নজরে: নেটে গা ঘামানোর পরে বিশ্রাম মনোজের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ক্রিকেটজীবনের মতো কোচ হিসেবেও একই রকম ডাকাবুকো। মনোজ তিওয়ারিদের মধ্যে একই রকম আগ্রাসন দেখতে চান বাংলার মেন্টর অরুণ লাল। বাংলার ক্রিকেটারদের হাতে শনিবার তিনি তুলে দিলেন রঞ্জি জয়ের আট মন্ত্র।
কী আছে সেই আট মন্ত্রের মধ্যে?
উদাহরণ মিয়াঁদাদ: বাংলার ক্রিকেটারদের প্রত্যেক দিন তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘বল দেখে খেলো।’’ অনুশীলনের শেষে ড্রেসিংরুমেই টেনে আনলেন প্রাক্তন পাক ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদের উদাহরণ। অরুণ বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত বল দেখা অত সহজ নয়। ছোটবেলা থেকে সব কোচই এ কথা শেখায়। এই পর্যায়ে এসেও সেই সমস্যা মেটে না। আমি ছেলেদের বলেছি, জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাটিং দেখো। মিয়াঁদাদের টেকনিক অত ভাল ছিল না। বাঁ হাতি স্পিনারের বল কোনও রকমে ডিফেন্ড করত। কিন্তু কয়েকটি বল খেলার পরে সেই স্পিনারের বলই বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর ক্ষমতা রাখত। শেষ পর্যন্ত বল দেখত বলেই এটা পারত।’’
১৪ ইনিংসে ৮০০ রান: দলের উপরের দিককার ব্যাটসম্যানেরা যদি ১৪ ইনিংস খেলে অন্তত ৮০০ রান না করেন, তা হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কোনও উপায়ই দেখছেন না তিনি। অরুণের কথায়, ‘‘১৪ ইনিংসে ৮০০ রান করতেই হবে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য এটা ন্যূনতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। না হলে রঞ্জি ট্রফি জেতার স্বপ্ন তো ছেড়েই দাও, জাতীয় নির্বাচকদের নজরেও কখনও আসা যাবে না।’’
নীচের দিকের ব্যাটসম্যানদের থেকে চাই ৩০ রান করে: হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে অশোক ডিন্ডা ও আমির গনির ইনিংসের প্রশংসা করেছেন বাংলার মেন্টর। তাঁর কথায়, গনি-ডিন্ডা জুটি পারফর্ম না করলে কোনও ভাবেই প্রথম ম্যাচে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যেতে পারত না বাংলা। সোমবার থেকে শুরু দ্বিতীয় ম্যাচেও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য স্থির করা হয়েছে লক্ষ্য। ‘‘সাত, আট, নয় নম্বর ব্যাটসম্যানেরা প্রত্যেক ম্যাচে তিরিশ রান করে করুক, তার পরে দেখি আমাদের কে হারায়। মাঠে গেলাম, চালিয়ে চলে এলাম, সেই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে যাওয়া চলবে না। দলের স্বার্থ মাথায় রেখে খেলতে হবে,’’ নির্দেশ মেন্টরের।
ইতিবাচক প্রবণতা: ইডেনের পিচের চরিত্র পেসারদের সাহায্য করলেও তাঁর কাছে এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। সেখানে শুরু থেকেই বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার নির্দেশ দিয়েছেন অরুণ। মেন্টরের বিশ্লেষণ, ‘‘আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলব, পিচ একেবারেই ব্যাটিং সহায়ক। তাই প্রথম বল থেকে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা দেখতে চাই। তার মানে এই নয় যে, প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে হবে। প্রথম দশ ওভার পিচ কামড়ে পড়ে থাকো। এবং বাকি দিন ধরে ক্রিজে পড়ে থেকে বোলারদের বিরক্ত করে দাও। দিনের শেষে নায়ক হয়ে ফেরো ড্রেসিংরুমে।’’
হাফসেঞ্চুরি করে আউট হওয়া অপরাধ: হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে রান পেলেও তা ভাল ইনিংসে পরিণত করতে ব্যর্থ হয়েছেন মনোজ তিওয়ারিরা। বাকিরা তো বটেই, মনোজ নিজেও প্রথম ইনিংসে আউট হন ৫৫ রান করে। যা সোমবারের ম্যাচ থেকে দেখতে চান না মেন্টর। অরুণ বলেন, ‘‘৬০, ৭০ রান করে আউট হলে সেই ব্যাটসম্যান আমার চোখে অপরাধী। অন্তত সেঞ্চুরি তো করতেই হবে। ক্রিকেট এমনই খেলা যে, আজ তোমাকে হাসাবে, কাল কাঁদাবে। এমন কিছু সময় আসে যখন শত চেষ্টা করেও রান পাওয়া যায় না। তখন ব্যাটসম্যানেরা ভাববে, কেন ৭০ রানের ইনিংস ১৭০ রানে পরিণত করতে পারলাম না!’’
উদাহরণ বিরাট ফিটনেস: ক্রিকেটে ফিটনেসের মাপকাঠি অনেক বেড়ে গিয়েছে। যা বলতে গিয়ে অরুণ লাল উদাহরণ টেনে এনেছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির। বলেন, ‘‘শুধু মাত্র ফিটনেস স্তর বাড়িয়ে কত দূর যাওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিচ্ছে বিরাট। অনায়াসে সেঞ্চুরি করে। দেখে মনেই হয় না ও এতটুকু ক্লান্ত। বাংলার ক্রিকেটারদেরও ফিটনেসের মাপকাঠি বাড়িয়ে তুলতে হবে।’’
নিজের জন্য নয়, বাংলার জন্য খেলছ: মেন্টর জানিয়েছেন, দলের জন্যই খেলতে হবে ক্রিকেটারদের। অরুণ বলেন, ‘‘সবাইকে বুঝতে হবে বাংলার হয়ে খেলা কতটা গর্বের। সে সিএবি-র হয়েও খেলছে না, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হয়েও নয়। বাংলার হয়ে খেলছে। তখন বাইরের কোনও কথাই আর গায়ে লাগবে না।’’ আগেই জানিয়েছিলেন, ‘আমার বাংলা’ স্লোগান হবে তাঁর। সেটাই ছেলেদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখো: প্রত্যেক দিন সকালে উঠে মনোজদের রঞ্জি ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখার বার্তা দিয়েছেন ‘ফাইটার’ লাল। তাঁর কথায়, ‘‘স্বপ্ন দেখতে না শুরু করলে, তা বাস্তবায়িত করবে কী করে? প্রত্যেক দিন চোখ খুলেই সামনে রঞ্জি ট্রফি দেখতে হবে। তবেই না তা জেতার ইচ্ছে বাড়বে!’’
বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরাও চাইবেন, অরুণ-আলোয় এ বার আলোকিত হয়ে ভারত সেরা হোক বাংলা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy