Advertisement
E-Paper

নাড়ি দ্রুত না-কাটলে বুদ্ধি বাড়ে, দাবি গবেষণায়

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশেই প্রসবের সময়ে যে পদ্ধতি মেনে চলা হয়, হাতেকলমে প্রমাণ দেখিয়ে তার বিপরীত পথে হাঁটার কথা প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন এক বাঙালি চিকিৎসক।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বাড়তি মিনিট পাঁচেক সময়। আর সামান্য ধৈর্য। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে এটাই হয়ে উঠতে পারে বাড়তি লাভ!

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশেই প্রসবের সময়ে যে পদ্ধতি মেনে চলা হয়, হাতেকলমে প্রমাণ দেখিয়ে তার বিপরীত পথে হাঁটার কথা প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন এক বাঙালি চিকিৎসক। গুজরাত ও কলকাতার দু’টি হাসপাতালে সমান্তরালভাবে গবেষণা চালিয়েছিলেন তিনি। তাতে দেখা গিয়েছে, শিশুর জন্মের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আম্বিলিকাল কর্ড (নাড়ি) কেটে না দিয়ে যদি ওই অবস্থাতেই শিশুকে মায়ের বুকের উপরে রাখা হয় এবং প্লাসেন্টা স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়, তা হলে শিশুর মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন পৌঁছয়। যা পরবর্তী সময়ে তার বুদ্ধির যথাযথ বিকাশে সাহায্য করে। পাশাপাশি জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগ থাকায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

আমেরিকান জার্নাল অব পেরিনেটোলজি-তে এই গবেষণাপত্রটি সদ্য গৃহীত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, কী ভাবে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকদের এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) তৈরি করে রুগ্‌ণ নবজাতকের মৃত্যুর হার এক ধাক্কায় কমাতে পেরেছিলেন শিশু চিকিৎসক অরুণ সিংহ। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে প্রথম সেটি চালু হয় বলে তাকে বলা হয় পুরুলিয়া মডেল। শুধু এ রাজ্য নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্য, এমনকি প্রতিবেশী কয়েকটি দেশেও এই মডেল অনুসরণ করা হয়। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেও নবজাতক বিভাগের প্রধান ছিলেন অরুণবাবু। আপাতত তিনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’এর জাতীয় উপদেষ্টা। গুজরাতের একটি সরকারি হাসপাতাল এবং কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে গবেষণা চালিয়েছেন তিনি। যে শিশুদের জন্মের পরে কর্ড কাটা হয়েছে, তাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ এবং যাদের প্লাসেন্টা বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছে, তাদের অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করা দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অক্সিজেন বেশি পৌঁছেছে।

অরুণবাবু জানান, সাধারণভাবে স্বাভাবিক প্রসবের পরেই আম্বিলিকাল কর্ডটি কেটে দেওয়া হয়। প্লাসেন্টা তখনও মায়ের শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। তাঁর কথায়, ‘

‘প্লাসেন্টা এবং বাচ্চার নাভির মাঝখানে ২০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা টিউব থাকে, সেখানে রক্ত চলাচল করে। প্রসবের সময়ে কর্ডটি চার বা পাঁচ সেন্টিমিটার বেরনোর পরেই কাঁচি চালিয়ে দেওয়া হয়। বাকিটা মায়ের সঙ্গে থাকে। অথচ প্লাসেন্টা নিজে থেকে বেরিয়ে আসতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগে।’’

অরুণবাবুর ব্যাখ্যা, মায়ের গর্ভে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের মধ্যে থাকে শিশু। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মায়ের কাছ থেকে প্লাসেন্টার মাধ্যমে পায় সে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে কর্ড কেটে দিলে সেই অক্সিজেন তার কাছে পৌঁছয় না। বাইরের বাতাস থেকে তাকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে নিতে হয়। শুরুতেই সেই কাজে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেই জন্য জন্মের পরে বাইরের পৃথিবীতে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে কয়েক মিনিট কর্ডটি মায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা জরুরি। কর্ডটা না কাটলে কিছুটা অক্সিজেন সেখান থেকেই পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘ওই পাঁচ মিনিট সময়টাকেও কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে। জন্মের পরেই শিশুকে সরাসরি মায়ের বুকের উপরে দেওয়া হচ্ছে। গোটা পৃথিবী বলছে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান শুরু করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে একেবারে গোড়াতেই তা শুরু হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্লাসেন্টা থেকে যে রক্তক্ষয় হয়, সেটাও কমানো যাচ্ছে।’’

অরুণবাবুর কথায়, ‘‘ডাক্তাররা যে দিন থেকে প্রসব করাতে শুরু করলেন, তখন থেকেই কর্ড কাটার শুরু। কারণ দেখা গেল, এতে সময় কম লাগবে। প্রসবের সংখ্যা বাড়বে। সিজারিয়ান সেকশনে শিশু অক্সিজেন আরও কম পায়। অথচ পাঁচ মিনিট অক্সিজেন কম পেলে বুদ্ধির উপরে প্রভাব পড়ে।’’

এই গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শিশু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-এর ইনচার্জ অসীম মল্লিক বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন কর্ড দেরিতে কাটা হচ্ছে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন বেশি পৌঁছনোর পাশাপাশি রক্তাল্পতার সমস্যাও ঠেকানো যায়।’’

তবে অন্য মতও রয়েছে। ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এর অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘ডিলেড কর্ড ক্ল্যাম্পিং বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছনো যায়নি। আমার মনে হয় কর্ডটা বেশি সময় আটকে রেখে লাভ নেই। জন্মের পরে দ্রুত শিশুকে উষ্ণ করতে হবে। সেটাও জরুরি।’’ কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের আর এক শিশু চিকিৎসক বলেন, ‘‘যদি বাচ্চা জন্মে না কাঁদে, তা হলে রিসাসিটেশন করতে হয়। তখন কর্ড কেটে ত়ড়িঘড়ি সেই ব্যবস্থা করা দরকার।’’

Umbilical cord Intelligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy