজাই!

মনখারাপ কোরো না, ওবামার হাতে দিয়ে যাচ্ছি তোমায়।

কারজাই

খুব খুশি হলাম শুনে।

বলুন প্লিজ, আর কত দিন এখানে থাকব?

বুশ

কারজাই! এক বছর অপেক্ষা করো;

আমি আর কাউকে না পাঠানো অবধি এসো না।

কারজাই

তোমা বিনে এ জীবন দুঃসহ, ডার্লিং,

তোমার দুঃখ যে আমারও; আমি আসছি তোমার কাছে।

বুশ

মৃত্যুর কথা যদি বলো, মরব দুজনেই;

হায়, আমরাই হব প্রথম, পর-পর।

কারজাই

যাওয়ার আগে তোমার হাতখানা দাও,

ভ্যানিশ হওয়ার আগে মুখটা ঘোরাও।

বুশ

দুঃখে আমি ডুবে যাচ্ছি,

ডার্লিং, ভাল থেকো, থাকব আমিও।

কারজাই

তোমার-আমার মাঝে এই পাহাড়;

মরা চাঁদকে ‘হ্যালো’ বোলো, বলব আমিও।

দানেশ ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৮

• আত্মা

গ্রামটাকে অদ্ভুত লাগছে; একেই বলে বিরহ

যেন আমার প্রিয়তম গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।

বিচ্ছেদের শোক এত নৃশংস যে কাউকে ডরায় না;

আত্মা চলে না গেলে, শরীর থরথর কাঁপে,

যেমন করে ফুল কুঁকড়ে যায় হেমন্তে,

হেমন্ত এখন এসেছে আমার ভালবাসার কাছে।

আমি একা পড়ে থাকি উসকোখুসকো চুলের মাথা নিয়ে

বুঝতে না পেরে; আমার হৃদয় বহু দিন ধরে অসুখী।

নিমেষে, সে আমার গোটা দুনিয়ায় গর্ত পুঁতে দিল;

সব কিছুই এখন এক-একটা চোখা তির।

ওহে ফকির! দুঃখী থাকাও এর চেয়ে ভাল।

কে বলেছিল তোমায় প্রেম খুব সহজ?

শাহজেব ফকির ২২ জুন, ২০০৭

• উৎসাহ

তোমার ভালবাসা সরিয়ে রাখলে,

আর কী-ই বা আছে?

এ যেন মরুভূমির দিকে এগিয়ে চলা।

যেন তোমার পায়ের ধুলোগুলো।

দ্যাখো! পাগলটা শুয়ে পড়েছে।

তোমার প্রেম মাটি থেকে

আকাশ ছুঁয়েছে।

যারা উদ্যমের আগুনে জ্বলে

এখন শেকলে বাঁধা।

এই বসন্তে তোমার গাল,

ফুলের মতো লাল,

বুদ্ধি দাও, শিখিয়ে দাও!

আমার মাথা বিস্ফোরণে ফেটে গেছে।

হৃদয় দিয়ে, আমি সকলের সাথে

ঠিকঠাক ব্যবহারই করি,

কিন্তু তারা আমাকে ঠকায়।

তোমার চোখের পাতা যখনই

কারও বিরুদ্ধে লড়ে, ফসকায় না।

তোমার রূপ আমার হৃদয়টাকে

মুঠোয় পুরেছে,

তার হৃদয়ের অভ্যেসগুলো

ঠিক একটা চোরের মতো।

পোরদেল বুশতান ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৭

• নববধূটি এখানেই খুন হয়েছিল

এত খারাপ একটা খবর শুনলাম আজ

বুকটা কেঁপে উঠল।

একটা গ্রামের মানুষ চেয়ে দেখল

লাল আগুনের শিখা উঠছে নীল আকাশের দিকে

বিয়েবাড়ির উৎসবের আবহ থেকে

হে ঈশ্বর, কান্নার শব্দ ভেসে এল।

ওদের আনন্দের গান রক্তে লাল হল।

সব জানলার ওপর ভেঙে পড়ল ছাদ।

মহাকাল ওখানে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন,

আর রক্তের বান ডাকল এখানে।

আকাশে ভাসছিল কালো দুর্যোগ;

আর শোকের ছায়ারা নেমে এল নীচে, মাটিতে।

এক মা তার ছেলের জন্য কাঁদছিল,

সাতসকালেই একটা কালো সন্ধে যেন।

এত খারাপ একটা খবর শুনলাম আজ

আমার বুকটা কেঁপে উঠল।

তরুণী বধূটি খুন হয়েছে এখানেই,

স্বামীটি, তার মনের সব বাসনা সমেত, শহিদ হয়েছে এখানেই।

আশাভরা মনগুলো এখানেই লুট হয়েছে,

শুধু ওরা দুজনেই নয়, পুরো দলটাই শহিদ।

শিশুরা খুন হয়েছে,

শহিদ হয়েছে ভালবাসার গল্পটাও।

মানুষের সব অধিকার জখম হয়েছে,

প্রেমিক পুরুষ, প্রিয়তমা নারী, শহিদ হয়েছে সব।

বন্ধুরা, যারা পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছিল,

হায়, সেই সব সুন্দর তরুণেরা শহিদ হয়েছে।

নববধূর সারা গা রক্তে ভেজা, লাল,

গায়ের গয়নাগুলো ভাঙা, শহিদ ওরাও।

হাতগুলো লাল হয়ে আছে ওরই রক্তে;

সুন্দর জীবনটা ঝড়ে তছনছ।

এত খারাপ একটা খবর শুনলাম আজ

বুকটা কেঁপে উঠল।

কিন্তু বাগরামে এ খবরটার একটা প্রেস রিলিজ বেরিয়েছে:

‘সন্ত্রাসবাদীগুলোকে আমরা মেরে ফেলেছি।’

বিয়েবাড়ির আনন্দ আমরা আর কী করে পাব?

‘আজ আমরা অনেকগুলো আফগানকে হত্যা করেছি।

আমাদের ধর্মযুদ্ধের পথে ওরাও ছিল বাধা,

তাই খুন করেছি শিশুগুলোকেও।’

বধূটিকে ওরা বলল জিহাদি

বলল, হত্যা করা হয়েছে শুধু শত্রুদেরই।

প্রেসিডেন্ট আবারও একটা কমিশন বসিয়েছেন:

‘যাও, দেখো, ওরা কাদের হত্যা করেছে।’

ওদের পকেট ভর্তি, যাতে কেউ মুখ না খোলে,

কারণ ওরা তো হত্যা করেছে আমাদের আপনজনদের,

আর ভাব দেখাচ্ছে যেন হানা দিয়েছিল লাল ফৌজের সেনা।

এত খারাপ একটা খবর শুনলাম আজ

আমার বুকটা কেঁপে উঠল।

একটা গ্রামের মানুষ চেয়ে দেখছে

লাল আগুনের শিখা উঠছে নীল আকাশের দিকে।

এল হাম ১৮ অগস্ট, ২০০৮

• হয়ে গেলাম ভিখিরি

আমি হয়ে গেলাম একটা ভিখিরি, গরিব

আর তুমি হলে বিখ্যাত, তার পর রাজা।

আমি হলাম যাযাবর, বাউন্ডুলে

তুমি হাসতে শুরু করলে, আর দেখলে খুব।

আমি অত্যাচারে পড়লাম, তার পর বে-ঘর হলাম।

তুমি আমাকে হত্যা করতে প্রস্তুত হলে।

কোনও ঝামেলা নেই, এই সবই কেটে যাবে,

তুমি আমার জীবনে একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে।

বিসমিল্লা ওয়ারদাক ২২ অগস্ট, ২০০৮

• একটা হৃদয় চাই

আমি একটা হৃদয় চাই যা কষ্টের সাথ দেবে

আমি সেই রকম মথের সঙ্গে পুড়ে যেতে চাই

একটু কষ্টের জন্য আর একটু সমবেদনার জন্য

যদি তারা কোনও হৃদয়ে থাকে, আমি শেষ হয়ে যেতে চাই।

যখনই শুনি ডুকরে কান্নার শব্দ বা মোমবাতির কাঁপা আলোয় কষ্ট-পাওয়া মুখ

আমি কাঁদতে চাই তাদের মতো, যারা রোগী দেখতে এসেছে।

হৃদয়গুলো সব ঠান্ডা, আমি মথের মতো আগুন খুঁজতে চাই

আমি ঠান্ডা বাড়িতে থাকতে পারি না।

সবাই সুন্দর মুখগুলোর দিকে কী আগ্রহে তাকায়!

গরিবের ফ্যাকাশে মুখগুলোর দিকে নজর দিলেও ভাল হত।

আমি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বন্ধু হতে পারব না,

কিন্তু দুঃখের সময় আমি বেদনায় টইটম্বুর হয়ে থাকব।

ওলফাত কারও জন্যই কিছু চায় না, কিন্তু

আমি আমার হৃদয়কে খুঁজছি, লাল বা কালো নয়।

গুল পাচা ওলফাত ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৭

• নইলে!

আমাকে ভাই বলে ডেকো না

গ্রাম বা বাড়ি নিয়ে কথা বোলো না আমার সঙ্গে

আমি হাতকড়া আর শেকল সইব, জেলখানায় দিন ও রাত্রি

তুমি বরং ভোগ করো নরম বালিশ আর পালঙ্ক

তুমি হজ-এ যাও ও রোজা রাখো

বহু সময় ধরে নমাজ পড়ো

কিন্তু আমরা কি বেহেশ্‌তে ঢুকব আর থাকব একসঙ্গে?

বশিরুল্লা হমকার ৩ অগস্ট, ২০০৮

• শৃঙ্খলিত চিঠি

হে নিষ্ঠুর, তুমি ওদের শেকলে বেঁধে কষ্ট দিচ্ছ

তাই গরিবরা শেকলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে

তুমি কিউবায় গড়েছ ঘৃণ্য কারাগার

সেখানে কয়েদিদের শেকলে বেঁধে ইলেকট্রিক শক দাও।

এখন তুমি শেকলে বেঁধে চালাচ্ছ অত্যাচার, কিন্তু আমাদের গরিবদেরও পালা আসবে জেনো,

তখন তোমার এই শেকলের কথা মনে পড়বে।

আমি অন্যদের সম্পর্কে নালিশ জানাচ্ছি না, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমায় বিক্রি করেছে তাদের কাছে

তাই আমি তাদের জন্য এই শেকল কামনা করি।

তুমি ভাবছ আমরা শেকলের ফাঁসে ছটফটিয়ে হাল ছেড়ে দেব, হে শত্রু?

মুসলিমরা অনেক কিছু শিখেছে যখন তারা শেকলে বাঁধা।

আমি আমার পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করছি, আমি সামনের দিকে চলেছি,

তারা বহু বছর শেকলে বাঁধা থেকেছে

তাদের পায়ে ছিল শেকল, তাদের হাতে ছিল শেকল

তারা বাচ্চাদের মতো হাঁটত, শেকল বাঁধা পায়ে।

হে আমার স্রষ্টা,

এই শেকল ও নৃশংসতাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙো,

তোমার বন্দি প্রেমিক তোমার কাছে প্রার্থনা করছে, শেকলে বাঁধা হয়ে।

যদি ঈশ্বর চান, এই শেকল ভেঙে যাবে খুব শিগগিরি,

আমি দেখেছি আমার প্রেমিকাকে শেকলে বাঁধা,

হে স্বর্গের ফেরেশ্‌তারা,

শেকলে বাঁধা প্রেমিককে শান্তি দাও, স্বস্তি দাও,

এই শহিদেরা অনেক সয়েছে শেকলে বাঁধা।

তুমি বলেছ শেকলের কষ্টের কথা,

মাফতুন লিখেছে, শেকলে খুঁজে পাওয়া আনন্দের কথা।

মাফতুন ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

• বুলেট-টা অপেক্ষা করছে

চাঁদটা মেঘের পিছনে

তাঁবুটা অপেক্ষা করছে।

সন্ধে আসছে, কেউ এক জন আসবে

প্রতীক্ষার সাদা চিহ্নটা ঝুলছে

এক যুবক তার ঘাম মুছছে এখানে,

একটা ঠেলাগাড়ি দাঁড়িয়ে তার পাশে।

ব্যাগে কোনও চিউয়িং গাম নেই,

কিছুটা গম আছে, ব্যাগটা দাঁড় করিয়ে রাখা

মেয়েটি এক অন্ধকার ঘরে প্রার্থনা সেরে নিল

মাথায় কাপড় না-দেওয়া বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে।

তার হাত রেখেছে পবিত্র কোরানের ওপর

হাত দুটো উন্মুক্ত করে সে দাঁড়িয়ে।

সে প্রার্থনা করে একটু শান্তি

ছাদে, উঁচুতে সে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছে।

ক্লান্তি ঘুচে গেছে, যুবক এ বার হাসিখুশি

তার সামনে একটা হাসন্ত ফুলগাছ দাঁড়িয়ে।

একটা বাদামি কুকুর কাছেই দাঁড়িয়ে,

একটা ক্ষুধার্ত ছাগল তার পায়ের দিকে দেখছে।

তার পিছনে, একটা হলুদ ছেলে দাঁড়িয়ে।

ভোর এই হল বলে, দরজায় একটা টোকা।

যুবক বেরিয়ে গেল, একটা দল দাঁড়িয়ে আছে

এ হল অন্যদের বন্দুক, অন্যদের উর্দি।

কয়েক জন এই রকম লোক দাঁড়িয়ে,

তারা তাকে নিয়ে য়ায়,

বাড়িটা চিৎকারে ও আওয়াজে ভর্তি হয়ে যায়

প্রত্যেক নলে একটা করে বুলেট দাঁড়িয়ে

তার কলারে কান্না গড়িয়ে পড়ছে

চাঁদটা দাঁড়িয়ে আছে জলের গভীরে

বছর কেটে গেল, কিন্তু এই হৃদয়ে

সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষা করছে, নড়ছে না।

নাওয়া জান বহির ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

ঋণ: পোয়েট্রি অব দ্য তালিবান। প্রকাশক: হ্যাচেট ইন্ডিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taliban terrorism Rabibasariya Poetries
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE