Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানাল্‌স অব নিউরোলজি’-তে।
Human Brain

Brain Death: ব্রেন ডেথ থেকেও রোগীকে এ বার ফেরানো যাবে জীবনে! ইঙ্গিত গবেষণায়

জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানাল্‌স অব নিউরোলজি’-তে।

ধুকপুক করা হৃদস্পন্দন আর মস্তিষ্কের মৃত্যুর অতলে তলিয়ে যাওয়ার জগতের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকে মানুষকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া যাবে জীবন?  -ফাইল ছবি।

ধুকপুক করা হৃদস্পন্দন আর মস্তিষ্কের মৃত্যুর অতলে তলিয়ে যাওয়ার জগতের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকে মানুষকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া যাবে জীবন? -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:১৭
Share: Save:

আরও একটি অসাধ্যসাধনও কি এ বার সম্ভব হল?

ব্রেন ডেথ বা মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরেও কি এ বার তাকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে? ধুকপুক করা হৃদস্পন্দন আর মস্তিষ্কের মৃত্যুর অতলে তলিয়ে যাওয়ার জগতের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকে মানুষকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া যাবে জীবন?

সেই ইঙ্গিতই মিলল সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। এই প্রথম। জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের সে‌ই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যানাল্‌স অব নিউরোলজি’-তে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, অসম্ভবকেও সম্ভব করা যেতে পারে। মস্তিষ্ক অন্ধকারের অতলে চিরতরে তলিয়ে যাওয়ার ঠিক প্রাক-মূহুর্তে। বিশেষ একটি সময়ে। বন্ধ হয়ে যাওয়া অক্সিজেনের সরবরাহ কৃত্রিম উপায়ে ফের চালু করে।

মস্তিষ্কের ‘মৃত্যু প্রক্রিয়া’ শুরুর সেই বিশেষ সময়টি আসে কখন তা-ও জানিয়েছেন গবেষকরা। স্নায়ুকোষ বা নিউরোনগুলি মরে যাওয়ার প্রাক-মূহুর্তে। সেই সময় যখন মস্তিষ্কে অক্সিজেন সংবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ‘সিগন্যাল’গুলিও। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিয়েছে নিউরোনগুলি। সেই সময় নিজেকে সচল রাখার জন্য আর রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত শক্তি পাচ্ছে না মস্তিষ্ক। সেই শক্তি নিজের ভাঁড়ারে যতটুকু সঞ্চিত ছিল তা ভাঙিয়েই নিজেকে যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কে শুরু হয়ে গিয়েছে বিশেষ এক ধরনের তরঙ্গ। যার নাম— ‘ব্রেন সুনামি’। যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে কর্টেক্স-সহ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। নিউরোনগুলির মৃত্যু শুরু হওয়ার প্রাক মূহুর্তে।

মানবমস্তিষ্ক কী ভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের কৌতূহল ছিল বহু শতাব্দীর। কিন্তু তা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাননি তাঁরা। কী ভাবেই বা পাবেন? কেউ সেই অবস্থায় পৌঁছলে চিকিৎসকদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে কী ভাবে কত তাড়াতাড়ি সেই অবস্থা থেকে রোগীকে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা যায়।

কিন্তু ২০১৮ সালে প্রথম সেই সুযোগ পান বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। তাঁরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে দেখেন সেই মৃত্যু প্রক্রিয়া। দেখেন, অক্সিজেন সংবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ২০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক ‘সিগন্যাল’গুলি বন্ধ হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দেয় নিউরোনগুলি। বন্ধ হয়ে যায় মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত শক্তির উৎপাদন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থগুলি আয়নে ভেঙে যেতে শুরু করে। তার পরেই শুরু হয় ব্রেন সুনামি। খুব জোরালো তড়িৎ-রাসায়নিক তরঙ্গ।

বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব তাঁরাই প্রথম এই প্রক্রিয়াগুলিকে ঘটতে দেখেছেন ন’জন মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর মস্তিষ্কেও।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া অক্সিজেনের সংবহন মস্তিষ্কে ফের কৃত্রিম উপায়ে চালু করে ব্রেন ডেথ-এর প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পরেও রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা জোরালো হল। তব‌ে চিকিৎসকদের হাতে সেই অস্ত্র তুলে দিতে গেলে এই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Human Brain brain Brain Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE