এই শ্যাডো-এফেক্ট এনার্জি জেনারেটর উদ্ভাবনের গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’-এ।
কী ভাবে বানানো হয়েছে এই বিশেষ যন্ত্রটি?
‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-এর পাঠানো প্রশ্নের ই-মেল জবাবে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের মেটিরিয়াল সায়েন্সের অধ্যাপক, মূল গবেষক সুই চিন তাং জানিয়েছেন, সোলার সেল যা দিয়ে বানানো হয়, সেই সিলিকনই তারা ব্যবহার করেছেন। তবে তার উপর লাগিয়ে দিয়েছেন সোনার অত্যন্ত পাতলা একটি আস্তরণ। সোলার সেলে যেমন আলো পড়লেই সিলিকনের উপরের স্তরের ইলেকট্রনগুলিকে উত্তেজিত করে তোলে, এখানেও সেটাই হয়। এ বার শ্যাডো-এফেক্ট এনার্জি জেনারেটরের একটি অংশ ছায়ায় থাকলে সিলিকনের উপরে থাকা সোনার খুব পাতলা আস্তরণের সাহায্যেই বিদ্যুৎশক্তি তৈরি করতে পারে যন্ত্রটি।
কী ভাবে বিদ্যুৎশক্তির জন্ম হয়?
সুই লিখেছেন, ‘‘আলো পড়ার ফলে উত্তেজিত হয়ে ওঠার পর সিলিকনের বাইরের স্তরে থাকা ইলেকট্রনগুলি আর সিলিকনে থাকে না। সিলিকনের ভোল্টেজ তখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। ইলেকট্রনগুলি লাফিয়ে চলে যায় সিলিকনের উপরে থাকা সোনার খুব পাতলা আস্তরণে। যন্ত্রের সেই অংশটি ছায়ায় থাকার ফলে সেখানে ভোল্টেজ অনেক কম। ইলেকট্রনগুলি বেশি ভোল্টেজ থেকে কম ভোল্টেজের দিকে যেতে শুরু করে। যন্ত্রটিকে বাইরের একটি সার্কিটের সঙ্গে জোড়া হলে শুরু হয় বিদ্যুৎপ্রবাহ।’’
কী পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি তৈরি হয়?
গবেষকদের দাবি, এমন ৮টি শ্যাডো-এফেক্ট এনার্জি জেনারেটর দিয়ে তাঁরা খুব অল্প আলোয় ইলেকট্রনিক ঘড়ি চালিয়েছেন। এই যন্ত্রটিকে ‘সেন্সর’ হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। রিমোট কন্ট্রোলে চলা গাড়ি ঝট করে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলে তার যে ছায়া পড়ে জেনারেটরের উপর, গবেষকরা দেখেছেন, সেই ছায়ায় তৈরি হওয়া বিদ্যুৎশক্তি দিয়ে এলইডি আলোও জ্বালানো যায়।
গবেষকরা এও দেখেছেন, আলো ও ছায়ার মধ্যে তারতম্য যত বাড়ে, ততই বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎশক্তি তৈরি হয়। তাঁদের দাবি, সোলার সেলের চেয়েও কম খরচে বিদ্যুৎশক্তি তৈরি করা যাবে, এই শ্যাডো-এফেক্ট এনার্জি জেনারেটর দিয়ে।
গবেষণার অভিনবত্ব কোথায়?
বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)’-এর অধ্যাপক অরিন্দম ঘোষ বলছেন, ‘‘এটা খুবই উল্লেখযোগ্য গবেষণা। তবে এ নিয়ে আগে চিন্তাভাবনা হয়নি, এমন বলব না। গবেষকদের কৃতিত্ব, তাঁরা এই যন্ত্রে ভোল্টেজের তারতম্যটা ধাতুর মধ্যেই ঘটাতে পেরেছেন। যা সাধারণ সোলার সেলে হয় না। সোলার সেলে এই ভোল্টেজের তারতম্যটা হয় ধাতু আর সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে। অথবা কোনও সেমিকন্ডাক্টরেরই দু’টি অংশের মধ্যে। সেটা নির্ভর করে সোলার সেল কী ভাবে বানানো হয়েছে, তার উপর।’’