Advertisement
E-Paper

খরচ কি সঙ্গত, বিজ্ঞানীদের আশা আসবে বহু গুণ

ফিল্মের চেয়েও সস্তা ইসরোর লালগ্রহ অভিযান! মঙ্গলযানের সাফল্যের খবর আসার পর, বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ কথাই বলেছিলেন। তুলনা টেনে বলেছিলেন, হলিউডের ছবি ‘গ্র্যাভিটি’ তৈরি করতে খরচ পড়েছিল ১০ কোটি ডলার। আর মঙ্গলযানে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। অর্থাৎ টাকায় ৪৫০ কোটি।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪

ফিল্মের চেয়েও সস্তা ইসরোর লালগ্রহ অভিযান! মঙ্গলযানের সাফল্যের খবর আসার পর, বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ কথাই বলেছিলেন। তুলনা টেনে বলেছিলেন, হলিউডের ছবি ‘গ্র্যাভিটি’ তৈরি করতে খরচ পড়েছিল ১০ কোটি ডলার। আর মঙ্গলযানে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার। অর্থাৎ টাকায় ৪৫০ কোটি। কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই পরিমাণ অর্থব্যয়ও কি বিলাসিতা নয়? ইসরো-র সাফল্যে যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিনন্দন বার্তা আসছে, তখন এ প্রশ্নও কিন্তু তুলছেন কেউ কেউ।

অনেকেরই মতে, ডেঙ্গুর মতো রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা না করে, ডিস্যালাইনেশন (মিষ্টি জল তৈরি, পানীয় ও কৃষিক্ষেত্রে তার ব্যবহার) নিয়ে কাজ না করে, কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে মহাকাশ গবেষণায়? অতিপ্রয়োজনীয় আরও কত প্রকল্পই তো অর্থের অভাবে আটকে রয়েছে! ভারতের বিজ্ঞানীমহল কিন্তু এই কথা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, আপাতদৃষ্টিতে যাকে এখন কোটি কোটি টাকা ব্যয় বলে মনে করা হচ্ছে, তা-ই এক দিন সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেবে বহু সুযোগ-সুবিধা। দেশের রাজকোষে ফিরিয়ে দেবে সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বহু গুণ বেশি অর্থ।

কী ভাবে?

বিষয়টা একেবারে উদাহরণ টেনে বোঝালেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমির অধিকর্তা সঞ্জীব সেন। বললেন, “১৯৭০ সালে আমেরিকার হাত ধরে এসেছিল গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস। এর জন্য ২৪টি কৃত্রিম উপগ্রহ কাজ করছে। খরচ হয়েছিল বেশ। কিন্তু এর ফলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কী পরিমাণ উন্নতি হয়েছে, সেটাও ভেবে দেখা দরকার!” শুধু তা-ই নয়, আবহাওয়া সংক্রান্ত খবরও দেয় জিপিএস। মোবাইলেও তো জিপিএস ট্র্যাকার রয়েছে।

উদাহরণ রয়েছে আরও অনেক। রিমোট ঘোরাতেই যে টেলিভিশনে এত চ্যানেল, তার পিছনেও কিন্তু রয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহের অবদান। অর্থাৎ কি না মহাকাশ গবেষণা।

সঞ্জীববাবুর কথায়, “এই মুহূর্তে হয়তো ইসরো-র মঙ্গল অভিযানের লাভ-ক্ষতির অঙ্কটা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে মানুষ বুঝবে, এতে আখেরে উপকার হবে তাঁদেরই।” তবে বিষয়টা অনেকটা এ রকমওহাতে মোবাইল ফোন নিয়ে, টিভির চ্যানেলে চটজলদি দেশ-বিদেশের খবর পেয়েও, কিংবা নিত্যনৈমিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েও, অনেকেই ভেবে দেখেন না, এর পিছনে আসলে কাজ করছে মহাকাশ বিজ্ঞান। গবেষণা না চললে এর কোনওটাই তো হতো না!

কিন্তু যে দেশের সরকারের দাবি, প্রতিদিন ৩২ টাকা আয় করলেই কাউকে গরিব বলা যাবে না, সেখানে কি এত খরচ মানায়? প্রশ্নটা উঠছেই।

সাহা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী সুকল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য “একটা পয়সাও নষ্ট যাবে না।” তাঁর মতে, ইসরো প্রযুক্তিগত ভাবে যতটা এগিয়েছে, তাতে খুব শিগগিরি তাদের হাত ধরে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে দেশে। কাজের সুযোগও বাড়বে। আয়ও বাড়বে। আর প্রবীণ বিজ্ঞানী অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “খরচের কথা ভেবে বিজ্ঞানে না এগোলে, দেশও এগোবে না।”

তবে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, ইসরোর মঙ্গল অভিযান পুরোপুরি ‘স্বদেশজাত’ প্রকল্প। বিদেশ থেকে কোনও কিছু কেনা হয়নি। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সোমক রায়চৌধুরীর মতে, “ইসরো যদি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে কিছু কিনত, তা হলে নিন্দে করা যেত। কিন্তু সবটাই তো দেশীয় সংস্থা বানিয়েছে। খরচের টাকা তো এ দেশের কোনও না কোনও সংস্থা পেয়েছে। সে সব সংস্থার কর্মীরাই এতে লাভবান হয়েছে। আবার এই সাফল্যে যে সুনাম হল ভারতের, তাতে বিদেশি মুদ্রা আয়ও বাড়বে। লাভটা কার?”

রসিকতা করে সোমকবাবু আরও বললেন, “৪৫০ কোটি.., আমাদের ক্রিকেট দল কিন্তু সারা বছরে এর থেকে বহু গুণ বেশি রোজগার করে!”

Mars Orbiter Mission first images Red Planet sayantani bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy