Advertisement
E-Paper

পৃথিবীতে প্রাণের উপাদান এনেছিল গ্রহাণুই, দাবি নাসার

নাসার বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে মহাকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই পরিবেশে সহজেই সেই শর্করা বানাতে পেরেছেন। আর তাতেই হয়েছে কেল্লা ফতে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৫
গ্রহাণু থেকে যে ভাবে পৃথিবীর পিঠে এসেছিল প্রাণ সৃষ্টির উপাদান। অলঙ্করণে:তিয়াসা দাস

গ্রহাণু থেকে যে ভাবে পৃথিবীর পিঠে এসেছিল প্রাণ সৃষ্টির উপাদান। অলঙ্করণে:তিয়াসা দাস

প্রাণ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান তা হলে পৃথিবীতে ছিল না? ধরিত্রীকে প্রাণ ধারনের জন্য ঋণী হতে হয়েছিল অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তর উপর?

নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, গ্রহাণু থেকেই প্রাণের জন্ম হয়েছিল পৃথিবীতে। প্রাণ সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শর্করা আদৌ ছিল না পৃথিবীতে। পৃথিবীকে খুব জোরে ধাক্কা মেরে সেই শর্করাই এই গ্রহে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল কোনও গ্রহাণু। বহু কোটি বছর আগে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার এইমস রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষকদল এই তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশন’-এর হালের সংখ্যায়।

কী ভাবে তাঁরা বুঝলেন প্রাণের উপাদান দিয়েছিল গ্রহাণুই?

নাসার বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে মহাকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই পরিবেশে সহজেই সেই শর্করা বানাতে পেরেছেন। আর তাতেই হয়েছে কেল্লা ফতে।

কোন শর্করা প্রাণের প্রাথমিক উপাদান?

প্রাণের জন্মের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান শর্করা প্রকৃতিতে থাকে বিভিন্ন রূপে। তারাই জীবদেহের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ‘২-ডিঅক্সিরাইবোজ’ হল তেমনই একটি শর্করা। যা ডিএনএ (জিনের কার্যকরী একক) তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বলা ভাল, প্রাথমিক উপাদানও।

২-ডিঅক্সিরাইবোজ: প্রাণ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান। ছবি শাটারস্টকের সৌজন্যে।

গবেষণাগারেই বানানো হয়েছিল মহাকাশ!

মহাকাশকে আমরা অনন্ত শূন্য মনে করলেও, আদৌ তা নয়। দু’টি মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে থাকে একটি ‘ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম’। যা ভরা থাকে ধুলোবালি আর গ্যাসের মিশ্রণে। আর সেই মাধ্যমের ঘনত্বও খুব বেশি নয়। নাসার অ্যাস্ট্রোকেমিস্ট্রি গবেষণাগারে ঠিক সেই রকম পরিবেশই কৃত্রিম ভাবে তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

পরম শূন্য তাপমাত্রায় (মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থাকা একটি অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রাখা হয়েছিল পরীক্ষায় ব্যবহৃত নমুনা পদার্থটি। কারণ, সেটাই মহাকাশের গড় তাপমাত্রা। তা রাখা হয়েছিল একটি ‘কসমিক চেম্বার’-এ।

সেই ‘কসমিক চেম্বার’-এ একটি পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল গ্যাসীয় অবস্থায় থাকা মিথানল (মিথাইল অ্যালকোহল) ও জলীয় বাস্পের মিশ্রণ।

কী দেখেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা?

তাঁরা দেখেছেন, পরম শূন্য তাপমাত্রার জন্য অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রাখা ওই নমুনার উপর বরফের আস্তরণ পড়লেও অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রা-ভায়োলেট বা ইউভি রে) সেই বরফকে গলিয়ে দিয়েছে। তৈরি করেছে ‘২-ডিঅক্সিরাইবোজ’ শর্করা। শুধু তাই নয়, সেখানে তৈরি হয়েছে শর্করাজাত আরও কয়েকটি পদার্থ। পরীক্ষার এই ফলই চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।

কেন ব্যবহৃত হল অতিবেগুনি রশ্মি?

মহাকাশের অতিবেগুনি রশ্মি রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে যথেষ্টই। তাই অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রাখা নমুনার উপরে লাগাতার ফেলা হয়েছিল অতিবেগুনি রশ্মি। মহাকাশের যে পরিবেশে ওই রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, ঠিক সেই পরিবেশটাই গবেষণাগারে তৈরি করতে।

নাসার অ্যাস্ট্রোকেমিস্ট্রি গবেষণাগারের বিজ্ঞানী স্কট স্যান্ডফোর্ড বলেছেন, ‘‘মহাকাশ যদি প্রাণ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজেই তৈরি করে নিতে পারে, তা হলে আমাদের বানানো মহাকাশের মতো পরিবেশে তা কেন তৈরি হতে পারবে না? গত দু’দশক ধরে এই প্রশ্নটাই আমরা নিজেদের করে এসেছি। আর তার জবাবটা এ বার পেয়ে গিয়েছি।’’

২-ডিঅক্সিরাইবোজ থাকে এই ডিএনএ-তেই। ছবি আইস্টকের সৌজন্যে।

পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম: চালু ধারণাগুলি কী কী?

পৃথিবীতে কী ভাবে প্রাণ এসেছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। প্রচুর গবেষণার পরেও বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেননি, হ্যাঁ, এই ভাবেই প্রাণের জন্ম হয়েছিল আমাদের গ্রহে। প্রাণ সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান পৃথিবীতেই ছিল, নাকি তা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু থেকে এসেছিল, তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

আরও পড়ুন: আরও একটি গ্রহ এই সৌরমণ্ডলে? সূর্যকে পাক মারছে ১ হাজার বছরে

একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ জানাচ্ছে, প্রাণ সৃষ্টির উপাদানের সঠিক মিশ্রণ এই গ্রহেই ছিল। আর সেটাই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি করেছে। এই মিশ্রণের ক্ষেত্র বা ধারক হিসাবে ধরা হয় সমুদ্রের উষ্ণ জল বা কোনও উষ্ণ প্রস্রবনকে।

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ বলছে, কোনও গ্রহাণু বা ধূমকেতু থেকেই এই গ্রহে এসেছিল প্রাণ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদান।

নাসার বিজ্ঞানীদের ভোট দ্বিতীয় মতবাদের পক্ষে!

তাঁদের মতে, আছড়ে পড়া গ্রহাণু-ধূমকেতুদের দৌলতেই প্রাণ সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শর্করাজাতীয় উপাদানে এক সময় ভর্তি হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর পিঠের উপরিভাগ। সেই সব উপাদানই উপযুক্ত আবহাওয়ায়, জলের সংস্পর্শে এসে ডিএনএ বা আরএনএ তৈরির প্রাথমিক উপাদান- ‘২-ডিঅক্সিরাইবোজ’ শর্করা তৈরি করেছে।

এই গবেষণা পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির তত্ত্বে যে নতুন দিশা দেখাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন: ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াও এ বার রুখে দেওয়া যাবে, জানাল গবেষণা

2-Deoxyribose Sugar Molecule Life Came from Asteroid Life On Earth
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy