পৃথিবীর কোর। -প্রতীকী ছবি।
পৃথিবীর অন্তরে, অন্দরে (‘কোর’) আরও একটি স্তরে (‘লেয়ার’)-র হদিশ মিলল এই প্রথম। যা কোনও ধাতুর তরল স্রোত নয়। নয় কোনও নিরেট কঠিন ধাতব পদার্থও। তারই মাঝামাঝি কিছু আছে এত দিন আমাদের জানার পরিধির বাইরে থাকা পৃথিবীর অন্তরের সেই স্তরে।
সেই স্তরের ভূমিকা কী, তা কী ভাবেই তা তৈরি হল তার পুরোটাই এখনও রহস্যে মোড়া। তবে যে জন্য ভূমিকম্প হয় সেই টেকটনিক প্লেটগুলির মধ্যে সংঘর্ষে পৃথিবীর অন্তরে লুকিয়ে থাকা এই স্তরের ভূমিকা থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের সন্দেহ। সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে ভূকম্পের পূর্বাভাসেও বড় ভূমিকা নিতে পারে এই আবিষ্কার।
সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণাপত্র ‘জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: সলিড আর্থ’-এ। গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘‘পৃথিবীর অন্তরের গোপন কথাটি সম্ভবত এ বার জানা গেল। যদিও সেই কথার মর্মার্থ এখনও অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি।"
এত দিন জানা ছিল, পৃথিবীর অন্তরে রয়েছে ২টি স্তর। একটির শুরু ভূপৃষ্ঠ (‘সারফেস’) থেকে ১ হাজার ৮০০ মাইল বা ২ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার নীচে। এটি পৃথিবীর অন্তর বা কোর-এর বাইরের স্তর। ধাতুর তরল স্রোত বইছে এই স্তরে। এখানকার তাপমাত্রা ৪ থেকে ৯ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (বা ২ হাজার ২০৪ ডিগ্রি থেকে ৪ হাজার ৯৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। প্রায় সূর্যের পিঠের তাপমাত্রার (৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি।
এটাও জানা ছিল, ভূপষ্ঠের ৩ হাজার ২০০ মাইল (বা ৫ হাজার ১৫০ কিলোমিটার) নীচ থেকে শুরু হয় পৃথিবীর কোর-এর ভিতরের স্তরটির। যেখানে একেবারে কঠিন অবস্থায় রয়েছে লোহা (কিছুটা নিকেলও)।
যদিও এই ২টি স্তরের মাঝামাঝি আরও কিছু থাকতে পারে বলে আটের দশক থেকেই সন্দেহ দানা বেঁধেছিল বিজ্ঞানীদের মনে। কিন্তু পৃথিবীর কোর-এর উপরের স্তরের তাপমাত্রাই প্রায় সূর্যের পিঠের তাপমাত্রার কাছাকাছি বলে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হয়নি এত দিন।
পৃথিবীর কোর-এর আদত ছবিটা ঠিক কী রকম বুঝতে এ বার একটু অন্য পথে হেঁটেছিলেন ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক জো স্টিফেনসন ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা সেই ছবি তুলতে ব্যবহার করেছিলেন ভূমিকম্পের তরঙ্গকে।
স্টিফেনসনের কথায়, ‘‘আমরা বুঝতে পেরেছি, সেই জায়গাটা একেবারে নিখাদ কঠিন ধাতুতে ভরা নয়। সেখানে ধাতু বা অন্য কিছু অন্য কোনও অবস্থায় রয়েছে। যদিও তার চরিত্র বোঝা যায়নি।’’
গবেষকরা অবশ্য এও জানিয়েছেন, এই রহস্যের জট খুলতে পারলে হয়তো বা আগামী দিনে টেকটনিক প্লেটগুলির সংঘর্ষের আদত কারণ জানা যাবে। হয়তো বা ভূকম্পের পূর্বাভাস দিতেও তা সহায়ক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy