Advertisement
E-Paper

অ্যাসিড-যুদ্ধ নিয়ে বলতে পর্দায় মনীষা

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ইতিমধ্যেই অ্যাসিড আক্রান্ত এই তরুণীকে অল্পবিস্তর দেখা গিয়েছে। এ বার আরও বেশি করে জনসমক্ষে আসছেন মনীষা পৈলান।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:১৭
লড়াকু: (বাঁ দিকে) হামলার আগে মনীষা পৈলান। (ডান দিকে) এখন সেই তরুণী। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: (বাঁ দিকে) হামলার আগে মনীষা পৈলান। (ডান দিকে) এখন সেই তরুণী। নিজস্ব চিত্র

নিজের ভূমিকার অভিনয়ে নিজেই!

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ইতিমধ্যেই অ্যাসিড আক্রান্ত এই তরুণীকে অল্পবিস্তর দেখা গিয়েছে। এ বার আরও বেশি করে জনসমক্ষে আসছেন মনীষা পৈলান। তিন মিনিটের ভি়ডিয়োয় মনীষার অ্যাসিড আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময়ের লড়াইয়ের কাহিনি ধরা হবে কবিতার ছন্দে, বাদ্যযন্ত্রের সুরে। পাশাপাশি, ক্যানভাসে তুলির টানে সেই যন্ত্রণার মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পী। গোটা সময়টায় পর্দায় উপস্থিত থাকবেন মনীষা নিজেও। শীঘ্রই ভিডিয়োটি দেখা যাবে ইন্টারনেটে।

এমন ভিডিয়োর ভাবনা কেন?

“কোনও তো দোষ করিনি! তবে কেন আড়াল করব নিজের মুখ? বরং এই পোড়া মুখ নিয়ে প্রতি মুহূর্ত যে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে চলছি আমরা, তার এক ঝলক দেখুক সমাজও!”— সাবলীল এবং দৃঢ় উত্তর মধ্য কুড়ির মেয়েটির।

প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝে দু’দণ্ডের ধাক্কা। সেই ভাবনাকে পুঁজি করেই এই কাজে নেমেছেন মনীষা। লড়াইয়ে সঙ্গে নিতে চান তাঁর মতো অসংখ্য অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েকে। সে কাজে নিজের মতো করে ছোট ছোট পায়ে এগোচ্ছেন তিনি। শীঘ্রই তাঁদের দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করতে চান ওঁরা।

গত মাসে হিউম্যান ল’নেটওয়ার্কের ডাকে দিল্লি গিয়েছিলেন মনীষা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে অ্যাসিড আক্রান্তেরা এসেছিলেন সেখানে। ছিলেন দিল্লির মহিলা কমিশন, পুলিশ, আইনজীবী, চিকিৎসক এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল আক্রান্তদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং আইনে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে জানানো। যেমন মনীষা সেখানেই প্রথম জানলেন, অ্যাসিড আক্রান্তদের চিকিৎসা সর্বত্র বিনামূল্যে হওয়ার কথা। তা না মানলে আইনও রয়েছে মনীষাদের জন্য। কিন্তু মনীষার বক্তব্য, সেই সুবিধা পাওয়া তো দূর, কেউ জানেনই না বিষয়টি।

তবে আইনের অনেকটা গা ছাড়া ভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। তা নিয়ে রয়েছে মনীষার তীব্র ক্ষোভ। মনীষার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল তাঁর পূর্ব পরিচিত সেলিম হালদার। তাকে ধরতে পুলিশের সময় লেগেছিল দু’বছরেরও কিছু বেশি। অথচ মাত্র দশ দিনেই ছাড়া পেয়ে সে আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামে। অভিযোগ, মাঝেমাঝেই সে হুমকি দিচ্ছে মনীষার পরিবারকে। সেই ভয়ে পরিবার ছেড়ে এ শহরে এসে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। এক জন অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে সে ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেড়ায়, সে প্রশ্ন তুলছেন মনীষা।

ঘটনাটি ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বরের। দক্ষিণ শহরতলির জয়নগরে শীতের রাত ৮টা মানেই বেশ নিঝুম। কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সদ্য স্নাতক হওয়া মেয়েটি। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আচমকা ওই যুবক ও তার সঙ্গীদের অতর্কিত আক্রমণে শরীর জ্বলে যেতে শুরু করে মনীষার। সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় তাঁর ও পরিবারের যন্ত্রণার দীর্ঘ পর্ব।

মেয়ে মনীষা, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার জয়নগরের স্টেশনের আলু ব্যবসায়ী মুন্নাফ পৈলানের। এই ঘটনায় দিশাহারা পৈলান পরিবার প্রথমে স্থানীয় নার্সিংহোম, হাসপাতাল, পরে শহরের দুই মেডিক্যাল কলেজে মেয়ের চিকিৎসা করায়। সেই লড়াইয়ের কথা বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস পড়ে মনীষার। তিনি বলে চলেন, ‘‘ভুল চিকিৎসায় আমার বাঁ চোখ নষ্ট হয়েছে। নার্ভ প্রতিস্থাপন করে সেই চোখের চিকিৎসা হতে পারে হায়দরাবাদে। সে জন্য প্রয়োজন টাকার। ইতিমধ্যেই সাত বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আমার টাকা নেই। তাই চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছি।’’ কিন্তু বিচার? সে আশায় এখনও ছেদ টানেননি। বরং উকিল বদল করেছেন। বর্তমানে তাঁর হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত জামিনে ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা খুবই আতঙ্কের। অভিযুক্তের জামিন যাতে খারিজ হয়, হাইকোর্টে তার আবেদন করা হয়েছে।’’

‘‘ক্ষতিপূরণ নয়, অভিযুক্তের শাস্তি চাই’’— ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন মনীষা। সেই বিচারের আশাতেই সকলের চোখের সামনে ভেসে থাকতে চান কবিতায়, ক্যানভাসে।

Manidha Pailan Acid Attack Video story
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy