E-Paper

সূত্র ‘পাই’, কোয়ান্টামের তত্ত্বে জুড়লেন রামানুজন

‘পাই’-এর মান নির্ণয় তো হল। তবে রামানুজনের সূত্র কী ভাবে বাস্তব ক্ষেত্রে বা বলা ভাল পদার্থবিজ্ঞানের কোনও তত্ত্বের সঙ্গে খাপ খায়, মূলত সেই প্রশ্নের খোঁজ করেছেন অনিন্দ ও তাঁর সহযোগীরা। উত্তরও মিলেছে।

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৬
শ্রীনিবাস রামানুজন।

শ্রীনিবাস রামানুজন। ছবি: সংগৃহীত।

একটু উঁচু ক্লাসের অঙ্কের স্মৃতি যাঁদের এখনও টাটকা, ‘৩.১৪’ সংখ্যাটি অপরিচিত ঠেকার কথা নয়। ৩.১৪ একটি বিশেষ রাশির মান, যা গ্রিক অক্ষর ‘পাই’ দিয়ে বোঝানো হয়। ‘পাই’-এর মান নির্ণয়ের গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজনের সূত্র থেকে আজ একশো বছর পেরিয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক তত্ত্বের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’-এর অধীন ‘সেন্টার ফর হাই এনার্জি ফিজিক্স’-এর গবেষকেরা।

কোনও বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত হল ‘পাই’। যদিও ‘পাই’-এর মান (পাই নিজেই একটি সংখ্যা, বোঝার সুবিধায় ‘পাই-এর মান’ বলা হয়) ৩.১৪-তে শেষ নয়। জটিল গণনা ও সুপারকম্পিউটারের সাহায্যে সম্প্রতি দশমিকের পরে কোটিতম স্থানের অঙ্ক বা ডিজ়িট পর্যন্ত তার মান গণনা করা গিয়েছে। গবেষক দলের অন্যতম অনিন্দ সিন্হা জানিয়েছেন, ১৯১৪-য় রামানুজন ‘পাই’-এর মান নির্ণয়ের ১৭টি গাণিতিক সূত্রের কথা জানিয়েছিলেন। তার সাহায্যে অল্প কিছু গাণিতিক পদ বা ‘টার্ম’ ব্যবহার করে প্রচলিত মডেলের চেয়ে অনেক দ্রুত ও প্রায় নির্ভুল ভাবে ‘পাই’-এর মান গণনা করা গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, সূত্রগুলি আধুনিক গাণিতিক ও কম্পিউটারভিত্তিক বিভিন্ন গণনা-কৌশলের ভিত্তিও তৈরি করেছে। তাঁর কথায়, “এখন দশমিকের পরে ২০০ ট্রিলিয়ন স্থান পর্যন্ত পাই-এর মান নির্ণয় করা যাচ্ছে। তা সম্ভব হয়েছে ‘চাডনোভস্কি অ্যালগরিদম’-এর সাহায্যে। ওই অ্যালগরিদম রামানুজনের সূত্রের ভিত্তিতে তৈরি।”

‘পাই’-এর মান নির্ণয় তো হল। তবে রামানুজনের সূত্র কী ভাবে বাস্তব ক্ষেত্রে বা বলা ভাল পদার্থবিজ্ঞানের কোনও তত্ত্বের সঙ্গে খাপ খায়, মূলত সেই প্রশ্নের খোঁজ করেছেন অনিন্দ ও তাঁর সহযোগীরা। উত্তরও মিলেছে। ‘লগারিদমিক কনফর্মাল ফিল্ড থিয়োরি’-তে রামানুজের সূত্রের বাস্তবতা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।

এটি এক কোয়ান্টাম তত্ত্ব যা ‘স্কেল ইনভেরিয়েন্স’ সিস্টেমের প্রতিসাম্য বা ‘সিমেট্রি’ ব্যাখ্যা করে। এমন সিস্টেমের দৈর্ঘ্য, শক্তি বা কোনও অধ্রুবক রাশির পরিবর্তন ঘটলেও প্রতিসাম্য অক্ষুণ্ণ থাকে। যেমন তুষারকণাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে শতগুণ বড় করে দেখা হলেও তার প্রতিটি অংশের পারস্পরিক সুষম প্রকৃতি বা প্রতিসাম্যের বদল ঘটে না। আবার, একটি বিশেষ উষ্ণতা ও চাপে (সঙ্কট বিন্দু-তে) জলের তরল ও বাষ্পীয় অবস্থার মধ্যে ফারাক করা যায় না এবং তা ‘স্কেল ইনভেরিয়েন্স’ প্রতিসাম্য দেখায়। এই অবস্থায় তার ধর্মাবলি ওই তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যাকরা যায়।

ওই তত্ত্বের অন্তর্নিহিত যে গাণিতিক কাঠামো, তার সঙ্গে রামানুজনের সূত্রগুলির মিল পাওয়া যায়। অনিন্দের ব্যাখ্যা, এই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে কনফর্মাল ফিল্ড তত্ত্বের কিছু পদের মান গণনা করা গিয়েছে। রামানুজনের শতাব্দীপ্রাচীন সূত্রের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে প্রয়োগ নিয়ে বিস্মিত অনিন্দ বলেন, “বিংশ শতাব্দীর প্রায় শুরুতে রামানুজনের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে কার্যত কোনও সম্পর্ক ছিল না। অথচ তাঁর কাজই আজ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্ব শুধু নয়, কৃষ্ণগহ্বরের সূত্রে ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য বুঝতেও আমাদের পাথেয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Srinivasa Ramanujan Mathematics Physics

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy