অভিনন্দন কঙ্গনা রানাওয়াত। চমৎকার অভিনয় করছেন আপনি। রিল-এ, রিয়েল-এও। অবশ্য ‘ফরসা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপন করতে চাই না, যতই টাকা দিক’ মার্কা শহর-সরগরম বিবৃতিটা ঠিক কবে দিয়েছিলেন, তাই নিয়ে লোকের মনে বিস্তর ধন্দ। অনেকেই বলছেন, বছর দুয়েক আগেই কথাটি বলে হাজার হাততালি কুড়িয়েছিলেন। ইদানীং সোনার সময় চলছে আপনার কেরিয়ারের, চার দিকের আড্ডা-আলোচনা-মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তাই স্ট্র্যাটেজি হিসেবেই অতীতের ওই বাণীটিকে টেনে এনে ফের একটু প্রশংসার ব্যবস্থা।
তা, প্রশংসা হোক। আমার কিছু এসে যায় না। আমাকে চিনলেন না? আমিই সেই ‘ফরসা ভরসা কোং’, মানে, বলতে পারেন, ফেয়ারনেস ইন্ডাস্ট্রি। লোকের মনে ফরসা হওয়ার লোভ জাগিয়ে কোটি কোটি মুনাফা লুটি। আমার পরিবারের এক জনেরই দু’কোটি টাকার অফার সটান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আপনি। তার পর মিডিয়ায় গিয়ে বললেন, ফেয়ারনেস ক্রিমের কোনও বিজ্ঞাপনে কক্ষনও কাজ করবেন না। ছোট্টবেলা থেকেই নাকি ফরসা হওয়া বা না হওয়ার এই ঝঞ্ঝাটটাই আপনি বোঝেন না। বড় হয়ে সেলেব্রিটি হয়েছেন যখন, তখন পাবলিক ফিগার হওয়ার দায়িত্বটুকুও নিতে চান। ভক্তদের সামনে যেমন-তেমন উদাহরণ রাখবেন না। তার পর আবার, ছোট বোনের কর্তব্যটাও তো আছে। বাড়িতে বড় দিদি আছেন। তিনি মেঘলা ত্বকের অধিকারিণী। তাঁর মনে আঘাত দিতে পারবেন না আপনি।
তখনই বুঝলাম, আসল সমস্যাটা ঠিক কোন সেন্সিটিভ কোণটাতে। কিন্তু, এই কথাবার্তা আর হইহল্লায় আমায় কি এতটুকু আঘাত করা গেল, ম্যাডাম কুইন? আঘাত তো দূর, এতটুকু আঁচড়ও কাটতে পেরেছেন আমার দৈত্য-সাম্রাজ্যে? ছোঃ! এ দেশের নাম ভারতবর্ষ মাই ডিয়ার। বহু দিন আগে সেলুকাস একে দেখে এমনি এমনি বিচিত্র বলে যাননি। বিগলিত প্রশংসা না কচু, সলিড গালাগাল দিয়ে গিয়েছিলেন। লোকে বোঝেনি। এই দেখুন না, যুগ-যুগ ধরে ইউরোপীয়রা ভারতীয়দের ‘বাদামি ত্বক’, ‘কালা আদমি’ বলে ক্রমাগত খুঁচিয়েছে-কামড়েছে-অত্যাচার করেছে। তো লজিক বলে, এমন ওপেন বর্ণবিদ্বেষের এগেনস্টে আসমুদ্রহিমাচল এককাট্টা হয়ে লড়বে, যত সময় আর শিক্ষা এগোবে, তত জোরদার হবে তার আন্দোলন। কিন্তু এখানে গোটাটাই উলটো হাঁটলি গঙ্গারাম। এত বৈষম্য দেখে তেতে গিয়ে এরা নিজেদের মধ্যেই আরও সাব-ডিভিশন বানাতে বসে গেল। তুমি গম-রঙা, আমি দুধে-আলতা আর ও হল উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। আর ওই যাচ্ছে কুচকুচে কালো। ঢিল মারো। চাবুক আনো। এমন এক বুদ্ধু-বোকার আস্তানায় যে কোনও ফেয়ারনেস প্রোডাক্ট যে সুপারহিট করবে, সে তো ক্লাস ওয়ানের অংক। কিন্তু এমন একখানা যে লেজেন্ড হয়ে যাব, সেটা খোদ আমারই কল্পনাতে ছিল না।
প্রথমে কাঁচা হলুদ-বেসন বাটা, লেবুর রস দিয়ে স্টার্ট করেছিলাম, তার রেসপন্স দেখে কুটিরশিল্পটাকে ইন্ডাস্ট্রি করে গুছিয়ে বসলাম। তার পর? গেল ২০১০ সালে হিসেব কষে দেখেছি, আমার ইন্ডাস্ট্রির বহর দাঁড়িয়েছে ২,৬০০ কোটি টাকা। শুধু ২০১২ সালে ২৩৩ টন ফরসা হওয়ার পণ্য ব্যবহার করেছে হাঁদা ভারতীয়রা। সিম্পল করে বললে, দেশে চায়ের থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে ফেয়ারনেস ক্রিম, সাবান। আপনি তো এখন ‘পাকা’ অভিনেত্রী, যদি কখনও কোনও কেস স্টাডি করতে প্রত্যন্ত গ্রামে বা ছেঁড়াফাটা বস্তিতে যান, দেখবেন সেখানে হয়তো ডাব্বায় আটা নেই, কিন্তু ঠাকুরের ফোটোর পাশে আয়নার নীচের তাকে ঠিক জ্বলজ্বল করছে একটা ফেয়ারনেস ক্রিমের টিউব।