ছবি- নাসার সৌজন্যে।
কয়েকশো কোটি বছর আগে জমাট বাঁধা গ্যাসের ‘ভ্রূণ’ থেকে জন্ম নেওয়ার পর ভিনগ্রহদের বেশির ভাগেরই উপরে ছিল পুরু বায়ুমণ্ডল। আর সেই বায়ুমণ্ডলের নীচে ভিনগ্রহগুলির অন্তরে অন্দরে বয়ে যেত তরল জলের স্রোত। জলের অভাব ছিল না তখন সদ্যোজাত ভিনগ্রহগুলিতে।
পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি থাকা যে উল্কাপিণ্ডগুলি আমাদের গ্রহের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছিল, তাদের বিভিন্ন অংশের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি এই ধারণায় পৌঁছেছেন গবেষকরা।
গত ১৫ জানুয়ারি আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ভার্চুয়াল বৈঠকে তাঁদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন সান্তা ক্রুজের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাগি থমসন।
তিনি জানিয়েছেন, জন্মের পর পরই ভিনগ্রহগুলির বেশির ভাগেরই যে পুরু বায়ুমণ্ডল ছিল, তাতে হয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস। যা আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও রয়েছে। তবে সদ্যোজাত ভিনগ্রহগুলির বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসগুলি পরিমাণে বোধহয় কমই ছিল।
গত শতাব্দীর নয়ের দশক থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ভিনগ্রহের আবিষ্কার রয়েছে। এদের অনেকেরই এখনও পাতলা বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে। আর সেই উত্তরোত্তর পাতলা হয়ে আসা বায়ুমণ্ডলের নীচে থাকতেই পারে আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের মতো পাথুরে পিঠ (‘সারফেস’)।
গবেষকরা মনে করছেন, আগামী দিনে যে স্পেস টেলিস্কোপগুলিকে (যেমন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ) মহাকাশে পাঠানো হবে, সেগুলি সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রগুলি থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা আলো বিশ্লেষণ করে আরও নিশ্চিত হতে পারবে ওই সব তারামণ্ডলের গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল এখনও কী পরিমাণে রয়েছে, থাকলে সেই বায়ুমণ্ডলে কোন কোন পদার্থ রয়েছে, সেই বায়ুমণ্ডলের নীচে গ্রহগুলির পিঠ পাথুরে কি না আর সেই পাথুরে পিঠ কোন কোন পদার্থ দিয়ে গড়ে উঠেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে আছড়ে পড়া তিনটি উল্কাপিণ্ডের ৩ মিলিগ্রাম ওজন পরিমাণের অংশ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে সেই অংশগুলির রাসায়নিক পরীক্ষা করেছেন।
যেহেতু কোনও তারামণ্ডলের জন্মের সময় জমাট বাঁধা গ্যাস থেকে কঠিন পদার্থ তৈরি হতে শুরু করলেই উল্কাপিণ্ডগুলির জন্ম হয়েছিল, তাই এদের বিভিন্ন অংশের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলেই সদ্যোজাত অবস্থায় তারা কী কী পদার্থ দিয়ে গড়া ছিল তা বোঝা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন থমসন ও তাঁর সতীর্থরা।
তাঁরা দেখেছেন, ওই উল্কাপিণ্ডগুলির ৩ মিলিগ্রাম ওজন পরিমাণের অংশগুলি পোড়ানোর পর যে গ্যাস বেরিয়ে এসেছে তার ৬২ শতাংশই জলীয় বাষ্প। এতেই প্রমাণ, জন্মের সময় ওই ভিনগ্রহগুলিতে জল ছিল। আর সেটা হয়তো ছিল তরল অবস্থাতেই। পরে সূর্যের বিকিরণ ও গ্রহগুলির অভিকর্ষ বল ততটা জোরালো না হওয়ায় ভিনগ্রহগুলির সেই বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে আসে (যেমনটা হয়েছে মঙ্গলে)। জলও বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy