Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ভুটাইয়ের সান্তা ক্লজ এবং...

পঁচিশে ডিসেম্বর মানেই সান্তা, আর সান্তা মানেই গিফ্ট। এক পঁচিশে ডিসেম্বরের রাতেই আমাদের গল্প শুরু। ভুটাই, গোলগাল বেঁটেখাটো চেহারার এই মানুষটিই আমাদের এ বারের গল্পের নায়ক। ‘মানুষ’ বললাম বলে বয়সে বিশাল ভাবার কারণ নেই, সবে ক্লাস ফাইভ। যা-ই হোক, এ বার গল্পে ঢুকে পড়া যাক। স্কুল থেকে ফিরেই একটা বড়সড় মোজার খোঁজে লেগে পড়েছিল ভুটাই।

অভিরূপ দাস
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৪
Share: Save:

পঁচিশে ডিসেম্বর মানেই সান্তা, আর সান্তা মানেই গিফ্ট। এক পঁচিশে ডিসেম্বরের রাতেই আমাদের গল্প শুরু। ভুটাই, গোলগাল বেঁটেখাটো চেহারার এই মানুষটিই আমাদের এ বারের গল্পের নায়ক। ‘মানুষ’ বললাম বলে বয়সে বিশাল ভাবার কারণ নেই, সবে ক্লাস ফাইভ। যা-ই হোক, এ বার গল্পে ঢুকে পড়া যাক। স্কুল থেকে ফিরেই একটা বড়সড় মোজার খোঁজে লেগে পড়েছিল ভুটাই। মোজা ছাড়া সান্তা ক্লজের গিফ্ট যে পাওয়া যায় না, এ কথা কে না জানে, তাই বাবার নতুন উলের মোজাটা বালিশের তলায় রেখে তবেই রণে ভঙ্গ দিল সে। এ দিকে তখন চলেছে আর এক ঘটনা, সান্তার একার পক্ষে যেহেতু সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না, তাই ওই ‘এক রাতের সান্তা’ বাবা-কাকাদেরই সাজতে হয় আর ইনিয়েবিনিয়ে মায়েরা ছোটদের কাছ থেকে জেনে নেন এ বার তার কী চাই। তার পর বড়দিনের রাতে বাবা-কাকা সান্তারা মোজার ভিতর পুরে দেন গিফ্ট। কথাটা অবশ্য ছোটদের বলা বারণ। প্রতিবার এ ভাবেই ভুটাইয়ের বাবা দীপ্তবাবু পছন্দের গিফ্ট নিয়ে এসে দেন, কিন্তু মুশকিলটা হল এই বারে এখনও জানাই যায়নি ভুটাইয়ের পছন্দ। মা যত বারই জিজ্ঞাসা করেছেন তত বারই জবাব মিলেছে, ‘এ বারেরটা টপ সিক্রেট মা, সান্তা ছাড়া কাউকে বলা যাবে না।’

তাই রোজকার মতো সন্ধের আড্ডা সেরে ভুটাইয়ের বাবা ফিরতেই আজ একটা টেবিল-বৈঠক বসে গেল বাড়িতে। সিগারেটে টান দিয়ে দীপ্তবাবুই শুরু করলেন, ‘কী গো, জানা গেল, এ বার বাবুর কী চাই?’ ঘাড়-নাড়া দাদুর মতো দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে ভুটাইয়ের মা বললেন, ‘উঁহু, শুধু তোমার একটা মোজা নিয়ে ঘুমোতে চলে গেল’, ‘আমার মোজা কেন?’ ‘তা তো জানি না, তবে বলল এ বারের গিফ্টটা নাকি বড়সড়, তার ছোটখাটো মোজায় ঢুকবে না।’ ‘তাই নাকি, কী হতে পারে বলো তো? সাইকেল-টাইকেল নয়তো?’ ‘উঁহু, সাইকেল হলে ঠিকই জানা যেত। আমি বলি কী, চলো না এক বার গিয়েই দেখি, ও এখন নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার পর না হয় ঠিক করা যাবে কী করা যায়।’ ‘হুঁ, তাই চলো।’

দোতলার এই ঘরটা ভুটাইয়ের খুব পছন্দের। যেমন নিরিবিলি, তেমন খোলামেলা; আর ব্যালকনিতে দাঁড়ালে তো কথাই নেই। কত্তটা আকাশ দেখা যায়। সে বার ওদের গ্রামের বাড়িতে দাদুন ওকে তারা চিনিয়ে দিয়েছিল সেই কত দিন আগে, কিন্তু সে কথা এখনও ভোলেনি ভুটাই। এখনও মাঝেমাঝেই কালপুরুষ সপ্তর্ষিমণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে ও। যা-ই হোক, কোনও শব্দ না করে ভুটাইয়ের ঘরে ঢুকলেন দীপ্তবাবু। তার পর ঘুমন্ত ভুটাইয়ের বালিশের নীচ থেকে মোজা আর একটা সাদা অঙ্ক খাতার পাতা তুলে নিলেন। কিন্তু এ কী, এ তো পছন্দের লিস্ট নয়, একটা চিঠি!

ডিয়ার সান্তা,

প্রত্যেক বার তোমার কাছে ভিডিয়ো গেম, ক্রিকেট ব্যাট যা চেয়েছি, তুমি তাই দিয়েছ। কিন্তু এ বারের আবদারটা একটু অন্য রকম, আমি জানি তুমি ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না, ভগবানও না; আমি ওঁকে অনেক বলেছি কিছুই হয়নি...। প্লিজ কথা দাও সান্তা, তুমি না করবে না, প্লিজ।

জানো সান্তা, ঠিক তোমার মতো আমার এক দাদুন থাকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে। আর তোমার মতোই দাদুন আমার খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু দিদান মারা যাওয়ার পর থেকেই বড্ড একা হয়ে গেছে দাদুন। আগের মতো আর ফোনও করে না আমায়, সারা দিন নাকি ঘরে বসেই কাটিয়ে দেয়। আমি বাবা-মাকে বলাবলি করতে শুনেছি, ওঁরা নাকি দাদুনকে ওল্ডেজ হোমে রেখে আসবে। আচ্ছা সান্তা, ওল্ডেজ হোমে কী হয়, তুমি জানো? আমি যখন খুব বদমায়েশি করি তখন মা আমাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবে বলে। আচ্ছা, ওল্ডেজ হোমও কি ওই রকম? রিমি আমায় বলেছে বোর্ডিং স্কুলের আন্টিরা খুব মারে। ওল্ডেজ হোমে কি আন্টি থাকে? ওরা যদি দাদুনকে মারে! না, না, সান্তা প্লিজ, তুমি দাদুনকে আমার কাছে এনে দাও। আমি জানি দাদুন আমার কাছে এলেই আবার আগের মতো ভাল হয়ে যাবে। আর তখন আমি দাদুনকে বলব তোমার একটা সুন্দর ছবি এঁকে দিতে...

প্লিজ সান্তা, দাদুনকে আমার কাছে এনে দাও প্লিজ...। ও হ্যাঁ, তোমাক আমাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানাটাই তো দেওয়া হল না। আমার দাদুনের নাম, প্রাণবেশ ভট্টাচার্য। গ্রামের নাম, মধুসূদনপুর।

ইতি

তোমার আদরের

ভুটাই

চিঠিটা পড়তে পড়তেই চোখে জল এসে গিয়েছিল দীপ্তবাবুর। হঠাৎ কাঁধে একটা চেনা হাতের চাপে ফিরে তাকালেন তিনি, ভুটাইয়ের মা যে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন খেয়ালই করেননি তিনি। আলতো হাতে দীপ্তবাবুর চোখ মুছিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘কালই তুমি বাবাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করো, আমি কোনও না শুনতে চাই না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abhirup das anandabazar rabibasariya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE