Advertisement
E-Paper

১ কিলোমিটার পুরু বরফের নীচে প্রাণের হদিশ আন্টার্কটিকায়

দক্ষিণ মেরু থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম আন্টার্কটিকায় রয়েছে বেশ কিছু সাব গ্লেসিয়াল লেক বা হ্রদ। মারসার সে রকমই একটি হ্রদ। যেখানে মিলেছে সেই প্রাণের বিরল হদিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন  

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:০০
আন্টার্কটিকায় মারসার সহ অন্যান্য সাব গ্লেসিয়াল লেক। ছবি নেচার পত্রিকার সৌজন্যে।

আন্টার্কটিকায় মারসার সহ অন্যান্য সাব গ্লেসিয়াল লেক। ছবি নেচার পত্রিকার সৌজন্যে।

আন্টার্কটিকায় বরফের পুরু চাঙড়ের তলাতেও তা হলে প্রাণের জন্ম হতে পারে? সেই প্রাণের বিকাশও হতে পারে? একেবারে হালের একটি অনুসন্ধান জানাল, তা সম্ভব। প্রাণ টিঁকে থাকতে পারে আন্টার্কটিকায় বরফের ১ কিলোমিটার পুরু চাঙড়ের তলায় আলো, বাতাসহীন পরিবেশেও।

দক্ষিণ মেরু থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম আন্টার্কটিকায় রয়েছে বেশ কিছু সাব গ্লেসিয়াল লেক বা হ্রদ। মারসার সে রকমই একটি হ্রদ। যেখানে মিলেছে সেই প্রাণের বিরল হদিশ।

অভিযাত্রী দলের নাম ‘সাব গ্লেসিয়াল আন্টার্কটিক লেকস সায়েন্টিফিক অ্যাকসেস’ বা ‘সালসা’। তাঁরা মারসার হ্রদের বরফের পুরু আস্তরণ ভেদ করে পৌঁছে গিয়েছিলেন অনেক অনেক নীচে। বিশেষ একটি যন্ত্র ও ক্যামেরার মাধ্যমে।

আন্টার্কটিকা অভিযানে সালসা টিমের সদস্যরা। ছবি সালসার সৌজন্যে।

সেখানে তাঁরা দেখেছেন বরফের মধ্যেই রয়েছে পোস্তর মতো ছোট ছোট প্রাণীর অসংখ্য মৃতদেহ।

সাব গ্লেসিয়াল লেক কী?

মেরু অঞ্চলে বরফের পুরু আস্তরণের নীচে থাকে এই ধরনের লেক বা হ্রদ। বরফের নীচে থাকা এই হ্রদে শীতল জল তরল অবস্থায় থাকে। বড় হিমবাহ বা গ্লেসিয়ারের নীচে এই ধরনের হ্রদ থাকে বলে একে সাব গ্লেসিয়াল বলে। আন্টার্কটিকা মহাদেশে মারসার হ্রদ, ভোস্তক হ্রদ, হুইলান্স হ্রদের মতো প্রচুর সাব গ্লেসিয়াল হ্রদ আছে।

বরফের নীচে প্রাণের সন্ধান পেয়ে ‘সালসা’ অভিযানের সদস্য, নেব্রাস্কা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো প্যালিয়েন্টোলজিস্ট ডেভিড হারউড বলেছেন, ‘‘এটা আশাতীত।’’ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লেসিয়ার বিশেষজ্ঞ স্লায়েক তুলাজিক বলেছেন, ‘‘অনুসন্ধানের এই ফলাফল সত্যিই খুব অবাক করে দিয়েছে আমাদের।’’

কী ধরনের প্রাণীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে?

গবেষকরা বরফের পুরু চাঙড়ের গভীরে যে প্রাণীর মৃতদেহ পেয়েছেন তা দেখতে অনেকটা পোস্তর মতো। তাঁরা জানিয়েছেন, সেগুলি ‘টার্ডিগ্রেড’ গোত্রের প্রাণী। মাইক্রোস্কোপের তলায় চোখ রাখলে দেখা যাবে আট পা-ওয়ালা এই প্রাণীর দেহের গঠন অনেকটা কেঁচোর মতো।

তবে গবেষকদের ধারণা, প্রাণীগুলি আদতে সমুদ্রের বাসিন্দা। মারসার হ্রদ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ট্রান্স-আন্টার্কটিক পাহাড়। প্রায় ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর আগে ভয়ঙ্কর উষ্ণ হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর বুক। সেই সময় বরফের নীচে এই সব হ্রদের জল ছিল তরল অবস্থায়। তখন ওই সব হ্রদে থাকত এই টার্ডিগ্রেড গোত্রের প্রাণীরা। সেই উষ্ণযুগের শেষের দিকে আস্তে আস্তে শীতল হতে শুরু করে পৃথিবী। আর তখনই লুপ্ত হয়ে যায় ওই এলাকার প্রাণীরা।

তবে ঠিক কত বছর আগেও এই প্রাণীরা জীবিত ছিল তা জানার জন্য এ বার তাদের দেহের কার্বন ডেটিং করবেন গবেষকরা। ওই প্রাণীর ডিএনএ সিকোয়েন্স সাজানোর চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। এই দু’টি কাজ শেষ হলে ওই প্রাণীর জীবনচক্র সম্পর্কে আরও তথ্য ও তাদের অস্তিত্বের সময়কাল জানতে পারা যাবে।

আরও পড়ুন: মেঘ ছাড়াই ‘ভুতুড়ে’ বৃষ্টি হয় শনির চাঁদে!

ভিডিয়ো সৌজন্যে নেচার

এর আগে ২০১৩ সালে হুইলান্স হ্রদে এ রকম অভিযান চালিয়েছিল অন্য একটি গবেষক দল। তবে সেবার কিছু অণু জীব ছাড়া অন্য কিছু খুঁজে পাননি তাঁরা। সেদিক থেকে দেখলে ওই অঞ্চলে এই প্রথম উচ্চ গোত্রের প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেল।

এই অনুসন্ধান পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজেও নতুন দিশা দেখাতে পারে। কারণ সাব গ্লেসিয়ারে প্রাণীর খোঁজ পাওয়া গেল এই প্রথম। আর পৃথিবীর বাইরেও কিছু গ্রহ উপগ্রহে এ রকম সাব গ্লেসিয়ারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

তাহলে কী সেখানে প্রাণ সন্ধান খুঁজে পাবেন বিজ্ঞানীরা?

আরও পড়ুন: ডাইনোসর কি ফিরে আসতে পারে পৃথিবীতে?

Mercer Lake Sub Glacial Lake Deadbody Of Creatures SALSA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy