Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখে নজির গড়ল বাঙুর, পারে না কলকাতা

দক্ষিণ দমদমের বাঙুর অ্যাভিনিউ এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখে সুনাম কুড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। কয়েক বছর ধরে এতে সুফলও মিলেছে। এখন আর ওই এলাকায় জল জমে থাকে না। প্লাস্টিকের জন্য দূষিত হয় না পরিবেশও। প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ দমদমের পক্ষে যা করা সম্ভব, কলকাতার একটি ওয়ার্ডেও তা এখনও করা গেল না কেন? অথচ, অর্থ এবং লোকবলের নিরিখে অনেক বড় কলকাতা পুরসভা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

দক্ষিণ দমদমের বাঙুর অ্যাভিনিউ এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখে সুনাম কুড়িয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। কয়েক বছর ধরে এতে সুফলও মিলেছে। এখন আর ওই এলাকায় জল জমে থাকে না। প্লাস্টিকের জন্য দূষিত হয় না পরিবেশও। প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ দমদমের পক্ষে যা করা সম্ভব, কলকাতার একটি ওয়ার্ডেও তা এখনও করা গেল না কেন? অথচ, অর্থ এবং লোকবলের নিরিখে অনেক বড় কলকাতা পুরসভা। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগে ওঠা এই প্রশ্নই এ বার ভাবাচ্ছে পুর-প্রশাসনকে।

শহরকে ভ্যাটমুক্ত করতে ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়েছে পুর-প্রশাসন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি বছরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় কম্প্যাক্টর মেশিন বসবে। ফলে রাস্তায় খোলা অবস্থায় জঞ্জাল পড়ে থাকবে না। শহরকে ভ্যাটমুক্ত করতে তৎপর হলেও পরিবেশ সুরক্ষিত করতে কিন্তু তেমন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুর-প্রশাসন। অবাধে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। যদিও পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার এবং মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার দু’জনেই মেনে নিয়েছেন, পরিবেশ সুস্থ রাখতে ৪০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

এক পুরকর্তার মতে, ৪০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক যেখানে তৈরি হয়, সে সব কারখানায় লাগাতার হানা দেওয়া দরকার। তা হচ্ছে না বলেই প্লাস্টিক ব্যবহার রোখা যাচ্ছে না।

আগামী ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস গুরুত্ব দিয়ে পালন করবে পুরসভা। পুরসভা থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। পুরকর্তাদের ব্যাখ্যা: শহরের পরিবেশ রক্ষায় নগরবাসীর সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। তাই ৫-১২ জুন বক্তৃতা, নানা প্রতিযোগিতা, পদযাত্রা সহযোগে পালন হবে পরিবেশ সপ্তাহ।

যদিও রাজ্যের একাধিক পরিবেশবিদের কথায়, এক-দু’দিন পদযাত্রা করে বা বক্তৃতা দিয়ে নাগরিকদের সচেতন করলেই হবে না। পরিবেশ রক্ষার জন্য সারা বছর হাতে-কলমে কাজ করা জরুরি। তা হয় না বলেই শহরের পরিবেশ প্রতি দিনই একটু একটু করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ১৫-২০ বছর আগেও শহরে ঠান্ডা হাওয়া বইত। জলাভূমি থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প ঠান্ডা রাখত শহরকে। সবুজায়নও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ১৫-২০ বছরের মধ্যে শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ জলাভূমি বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। কয়েক হাজার দু’তিনতলা বাড়ি ভেঙে গড়ে উঠেছে বহুতল। কাটা হয়েছে গাছ। অথচ এর কোনওটাই কিন্তু পুরসভার অনুমোদন ছাড়া হওয়ার কথা নয়।

পরিবেশবিদ শান্তিপদ গণচৌধুরীর কথায়, “প্রশাসন চাইলে পুর-আইনের প্রয়োগে এ সবই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। কিন্তু তা হচ্ছে না বলেই দূষিত পরিবেশে থাকতে হচ্ছে শহরবাসীকে।” তাঁর কথায়, “৫ জুন কলকাতা পুরসভা পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশপ্রিয় পার্কে আরও একটা কাজ করছে। সৌরশক্তির সাহায্যে ৬০টি বাতিস্তম্ভ জ্বালানো হবে। তাতে জ্বলবে সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প। অর্থাৎ, কিছুটা হলেও কার্বন নিঃসরণ কমবে ওই এলাকায়।” তিনি জানান, ওটা পরিবেশবন্ধু পদক্ষেপ। এ মুহূর্তে শহরে লক্ষাধিক বাতিস্তম্ভ আছে। সবগুলিতে সৌরবাতি জ্বললে শহরের পরিবেশ অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তাঁর ধারণা।

কার্বণ নিঃসরণের হার কমানোর পাশাপাশি শহর জুড়ে নির্মাণের ক্ষেত্রেও লাগাম টানা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, পুরসভায় আইন রয়েছে কোনও নির্মাণকাজের আগে সেখানে প্রয়োজনমাফিক পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু তা যে মানা হচ্ছে না, এটা দেখার ক্ষেত্রে অভাব রয়ে গিয়েছে। মোটা মুনাফার লোভে যত্রতত্র গাছ কেটে, পুকুর বুজিয়ে গড়া হচ্ছে বহুতল।

কী ভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ?

শান্তিপদবাবুর কথায়, “দোতলা-তিনতলা বাড়ি থেকে যে পরিমাণ তাপ নিঃসরণ হয়, বহুতল আবাসনে তার পরিমাণ অনেক বেশি। তাতেই বেশি মাত্রায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।” শহরের জলাভূমি রক্ষা, বেশি পরিমাণ গাছ বসানোএ সব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। আর কলকাতার ক্ষেত্রে মূল উদ্যোগটা পুর-প্রশাসনের উপরেই বর্তায় বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। এ নিয়ে পুর-আইনে কোনও খামতি থাকলে পরিবেশের কথা ভেবে তা-ও সংশোধন করা জরুরি বলেই মেনে করেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “সচেতনতার কাজটা খুবই সহজ। টাকা থাকলেই যে কোনও সময় সভা-সমাবেশ করা, বক্তৃতা দেওয়া সহজ। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় সামিল হতে বললে লোক মেলে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anup chattopadhyay use of plastic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE