ছবি: সুমন চৌধুরী।
বৃষ্টি, তিতির, অর্ক, ভাস্কর পার্ক থেকে খেলে বাড়ি ফিরছিল। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর ভাস্কর বলল, দ্যাখ, দ্যাখ, কী সুন্দর থোকা থোকা লাল রঙ্গন ফুটেছে! অর্ক গিয়ে একটা থোকা ছিঁড়ে নিল। অর্ককে দেখে তিতির এগোল। ভাস্কর বাধা দিয়ে বলল, তোরা কী রে! অকারণে ফুল ছিঁড়িস, গাছের কষ্ট হয় না বুঝি। এই কথা শুনে তিতির থমকে গেল। কিন্তু বৃষ্টি দ্বিগুণ জোরে এগিয়ে গেল। অর্ক মজা করে বলল, কী রে বৃষ্টি, তুইও ভাস্করের দল ছেড়ে আমার দলে যোগ দিলি। বৃষ্টি বলল, না রে, মাটিতে এক থোকা ফুল পড়ে আছে, ওইটা নেব।
কিন্তু কাছে গিয়ে বৃষ্টি দেখল ওটা রঙ্গন ফুলের থোকা নয়, উজ্জ্বল লাল রঙের একটা বল। আনন্দে কুড়োতে গেল, কিন্তু বলটা এত ভারী যে তুলতেই পারল না। একে-একে অর্ক, ভাস্কর, তিতির চেষ্টা করল, কেউ পারল না। এক সঙ্গে চার জন চেষ্টা করল, তবু পারল না।
বৃষ্টি ভয় দেখিয়ে বলল, বোমা-টোমা হতে পারে আর হাত দেওয়া ঠিক নয়। বোমার কথায় সাহসী অর্কও ভয় পেল। মা-বাবা বকবে ভেবে দেরি না করে সবাই বাড়ি চলে গেল।
একমাত্র বৃষ্টি বাড়ি না গিয়ে বলটার টানে ফিরে এল। বৃষ্টি নিশ্চিত লাল বলটা কিছুতেই বোমা হতে পারে না। স্ফটিকের মতো দেখতে, কিন্তু খুব ঠান্ডা।
বৃষ্টি বরাবর ভীষণ কৌতূহলী। কী? কেন? কেমন? তার হাজার প্রশ্ন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মাঝে মাঝে টেনশনে পড়ে যান কাকে কখন বৃষ্টি কী প্রশ্ন করে বসে।
বৃষ্টি ভয়ে ভয়ে বলটার কাছে গেল, বলে হাত দিল। বলে হাত দিতেই বলটা হালকা প্লাস্টিকের বলের মতো গড়িয়ে গেল! বৃষ্টি অবাক! কেউ কি বলটা পালটে দিয়েছে? হতে পারে, হতে পারে কেন তাই হবে। এই সাধারণ বলটা নেবে না ভেবেও আরেক বার সন্দেহের চোখে তাকাল বৃষ্টি। দেখল, বল থেকে আলোর আভা বেরুচ্ছে। বৃষ্টি একমনে বলটাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।
অবাক হচ্ছ বুঝি?
কে করল প্রশ্নটা! আশপাশে তো কেউ নেই! দ্বিগুণ অবাক হল বৃষ্টি।
আমি বল থেকে বলছি। এই বলটা আসলে আমাদের গ্যালাক্সিযান। এক গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে যেতে আমরা এই যান ব্যবহার করি। তোমাদের মহাকাশযান যেমন ডিসকভারি, কিউরিওসিটি কী ভারী, আর কী বিদ্ঘুটে দেখতে! কোথায় জল, কোথায় অক্সিজেন, কোথায় প্রাণ আছে এত্ত বছরেও ঠিকঠাক বলতে পারল না। আমরা তোমাদের সন্ধান দশ হাজার বছর আগে পেয়েছি। আমরাই তো তোমাদের বনজঙ্গল থেকে টেনে এনে মানুষ হতে শেখাচ্ছি। আইনস্টাইনের ব্রেনে আমিই বিশেষ সফ্টওয়ার লোড করে গেছিলাম। আমাদের সফ্টওয়ারের জোরেই তো স্টিফেন হকিং এখনও এত ক্রিয়েটিভ।
আমাকেও ওঁদের মতো বিজ্ঞানী বানিয়ে দাও না, বৃষ্টি বলল।
না। তবে তোমাকে ওয়াচে রাখব। এই যেমন তোমার বডি থেকে স্যাম্পল কালেকশন করলাম এক্ষুনি, তুমি জানতেও পারলে না। কোয়ালিফাই করলে তবে তোমাকে বড় বিজ্ঞানী বানাব। কী ভাবে, সেটাও জানতে পারবে না।
আমার লাগবে না?
না। এই দ্যাখো না, তোমরা জন্মেই কত ভ্যাকসিন নাও বলো তো। আমাদের বাচ্চাদের এখন আর ভ্যাকসিন লাগে না। তবে পৃথিবীতে বড় সমস্যা কী জানো? কী? প্রচুর ভাইরাস। ভাইরাস মারতে পারো না বুঝি? পারি তো। কিন্তু পৃথিবীর মানুষগুলোকে দিয়ে হবে না মনে হচ্ছে। তোমরা ভীষণ অলস।
আর তোমরা? সত্যি বলো তো তুমি কে? তোমার নাম কী? কোন গ্যালাক্সি থেকে এসেছ? এত সুন্দর বাংলা বলছ কী করে? আমাদের কাছের গ্যালাক্সি তো ১৬৩০০০ আলোকবর্ষ দূরে!
আমি ‘লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড’ থেকে আসছি। আমার প্ল্যানেটের নাম ‘এলএমসি ১০১০১০’। স্টার ‘এলএমসিএস ৩৩৩৩’। আমার নাম ‘এলএমসিএস ৩৩৩৩ ৭৭৭৭ ২৪৭৩ ৩৩৫৪’। আমি বিজ্ঞানী। রিসার্চ করছি।
এ তো মোবাইলের টপ-আপ কোড-এর মতো।
হ্যাঁ, আইডিয়াটা তো আমরাই তোমাদের দিয়েছি। তোমাদের একই নামে কত মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু...। কেউ হয়তো বিজ্ঞানী, কেউ ট্রাফিক পুলিস। তখন বাবার নাম জোড়ো, বাবার নামও এক হলে দাদুর নাম বলো বা জন্মস্থানের নাম। মানে ব্যাপারটা দাঁড়াল সত্যেন্দ্রনাথ বসু সুরেন্দ্রনাথ সুবর্ণপুর নদিয়া...। বলো কোনটা সহজ? আর বাংলা উচ্চারণ? আমাদের সফ্টওয়ার অনেক উন্নত।
তোমাদের সব খুব উন্নত বুঝি?
তা তো বটেই। আমাদের ওখানে সবাই খেতে পায়, সবাই পরতে পায়, সবার ঘর আছে, সবাই শিক্ষিত, এক জনের অঢেল আছে আর এক জনের কিছুই নেই এটা আমাদের দেশে কেউ বিশ্বাসই করবে না। তোমরা শুধু নিজেরা যুদ্ধ করে সময় নষ্ট করো।
তোমাদের দুঃখ-কষ্ট নেই?
আছে। এই যে আমি ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’-তে পড়ে আছি, নিজের সুন্দর প্ল্যানেট, বউ-বাচ্চা ছেড়ে, তোমাদের নোংরা পৃথিবীতে। এ রকম কেউ অ্যান্ড্রমিডায় বা তোমাদের গ্যালাক্সিতেই ‘প্রক্সিমা সেন্টরাই’-এ। পুরো ইউনিভার্সকে উন্নত করার চেষ্টা করছি আমরা। আর তোমরা? নিজেরাই শুধু যুদ্ধ করে মরছ।
কিন্তু তুমি এত ছোট কেন? এইটুকু একটা বলের মধ্যে!
দেখবে? বলা মাত্রই বলটা বড় হতে লাগল। প্রবল আকর্ষণে বৃষ্টি বলের মধ্যে ঢুকে গেল। একটা সাত ফুট লম্বা ধবধবে সাদা লোক চুলহীন চকচকে মাথা, দুটো চোখ কিন্তু বিরাট বড়। মিটিমিটি হাসছে। যাবে আমার সঙ্গে? আমাদের গ্যালাক্সি?
১৬০০০০ আলোকবর্ষ দূরে?
তোমাদের হিসাব, আমাদের নয়।
বাবা-মাকে বলে আসি?
বাবা-মা বিশ্বাস করবে না।
তবে?
আমাকে বিশ্বাস করলেই আমার সঙ্গে যাওয়া যায়। ফিরে আসাও যায়। যাবে?
চলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy