জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর গন্ডার গুলি করে খড়গ লুঠ হয়ে যাবার ঘটনায় কারা জড়িত, তার হদিস সাত দিন বাদেও করতে পারল না বন দফতর। বিষয়টি নিয়ে বন দফতর তদন্ত করছে এই অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে, হেলদোল নেই বন খোদ বনমন্ত্রীরও।
এ দিকে, পর পর ঘটে যাওয়া একের পর এক গন্ডার শিকারের ঘটনায় বন পরিচালনার ক্ষেত্রে মন্ত্রীর ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) আজম জায়দি বলেছেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট আসছে। বনে নজরদারির ঘটনায় গাফিলতি রয়েছে কি না সেটি আমরা দেখছি।’’
তবে এখনও পর্যন্ত কোনও অফিসার বা কর্মীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে প্রধান মুখ্য বনপাল জানিয়েছেন। বন দফতরের দুই কর্তা জানিয়েছেন, বছর তিনেক আগে সুন্দরবনে বাঘের মৃত্যুর ঘটনার পর তিন জন আধিকারিককে রাতারাতি বদলি করে দেওয়া হয়। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু জলদাপাড়া জঙ্গলে ৭টি গন্ডারকে গুলি করে হত্যা করা হলেও কোন রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কোনও আধিকারিকের ক্ষেত্রে। জঙ্গলে বাইরে থেকে লোকজন ঢুকছে কি না, তা স্বল্প পরিমাণ কর্মী দিয়ে নজরদারি করা সম্ভব নয়। সে জন্য আটের দশকে জলদাপাড়ায় যখন ৭৫টি থেকে গন্ডারের সংখ্যা নেমে ১৪টিতে দাঁড়ায়, সে সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে গন্ডার রক্ষা করে বন দফতর।
গত ৭ আগস্ট রাতে জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের হলং বিটের জঙ্গলে গুলিবিদ্ধ গন্ডারের দেহ মেলে। উদ্ধার হবার তিন দিন আগে গন্ডারটি শিকার করে খড়গ লুঠ করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে জানতে পারেন চিকিৎসকরা।
রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন পরপর ঘটে যাওয়া গন্ডার শিকারের ঘটনা নিয়ে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন দফতরে ঠিক মতো নজরদারি আর হচ্ছে না। ট্রেজারি চালু করায় সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে। সব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন বলে বোধহয় বনমন্ত্রী খানিকটা হাত গুটিয়ে রয়েছেন। বাস্তবিক অবস্থা তাঁর অনুধাবন করা দরকার।’’
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনের কথায়, ‘‘হাত গুটিয়ে কেউ বসে নেই। গন্ডার শিকারের বিষয়টি আমরা দেখছি। ট্রেজারি চালু হলেও ডিএফও- রা আগাম ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তুলতে পারেন। তবে খরচের হিসেব তাঁদের দিতে হবে এই শর্তে।’’
তবে বন দফতরের এক অফিসারের কথায়, মন্ত্রী সহজ করে বলছেন, বিষয়টি অত সহজ নয়। ট্রেজারি থেকে টাকা পেতে ঘাম ছুটে যায়। সোর্সের টাকা সে ভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। আট ঘণ্টার বেশি নজরদারি করলে কর্মীরা ৩০ টাকা করে পেতেন। এখন ট্রেজারি হবার পর ওই টাকা পেতে ঘাম ছুটে যায় কর্মীদের। গাছ চুরি হলে এক সময় হিসেব থাকত। হাতে টাকা না থাকায় কাটা গাছের অবশিষ্ট অংশ বহন করে আনা যাচ্ছে না। এই সমস্ত কারণে এই এলাকা শিকারিদের মুক্তাঞ্চল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের মুখপাত্র অমল দত্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘‘এতগুলি গন্ডার শিকার হল আর বনমন্ত্রী চুপ করে বসে রয়েছেন। এটা কোনও ভাবে মানা যায় না। মন্ত্রী ও কর্তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে অচিরে বন ধ্বংস হয়ে যাবে।’’